দুষ্টু বউয়ের মিষ্টি ছলনা | লেখক: শফিক (আবি)
সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। দুচোখে যেন অন্ধকার দেখছিলাম।
দুই হাত দিয়ে চোখটা বুলিয়েই চোখ মেলে দেখি, সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমার লক্ষী, মিষ্টি বউ ঝুমু।
হাতে বালতি, দুচোখ যেন লাল মরিচের মতো লাল আর চেহারায় মিষ্টি রাগ।
সব মিলিয়ে এক অনন্য।
হঠাৎ করেই ঝুমু বলে উঠলো,,,
— ডিম চেন ডিম?
–কি..?
কি বললা(খুব অবাক হয়ে)
— বলছি ডিম চেনো..?
— কি সব যাতা বলতেছো…
— একবার কথা বললে কানে যায় না..?
বলছি ডিম চেনো, হাঁসের ডিম চেনো- হাঁসের ডিম?( খুব চেঁচিয়ে)
–হ্যাঁ চিনি.
তো কি,,, কি হইছে হাঁসের ডিমে?
— হাঁসের ডিমে কত পুষ্টি থাকে জান??
— হ্যাঁ জানি.. তো???
— তবে পুষ্টির থেকে ওই ডিমে এলার্জি বেশি থাকে সেটা জানো?
–তো কি..
— তোমার মাথাটা…
— কি সব,,,
.
–এই. একদম বেশি কথা বলবা না.. একদম চুপ..
— আমি বেশি কথা বলতেছি?( নিজেকে নিজে দেখিয়ে খুব অবাক হয়ে. কি হচ্ছে কি আমার সাথে)
— তোমরা ছেলেরা না, ঠিক ওই হাসের ডিমের মত।
এনার্জি কম, এলার্জি বেশি…
— কি সব আবোল তাবোল বকছো…?
কিসের সাথে কি তুলনা করতেছো,,,
তোমার মাথাটা কি পুরাই গেছে…?
— কি বলল তুমি…( খুব রেগে)
আমি পাগল??
— আরে আমি কখনো বললাম পাগল…
— হ্যাঁ.
এখন তো আমি পাগলই হবো। তাই না??
বিয়ের আগে ময়না, টিয়া কত পাখির নামে ডাকতা। আর এখন, এখন আমি পাগল।
হ্যাঁ, পাগলই তো…
আমার মত পাগলি ছাড়া তোমার মত একটা ছেলেকে কে বিয়ে করবে বল??
— আচ্ছা সাজসকালে তুমি কি শুরু করছ বলোতো?? আর সকাল সকাল আমার গায়ে পানি ঢেলে ঘুম ভেঙে দেওয়ার মানে কি??
ডিম-টিম…
.
কি শুরু করছ তুমি?
হইছে টা কি তোমার?
ঝুমু খুব রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন আরেকটু হলেই কাঁচা গিলে খেলো আমায়।
— কি হলো?
তাকায় আছো যে,,, কিছু হইছে??
এতো রাগ করছ কেন তুমি??
হুট করেই হাত থেকে বালটি টা ছুড়ে মারলো। তারপর আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে খাটের উপর বসে পড়ল।
ঝুমু অনেক শান্ত প্রকৃতির। আমার থেকেও রোমান্টিক বলা যায়।
কিন্তু আজকে হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারন টা সত্যিই আমার বুঝে আসছে না।
আমার সামনে বসে আছে মুখ ফিরিয়ে। আমি ভেজা শরীর নিয়ে খাটের উপর।
তারপর আস্তে করে পেছন থেকে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ও কাধে নিজের থুতনীটা রেখে বললাম,,,,
— কি হয়েছে ঝুমু..?
এত রাগ কেন??
কিছু হইছে??
ঝুমু চুপ করে আছে।
.
— পাশের বাসার আন্টি কিছু বলছে.? আমাকে বল. এক্ষুনি তাকে গিয়ে কতগুলো কথা শুনিয়ে আসব…
— ছাড়ো আমায়, ভালো লাগতেছে না…( খুব বিরক্ত হয়ে)
–কি হয়েছে তোমার. এমন করতেছ কেন…?
