গল্পঃ ব্যস্ততা
অর্পার স্বামী অফিস থেকে বাসায় ফিরে খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। আজও ঠিক তেমনটাই করেছে।
অর্পা আজ একটা নীল শাড়ি পড়েছে, কপালে বড় একটা টিপ,
হাত ভর্তি নানান রঙের চুড়ি, চুলগুলো সব খোলা।
কুচকুচে কালো আর লম্বা চুল অর্পার। পাশের বাসার ভাবী সমাজে তার চুলের নিন্দা শোনা যায় যখনতখন।
খাবারে টেবিলটা পরিষ্কার করে রান্না ঘর গুছিয়ে নেয় তাড়াতাড়ি।
ছেলেমানুষী গুলো কমে এসেছে। সময় একটা নিরব তালে সেসব বিলুপ্ত করে।
রাত জেগে পাখিদের পাখা ঝাপটানো শুনার ইচ্ছা আজ আর হয় না।
তবে সারদিন একা থাকে বলে এক কোটি কথা জমে থাকে অর্পার মনে। কথার উপর কথা চাপা পড়ে।
হাতের কাজ শেষ করে ভয়ে ভয়ে গিয়ে তার স্বামীর পাশে বসে আস্তে করে ডাক দেয়, “তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছ? “
হাতের কাজ শেষ করে ভয়ে ভয়ে গিয়ে তার স্বামীর পাশে বসে আস্তে করে ডাক দেয়, “তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছ? “
“না ঘুমাইনি বলো।”
অর্পা আলতো করে লজ্জা মাখা মুখে বলে, “দেখো আজ আমায় কেমন লাগছে? “
“প্লিজ অর্পা তুমি জানো কাল সকালে আমার অফিস আছে। সারাদিন অনেক প্যারা গেছে আমার ওপর দিয়ে এখন একটু ঘুমাবো প্লিজ। “
অর্পা উঠে পড়ে ধীরে ধীরে। সে রুম থেকে বের হয়ে টিভির রুমের দিকে এগুতে থাকে। তবুও মনের মধ্যে একটা ক্ষুদ্র আশা আছে তার পেছন থেকে এই বুঝি তার স্বামী আদনান ডাক দিল। কিন্তু আদনান ডাকে না। টিভিটা অন করে অনেক খোঁজাখুঁজি করে, “আচ্ছা এমন কোন অনুষ্ঠান কি নেই যেটা এই মুহূর্তে অর্পার মনকে ভালো করে দিতে পারে।”
না এমন কিছু সে পায়না।
জীবন কত রকম ভাবে বদলায় অথচ বিয়ের আগে আদনান কতো রিকোয়েস্ট করতো শাড়ি পরার জন্য।
কতো রকম ভাবে আবদার করতো। আজ তাকিয়ে দেখবার সময়টুকুও তার নেই।
কেন এত কাজ করতে হয় আদনানকে? অর্পা উত্তর পায় না।
কেন এত দরকার বেশি টাকা পয়সার, এত বেশি অর্থবিত্তের?
কোন দরকার নেই। যেখানে ভালোবাসার মানুষটিকে সময় দেবার মতো সময় পাওয়া যায় না
সেখানে অর্থ সম্পদ দিয়ে কী লাভ?
অর্পা বড্ড নিঃসঙ্গতায় দুমড়েমুচড়ে যায়।
অর্পা বড্ড নিঃসঙ্গতায় দুমড়েমুচড়ে যায়।
চোখগুলো শাড়ির আঁচলে মুছে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। জানালা দিয়ে দেখা যায় অনেক দূরের ল্যাম্পপোস্ট গুলো কিরকম সুন্দরভাবে নর্দমার ওপরে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। আঁধার, গভীর আঁধার নেমেছে এই পৃথিবীর উপরে, এই শহরের উপরে। এইসবের ভিড়ে কোথাও যেন অর্পার আগেকার সব সুখ লুকিয়ে আছে। কোথাও নিস্তব্ধ প্রাঙ্গণে অভিমানী সুখগুলো লুকিয়ে গেছে ইচ্ছে করে। আর কি কখনো ফিরবে না? উত্তর নাই এইসব প্রশ্নের তবুও একটা আশা অর্পা মনে বুনে। সব কালো একদিন আলো হয়ে ফিরে আসবে। আসা উচিত। খুব উচিত।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com