Breaking News

ভাবনা | ২য় পর্ব

বউ হারিয়ে আমি এমনিতেই নাকাল।
তার উপর পুলিশের লোক এসে ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখতে লাগলো সন্দেহ জনক কিছু পাওয়া যায় কিনা?
সব জিনিস পত্র তারা আবার খিচুড়ি পাকিয়ে দিলো।
কি আর করা। এটা তাদের দায়িত্ব। আর আমি বাঁধা দেই কেমন করে।
পরে হয়তো আমার উপর তাদের সন্দেহ গিয়ে পড়তে পারে।
পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর সব দেখে শুনে বললো, এটা ডাকাতি ছাড়া আর কিছু নয়।
আলমারি ভেঙে টাকা পয়সা গয়নাগাটি চুরি করা হয়েছে।
আরও কিছু পেতে ঘরের জিনিস পত্র উলট পালট করা হয়েছে।
একজন কনস্টেবল রক্ত দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে বললো। স্যার দেখে যান।
আমরা সবাই গিয়ে দেখলাম জমাট বাঁধা রক্ত দেখে সে এমন করছে।
আমি তখন আমার পা দেখিয়ে বললাম, কাঁচের টুকরো পায়ে বিঁধে কেটে গেছে তারই রক্ত এটা।
সাব ইন্সপেক্টর অর্ডার দিলেন যেন রক্তের সেম্পল নিয়ে নেওয়া হয়।
ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য পাঠানো হবে।
ঘরে যে ডাকাতি হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু কারা করেছে তা এমূহুর্তে বলা মুশকিল।
তাই আমাদের ইনভেস্টিগেটর টিম যথা সাধ্য চেষ্টা করবে ডাকাতদের তারাতাড়ি পাকড়াও করতে।
সাব ইন্সপেক্টর আশার বাণী শোনালেন।
আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম স্যার ঘরে ডাকাতি হয়েছে মানলাম কিন্তু আমার বউ ভাবনা কোথায় গেল?
সাব ইন্সপেক্টর চিন্তিত হয়ে বললেন, আমিও সেটাই ভাবছি।
তবে আপাতত দৃষ্টিতে যা মনে হচ্ছে আপনার বউ ডাকাতদের হাত থেকে বাঁচার জন্য কোথাও লুকিয়ে আছে বলে মনে হয়।
হয়তো এখনো নিজেকে সে বিপদমুক্ত মনে করছে না। তাই লুকিয়ে থাকাটা নিরাপদ মনে করছে।
কালকের মধ্যে এসে যাবে বলে মনে হয়। নতুবা আমরা অন্য চিন্তা করবো।
সাব ইন্সপেক্টর চলে যাচ্ছিলেন। ফিরে এসে আবার জিজ্ঞেস করলেন,
আপনার শ্বশুর বাড়ির লোকজন ব্যাপারটা জানে? নাহ্ স্যার! তবে সেখানে ফোন করে দেখুন।
এমনও তো হতে পারে বাপের বাড়ি চলে গেছে।
আমি একটু অধৈর্য হয়ে বললাম স্যার এরকম পরিস্থিতিতে কারও বাপের বাড়ি যাবার কথা মনে হবে?
সাব ইন্সপেক্টর জবাব দিলেন এরকম পরিস্থিতিতে আপনার সম্ভব অসম্ভব দুটি জিনিসই পরখ করে দেখতে হবে।
কিন্তু স্যার আমি কি করে বলবো তাদের মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না?
তবুও জিজ্ঞেস করতে হবে মিঃ হাসান! আচ্ছা কাল একবার থানায় যোগাযোগ করবেন।
জ্বি আচ্ছা! বলে তাদের বিদায় দিলাম।
আমার তো ভীষণ ভয় করছে ভাবনাকে ডাকাতরা তুলে নিয়ে যায়নি তো? আমি আর ভাবতে পারছিনা।
সেই দুপুর বেলা খেয়ে ছিলাম এখন পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে প্রচন্ড খিদেয়।
ভাবলাম ভাবনা দের বাড়িতে খবরটা জানানো দরকার। হয়তো সাব ইন্সপেক্টর এর কথাই ঠিক হতে পারে।
ভয়ে দিশাহারা হয়ে বাবার বাড়ি চলে গেছে।
ভাবনার বাবার কাছে ফোন দিলাম। রিং হচ্ছে কিন্তু তিনি রিসিভ করছেন না।
রাত বারোটা বেজে গেছে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছেন।
ওদের বাড়ি আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে মাইল দুয়েক দূরে।
তিন বার রিং হবার পর রিসিভ করলেন আমার শ্বশুর। তিনি ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললেন,
হেলো! আমি সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আব্বা! ভাবনা কি আপনাদের ওখানে গিয়েছে?
