গল্পঃ বোবা বউ | পর্ব -০৬
সবার সাথে বাসে উঠে আমি চমকে গেলাম!!
– কারণ আমি যেই সিটে বসবো তার পাশের সিটে সিনথি বসা!!
– মনে প্রশ্ন জাগতেছে যে সিনথি এখানে কেনো?? ওও তো আমাদের জুনিয়ার ক্লাসমেট তার উপরে আবার আমার পাশের সিটে কারণটা কি বুঝতেছি না!!
– এসব ভাবনায় বিভোর ছিলাম তখনই সিনথি ডাক দিলো!!
– কি হলো বসো!! ( সিনথি)
– হুম বসতেছি!! ( বলেই ওর পাশের সিটে বসে গেলাম)
– কি হলো চমকে গিয়েছো তাই না!! আসলো সুমন ভাইয়াকে আমিই বলেছিলাম যেনো তোমাকে না বলে আমিও যাচ্ছি তোমার সাথে?? ( সিনথি)
– তুমি ওখানে গিয়ে কি করবে!! ( রাজ)
– কেনো সবাই ঘুরতে যাচ্ছে আমিও যাবো ঘুরতে?? ( সিনথি)
– আচ্ছা আমাকে একটা সত্যি কথা বলবা!! ( রাজ)
– হুম বলো কি জানতে চাও!! ( সিনথি)
– আমার নাম কি ঘুরতে যাওয়ার গ্রুপে আগে থেকেই ছিলো নাকি তুমি সুমনকে দিয়ে দিয়েছো কোনটা?? ( রাজ)
– আসলে আমিই সুমন ভাইয়াকে বলে নামটা দিয়েছিলাম!! ( সিনথি)
– ওহ ভালো!! ( মনে মনে সুমনের উপরে রাগ হতে লাগলো)
– বাস ছেড়ে দিলো কিছুক্ষণ পর!! সবাই চিল্লাচিল্লি করতেছে আর আমি এক কোণায় বসে আছি!!
– গভীর রাতে গিয়ে পৌছালাম কোয়াকাটা!! হোটেল আগে থেকেই বুকিং ছিলো তাই বেশি সমস্যা হয় নি!!
– আমার পাশের রুমই সিনথিয়ার!! বাকি রাতটা আমি,, সিনথি,,,সুমন আর ওর গালফ্রেন্ড মিলে গল্প করেই কাটিয়ে দিলাম!!
– সকালে আযান দেওয়াতে আমি ফ্রেশ হয়ে নামাজ এর জন্য যাবো তখনই সুমন ডাক দিলো!!
– রাজ কি করবি এখন!! ( সুমন)
– নামাজ পড়বো!! (রাজ)
– তুই নামাজ পড়া ধরলি কোনদিন থেকে!! ( সুমন)
– যেদিন থেকে….. ( বলতে গিয়েও বললাম না!! কথাটা মনেই রেখে দিলাম!!)
– যেদিন থেকে মাহি এসেছে আমাদের বাড়িতে সেদিন থেকেই নামাজের অভ্যাস বানিয়ে দিয়েছে!!! মাহি মেয়েটা কেমন যেনো অন্যরকম!! আমাকেও নামাজের অভ্যাস ধরিয়ে দিয়েছে!! ( মনে মনে ভাবতে লাগলাম)
– কিরে কি বলতে গিয়ে আমার থেমে গেলি??তা নামাজ পড়া ধরলি কবে থেকে!! ( সুমন)
– বেশকিছুদিন হয়েছে তুইও পড়তে আয়!! ( রাজ)
– যা তুই কাল থেকে পড়বো ইনশাআল্লাহ !! ( সুমন)
– আচ্ছা!! ( বলেই চলে গেলাম নামাজ পড়তে)
– নামাজ শেষ করে দিলাম একটা ঘুম!! কতক্ষণ ঘুমালাম তা বলতে পারবো না!!
