Breaking News

নিস্তব্ধ প্রেমাবেগ |পর্ব -১৬

জীবনের সব হিসেব গড়মিল হয়ে গেছে জিসানের!সব স্বপ্ন, চিন্তাধারণা, পরিকল্পনা সব অগোছালো হয়ে গেছে!

একের পর এক মদ গিলে যাচ্ছে জিসান!সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার!
জুঁইদের বাসা থেকে এসেছে পুরো একটা দিন কেটে গেছে! তবুও সে শান্ত হতে পারছে না!সে তো পালিয়ে এসেছে!পালিয়ে আসতে হয়েছে তাকে!মেয়েটার সামনে কি করে দাঁড়াতো সে?

ঘুম ভাঙতেই মাতা চেপে ধরে উঠে বসল জিসান!মিনিট দশেক বসে থেকে চোখ মেলে তাকিয়ে বিছানা থেকে নামতে নিয়ে পেছনে ফিরে তাকলো!বেশ হতবাক আর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো নিজের দিকে আর এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে থাকা জুঁইয়ের দিকে।
আর সবটা পরিষ্কার হয়ে গেলো তার কাছে!সবটা!কোনো রকম কাপড় জামা পরিধান করে দ্রুত বেরিয়ে পড়লো জিসান!

কি করবে?কি বলবে?কিচ্ছু ভাবতেই পারছে না..!একদিকে সে ভালোবাসে শ্রেয়াকে অন্যদিকে একটা মেয়ের আত্মসম্মান..!
একটা দুর্ঘটনা..একটা কাজ?সব নষ্ট করে দিলো সব..!
শ্রেয়ার ছবি ফোনের স্ক্রিনে নিয়ে তাতে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর নেশা করে চলেছে..

হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে ঘরে কেউ ডুকলেই জিসানের দৃষ্টি নড়ল!দরজার দিকে তাকিয়ে মন খারাপের চেয়ে বেশি ভয় হতে লাগলো।সাথে রাগ ও।কি বলবে জুঁই?

জিসান এই জিসান কি হয়েছে তোমার?ফোন তুলছো না কেনো?
দেখো তো ২০০+ কল করেছি!লাইনে নেই ফোন ধরছো না মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছো না!কি হয়েছে তোমার বলবে?
আমার তো মনে হচ্ছে না এরকম বিরহে ডুবে যাওয়ার মত কিছু হয়েছে..!কি হলো কথা…

জিসান কথার ধাচ বুঝতে পেরে যেন জ্বলে উঠলো।
পুরো কথা শেষ হবার আগেই ঠাসস ঠাসস ঠাসস করে দুগালে তিনটে চড় পরলো জুঁইয়ের। গালে হাত দিয়ে ভীত চোখে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো জিসানের ভয়ংকর চোখের দিকে!

জিন্স টপস পরা চুলগুলো ছাড়া একদম স্টেইট!কাধে একটা ব্যাগ নেয়া জুঁইয়ের দিকে রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে তাকালো। তুমি ইচ্ছে করেই…..
লজ্জা করে না জুঁই? আমার তো খুব লজ্জা করছে তোমাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে!
কেন এমনটা করলে বলো তো?নিজেকে এতটা ছোট করলে তো করলেই আমার জীবনটা শুরু করার আগেই শেষ করে দিলে!
কেনো করলে বলো তো?

জিসান আমি..

থামো!তুমি তো ঠিক ছিলে কেনো আমায় বাঁধা দিলে না?

আমি কি করে তোমায় বাঁধা দিবো বলো হুশ ছিলো না তোমার!

সাট আপ…একজন মানুষ মাতাল মানে এই নয় সে দানব!তুমি চাইলেই আমাকে আটকাতে পারতে!কোনো সার্ভেন্টকে ডাক দিয়ে!বা হাত মুচড়ে বা মুখে পানি মেরে!ধাক্কা বা চড় মেরে হলেও তো আটকাতে পারতে!
কেনো এভাবে নষ্ট করলে আমার জীবনটা কেনো? কেনো?কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়লো জিসান!

জুঁই ও কাঁদছে! কি বলবে সে!ভালোবাসা পাওয়ার দুর্গম ইচ্ছে টা মাথায় চেপে বসেছিলো।
সরি জিসান!

সরি হোয়াট সরি?সরি বললেই কি সব শেষ? বাহু ধরে টেনে এনে হাতে ফোন দিলো।দেখো দেখো এই মেয়েটাকে এই মেয়েটাকে ভালোবাসি আমি!আমি তো তোমাকে ভালোবাসি না!এখন তুমিই বলো আমি কি পারবো তোমায় বিয়ে না করে ওকে বিয়ের কথা বলতে?আমি কি পারবো তোমার সাথে ঘটে যাওয়া সব ভুলে সামনে এগুতে বলো?কোথাও না কোথাও আমিও অপরাধী ভীষণ অপরাধী!

জুঁই স্তব্ধ নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে!জিসানের ও যে ভালোবাসা থাকতে পারে ভাবে নি জুঁই!ভালোবাসা তাকে অন্ধ জ্ঞানশূন্য করে দিয়েছিলো!
জিসানের ফোনে থাকা ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ! মেয়েটা খুব মিষ্টি জিসান খুব মিষ্টি!
ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করো একটা রাতের কথা!দেখবে ভালো থাকবে!বাংলাদেশে ফিরে যাও!আর এসো না এখানে!দেখবে সব ঠিকঠাক হবে!ভালো থেকো!