কথা শুনে তিনি চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলেন, কি বললে তুমি?
জ্বি বলছিলাম ভাবনা আপনাদের ওখানে গিয়েছে? এতো রাতে তুমি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছ হাসান!
আমি বললাম, দুপুরে আমার সাথে ওর একটু ঝগড়া হয়েছে তাতে আমার রাগ
হয় আর আমি বাইরে ঘুরতে চলে যাই। সন্ধ্যা রাতে বাড়ি ফিরে দেখতে
পেলাম ঘরের দরজা খোলা। ভাবনা ঘরে নেই।
শ্বশুর মশাই ধমকে উঠে বললেন, তুমি কি বলছো এসব! মেয়েটা আমার ভালো মতো শহরের অলিগলি চিনে না। এতদূর একা আসবে কি করে? তাও আবার এতো রাতে!
আমি বললাম আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না! তিনি জবাব শুনে বললেন, আমি কাল সকালেই আসছি। যেখান থেকে হোক ভাবনাকে খুঁজে বের করো। নয়তো কত ধানে কত চাল আমি তোমাকে বুঝিয়ে ছাড়বো বাছাধন! আমি ফোনটা কেটে দিয়ে ভাবলাম, এখন দেখছি সবাই আমাকেই নিয়েই টানাটানি শুরু করবে। দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললাম কোথায় আছো ভাবনা এসে আমাকে উদ্ধার কর। নয়তো আমি শেষ!
না খেয়েই কোনমতে বিছানার উপর শুয়ে পড়লাম ক্লান্ত শরীরে ঘুম আসতে দেরি হলো না।
পরদিন সকালে দরজায় বোমা ফাটার মতো আওয়াজে ঘুম ভাঙলো। কে যেন দরজায় লাথি মারছে।
তড়িঘড়ি করে এসে দরজা খুলে দিলাম।
আমার শ্বশুর রকেটের গতিতে ঘরে প্রবেশ করতেই চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলেন,
ঘরের একি অবস্থা! আমি জবাব দেবার আগেই তিনি ডাকতে লাগলেন, ভাবনা!
ও মা ভাবনা! আমি তার পিছনে দাঁড়িয়ে বললাম, আব্বা! শান্ত হোন ভাবনা।
বাড়িতে ফেরেনি! কি এখনো ভাবনা বাড়িতে ফেরেনি?
তিনি আমার শার্টের কলার চেপে ধরে বললেন, এখনো সময় আছে বল আমার মেয়ে কোথায়?
আমি নিজেকে তার হাত থেকে কোন মতো ছাড়িয়ে বললাম, আমি আপনার মেয়ের জামাই! এমন করে কথা বলছেন কেন? শান্ত হোন! সবই খুলে বলছি আপনার কাছে। তিনি ধমকে উঠে বললেন, রাখ তোমার মেয়ের জামাই! আমার মেয়ে কোথায়? কি করেছো তার সাথে। ঘরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তুমি আমার মেয়েকে কিছু করে দিয়েছো! আমি এবার রাগে চিৎকার করে উঠে বললাম, আগে শুনে তারপর আমাকে দোষ দেন।
গরমে একটু কাজ হলো। তিনি শান্ত হয়ে বসে পড়লেন। আমি তাকে সব বুঝিয়ে বললাম। তিনি সব শুনে জিজ্ঞেস করলেন, এই হাসান! তোমার কি মনে হয় আমি বোকা? কেন একথা বলছেন জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন ডাকাতি করে সব নিয়ে গেছে বুঝতে পারলাম কিন্তু আমার মেয়েকে কি তারা সাথে করে নিয়ে গেছে? তা তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে বলো!
এতো বোকা আমি নই!
দেখাচ্ছি তোমাকে মজা। আমি কপালে হাত দিয়ে বসে পরলাম। কি করে বোঝাবো তাদের।
একটু পরে আমার শ্বাশুড়ি এসে মেয়ের জন্য মরা কান্না জুড়ে দিলো! পাশের বাড়ির সেই মহিলা দেওয়ালের উপর দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছেন। আমার চোখের সাথে চোখ পড়তেই নিচে নেমে গেলেন।
সোহেল ভাই আর সোহানা ভাবি দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, কি হলো আপনাদের এতো চিৎকার চেচামেচি কেন?
শ্বশুর মশাই জিজ্ঞেস করলেন আপনি কে? আমি বললাম উনি পাশের ঘরে থাকেন। শ্বশুর সোহেল ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললেন, এই যে হাসান কে দেখছেন। সে আমার মেয়েকে নিশ্চয়ই মেরে কোথাও গুম করে দিয়েছে। একটা মিটমিটে বদমাশ! উপরে ভালো মানুষের রুপ!