— বুঝতে হবে না…( মুখটা গোমরা করে)
— বুঝতে হবে না মানি..?
আমি না বুঝলে কে বুঝবে?
আমার একটা মাত্র মিষ্টি বউ বলে কথা,(ওর গালের সাথে গাল টা লাগিয়ে)
ঝুমু চুপ করে আছে।
–কি হইছে তোমার?? কথা বলতেছ না কেন?
সকাল সকাল তোমার এই গোমরা মুখ টা দেখলে আমি কিভাবে কাজ করব সারা দিন…
আচ্ছা বল আইসক্রিম খাবা??
ঝুমু কি হয়েছে তোমার,,?
বল আমায়, এত রাগ করতেছ কেন তুমি??
— কিছুই বুঝো না??
— কি বুঝব? এমন করতেছ কেন?
— তুমি..( কথাটা বলেই থেমে গেল) বাদ দাও..
.
–কি হইছে বল আমায়? কি সমস্যা তোমার?
— আমার কোন সমস্যা নেই.. (কথাটা বলেই আমাকে ছাড়িয়ে উঠে পরল ঝুমু)
— ফ্রেশ হয়ে নাও.. আমি নাস্তা দিচ্ছি..
কথাটা বলেই চলে গেল। বুঝতে পারলাম না ও এতটা রাগ করছে কেন।
কি হয়েছে ওর??
আমাদের লাভ ম্যারেজ হয়েছিল। আর চারটা প্রেমিক-প্রেমিকাদের মতোই আমরা দুজন দুজনকে অনেক ভালবাসতাম।
অনেক।
কিন্তু ঝুমু ছিল অনেক ধনী বাবার একমাত্র মেয়ে। সেই হিসেবে আমিও সম্পদের দিক থেকে এক চিমটিও ছিলাম না।
মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যবিত্ত ছেলে। একপর্যায়ে ঝুমুর বাবা ওর বিয়ে ঠিক করে অন্য একটি ছেলের সাথে। সঙ্গে সঙ্গে ঝুমু ব্যাপারটা আমাকে জানায়।
সেদিন যখন শুনেছিলাম আমার পৃথিবী যেন উল্টে গিয়েছিল। ঝুমু কে হারানোর ভয়ে।
কিন্তু ঝুমু ওর বাবাকে আমাদের সম্পর্কের কথাটা বলে। কিন্তু মধ্যবিত্ত ছেলের সাথে বিয়ে দিতে ঝুমুর বাবা কখোনই রাজি হয়নি।
.
এমনকি ওকে আটকে রেখেছিল ঘরের ভেতর। বিয়ের আগ পর্যন্ত। বিয়ের সব ব্যবস্থাও করে ফেলেছিল।
বিয়ের আগ পর্যন্ত ঝুমুর সাথে আমি কোনরকম যোগাযোগ করতে পারিনি।
অবশেষে বন্ধুদের সহায়তায় ঝুমুর বাড়ি থেকে পালিয়ে নিয়ে আসি এবং কোর্ট ম্যারেজ করে এখানে দূরে চলে আসি।
আজ 6 মাস হয়ে গেছে আমাদের বিয়ের। এখানে এসেই একটা ছোটখাটো চাকরি জোগাড় করে নিই।
19 হাজার টাকার স্যালারি। বেশ ভালই কাটছিল দিনগুলো।
দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া আর মান-অভিমানের ভালোবাসায় বেশ সুখেই কাটছিল আমাদের সংসার।
আমার সাথে বিয়ে হওয়ার পর ঝুমু কখনোই ওর ফেলে আসা বিলাসিতার দিকে একটিবারও তাকায়নি।
যেন অল্পতেই ও তৃপ্ত।
যাইহোক, ভেজা শরীর নিয়ে বেশিক্ষণ থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে সোজা অফিসে চলে যাই।
কিন্তু আসার সময় সেই ওর গোমরা মুখ টা দেখেই বেরোতে হল। বুঝলাম না আজ এত রেগে গেছে কেন। অফিস চলে এলাম।
আজকে স্যালারি দিছে। এই এই ছয় মাসে ওকে একটা শাড়িও কিনে দিতে পারলাম না।
যেমনি এসেছিল ঠিক তেমনি রয়েছে আমার সাথে। কখনো মুখ ফুটে কোন কথা বলেনি।
