নিস্তব্ধ প্রেমাবেগ |পর্ব -১৪
বরযাত্রী এসে পড়েছে।সবাই চারদিকে ব্যস্ত.. এর মধ্যে আদিবার বান্ধবী মিহু অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই তাকে নিয়ে হসপিটালে গেছে আদিবা রোদ তিয়াস।
সবাই মিলে বরযাত্রী আপ্পায়ন করছে।
জয়ের ফোনে কল আসতেই রিসিভ করলো জয়।জিসান কল করেছে।রিসিভ করে কথা বলতে বলতে হাঁটা ধরল জয়।
হঠাৎ জানালা দিয়ে চোখ গেলো শ্রেয়ার ঘরের দিকে।পুরো রুম এলো-মেলো হয়ে আছে।আর বিছানায় এলোমেলো হয়ে ঘুমাচ্ছে শ্রেয়া!
ফোন কান থেকে নামিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো জয়।এদিকে দাদাভাই দাদাভাই করেই চলেছে জিসান। সেদিকে খেয়াল নেই জয়ের।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কল কেটে ঘরের দরজায় নক করলো জয়।
বার কয়েক নক করার পর দরজা খুললো শ্রেয়া ঘুম ঘুম চোখে।দরজা খুলেই আবারও বিছানায় শুয়ে পড়লো।জয় এক পুরো ঘর পলক দেখে নিলো তারপর তাকালো শ্রেয়ার দিকে।গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।কেঁদেছে খুব হয়ত।নাক চোখ ঠোঁট ফুলে আছে।
দরজাটা আটকে নিলো জয়।কেউ আসলে খারাপ ভাবতে পারে।
সোফার উপর সেদিনকার নীল-গোল্ডেন কালার লেহেঙ্গা টা।পাশে কিছু অর্ণামেন্টস।হয়ত আদিবা দিয়ে গেছে আর সেভাবেই রয়েছে।নিচে কালকের পড়া হলুদের পোশাক!
জয় সোফায় বসে পড়লো!
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শ্রেয়ার নাম ধরে ডাকতে লাগল।
বেশ কয়েকবার ডাকার পরও উঠলো না শ্রেয়া।এবার খুব জোড়ে চিৎকার করে শ্রেয়া বলে চেঁচিয়ে উঠলো জয়।
ধড়ফড় করে উঠে বসল শ্রেয়া।কি হয়েছে কি হয়েছে বলে চারদিকে চোখ বুলালো!
শ্রেয়ার চোখগুলো লাল হয়ে আছে।কাঁপছে রীতিমতো!
জয় শান্ত গলায় বলল ডাকছি সেই কখন থেকে..ভয় পেয়েছো?
আমায় আর কখনো এভাবে ডাকবেন না জয় ভাইয়া।আমার খুব শরীর খারাপ করে।বিরবির করে বলল শ্রেয়া
ওকে!যাও ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও।
কেনো?
বরযাত্রী এসে পড়েছে অনেক আগেই। যাবে না?উঠো।আর এ অবেলায় এভাবে ঘুমাচ্ছো কেনো?
এবার খুব রাগ হলো শ্রেয়ার।মুখের উপর বলতে যেয়েও পারলো না।নিজেকে শান্ত রেখে বলল আমার কোনো আত্মীয় স্বজনের বিয়ে তো নয় তাহলে আমি রেডী হবো কেনো?
আর তাছাড়া আমি এ বাড়ির আশ্রিতা।আমি কোথায় থাকলাম না থাকলাম তা দিয়ে আপনার কি?
আর আমি গেলেই যতসব অশান্তি পাকাই!দরকার নেই।তার থেকে এ ঘরেই ভালো আছি।
সারাদিন তো মনে হয় না কিছু খেয়েছো..ঘুমিয়েছো কখন?
কি হলো চুপ কেনো বলো?
বলো(কিছুটা ধমকে)
কাল হলুদের প্যান্ডেল থেকে এসে আর যাই নি!
সরি শ্রেয়া..
কিছুটা অবাকের চোখে জয়ের দিকে তাকালো শ্রেয়া।
আসলে আমি বারবার তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলি।এরকম করা ঠিক না আমি জানি।কিন্তু কেনো যেন মাথা ঠিক থাকে না।আমি হয়ত মানুষটাই এরকম!
শ্রেয়ার আরো অভিমান জমলো!কিছু না বলে ঠাঁই বসে রইলো!
কি হলো চলো
না
আবার..
কি আবার কি আবার?আবার মারবেন?অপমান করবেন?করুন না।না করলো কে?আমি তো অপমান করার মতই একজন মানুষ!
শ্রেয়া প্লিজ..
না ওখানে গেলে আমি আবার একটা গন্ডগোল বাঁধাবো আর আপনি যা তা..
বলবো না!যা তা বলবো না..
আমি এখন ঘুমাবো।খুব ঘুম পেয়েছে..বলেই বিছানায় শুয়ে কম্বল দিয়ে মাথা ঢেকে নিলো শ্রেয়া।
লাইট অফ করে শ্রেয়ার কম্বলের ভেতর ডুুকে গেলো।
পাশে জয়কে শুতে দেখে লাফিয়ে উঠলো শ্রেয়া।আপনার কি মাথা গেছে!