– হঠ্যাৎ কারোর ধাক্কায় ঘুম ভাঙ্গলো!! তাই ঘুমের ঘরেই বলে উঠলাম!!
– মাহি তুমি যাও আমি আসতেছি!! ( ঘুমাতে ঘুমাতে বললাম)
– তখনই কানে কারোর ডাকার আওয়াজ এলো!!
– রাজ ঐ রাজ উঠো না কেনো!! সবাই ঘুরতে যাবে বলে রেডি হইতেছে আর তুমি এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছো!! ( সিনথি)
– ওও সিনথি তুমি!! এত সকালেই সবাই ঘুরতে বেড় হয়ে যাবে!! (রাজ)
– সকালে পেলে কোথায় তুমি?? ( সিনথি)
– কেনো বাজে কয়টা?? ( রাজ)
– বিকেল ৪:০০ বাজে তাড়াতাড়ি উঠো!!( সিনথি)
– কিহ!! ( ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে বললাম!!)
– হুম বিকেল হয়ে গেছে এখন উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও ঘুরতে যেতে হবে!! ( সিনথি বলেই ওর রুমে চলে গেলো)
– আমি বসে বসে হাসতে লাগলাম!! আর ভাবতে লাগলাম!!
– এত দেরি হয়ে গেলো উঠতে তাও আজকে কেউ ডাক দিলো না!! পেটেও প্রচুর খিদেও পেয়েছে!!
– তাই ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে প্রথমে খাওয়া-দাওয়া করলাম!! তারপর সবাই মিলে ঘুরতে বেড় হলাম!!
– ঘুড়াঘুড়ি করে প্রায় রাতে বাসায় আসলাম!! ফ্রেশ হয়ে এসে খাটে শুয়েই গুমিয়ে গেলাম!!
– সকালে ঘুম ভেঙ্গে তাকিয়ে দেখি সকাল ১০:০০ বাজে খিদের কারণে ঘুম ভেঙ্গে গেলো!! তাই ফ্রেশ হয়ে গিয়ে আগে খাওয়া-দাওয়া করে আসলাম!!
– আরো পাঁচদিন এর টুর শেষ করে বাসায় চলে আসলাম!! সিনথি আর সুমনদের থেকে বিদায় নিয়ে নিলাম!! আর দেখলাম সিনথি অনেক খুশি!! অনেকদিন পর সিনথিকে হাসতে দেখলাম!!
– সবকিছু শেষ করে বাসায় আসতে আসতে প্রায় শেষ রাত হয়ে গেছে!! তাই আব্বুকে আর ডাকলাম না!! রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম!!
– বাসায় এসে দেখি মাহি আর আম্মু এখনো আসে নি!! আজ-কালকের মধ্যে আসার কথা!! বাসায় একা-একা ভালো লাগতেছে না!!
– আসলে মাহির করা কেয়ারগুলো এই কয়েকদিন অনেক মিস করেছি! ” ওর প্রতিদিন নামাজের জন্য ডেকে উঠানো আবার সকালে নাস্তার সময় ডেকে উঠানো!! প্রত্যেক বেলায় মেসেজ দেওয়া খেয়েছি কি না!!
– এসব কথাগুলো এখন অনেক মিস করতেছি!! ওরা যাওয়ার পর আম্মুর সাথে দু-তিনবার কথা হয়েছিলো কিন্তু মাহির সাথে মেসেজ করা হয় নি!!
– আজকে অনেক মনে পড়তেছে মাহির কথা তাই মোবাইলটা নিয়ে মাহিকে মেসেজ করলাম!!
– আস্সালামুআলাইকুম!!( মেসেজ দিয়ে মোবাইলটা রেখে দিলাম)
– দুই মিনিট পর আমার মোবাইলটা টুং করে উঠলো তাকিয়ে দেখি মাহির মেসেজ তাই তাড়াতাড়ি সিন করলাম!!