কোন শখ-আহ্লাদ, চাহিদার কথা। কিচ্ছু না।
আজকে শাড়ি দিয়ে ওকে একটা সারপ্রাইজ দেবো। অফিস শেষ করে চলে গেলাম মার্কেটে।
চার হাজার তিনশো টাকা দিয়ে একটি শাড়ি কিনলাম। ঝুমুর পছন্দের রং এর।
বেগুনি শাড়ীটা দেখে ও খুব খুশি হবে জানি।
মেয়েটাকে কিছু দিতে পারলাম না। আমার সাথে বিয়ে করে শুধু অভাব অনটনের মধ্যে জীবন যাপন করছে। যদিও ওর এটা প্রাপ্য ছিল না।
কিন্তু আমাকে ভালোবেসে ওর সব বিলাসিতা, সব সখ-আহ্লাদ যেন বিসর্জন দিয়েছে। শুধু আমাকে ভালোবেসে।
আজকে শাড়িটা ওকে হাতে দিয়ে বলবো ভালোবাসামময় দুটি কথা।
শাড়িটা কিনে সোজা বাড়ি চলে গেলাম। কলিং বেল বাজালাম। খুলছে না।
আরো কয়েকবার বাজালাম, তাও খুলছে না। এত দেরি হওয়ার তো কথা না। প্রতিদিন একটি বার বাজালেি, চলে আসে। আজ এতক্ষণ কলিং বেল বাজালাম, এখনো খুলছে না।
অবশেষে অনেকক্ষণ পর এসে দরজাটা খুলল।
— দরজা খুলতে এত লেট হল যে আজকে…
( ঝুমু চুপ করে আছে। কোন কথা বলছে না। শাড়িটা আমি হাত দিয়ে পেছনে রেখেছিলাম। এখনই দেবো না। একটু পর।
.
তারপর ঘরে এসে শাড়িটা টেবিলের উপর রাখলাম। দেখেনি এখনো।
ঘরে এসেই দেখি ঝুমু ব্যাগে কাপড় চোপড় গোছাচ্ছে।। অবাক হলাম। বেশ অবাক হলাম।
ওতো আমাকে না বলে কোথাও যায় না।
খুব কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করলাম,,,
— কোথাও যাচ্ছ তুমি..?
কই আমাকে তো বললে না।
কথাটা শুনেই ঝুমু কাপড় চোপড় গুছানো বন্ধ করে দিল। তারপর চোখ টা নিচু করে স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে রইল।
আমি ওর সামনে গিয়ে ওর দুটো গালে আলতো করে হাত দিয়ে বললাম,,,,
— ঝুমু..
কিছু হয়েছে? কোথায় যাচ্ছ তুমি?
( ঝুমু মাথা নিচু করে আছে. কোনও উত্তর দিচ্ছে না)
— কি হল… কথা বলছো না যে. কোথায় যাবে তুমি?
— আসলে তোমাকে একটি কথা বলার ছিল…
— হ্যাঁ বল কি বলবে?
–আসিফ,,,,
আমি বাবার কাছে যাচ্ছি..
— বাবার কাছে….?
তোমার বাবা কি তোমাকে ফোন করেছিল??( খুব অবাক হয়ে)
— না..
আমি বাবাকে ফোন করেছি। আমি বাবার কাছে যাচ্ছি।
— আমি ভেবেছিলাম একটি বছর পার হোক তারপরে না হয় যেতে…
তোমার বাবার রাগটাও কমতো আর তুমি….
— ভুল ভাবছো আসিফ…
আমি একেবারে বাবার কাছে চলে যাচ্ছি।
কথাটা শুনেই বুকের ভেতরটা যেন কেমন মোচড় মেরে উঠলো।
–কি..?
.
বুঝতে পারলাম না।
একেবারে যাচ্ছি মানে??
— মানে আমি আর পারছি না আসিফ...
— কি পারছ না ঝুমু..( খুব অবাক হয়ে)
–তোমার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে আর পসিবল না আসিফ…
ওর কথাটা শুনে আমার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছিল। আমি যেন দুঃস্বপ্নের মধ্যে আছি। আমি কি শুনছি???