না তোমার গেছে!শোওউ বলেই শ্রেয়ার বাহু টেনে ধরে শুয়িয়ে দিলো।
মুখ ঘুরিয়ে একটু দূরে সরে শুয়ে পড়ল শ্রেয়া।
একটা কথা বলি?
একটা কেন একশটা বলুন..আমার তাতে কি?
মুচকি হাসল জয়!তুমি কি বিয়ে তে রাজি শ্রেয়া?
মানে?
বোঝো নাই?
হঠাৎ এ প্রশ্ন?
আমি তোমায় প্রশ্ন করছি আর তুমি উত্তর না দিয়ে উল্টো আমায় প্রশ্ন করছো?
দাদু রাজি থাকলে আমি রাজি!
তোমার নিজের কোনো মতামত নাই?
নাহ!
আমি যদি বিয়েতে রাজি না হই তবে?
তবে কি?ভাগ্যে যা আছে তাই হবে..
আমি কিন্তু বিয়ে তে রাজি।হয়ত বা ভাবছো দাদানের কথায়।কিন্তু নাহ্।আমি নিজ থেকে চাইছি বিয়েটা হোক!আমি বলবো না দাদানের জন্য বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছি।হ্যানত্যান।আমি বলবো আমিই চাইছি বিয়েটা করতে।
আমায় কেনো?
কারন সবাই তোমাকে পছন্দ করে তাই।
ওহহ
হুমম।এদিকে ফিরো তো..
না..
কেনো?
এমনিই।যান এ ঘর থেকে
তুমি আমায় এ ঘর থেকে যেতে বলছো কেনো?তুমি
আমি কি?আমি ভুলে যাচ্ছি এটা আপনাদের বাড়ি? না ভুলি নি।কিন্তু..
থামো তো।বলেই শ্রেয়ার একটু কাছে চলে গেলো জয়।
শ্রেয়ার ঘাড়ে মুখ ডুবাতেই কেঁপে উঠল শ্রেয়া।এক ধাক্কা দিতেই দূরে সরে গেলো জয়।
বাঁকা চোখে তাকিয়ে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
মুখ গুজে কাঁদতে লাগলো শ্রেয়া।জয় কেনো তার সাথে এত ভালো ব্যবহার করেছে তা তার কাছে পরিষ্কার..!
আজ জুঁইয়ের বার্থডে।বাবার জোড়াজুড়িতে একটা পার্টি রেখেছে ক্লাবে।বাসায় বাবা অসুস্থ বলেই এখানে আয়োজন।লাল গাউন পরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জিসানের জন্য অপেক্ষা করছে জুঁই!
প্রায় সব ফ্রেন্ডরা চলে এসেছে।
এদিকে ওদিক তাকাতে তাকাতেই জিসান চলে এলো।
হাই জুঁই!
হ্যালো..এসো তোমার অপেক্ষাই করছিলাম।
ওহ আচ্ছা। হ্যাপি বার্থডে বলেই গিফট টা হাতে তুলে দিলো।
থেংকিউ বলেই গিফটা হাতে নিতেই জিসান বললো ইট’স এ সিক্রেট গিফট!একা দেখবে।জিসানের কথায় মুচকি হাসলো জুঁই।সে আজ সিউর জিসান তাকে পছন্দ করে।
কেক কাটো..
হ্যা চলো।
সবাই মিলে কেক কাটলো।যে যার মতো এনজয় করছে।
জিসান একটু দূরে গিয়ে ডিংক করছে।মাথটা যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে তার।কেনো বাড়ির কেউ তার সাথে ঠিকভাবে কথা বলছে না।কেনো সে কিছু বলতে পারছে না।পরক্ষণেই ভাবছে ইরিনার বিয়ের জন্য হয়ত সবাই ব্যস্ত।শ্রেয়াকে হারিয়ে ফেলবে না তো!একের পর এক ড্রিংক করেই যাচ্ছে জিসান।
একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো জুঁই।জিসানকে দেখেই বুঝতে পারছে কিছু একটা নিয়ে খুব চিন্তিত সে।
কাছে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না।তাই একটু দূরেই দাঁড়িয়ে রইল।
যে যার মত ডান্স করছে। মিউজিক বেজে চলেছে।
আধ ঘন্টা পর জুঁই অনেক সাহস নিয়ে জিসানের কাছে গেলো।
ওমনি জুঁইয়ের শরীরে হেলে পড়লো জিসান।
আমায় বাড়ি নিয়ে চলো।অস্পষ্ট কন্ঠে বলল জিসান!
হুম!
এত রাতে একা জিসানকে ওর বাসায় পৌঁছে দিবে নাকি নিজেদের বাসায় নিয়ে যাবে বুঝে উঠতে পারছে না জুঁই।প্রচন্ড সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছে।অবশেষে না ভেবে ওদের বাসায়ই নিয়ে গেলো।
কোনো রকম ধরে উপরে নিয়ে গেলো।
আবলতাবল বকছে জিসান।পানি খায়িয়ে জুতা খুলে দিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে আসতেই নিলেই জুঁইয়ের হাত টেনে ধরল জিসান।চোখের চাহনী এক নিমিষেই বুঝে গেলো জুঁই! ভুল জেনেও ভুল কাজটায় বাঁধা প্রধান করলো না সে!হয়ত তার রাজকুমারকে আজীবনের জন্য পাওয়ার আশায়…
চলবে_
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com