যদি হাতটি ধরো | পর্ব-০২ |লিখা-সাঈদ নাফিজ
ক্লাসের ভিতরে ঢুকে সব কিছুই নতুন নতুন মনে হচ্ছে,নতুন দেখেইতো সবকিছু নতুন মনে হচ্ছে। নিজের কাছেও কেমন যেন একপ্রকার লজ্জা লজ্জা লাগছে। “নতুন জামাই নতুন জামাই মনে হচ্ছিলো” যেন মনে হচ্ছে শশুড় বাড়িতে আসছি। কোথায় বসবো ভেবে পাচ্ছিনা।
হঠাৎ করে মনে হলো কে যেন আমার কাধের উপর হাত রেখেছে। আমি তার হাতের ছোঁয়া পেয়ে ঘারটা একটু ঘুরিয়ে দেখতে পেলাম যে আমার ছোট বেলার বন্ধু রিয়াদ।
ওরে দেখে একটু অবাকই হলাম এই ভেবে যে,, ও এই কলেজে কবে ভর্তি হলো।।সেটাতো আমি জানতামই না।। তারপর রিয়াদ কে বললাম যে…
-আরে রিয়াদ!! দোস্ত তুই কি এই কলেজে ভর্তি হয়েছিস নাকি? ? (নাফিজ)
-হুমমম, তুই আর আমিই শুধু এখানে ভর্তি হয়েছি বাকিরা সব অন্যান্য কলেজে ভর্তি হয়েছে। (রিয়াদ)
-তুই ভর্তি হয়েছিস সেটাতো কখনো বললি না। আর আমি নিজেকে কেমন যেন অসহায় অসহায় ভেবেছিলাম যে, শালার আমিই কি শুধু একা হয়ে গেলাম নাকি।যাইহোক তোরে দেখে মনে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেলাম।।(নাফিজ)
-দোস্ত!! এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি? চল সিটে গিয়ে বসি।।(রিয়াদ)
-ওকে দোস্ত চল(নাফিজ)
তারপর আমি আর রিয়াদ গিয়ে পিছনের একটা সিটে বসলাম।।কেননা আমিতো পিছনের সিটেই বসতে পছন্দ করি। এখানে বসলে গল্প করতে অনেক সুজগ পাওয়াযায়।।
রিয়াদ ক্লাসের সবার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো।আর আমিও সবার সাথে অল্প সময়ের ভিতরেই পরিচিত হয়ে গেলাম।।
–কিরে জান্নাত!! ছেলেটা কে?? (তানিসা)
–কোন ছেলের কথা বলছিস?? (জান্নাত))
–কোন ছেলের কথা বলবো।ঐ যে এতক্ষণ দরজার পাশে দাঁড়িয়ে যার সাথে কথা বলতেছিলি।।তার কথাই বলছি।
সেই ছেলেটা কে?? (তানিসা)
–আরে ও আমাদের ব্যাচেরই স্টুডেন্ট।
আজই প্রথম আসছে কলেজে,তাই আমার কাছ থেকে কলেজের অনেক বিষয় জিজ্ঞেস করেছিলো।। (জান্নাত)
–হইছে বুঝছি, তলেতলে পানি খাও আর আমাদের কে বলোনা।।ভালোই পারো।(তানিসা)
–আরে তুই কি ভাবতেছিস, তুই যেটা ভাবতেছিস সেটা মোটেও এরকম না।। যাষ্ট আজইতো আমাদের কথা হলো তাইনা! এর আগেতো আমি কখনো তাকে কোথাও দেখিইনি।। আর তুই এসব কি যা তা ভাবছিস?? (জান্নাত)
–ছেলেটা কিন্তু অনেক হ্যান্ডসাম।তোর সাথে একদম পারফেক্ট হবে।দোস্ত!! এই ছেলেটাকে দেখ পটাতে পারিস কি না।। (তানিসা)
–দেখ, আমার ওতো চুলকানি নেই বুঝলি।
আমি তোদের মতো এরকম প্রেম টেম নিয়ে পরে থাকিনা।। তোর প্রেম করতে ইচ্ছে করলে তুই গিয়ে প্রেম কর যাহ। আর ও ছেলেটা এরকম বলে মনে হয়না।।ওরে পটানো যতটা সহজ মনে করছিস ততটা সহজ না।(জান্নাত)(কিছুটা রাগান্নিত স্বরে)
–আচ্ছা দোস্ত!! চলতো ওর সাথে পরিচিত হয়ে আসি। আমার তো একদমই শইতেছেনা।আমি দেখিস ওরে পটিয়েই ছাড়বো।আমার প্রেমের ফাদে ওরে পরতেই হবে। (তানিসা)
–ধ্যাত!! তোর কথা বলা দরকার হলে তুই যাতো,আমাকে বিরক্ত করিস না।আমার মাথা টাল হয়ে যাচ্ছে।। ভো ভো করে ঘুরছে (জান্নাত)
–হিহিহি প্রেমে পড়লে ঠিকই মাথা ঘুরবেই তো।। আমারো কত ঘুরছে।। (তানিসা)
–স্যার আসছে, চুপকরতো।বেশি প্যাক প্যাক করবিনা।। (জান্নাত)
ক্লাসে স্যার আসলেন,সমস্ত স্টুডেন্ট গুলো স্যারের সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান প্রদর্শন করলো।।
আমাকে দেখে স্যার অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করলেন যে এতোদিন পর আসলাম কোত্থেকে, কোথায় কি করি সব কিছুই শুনলেন।।আর আমিও গরগর করে সব বলে দিলাম।