সঙ্গে সঙ্গে ওর হাতটি ধরে বললাম,,,,
— তুমি মজা করছ আমার সাথে তাই না..?( একটা শুকনো হাসি দিয়ে)
আমি জানি তুমি মজা করছ।
দেখো ঝুমু এই ধরনের দুষ্টুমি কিন্তু আমার একদম পছন্দ না।
তুমি এরকম আর করব না কিন্তু প্লিজ,,,,,
কথাটা শুনেই ঝুমু আমার চোখের দিকে চোখ রাখলো। তারপর তারপর হুট করে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,,,,
— স্যরি আসিফ,,,
যদি এটা মজা হতো.. তাহলে সবচেয়ে বেশি খুশি আমি হতাম.
কিন্তু আনফরচুনেটলি, আমি সিরিয়াস। আমি তোমার সাথে সংসার করতে চাইনা।
( আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কত নিষ্ঠুরভাবে কথাগুলো বলে দিল ঝুমু. ওর কথাগুলো যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমি। কখনো কল্পনাও করতে পারিনি আমার ভালোবাসার মানুষটা আমাকে এত নিষ্ঠুর ভাবে এত নিষ্ঠুর কথা গুলো বলতে পারবে।
আমি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কি বলবো সেটাই আমার মাথায় আসছিল না।)
— কি বলছ কি তুমি এসব ঝুমু…?
তুমি সংসার করতে চাও না মানে..
আমাদের ভালোবাসা…..
— প্লিজ আসিফ,,,
প্লিজ,,, ভালোবাসা দিয়ে জীবন চলে না।
–তুমি বলছো এসব কথা..??
— হ্যাঁ আমি বলছি…
কি পেয়েছি আমি তোমার কাছে এসে? আর কি সুখটাই বা তুমি আমাকে দিতে পেরেছো?
— আমি তোমাকে ভালোবাসি ঝুমু..
— ভালোবাসা দিয়ে পেট ভরে না আসিফ।
তোমাকে ভালোবেসে, তোমাকে বিয়ে করেছিলাম সুখে থাকব বলে।
কিন্তু… কিন্তু কি…? কিন্তু আমিতো সেই প্রত্যাশিত সুখটা পাই নাই যেটা আমি চেয়েছিলাম.
— মানে??
কি বলতে চাও তুমি??( খুব অবাক দৃষ্টিতে দিকে তাকিয়ে ছিলাম)
— আমি আমার বাবার একমাত্র মেয়ে ছিলাম আসিফ. আমার বাবা আজ পর্যন্ত আমার কোন শখ-আহ্লাদ অপুর্ন রাখে নাই.
আমার সব আবদার গুলো হাসিমুখে পূরণ করেছে। কিন্তু তোমাকে ভালোবেসে, বিয়ে করলে আমি সেই সুখটুকুও পেলাম না।
বরঞ্চ এই টানা-পোড়নের সংসারে দিনকে দিন আমি…..
প্লিজ আসিফ…
আই কান্ট টলারেট ইট এনিমোর…
আমি আর নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছি না।
আমি সুধু বোবার মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওর কথাগুলো শুনছিলাম। হৃদয়বিদারক কথা গুলো।
কোন উত্তর দেওয়ার মত ভাষা আমার জানা ছিল না।
— সপ্তাহে একদিন তুমি মাংস কিনে আনবে সেই এবিলিটি পর্যন্ত তোমার নেই..
আমি কি করে তোমার সাথে….
এম সরি,,,, আসিফ, আমাকে মাফ করো
— তুমি তো সব জেনেই আমার সাথে এসেছিলে ঝুমু… তাহলে আজ…
— প্লিজ আসিফ….
ওসব কথা বলে আর কোন লাভ নেই।
তখন আমি জানতাম না যে ভালোবাসা, প্রেম এগুলো জাস্ট একটা আবেগ। সীমিত সময়ের জন্য।
কিন্তু বাস্তবতা অন্যরকম হয়। ভিন্ন হয়।
এটা আমার জানা ছিল না। আমি ভেবেছিলাম তোমার সাথে আমি মানিয়ে নিতে পারবো।
বাট আই কান্ট… সরি…
— তারমানে আজ সকালে এই নিয়ে তুমি রাগ করেছিলে… এই জন্য তোমার মন খারাপ ছিল..?
