Breaking News

ফ্যামিলি কাণ্ড | ৩য় পর্ব

কিন্তু হাওয়া বেগম রুমে ঢুকে স্যুপের বাটি খালি দেখে এত এত অবাক হলেন যে বলার মত না।
নুপুর পুরো বাটি খালি করে ফেলেছে এতো বিশ্বাস করার মত নয়।
সামনে রাসেলের হাতে দুধের গ্লাস দেখেই বুঝে ফেললেন কাহিনীটা কি।
তাহলে রাসেলই জোর করিয়ে খাবারটা খাইয়েছে নুপুরকে। হাওয়া বেগম বেশ খুশি খুশি স্বরে বললেন,
 ” যাক বাবা তাহলে খাওয়াতে পারলে শেষ পর্যন্ত ওকে।
গত এক সপ্তাহ যাবত সে এইটুকুন খায় নি আজ যতটুকু খেয়েছে।
হাওয়া বেগমের কথা শুনে রাসেল চেপে রাখা নিঃশ্বাস আস্তে করে ছাড়লো।
যাক উল্টোপাল্টা কিছু ভাবে নি তাহলে।
রাসেল কিছু না বলে মাথা ঝাকালো জোরে জোরে।
মানহা পেছন থেকে বলল,
নুপুররে এর পর থেকে রাসেল ভাইয়ারে খবর দেব তোরে প্রতি বেলায় খাওয়ানোর জন্য।
.
নুপুর কটমটিয়ে মানহার দিকে তাকালো। মনে মনে বলল,
এই লোক যদি ডেইলি খাওয়াতে আসে তাহলে ও তেপান্তরে চলে যাবে ডিসিশন ফাইনাল।
রাসেল হাওয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,
আন্টি কিছু কথা ছিল আপনার সাথে। যদি একটু শুনতেন..
___ ” আচ্ছা চলো আমার রুমে চলো “।
এই বলেই হাওয়া বেগম তার রুমের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। রাসেল নুপুরের হাতে দুধের গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে বলল,
___ ” শোন দুধটা পুরোটা শেষ কর আমি যাওয়ার সময় খোঁজ নিয়ে যাব কিন্তু…… ”
রাসেল বেরিয়ে যেতেই নুপুর রাসেলকে ভেঙিয়ে ভেঙিয়ে বলল,
___ ” দুধটা তাড়াতাড়ি শেষ কর কিন্তু……. মগের মুল্লুক পেয়েছে যা মন চায় তাই করে….. খাব না আমি দুধ দেখি কে কি করতে পারে। “
.
___ ” রাসেল ভাইয়া দেখেন নুপুর দুধ খায় না….. ”
নুমা চিৎকার করে এ কথা বলতেই নুপুর একটানে দুধটুকু গিলে ফেলল। তারপর নুমার দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ” খাইছি আমি দুধ। নেও নেও শান্তি করো এবার।”
এই বলেই অন্যদিকে ফিরে শুয়ে রইল। নুমা আর মানহা নিঃশব্দে হেসে দুধের গ্লাসটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল।
হাওয়া বেগমের রুমে ঢোকার আগেই রাসেল দেখলো ড্রইংরুমে শিহাব হেসে ঢুকেছে। শিহাবকে দেখে রাসেলের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। ওদিকে ড্রইংরুমে বসা ছিল মিলি জিমি আর জয়৷ তিনজনে বসে বসে বিয়ের ব্যাপারে কঠিন তর্ক করছিল ঠিক এমন সময় শিহাব এসে রুমে ঢুকতেই সবাই কথা বন্ধ করে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। ঘুম থেকে উঠেই শিহাব কোন মতে হাত মুখ ধুয়েই চলে এসেছে। এখনও ঘুমের রেশ পুরোপুরি কাটে নি ওর৷ জয়কে দেখেই শিহাব বলল,