– অলাইকুমআস্সালাম!! কেমন আছেন?? ( ওপাশ থেকে)
– আলহামদুলিল্লাহ!! তুমি কেমন আছো?? ( রিপ্লে দিলাম)
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো!! ( মাহির রিপ্লে)
– কবে আসবে বাসায়!! ( রাজ)
– কাল বিকেলে আসবো!! ( মাহি রিপ্লে করলো)
– ওহ,, তাহলে তো ভালোই!! ( রাজ)
– হুম!! তা হঠ্যাৎ করে আমার কথা মনে পড়লো কিভাবে!! ( মাহির মেসেজ)
– মাহির এমন মেসেজ দেখে হালকা সরম পেয়ে গেলাম!! কারণ ওরা ঐখানে গিয়েছে সাতদিন হলো আর আজ প্রথম আমি ওকে নক করলাম!!
– কিন্তু এই প্রথম দেখলাম মাহি অভিমান করে কথা বলতেছে!! এসব ভাবতেছিলাম তখনই আবার মোবাইলটা টুং করে উঠলো!!
– কি হলো জবাব দেন না কেনো?? ( মাহি মেসেজ দিলো)
– সরি??!! আসলে একটু বিজি ছিলাম তাই সময় হয়ে উঠে নি?? ( রিপ্লে দিলাম)
– ইটস ওকে!! তা নামাজ পড়েন তো নিয়মিত নাকি!! ( মাহির মেসেজ)
– সরি তাও হয়ে উঠে নি!! ( রিপ্লে দিলাম)
– কেনো?? ( মাহির মেসেজ)
– আসলে এই কয়েকদিন কেউ ডাক দেয় নি তো তাই পড়তে পারি নি!! ( রিপ্লে দিলাম)
– কোথাও আমার কথা বলতেছেন না তো?? ( মাহির মেসেজ)
– হুম!!! ( রিপ্লে দিলাম)
– ডাক দেওয়ার মানুষটা যেদিন থাকবে না ঐ দিন কে ডেকে দিবে!! ( মাহির মেসেজ)
– মাহির এই মেসেজটা দেখা মাত্রই কলিজার ভিতরটা ধুমড়ে-মুচড়ে উঠলো!! আর কিছুই লেখার মতো শক্তি নেই!! আর কি বা লেখবো এর জবাবে!!
– মোবাইলটা পাশে রেখে দিলাম!! কারণ আবার কি না কি বলে বসে তখন আবার তার উত্তর দিতে পারবো না!! তারপরেও কয়েকবার মোবাইলে টুংটুং করেছে!! কিন্তু মোবাইলের স্কিনে তাকানোর শক্তি নেই তাই আর তাকাই নি!!
– আসলেই মাহি চলে গেলে থাকবো কিভাবে আমি!! কে ডাকবে আর নামাজের জন্য আমি থাকতে পারবো তো ওকে ছাড়া??
– এসব ভাবতে ভাবতে-ভাবতে কখন যে সকাল হয়ে গেলো তা নিজেও বলতে পারবো না!!
– সকালের নাস্তা করে দিলাম এক ঘুম!! কতক্ষণ ঘুৃমালাম তা মনে নেই!!
– কারোর ধাক্কায় ঘুম ভাঙ্গলো “! চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি মাহি!!
– কেমন আছো মাহি!! ( রাজ)
– মাহি রাগে ইশারা করে বুঝালো এখনো ঘুমাচ্ছি কেনো??
– কেনো বাজে কয়টা!! ( রাজ)
– মোবাইলটা ঘুড়িয়ে আলোটা জ্বালাতেই চোখে পড়লো ৪:০০ টা বাজে!! তাই তাড়াতাড়ি উঠে গেলাম!!
– মাহি ইশারায় বুঝালো খাওয়া-দাওয়া করেছি কি না! /!
– সকালে খেয়েছি দুপুরে খাওয়া হয় নি?? ( রাজ)
– এটা বলার পরই মাহি রাগের মুখ নিয়ে চলে গেলো!! আমি শুধু ওর যাওয়ার দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে ছিলাম!!
