গল্পঃ টেডিবেয়ার
এক কয়েদি আমাকে জিজ্ঞেস করলো!
আমি মুখে গভীর একটা হাসি নিয়ে বললাম, একটা টেডি বেয়ারের জন্য।
কয়েদি ভাইটি বেশ কৌতূহল নিয়ে বললো, টেডি বেয়ার! একটু বুঝিয়ে বলেন না ব্যাপরটা কি?
আমি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আরম্ভ করলাম,
আমাদের ওখানে যখন কোন মেয়ের বিয়ে হয় তখন মেয়ের বিদায়ের সময় মেয়ের সাথে মেয়ের নানি দাদি যেকোন একজন যায়। কিন্তু রুপন্তীর আম্মুর বেলায় এসেছিল শুধু একটা টেডি বেয়ার।
শাশুড়ি আম্মা আমাকে মেয়ের বিদায়ের সময় বলেছিল,
আমার মেয়েকে ভালো না বাসলেও আমার মেয়ের টেডি বেয়ারটাকে ভালোবেসো।
শ্বশুর আব্বা বলেছিল,
আমার মেয়েকে আমি মাথায় তুলে রাখিনি যাতে চিল কাকে নিয়ে যায়, তাকে মাটিতেও ফেলে রাখিনি যাতে সাপে কামড়ায়। সবসময় তারে বুকে আগলে রেখেছি। সাথে মেয়ের টেডি বেয়ারটাকেও।
রুপন্তীর আম্মু বডিবিল্ডার ভাই বলেছিল, ও দুলাভাই! আমার বোনের টেডিবেয়ারের কিছু হলে একেবারে খালাস কইরা দিমু।
আর এই টেডি বেয়ারটা ই আমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। হাঁটতে, বসতে, খেতে, ঘুমাইতে সবসময় রুপন্তীর আম্মু ওই টেডি বেয়ারের সাথে ফেবিকলের মতো চিপকে থাকে। রাতে ঘুমাইতে গেলে আমি বেচারা ঠান্ডায় মরি। টেডি বেয়াররে যেভাবে জড়িয়ে ধরছে কখনো আমারে এভাবে জড়িয়েও ধরে নাই। আস্তে আস্তে টেডি বেয়ারটা খাটে আমার জায়গা দখল করে। তারপর আমার স্থান হয় সোফায়। রুম থেকে আমার জিনিসপত্র স্টোররুমে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে এখন টেডি বেয়ারের কাপড় চোপড় রাখা হয়।
এখন খাবার টেবিলে আমার চেয়ারেও টেডি বেয়ারকে বসায়।
আগামীকাল নাকি টেডি বেয়ার ডে তাই রুপন্তীর আম্মু আর জরিনা খালা মিলে কতো আয়োজন।
দুজনে মিলে টেডি বেয়ারকে গোসল করাচ্ছে, স্নো পাউডার লাগাচ্ছে, স্যুট টাই পরিয়ে দিচ্ছে। বড়সড় কেক ও অর্ডার করছে।
আপনারা ই বলুন এমন করে যদি জামাইয়ের সেবা যত্ন করতো তাহলে আজ ইতিহাস গড়তো। কিন্তু না নিয়তি অন্যকিছু চায়।
এদিকে মনে মনে আমার ভেতরে হিংসার আগুন জ্বলছে। আজ রাতেই টেডি বেয়ারকে শেষ করে দিমু। যাতে আগামীকাল টেডিবেয়ার ডে পালন করতে না পারে।
যেই বলা সেই কাজ। চুপি চুপি রুপন্তীর আম্মুর পাশ থেকে টেডি বেয়ারটা নিয়ে ছাদে উঠে গেলাম। তারপর ধারালো একটা রামপুরি চাকু নিয়ে টেডি বেয়ারের ভেতরের সব নাড়িভুড়ি বের করে ফেললাম। তারপর বস্তা ভরে পাশে আক্কাসের ছাদে ছুড়ে মারলাম।
পরে হয়তো অাক্কাস মনে করছে আমার ঘরে ইনকাম ট্যাক্সের রেইড পড়েছে। তাই আমি ওর ছাদে অবৈধ টাকা ছুড়ে মারছি। তাই সে কখন যেনো বস্তাটা উল্টো আমার ছাদে ছুড়ে মারছে।
আর এদিকে রুপন্তীর আম্মু সকাল থেকে সারাবাড়ি টেডি বেয়ার না পেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিছে। সকাল সকাল শ্বশুর, শাশুড়ি এসে হাজির। ওরা সবাই বললো, টেডি বেয়ার যাবে কোথায়?