___ ” কি রে অমন করে তাকিয়ে আছিস কেন? আমি কি এলিয়েন নাকি যে এমন করে তাকিয়ে আছিস?”
___ ” না না তুই এলিয়েন হতে যাবি কেন। তুই তো হলি বাবাখোর”।
জয় বিরক্তির স্বরে বলল। মিলি আর জিমিকে মুখ চেপে হাসতে দেখে শিহাব বেশ অবাকই হল। কিছু বলতে যাবে এমন সময় ওর নজর পড়ল রাসেলের উপরে। রাসেলের হাতের ইশারায় ওকে ডাকল। জয়ের দিক তাকিয়ে শিহাব বলল,
___ ” তোর ফাজলামির শিক্ষা যদি না দিছি তো আমার নাম শিহাব না “।
এই বলেই ভেতরের দিকে হাঁটা ধরল ও। শিহাব ডাইনিং রুমে ঢুকতেই সামনেই পড়ল নুমা আর মানহা। ওকে দেখে ওরাও বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। শিহাবের হঠাৎ মনে হল নিশ্চয়ই কোন ঝামেলা আছে। তাড়াতাড়ি ও রাসেলের কাছে এগিয়ে যেয়ে কিছু বলবে তার আগেই রাসেল ওর হাত ধরে টানতে টানতে এক কোনায় নিয়ে গেল। তারপর ফিসফিসিয়ে বলল,
___ ” শিহাব তুই কি ডেট ওভার গাঁজা খাইছিস?”
___ ” তোরা সবাই মিলে এসব কি শুরু করছিস বলতো! তুই এমন বলতেছিস, জয়ের বাচ্চা এমন করতেছে। আমি আর তোগো লগেই নাই।”
___ ” একদম কথা কম বলবি তুই এই সুরতে এসেছিস রাস্তা দিয়ে?’
___ ” কোন সুরতে?”
এই বলে নিচের দিক তাকাতেই শিহাবের মুখের কথা একদম বন্ধ হয়ে গেল।লুঙির নিচে জিন্সের প্যান্ট পরে ও লুঙ্গি খুলে রেখে আসতেই ভুলে গেছে। কোমরের কাছে দলামলা করা লুঙ্গিটা বেকায়দায় ঝুলছে আর এই অবস্থায়ই ও চলে এসেছে। কয়েকটা ঢোক গিলে ওখানে দাঁড়িয়েই লুঙ্গিটাকে খুলল ও। তারপর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল কত মানুষ দেখেছে ওকে এই ভাবে??
___ ” আরে ওঠ ওঠ ঘুম থেকে ওঠ। শোন আন্টির সাথে জরুরী কথা বলতে যাচ্ছি কোন ফাও কথা একদম বলবি না বলে দিলাম।”
রাসেল শিহাবকে বোঝানোর স্বরে বলল। শিহাব মাথা ঝুলিয়ে হ্যাঁ বলতেই রাসেল চলল। হাওয়া বেগমের রুমে রাসেল আর শিহাব ঢুকতেই শিহাবের হঠাৎ মনে পড়ল রাসেলের কথাটা, যে রাসেলের আব্বা ওর আম্মাকে পছন্দ করে। এটা বলতেই কি ও জয়ের আম্মার কাছে এসেছে নাকি? কিছুইতে হিসাব মিলাতে পারতেছে না ও। হাওয়া বেগমকে সব খুলে বলতেই উনি যেন প্রথমে বেশ খানিকখন একদম চুপ করে রইলেন। কিছুতেই উনার মাথায় ধরতেছে না যে কি করবেন উনি। মেয়ে দেখতে যেয়ে মেয়ের ফুপাতো বোনকে পছন্দ করে এসেছে৷ এটা কি কখনো হয় নাকি? শিহাব হাঁ করে কথা শুনছে। এতক্ষনে বুঝলো এত জরুরি তলব কি জন্য। হাওয়া বেগম রাসেলের দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ” আচ্ছা এখন তোমরা যাও দেখি আমি কি করতে পারি। আর তোমাদের ওই গাধা বন্ধুটারে পারলে কোন খোঁয়াড়ে দিয়ে আসো। এমন আহাম্মক আমি কি খেয়ে পয়দা করছিলাম কে জানে?”