বেরিয়ে গেলে জুঁই!জিসান উঠে ঘরের সব কিছু ভাঙচুর করতে লাগলো!
বিয়ের সাজে পুতুলের মত লাগছে শ্রেয়াকে।জয়কেও আজ কম সুন্দর লাগে নি।সাদা পাঞ্জাবি পাজামায়?উফফ ক্রাশ!শ্রেয়া তো হ্যাবলার মত চেয়েই ছিলো খানিকক্ষণ! আদিবার কাশিতে হুঁশ এলো।চারপাশে মুরব্বিদের তাকিয়ে থাকতে দেখে কি লজ্জাতেই না পড়েছিলো! ইশশ..

চুপটি করে বসে আছে বিছনার এক কোণায়!সামনে পুরো বিছানা জুড়ে ফুল!কিন্তু তার খানিক বাদে বাদে হাঁচি আসছে!কেনো বুঝে উঠতে পারছে না।একমাত্র হাসনাহেনা ফুলের সামনে দাঁড়ালে তার এরকম হাঁচি হয়!কিন্তু আশেপাশে তো দেখতেও পারছে না!এদিকে রাত বাড়ছে কিছুটা শীত পড়ায় আর এত এত গহনা পড়ে বসে থাকায় বেশ বিরক্তই লাগছে তার!
অথচ জয়ের রুমে ডোকার নামই নেই!
মনে মনে একশ গালাগাল দিতে লাগলো শ্রেয়া!

দরজার খরখর শব্দে নিজেকে আরো ঘুটিয়ে নিলো শ্রেয়া!
কিন্তু মুহুর্তেই সব আবার নিরব! শ্রেয়া ঘোমটার নিচ থেকে বোঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে? জয় কি করছে?
বেশ কিছুসময় পর বিরক্ত হয়েই নিজেই ঘোমটাটা তুললো শ্রেয়া!
একদম মুখ বরাবর জয়কে দেখে চেঁচিয়ে উঠলো!সাথে সাথে মুখ চেপে ধরলো জয়।

চুপ চুপ.. চুপ করো।কেউ শুনতে পেলে কারাপ ভাববে

উউুউউউ

কি?

হাতের দিকে ইশারা করতেই হাত সরালো জয়।

পায়ের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে রইল।কি সুন্দর নুপুর জোড়া!কখন পরালো জয়?শ্রেয়া তো টেরই পেলো না।
শ্রেয়া কিছু বলতে নিলেই জয় বললো প্রচুর দখল গেছে আজ আমার!আর একটা শব্দ ও শুনতে চাই না।সকালে শুনবো!ফ্রেশ হয়ে ঘুমাও।আমি বিছানায় শুবো।তুমি সোফায় যাও!শ্রেয়া কিছুসময় অবাক হয়ে জয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো!
জয়ও তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ! তার পর উঠতে নিলেই শ্রেয়া হাত ধরে রইলো।
ভ্রু নাচিয়ে জয় জিজ্ঞেস করলো কি।
শ্রয়া আস্তে আস্তে উঠে এসে সালাম করলো জয়কে।জয় মুচকি হাসল শুধু।

ফ্রেশ হয়ে জয় বিছানায় শুয়ে পড়লো। শ্রেয়াও ফ্রেস হয়ে এসে দাঁড়িয়ে রইল বিছনার পাশে।

শ্রেয়া ক্যান্ডেল জ্বলছে! লাইটটা অফ করে দাও।পাশ ফিরে শুয়েই বলল জয়!

শ্রেয়া তবুও দাঁড়িয়ে আছে!

জয় বিরক্তি নিয়ে পেছনে ফিরতেই দেখলো শ্রেয়া দাড়িয়ে।কি হলো?

আমায় একটু জায়গা দেন?কই শুবো আমি?

কেনো সোফায়

করুন চোখে তাকালো শ্রেয়া জয়ের কথা শুনে!

আসলে আমি তো বেড শেয়ার করে শুতে পারি না।অভ্যেস নেই!তুমি বরং সোফায় শোও!কিছুদিন যাক।আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে।

শ্রেয়া কপাল কুঁচকে সোফায় শুতে শুতে বিড়বিড় করে বললো উহহ অভ্যেস নেই হুহ।রোদ ভাইয়া এলে তো ঠিকই শোয়!আর আমি হলেই অভ্যেস নেই..হুহ।
আমারও মনে থাকবে।আরেকদিন শুতে বললেও শোবো না।শোধ নিবো হু..দিলো বাসররাত টা মাটি করে।বর বউ রা এদিনে কত গল্প করে।আর সে নাকি ঘুমাবে।হুহ

অপরদিকে জয় আড়চোখে তাকিয়ে বলতে লাগলো
সেদিন তো খুব ধাক্কা মেরেছিলে না!আজ মজা বুঝো!হুহ!আমি ও কম পাজি নই..!
পোড়া গন্ধ নাকে আসতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল শ্রেয়া! আগুন বলে চেঁচিয়ে ধমকে গেলো..

চলবে_

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com