ক্লাস শুরু হওয়ার আগে রিয়াদের কাছে স্যারের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে ও বলল যে স্যার লোকটা নাকি খুবই ভদ্র, সবাইকে বাবা বলেই ডাকে, আর সে ক্লাসের মধ্যে ইংরেজিতেই কথা বলে বেশির ভাগ।
আমিও স্যারের সাথে কথা বলে বুঝলাম যে স্যার অত্যন্ত ভদ্র মানুষ।।
যাইহোক!! প্রথম ক্লাস ইংরেজি দিয়েই শুরু হলো। আর স্যার ইংরেজিতে বকবক করতে লাগলেন।।
আর আমার মতো আকাইম্মা গুলো তার নিজের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত। মানে গল্প নিয়েই ব্যাস্ত।।
আমাদের ক্লাস আস্তে আস্তে করে ৪ টা ক্লাস। হয়ে গেলো।।
ক্লাসের মধ্যে সময় গুলো মোটামুটি ভালোই কেটেছে।
একদিনের ক্লাসেই অনেক বন্ধু জুটেগেলো কপালে, জুটবেইতো। কেননা সবগুলোই আমার মতো ব্রান্ডের গল্প করুয়া ছাত্র।কোন গল্প উঠালে গল্পের শেষ না করে কোন ছাড়াছাড়ি নেই।
ক্লাস শেষ হলে সবার সাথে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে হাটছিলাম।।
হঠাত মনে হলে পিছন থেকে কেউ একজন ডাকছে, তাকিয়ে দেখি যে একটা মেয়ে আমায় ডাকছে,আর তার পিছনে জান্নাত দাঁড়িয়ে আছে।তারদিকে তাকালে সে বলল যে…
–ভাইয়া!! আপনার সাথে কি একটু কথা বলা যাবে?? খুব জরুরী একটা কথা,যদি বলতেন ভালো হতো। (মেয়ে)
মেয়েটির কথা শুনে কেমন যেন নিজেকে হিরোহিরো মনে হলো।যাক শালা আমার সাথেও নাকি কারো জরুরি কথা আছে।
আমি কি করবো বুঝতেছিনা।বলদের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে হিরোহিরো ভাবছি।। নিউ হারামি গুলোর মধ্যে থেকে একটা হারামি কানের গোড়ায় ফিসফিস করে বললো যে..
— দোস্ত!! যাও কথা বলো,ওর নাম তানিসা, মেয়েদের মধ্যে থেকে প্রেমের ক্যাপটেন্সি করে।।(রাজ)
-আরে সালা এইটা কি বলে,প্রেমের ও ক্যাপটেন্সি করে।।মাশাল্লাহ নারীরাতো দেখছি তাদের অধিকার সবই আদায় করে নিচ্ছে। দেখি মেয়েটা কি বলে,
তারপর মেয়েটার সামনে গেলাম এবং ভদ্র ছেলের মতো একটা সালাম দিলাম।
-আস্সালামু আলাইকুম (নাফিজ)
আমার সালাম শুনে মেয়েটা একটা হাসি দিয়ে সালামের জবাব দিলেন।
-ওয়ালাইকুম আস্সালাম (মেয়ে)
-তো আপু কি জন্য ডেকেছেন বলেন??
কি আপনার জরুরি কথা? (নাফিজ)
–আমার নাম তানিসা, আর আপনিতো নাফিজ তাইনা? ? (তানিসা)
–জ্বি আমি নাফিজ।।তাতো জানেনই, এখন বলেন কি বলবেন।।আমার বাসায় যেতে হবে।। (নাফিজ)
–আরে এতো ব্যাস্ত কিসের।
আপনি লোকটা না অনেক ভদ্র।
আজই আপনাকে দেখলাম প্রথম।।আপনার কথা বার্তা সবই সুন্দর।(তানিসা)
–আমাকে আলুপাম দেয়া হচ্ছে তাইনা?? আমি ছেলেটা বোকা হলেও সবই কিন্তু বুঝি।আপনি আমাকে আলুপাম না দিয়ে বাসায় গিয়ে আলু সিদ্ধকরে ভর্তা করে খান কাজে লাগবো।।গুডবায়।(নাফিজ)
-আরে আরে শুনেননা।আমার কথাটাতো শুনেন।(তানিসা)
-এতক্ষণ কি তাহলে ভাষন শুনলাম নাকি?? এতক্ষনতো আপনার কথাই শুনলাম।
ভালো থাকেন, বাসায় যাইতে হবে।।
এই বলে ওখান থেকে সোজা চলে আসলাম।তারপর গরগর করে বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে বাসার দিকে হাটতে আরম্ব করলাম।
-ধ্যাৎ ভাল লাগেনা, ভাবছিলাম ছেলেটাকে একটু পটাবো নাহ সেটা আর হলোনা।। (তানিসা)
–কিরে কি বললো?? আমিতো জানি তুই ওরে পটাতে পারবিনা। (জান্নাত)
–আমিও দেখে নিবো তুমি কোন জাগার চান্দু আর আমি কোন তানিসা।।
–তোর দ্বারা মফিজ পটতে পারে কিন্তু নাফিজের মতো ছেলেরা তোমার জালে ফাসেনা বুঝলা! (জান্নাত)
-তুই চুপপপ কর? দেখ আমিই ওরে পটাবো। (তানিসা)
–আচ্ছা দেখা যাবে কেমন পারিস তুই।।
এখন যাহ বাসায় গিয়ে আলু সিদ্ধ করে ভর্তা মাখিয়ে খেয়ে নিজেকে প্রস্তুত কর।
চলবে….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com