ঝুমু মাথা নিচু করে আছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে ওর কাছে গিয়ে ওর হাত দুটো ধরে কাতর কণ্ঠে বলতে লাগলাম,,,,,,,
— প্লিজ ঝুমু…
এমন করো না।
তুমি জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি ঝুমু।
আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। (কেঁদেই ফেলেছিলাম আমি)
তুমি আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছে ঝুমু। তুমি আমার,, তুমি আমার সব..(কেঁদে কেঁদে)
আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না ঝুমু।
প্লিজ, প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না।
ঝুমু আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।
— প্লিজ কিছু একটা বলো. আমি তোমায় ছাড়া বাঁচতে পারব না.. ঝুমু প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
তুমিও তো আমাকে ভালোবাসো তাই না… তাহলে কিভাবে তুমি???
প্লিজ এমন করো না।।
আমি মরে যাব তোমায় ছাড়া,,,
আমি,,,, আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।
প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না।
কত নিষ্ঠুর এর মত আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল,,,
— এম সরি আসিফ…
বাবার সাথে কথা হয়েছে। আমার জন্য একটা ছেলে দেখেছে। ভালো ছেলে।
সিঙ্গাপুর থাকে। বিয়ের পর আমাকে সেখানে নিয়ে যাবে।
আর বাবাও আমার এই ভুলকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমি বাবার কাছে যাচ্ছি।
তুমি ও তোমার পরিবারের কাছে ফিরে যাও।
এম রিয়েলি সরি, পারলে ক্ষমা করে দিও।
কতটা পাষণ্ড হলে ঝুমু এরকম কথা বলতে পারে সেটা আমি কল্পনাও করতে পারছি না। আমি স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
.
তারপর ঝুমু ওর কাপড় চোপড় গুছিয়ে ব্যাগের চেইনটা আটকে ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলল,,,,,
— ভালো থেকো আসিফ…
আবারো বলছি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। ভালো একটা মেয়ে দেখে যে তোমার সমতুল্য,, তোমার অ্যাবিলিটির একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিও।
আসি,,, ভালো থেকো।
কথাটা বলেই দরজার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলল,,,,
— টেবিলে খাবার রাখা আছে… খেয়ে নিও… আসি…
মাথা নিচু করে চলে গেল তারপর।
আমি একটা পাথরের মূর্তির মতো সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কি বলবো কি করবো সেটাই আমার বোধগম্য হচ্ছিল না।
আমি যেন ঘুমিয়ে থাকে একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি। আফসোস,, যদি এটা সত্যিই দুঃস্বপ্ন হতো। কিন্তু বাস্তব। আমার জীবনের সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম বাস্তবতা।
চোখ থেকে দু’ফোটা পানি ঝরে গেল আমার। বুকের অংশের শার্টটা ভিজে গেল আমার চোখের নোনা জল দিয়ে। নিঃস্ব হয়ে বিছানায় বসে পড়লাম।
কাঁদতে লাগলাম। প্রচন্ড কাঁদতে লাগলাম। বারবার ঝুমুর নাম ধরে কাঁদছি।
একটিবার ওকে বুকে জড়িয়ে ধরতাম? একটিবার যদি ওকে আটকাতাম? হয়তো ও থেকে যেত…?
না, সেটা কি করে সম্ভব? ওতো যাওয়ার সময় আমাকে ভুলে গেছে, বলে গেছে, আমি যেন আমার এবিলিটির একটি মেয়েকে বিয়ে করে নিই।
ওকে নাকি ভালবাসার কোন এবিলিটিই নিয়ে আমার।
সুখে রাখার কোনো যোগ্যতাই আমার নেই। তাহলে কিভাবে থাকতো আমার সাথে। ভালো হয়েছে, খুব ভালো হয়েছে।
সত্যিই তো আমার মত একটা মিডিল ক্লাস ছেলের সাথে সংসার করে কখনো সুখী হবে না,,,
কোথায় রাজবিলাস, আর কোথায়…..