– আমি উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম! ওয়াশরুম থেকে বেড় হতেই দেখি মাহি খাবার নিয়ে বসে আছে!!
– আমাকে দেখা মাত্রই ইশারা করলো খেয়ে নিতে?? পেটে প্রচুর খিদে তাই দেরি না করে খেয়ে নিলাম!!
– আর মাহি শুধু আমার খাওয়া দেখতে লাগলো!! খাবার শেষ করার পর মাহি চলে গেলো সবকিছু গুছানোর জন্য!!
– আমি বসে বসে মোবাইল টিপতে লাগলাাম!!
– কিছুক্ষন পর মাহি আসলো রুমে এসেই ওর সাথে নিয়ে যাওয়া কাপড়গুলো আলমারিতে গুছাতে লাগলো!! আর রাগি চোখে আমার দিকে দেখতে ঘুড়তে লাগলো!!
– বুঝতে পারলাম এসেছে বেশিক্ষন হয় নি আর এটাও বুঝতে পারলাম মাহি খুব রেগে আছে কিন্তু কি বলে ওর রাগ কমাবো তা বুঝতে পারতেছি না!!
– মাহি এদিকে এসো?? ( রাজ)
– অভিমানী মুখ নিয়ে আমার কাছে এসে বসলো!!
– আমার উপর রেগে থাকার কারণটা কি জানতে পারি!! এত রাগ তো কোনোদিন করেন নাই আজকে এত রাগ করার কারণ কি জানতে পারি!!
– আরেকটা কথা অভিমান করলে যে আপনাকে অনেক কিউট লাগে তা কি বলেছে কেউ!! ( রাজ)
– মাহি উঠে গিয়ে ওর খাতায় কি যেনো লেখতে লাগলো!! আমি শুধু ভাবতে লাগলাম কি এমন কারণ যে এত রাগ করে বসে আছে!!
– কিছুক্ষন পর ওর সেই পেপারের পেইজটা ছিড়ে হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো!!
– আমি খুলে পড়তে লাগলাম “” আপনি বলেছিলেন অফিসে কাজ আছে তাই আপনি আম্মুকে আমাদের সাথে যাবেন না বলে দিছেন!! আমি মানলাম কাজ আছে তাই যান নি!! কিন্তু পরের দিন আপনি আপনার ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুড়তে চলে গেলেন।!! তখন আপনার অফিসের কাজগুলো কোথায় ছিলো!!
– আপনি গেলেন তাও আবার আম্মুকে না বলে জানেন আম্মু এটা শুনলে কতোটা কষ্ট পাবে!! আপনি কি বলেন তো একটু!! কাল রাতে নাকি ফিরেছেন!!
– সকাল থেকে এখনো না খেয়ে ঘুমাচ্ছেন!! আমি আর কয়েকদিন তারপর কে সামলাবে আপনাকে!! আমি যাওয়ার আগে নিজেকে গুছিয়ে নিন!! নাহলে যাকে বিয়ে করবেন তাকে আপনার বেড হবিড গুলোর ব্যাপারে আগে থেকে বলে রাখবেন নাহলে ঐ মেয়ে আপনাকে সামলাতে-সামলাতে পাগল হয়ে যাবে!!
– আর এসেছেন সেই রাতে আব্বুর সাথে এখনো তো দেখা করেন নি!! ওনি না বললে তো জানতেই পারতাম না যে আপনি এই কয়েকদিনে এতসব করে ফেলেছেন
– সবটা পড়ে বুঝতে পারলাম আব্বু সব বলে দিয়েছে!! আর এখন মাহির রাগ কিভাবে ভাঙ্গাবো তাই বুঝতে পারতেছি না!!
– সালার কিসের জন্য গেলাম ঘুরতে এখন তো কোথাও মুখ দেখানোর মতো রইলো না!!
– এসব ভাবতেছিলাম তখনই মোবাইলরা টুং…………..
( চলবে………..!!)
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com