পুলিশরে কল দিয়ে বসলো তারা।
আমি তো মহা আনন্দে আছি। মাঝে মাঝে বাথরুমে গিয়ে নাগিন ডান্স দিয়ে আসি। কারন আমি জানি টেডি বেয়ার তো আক্কাসের ছাদে।
পুলিশ আসলো। একে একে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করলো।
অপরদিকে সিআইডি এর সিক্রেট স্পাই এজেন্টের কুত্তার মতো কাজ করে জরিনা খালার নাক।
জরিনা খালা বললো, পুলিশ ভাই আমি গন্ধ পাচ্ছি। চলুন আমার সাথে।
সবাইরে ছাদে নিয়ে গেল জরিনা খালা। সেখানে বস্তাভর্তি অবস্থায় ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে আছে টেডিবেয়ার।
আমিও ভুল করে চাকুটা ছাদে ফেলে আসি। হাতের ছাপ স্পষ্ট প্রমাণ করে আমি ই খুন করেছি টেডি বেয়ার কে।
তারপর আমি জেলে।
কয়েদিগণ সবাই আফসোস সহকারে বললো, ভাগ্যিস আমরা বিয়ের আগেই জেলে চলে আসছি।
সন্ধ্যার দিকে রুপন্তীর আম্মু আসলো আমার জামিন করাতে। বললো, সরি আমি টেডি বেয়ার নিয়ে বেশি এক্সাইটেড ছিলাম।
আমি তো অবাক! রুপন্তীর আম্মুর পরিবর্তন দেখে। ভাবলাম রুপন্তীর আম্মুরে আজকে টেডি বেয়ার ডে তে অনেক গুলো টেডি বেয়ার দিয়ে সারপ্রাইজ দিমু। জরিনা খালারে ফোন দিলাম,
যেখান থেকে পার ছোটখাটো, মাজারি সাইজের অনেকগুলো টেডি বেয়ার কিনে নিয়ে আসো। আর এটা বেশ বড়সড় টেডি বেয়ার আনবা যেটার সবার মাঝখানে সাজাবা সুন্দর করে।
বাসায় গিয়ে দেখি টেডি বেয়ার রেডি। রুপন্তীর আম্মু দেখে মহাখুশি। আমি এবার হাঁটুতে বসে ফিল্মি স্টাইলে টেডি বেয়ারকে সাক্ষী রেখে রুপন্তীর আম্মুকে প্রপোজ করতে লাগলাম।
অমন সময় কাঁধে একটা ভারী হাত অনুভব করলাম। হাত সরানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু সরেনা। রুপন্তীর আম্মু উপরের দিকে তাকিয়ে কেন জানি হঠাৎ বেহুঁশ হয়ে গেল। আমি ঘাড় ফিরিয়ে দেখি, ইয়া বড় একটা জলজ্যান্ত ভাল্লুক!!! আমার ঘাড় ধরে বসে আছে।
চিল্লাইয়া জরিনা খালারে ডাকলাম,
সে এসে বললো, ভাইজান বড়সড় টেডি বেয়ার পাই নি! তাই চিড়িয়াখানা থেইকা এইডা উঠাইয়া লই আইছি।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com