মাথাটা নুইয়ে দিলাম বিছানায়। চোখের কোন থেকে ফোটা ফোটা জল গড়িয়ে বিছানার চাদরে গিয়ে পড়ছিল। আর নিজেকে খুব অসহায় লাগছিলো।
নিজের কাছে নিজেকে খুব ঠুনকো মনে হচ্ছিল। হঠাৎ করেই বিছানা থেকে উঠে পরলাম।
রাস্তার বখাটে ছেলে গুলো সিগারেট খায়। ওদেরকে একদিন প্রসঙ্গক্রমে জিজ্ঞেস করেছিলাম। ওরা বলেছিল সিগারেট খেলে নাকি কষ্ট কমে যন্ত্রণাটা একটু কমে।
কাপড় চোপড় চেঞ্জ না করেই বাড়ি থেকে নীচে চায়ের দোকানে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে এক প্যাকেট সিগারেট কিনলাম। পকেটে ভরে নিলাম। বাড়িতে গিয়ে খাব।
তারপর চলে এলাম রুমে। আমার চোখ যেন কোন বারণ মানছিল না। ঝরনার মত ঝরছে তো ঝরছেই। অশ্রু যেন থামবার নয়।
কষ্টগুলো যেন আগ্নেয়গিরির বুদবুদের মতো ফুলে ফেঁপে উঠছে। এতটা কষ্ট আমি জীবনে কখনো পাইনি।
অবশ্য এতটা কষ্ট কেউ আমাকে জীবনে দেয়নি। সিগারেটটা টেবিলের উপর রেখে আলমারি থেকে জামা কাপড় গুলো নামাচ্ছিলাম।
কি করবো এখানে থেকে। চলে যাব। থাকবো না আর এখানে।
যার সাথে এসেছিলাম সেই যখন নেই তখন আর…..
হঠাৎ করেই কলিং বেল বেজে উঠলো। শব্দ টা শুনে কাপড়-চোপড় আলমারিতেই রেখে গেলাম দরজা খুলতে।
তবে দরজাটা খুলেই যাকে দেখলাম। খুব অবাক হয়েছি তাকে দেখে। ঝুমু ছিল সে……
খুব অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। প্রশ্ন করলাম,,,,,,,
— তুমি??
— হ্যাঁ…
.
আসলে যাওয়ার সময় টাকা নিতে ভুলে গেছিলাম। আসলে ট্রেন দিয়ে যাব। টাকার তো প্রয়োজন। তোমার কাছে হাজার খানেক টাকা হবে???
ওর কথা শুনে হৃদয়ে যেন রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আমি দেখেই এক মুহূর্তের জন্য ভেবেছিলাম ও হয়তো ফিরে এসেছে আমার কাছে।
কিন্তু না….
— ও আচ্ছা.. ঠিক আছে তুমি দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি……
মাথাটা নিচু করে চলে এলাম রুমে। তারপর মানিব্যাগ থেকে 1000 টাকা বের করে যেই পা বাড়াবো অমনি পিছন ফিরে দেখি ঝুমু আমার সামনে।
দেখেই কিছুটা চমকে গেলাম। ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,
— কি ব্যাপার…
তোমার চোখ এতো লাল কেন?
কাঁদেছিলে…?
( আমি আমার চোখটা নামিয়ে নিলাম ওর থেকে)
আর টেবিলের ওপর দেখলাম এখনো খাবার রাখা আছে। খাও নাই কেন???
কথাটা শুনেই ওর দিকে খুব অবাক দৃষ্টীতে তাকালাম। ও মুচকি মুচকি হাসছিল।
— তুমি…?
— আমি কি??( মুচকি হেসে) ভাবছো চলে গেছি আর ফিরে আসবো না তাই না??
ওর কথা শুনে বুঝতেই পারছিলাম না আসলে হচ্ছেটা কি..
–আর তুমি কি হুমম??
আমাকে একটিবার আটকালেও না। আবার বেহায়ার মত 1000 টাকা নিয়ে আসছো আমাকে দিতে।
আমি শুধু হা করে ওর কথাগুলো শুনছিলাম। তুমি কি গাধা?
বোঝনা? তোমার বিশ্বাস হয় আমি তোমাকে কখনো ছেড়ে যেতে পারি?