___ ” আন্টি কি খাইছিলেন সেটা তো আপনি ভাল জানবেন ”
শিহাব ফস করে একথা বলতেই রাসেল ওর হাতে একটা রাম চিমটি দিয়ে বসল। হাওয়া বেগম গভীর চিন্তায় মগ্ন তাই শিহাবের এই কথাটা উনার কানেই গেল না।
নুমা আর মানহা যখনই শুনেছে রাসেলের সাথে হাওয়া বেগমের জরুরি কথা আছে তখনই দরজায় কান পেতেছিল। সব শোনার পরে ওদের চক্ষু তো চড়ক গাছ। তাহলে জয় এই কাহিনী করে এসেছে মেয়ে দেখতে গিয়ে। নুমা মানহার দিকে চোখ টিপ দিয়ে বলল,
.
___ ” মানহা তুরুপের তাস এখন আমাদের হাতে ভাইয়ারে কেমনে জব্দ করতে হয় তা খালি সময়ের ব্যাপার “।
___ ” সাবধানে যেন মিলি জিমি না জানে তাহলে আমাদের আগে ওরাই বাগড়া দিয়ে বসবে।”
মানহা ফিসফিসিয়ে বলল।নুমা ঘাড় কাত করে স্বায় দিয়েই আস্তে করে সরে গেল দরজার সামনে থেকে। নুপুর অনেকক্ষন যাবত ওয়াশরুমে যাবে যাবে করছে। কিন্তু কাউকে দেখছেও না যে বলবে সে ওয়াশরুমে যাবে। অগত্যা নিজেই আস্তে আস্তে উঠে ওয়াশরুমের দিকে রওনা দিল। অর্ধেক পথ প্রায় চলে এসেছে এমন সময় মাথার ভেতরে কেন জানি না খুব জোরে একটা চক্কর দিল ওর। মাথা ঘুরে পড়ে যেতে লাগল ফ্লোরে ঠিক এমন সময় টের পেল কে যেন শক্ত হাতে ওকে ধরে ফেলেছে। কোন মতে চোখ মেলে তাকাতেই ও যেন ঝাপসা দেখতে পেল সামনের মুখটা যেন একটুও পরিষ্কার না। ধোঁয়া ধোঁয়া মুখখানি। ও টের পেল সেই শক্ত হাত জোড়া কোমর জড়িয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে এগোচ্ছে। নুপুরের সারা শরীরদ যেন অন্য এক শিহরণ বয়ে গেল। একটু ধাতস্থ হয়েই ও চেয়ে দেখল এ তো রাসেল। হঠাৎই যেন নুপুরের বুকের হার্টবিট খুব বেড়ে গেল। নুপুর সেই মাতাল করা ঘ্রাণ পেতে শুরু করল৷ রাসেলের মুখের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল বিরক্তি মাখা এক জোড়া চোখ চেয়ে আছে ওর দিকে। রাসেল ওর দিকে তাকিয়ে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলল,
.
___” যেটা পারিস না সেটা করিস কেন? এক চড়ে বত্রিশটা দাঁত ফেলে দেওয়া দরকার, ফাজিল মেয়ে মানুষ।”
___ ” আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দেন…..”
নুপুর কোন মতে কান্না আটকিয়ে বলল। রাসেল এবার আরো জোরে ঝাড়ি দিয়ে বলল,
___ ” তোকে নামিয়ে দেব না তো কি তোর মত আলুর বস্তা সারাজীবন কোলে নিয়ে ঘুরব নাকি? তোকে কোলে নিয়ে আমার কোমরের দুই চারটা হাড্ডি ডিসপ্লেস হয়ে গেছে।”
এবার অপমানে নুপুরের চোখ দিয়ে পানিই গড়িয়ে পড়ল৷ এত এত অপমান কেউ করে কাউকে। নুপুরের চোখে পানি দেখে রাসেলে মেজাজ খারাপ করে বলল,……
চলবে

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com