সোহেল ভাই বোকার মতো আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, একি বলছে আপনার শ্বশুর? শ্বশুর মশাই বললেন, শুধু বলছিনা এটাই সত্যি! নয়তো আমার মেয়ে কোথায় গেলো ? একথায় সোহেল ভাই চুপ! সোহানা ভাবি ডেকে নিয়ে কি যেন বললো। সোহেল ভাই এসে বললো আমাদের অফিসের সময় চলে যাচ্ছে আমরা যাই। তারা চলে গেলেন। বুঝতে পারলাম কার ঝামেলায় কে পড়তে চায়!
শ্বাশুড়ি মরা কান্না জুড়ে দিয়ে বলছেন। মেয়ে আমার ঠিক বলেছিলো।
আমি বিশ্বাস করিনি। জামাই তাকে দেখতে পারে না! প্রতিদিনই খিটখিটে ঝগড়া ঝামেলা করে।
আমাকে এসে নিয়ে যেতে বলেছিলো কিন্তু আমি ওকে বুঝিয়ে থাকতে বাধ্য করেছি।
যদি মেয়ের কথা শুনে নিয়ে যেতাম তাহলে আজ তাকে হারাতে হতো না।
তার অভিশাপের প্রকোপে কান বন্ধ করে বসে রইলাম।
শ্বশুর মশাই শ্বাশুড়িকে ধমকে উঠে বললেন, রাখো তোমার কান্নাকাটি।
চলো আমার সাথে থানায়। আমিও তাদের পিছনে পিছনে থানায় গেলাম।
শ্বশুর মশাই থানার বড় বাবুর কাছে গিয়ে সরাসরি বললেন,
স্যার! এই জামাই আমার মেয়ের সাথে একটা কিছু করেছে নিশ্চয়ই।
আপনারা ওকে আচ্ছা করে পেঁদানি দেন দেখবেন, সব কথা পেট থেকে বেড়িয়ে আসছে।
ডাকাতি ফাকাতি কিছু না, সব বানানো গল্প! বুঝতে পারলেন স্যার।
আমাকে আলাদা করে নিয়ে এক অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, সত্যি বলুন কি হয়েছে? আমি কাতর গলায় বললাম স্যার! যা,সত্যি তাই বলেছি একবিন্দু মিথ্যা বলিনি। আমার সাথে ভাবনার একটু আধটু ঝগড়া ঝাঁটি হতো ঠিক কিন্তু এমন নয় যে তাকে আমি কিছু করে বসবো। আমার কথায় একবিন্দু মিথ্যা নেই স্যার!
অফিসার বললেন, সত্যিটা দুদিন আগে পরে আমরা বের করে ফেলবো। আপনার যা বলার বলে ফেলুন। নয়তো পরে আরও বেশি বিপদে পড়বেন। আপনার বউ এখনো বাড়ি ফেরেনি। বাবার বাড়িও যায়নি। তবে গেলো কোথায়? বললাম স্যার মনে হয় ডাকাতরা তাকে তুলে নিয়ে গেছে।
অফিসার হেঁসে বললেন, ডাকাতের দোহাই দিয়ে কাজটা আপনারও হতে পারে।
আপনার বউয়ের মোবাইল নাম্বারটা দিন। দিলাম নাম্বার।
অফিসার ফোন করলেন কিন্তু বন্ধ! তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
আমাদের কথা ছাড়া কোথাও যাবেন না।
কারণ এখন আপনি আমাদের সন্দেহের তালিকায় প্রথম স্থানে আছেন।
আমি দুঃখের চোটে কেঁদে ফেললাম! একে তো সবই গেল। তার উপর আমিই না-কি প্রথম সন্দেহভাজন! সেই মহিলার কথাটা বলতে গিয়েও বলিনি তাতে আমার উপর তাদের সন্দেহ আরও জোরালো হবে!
থানা থেকে চলে আসার সময় শ্বশুর মশাই তার চোখ দিয়ে আমাকে খেয়ে ফেলার উপক্রম করলেন। আমি কোন মতো তার দৃষ্টি থেকে নিজেকে রক্ষা করলাম।
বাড়িতে এসে প্রথমেই ভাবনার মোবাইলটা পকেটে ভরে। শহরের শেষ প্রান্তে এক ডাস্টবিনের ফেলে দিলাম। তারপর সেটার উপর ময়লা দিয়ে ঢেকে দিলাম। চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ দেখতে পেল কি-না? কাউকে দেখতে না পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চলে এলাম নিজের ঘরে।
পরের পর্ব পেতে কমেন্ট করে রাখুন
চলবে,,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com