তারপর আমার হাতটি ধরে বলল,,,
— এই তোমার বিশ্বাস…?
তুমি জানো না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি?? আর তুমি এমনি আমাকে চলে যেতে দিলে??
খুব কাঁদছিল তুমি??(আমার চোখের নিচে আঙ্গুল দিয়ে)
কষ্ট হইছে?? এতটা ভালোবাসো আমায়??
সঙ্গে সঙ্গে আমি ওর গালে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলাম।
ও গালে হাত দিয়ে আমার দিকে শুধু চেয়েছিল।
–তুমি. তুমি কি করে এমন একটা কাজ করতে পারলে??( কেঁদে কেঁদে)
তুমি জানো না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি? আর তুমি আমাকে….( সঙ্গে সঙ্গে ঝুমু আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল……….
.
–আমি সরি… আই এম রিয়েলি সরি..
আসলে তুমি এতটা কষ্ট পাবা আমি বুঝতে পারিনি। তোমার সাথে জাস্ট একটু মজা করতেছিলাম।
ওকে জড়িয়ে ধরলাম… খুব শক্ত করে…
— এমন মজা কেন করলে আমার সাথে…?
তুমি জানো,,, আমার প্রাণটা বেরিয়ে গেছিল।
আমি মরে যেতে ছিলাম।
আমার বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছিল তোমাকে ছাড়া…
— এম রিয়েলি সরি…
আর কখনো করবো না,,, প্লিজ মাফ করে দাও…( ঝুমু কেঁদে কেঁদে বলছিল)
ওকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম। মনে হচ্ছিল দেহে প্রান ফিরে এসেছে। ওকে ছাড়া যেন প্রতিটা মুহূর্ত আমার বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল।
হঠাৎ ও আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,,,
— ছাড়ো..
আমায় কিসের মাফ করবা তুমি??
আমায় তুমি আমায় থাপ্পর মারসো… তুমি আমায় থাপ্পর মারতে পারলা…?(ঝুমা এবার কেঁদেই ফেলল)
ওর এই পাগলামি দেখে আমি মুচকি হেসে দিলাম। হাত দিয়ে ওর মাথাটা নিজের বুকের কাছে নিয়ে বললাম,,,,
— তুমি একটা পাগলি… পাগলি তুমি একটা…
— বড্ড ভালোবাসি তোমায়…
তুমি ভাবলা কেমনে আমি তোমাকে ছেড়ে যাব।
কখনো কোনদিন তোমায় ছেড়ে যাবো না।
তোমার বুকে এভাবে মাথা রাখবো।
আমৃত্যু….
— আমিও… তোমাকে অনেক ভালবাসি ঝুমু…
অনেক..
হঠাৎ করে ঝুমুর টেবিলের ওপর রাখা সিগারেটের উপর নজর দিয়ে বলল,,,
— ওয়েট ওয়েট… এটা কি??( সিগারেটটা হাতে নিয়ে)
আমি আমতা আমতা করে বলতে লাগলাম,,,,
— আসলে এটা…
.
— তুমি সিগারেট খাইতেছিলা…?
— এই না না..
কি বলতেছে এসব..?
আমি আইনা মাত্র রাখছিলাম..
— কেন??( চোখ রাঙিয়ে)
— আসলে পাড়ার ছেলেরা সিগারেট খায়….
— তো…..?
— সিগারেট খেলে নাকি কষ্ট কিছুটা কম হয়…( একদম নিচু স্বরে)
— পাড়ার ছেলেদের দশটা করে জিএফ আছে, তোমার কি দশটা বউ আছে???( খুব রেগে)
— না মানে…
— একদম পিটায়া লাল করে ফেলবো যদি আর কোনদিন এসব আজেবাজে জিনিস ধরতেও দেখি তোমাকে…..যত্তসব
কথাটা বলেই জানালা দিয়ে সিগারেটের প্যাকেটটা ফেলে দিল।
— খাবার টেবিলে এসো… অনেক রাত হয়েছে…
কথাটা বলেই ও চলে গেল। তারপর আমি টেবিলে গিয়ে বসলাম। ও নিজে হাতে আমাকে খাইয়ে দিল। খাবার সময় হঠাৎ ওকে প্রশ্ন করলাম,,,
–আচ্ছা,, তুমি ব্যাগ নিয়ে কই গেছিলা?
–পাশের বাসার আন্টির বাড়িতে বসে ছিলাম কিছুক্ষণ..
কথা শুনে আমি হেসে দিলাম।
— এত হাসছো কেন??
— পাশের বাসার আন্টির সাথে না তোমার একদম বনে না…
— একদমই মিথ্যা কথা..
আসলে আন্টির মেয়েটা তুমি অফিস যাওয়ার সময় তোমার দিকে কি রকম করে যেন তাকায়।
এজন্য একদিন আমি উনার কাছে নালিশ জানিয়েছিলাম।
— আমার দিকে কি রকম করে তাকায়..?(মুচকি হেসে)
— তাকায়… তুমি বুঝবানা..
হা করো,,,,
— আশ্চর্য…
তাকালে সমস্যা কি??
— এই…….
আমার হাতে খাবার গুলো দেখছো, একদম চেহারায় মেখে দেবো।
সমস্যা কি তুমি বোঝনা?
কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলাম।
— আচ্ছা আজকে রাগ করলে কেন?
রাগ করলে কেন?
— আজকে যে আমার জন্মদিন সেটা তোমার মনে আছে???
ও মাই গড। এই কথা তো আমি ভুলেই গেছিলাম। আজকে ঝুমুর জন্মদিন। তবে সমস্যা নাই। মার্কেট থেকে যে শাড়িটা এনেছি ওটা দিয়ে পুষিয়ে নেব।
তারপর খাবারটা শেষ করেই ওকে হাত ধরে রুমে নিয়ে গেলাম। তারপর ওকে দাঁড় করিয়ে শাড়িটা ওর হাতে দিয়ে বললাম,,,,
.
— হ্যাপি বার্থডে…
তোমার জন্মদিনের গিফট।
ঝুমু আমার দিকে কেমন করে যেনো তাকালো।
তারপর শাড়ির প্যাকেটটা খুলে আমায় জিজ্ঞেস করলো,,,,
— কত নিছে এটা?
— বেশি না… মাত্র ৪,৩০০ টাকা…
— হুম…
— তোমার জন্মদিনের কথা আমি কোনদিন ভুলতে পারি…. বল??
— ঢং করো না..
মাস শেষ, আজকে তোমার স্যালারি দিছে, আমি জানি না ভেবেছ?
আর ভাবছো অনেকদিন বউকে কিছু দেওয়া হয় না তাই একটা শাড়ি নিয়ে যাই।
না হলে তুমি আমার জন্ম দিনের কথা মনে রাখবে..?( মুখ ভেঙ্গিয়ে)
ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,,
— তুমি এত ইন্টেলিজেন্ট কেন….?
আর শোনো বেশি ইন্টেলিজেন্ট হলে মাথায় প্রেসার পড়ে,,, তাই বেশি বুদ্ধিমতী হওয়া ঠিক না,,,
কথাটা বলার সাথে সাথেই আমার পেটে একটা ঘুসি মেরে বলল,,,,,
— তোমার মত গাধার সংসার করতে হলে ইন্টেলিজেন্ট হতেই হয়….
–তাই বুঝি??
–হুম,,,,,
–বাইরে সুন্দর চাদঁ উঠছে, দেখবা??
–হুম,,,(মুচকি হেসে)
তারপর দুজনে একসাথে ভরা পূর্ণিমার মিষ্টি মূহুর্ত একসঙ্গে উপভোগ করলাম…..ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বললাম–
“এই ছেলেটাকে ছেড়ে যদি কোনোদিন যাওনা…?
ট্রাস্ট মি,,,,মরেই যাবো…..
“যাবো, তবে একসাথে,,,যেখানেই যাইনা কেন??(ঝুমু আমার বুকে মাথা রেখে মুচকি হেসে)
এ যেন নতুনত্বের সূচনা আমার জীবনে,,,,
ভালোবাসার নতুন আরম্ভ…..
★সমাপ্ত★
…………..
L ve is Blind,,,,
Love is a pure emotion…..
& this emotion will never end……
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com