গল্পঃ চুক্তির সংসার
বিয়ের আগেই ডির্ভোসের কাগজে সাইন করা একমাত্র মেয়ে মনে হচ্ছে আমিই। কাগজটাই সাইন করার সময় বুকের ভিতরে কেমন একটা চিন চিন ব্যথা অনুভব করেছি। এই নেন কাগজে সাইন করা হয়ে গেছে।
কাগজে কি কি লিখা আছে সেটা তুমি পড়ে তারপরে সাইনটা করলে ভালো হত।
আমি জানি কি লিখা আছে আর এখন তো সাইন করে দিছি তাই পড়ার কোনো দরকার নেই। নেন ধরেন আপনার চুক্তির কাগজ।
হ্যা দাও তা কাগজ গুলি না পড়েই তুমি সাইন করে দিলে! তার মানে তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো? ভুল করেও আমাকে ভালোবাসতে যেয়োনা তাহলে নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটাই করবে বলে দিলাম।
আপনার মত ছেলেকে যেই মেয়ে ভালোবাসবে সেই মেয়ের জীবনের সুখ শান্তি বলে কিছুই থাকবে না। সেইটা আমার থেকে ভালো আর কে যানে? আর আমি ভালো করেই জানি আপনি নিজের স্বার্থের জন্য কি কি করতে পারেন। তবে আপনার চুক্তিমত সংসার করবো আর হ্যা আপনি আপনার কথামত কাজ গুলি করবেন যতদিন ঠিক ততদিন আমি আপনার চুক্তি গুলি মেনেই চলবো।
ঠিক আছে বিয়ের জন্য তৈরি হও বাড়ীর সবাইকে উপস্থিত রেখেই আমাদের বিয়ে হবে। একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে আল চলে গেছে। আলের হাসির পেছনে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরেই আমার বিয়ে সবচেয়ে খারাপ আর রাগি মানুষটার সাথে। আমাকে বউ সাজাতে সবাই বাহিরে অপেক্ষা করছে এখুনি মনে হয় সবাই চলে আসবে হ্যা ওরা সবাই চলে এসেছে। আমি বসে আছি সবাই আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবাই আমাকে সাজাচ্চে এর মাঝে আমার পরিচয়টা দিয়ে দেয় কেমন?
আমি নিরা রহমান। আমরা চার বোন, কোনো ভাই নেই। আমি বোনদের মধ্যে দ্বীতীয়, যদিও আমার বড় বোনের বিয়ে হইছে। কিন্তু যৌতুকের টাকার জন্য বড় আপুর শ্বাশুরী আপুকে অনেক যন্ত্রা দেয়। যার ফলে আপু আমাদের বাড়ীতে থাকে। আমি মাত্র ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়ে ভর্তি হইছি তখনি আমরা চার বোন আর মাকে রেখে বাবা মারা যান। আমাদের আর্থিক অবস্থা ততটা ভালো নয়। গ্রামে ছিলাম কিন্তু গ্রামের মানুষের কথাবার্তা আমাদের শহর মুখী করে দেয়। মা আর চার বোন নিয়ে ভস্তির মতই দুইটা রুম দেখতে এমন যায়গা থাকি। আমার আর আমার ছোট বোন লাকীর টিউশনের টাকা আর মায়ের সেলাই মেশিনের টুকটাক টাকা দিয়ে সংসারটা চলেছে। বড় বোনের বিয়েটা বাবা থাকতে দিয়ে গেছে কিন্তু তখন তো কিছু চাইনি কিন্তু এখন টাকা চাচ্ছে দুলাভাই ব্যবসা করবে তার জন্য। ও ভালো কথা আমি তো আপনাদের আসল কথাটাই বলিনি। যার সাথে আমার আজকে বিয়ে হচ্ছে ওর নাম আল মোহাম্মদ সবাই ওনাকে আল বলেই ডাকে। ওরা তিন ভাই এক বোন। বোন সবার বড় আর ভাইদের মধ্যে আল হচ্চে দ্বীতীয়। দেখতে তো মাশাল্লাহ বড় বড় চোখ ফর্সা গায়ের রং লম্বা এক কথায় একদম পার্ফেক্ট একটা ছেলে। ওনি যে কতগুলি মেয়ের সাথে রিলেশন করছে সেটা আমার থেকে ভালো আর কেউ জানে না। আমি এত কিছু ওনার সম্পর্কে জানি কি করে এটাই ভাবছেন তাইনা? আচ্ছা ভাবতে থাকুন এখন আমাকে সাজানো শেষ হয়ে গেছে। আমার ছোট বোন রিতা এসেছে।
রিতা:- আপু তোকে অনেক সুন্দর লাগছে। দুলাভাই তো তোর থেকে চোখ সরাতে পারবে না? তখনি বড় আপু সাপলা বলেন।
সাপলা:- আগে থেকেই তো ফিদা হয়ে আছে। নতুন করে আর কি ফিদা হবে? তবে সত্যি নিরা তুই অনেক ভাগ্যবান আলের মত একটা বড় লোক ছেলেকে স্বামী হিসাবে পেয়েছিস।
আম্মা:- সাপলা নিরাকে নিয়ে আয় কাজি সাহেব এসে গেছে। আর আলের বাবা মা ভাবি সহ সবাই অপেক্ষা করছে।
সাপলা:- হ্যা নিয়ে আসছি। আমাকে সাপলা আপু সাথে করে নিয়ে এসেছে। কাজি সাহেব বিয়ের কাজটা সম্পন্ন করেছেন। আমার চোখ বেয়ে একটুও পানি পড়েনি সবাই আমার অবস্থা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
শ্বশুড়:- বেয়ান সাহেবা আমরা তাহলে যাই। আর হ্যা এই নেন চাবিটা রাখুন আগামী কাল থেকে আপনারা এই ফ্লাটে গিয়ে থাকবেন। সকালে বেলা আমাদের ড্রাইভার এসে নিয়ে যাবে আপনাদের।
আম্মা:- কিন্তু।
শ্বশুড়:- কোনো কিন্তু নেই আমি খুশি হয়ে দিলাম আপনাকে। আচ্ছা এখন আমরা গেলাম আল নিরাকে নিয়ে আয়।
আল:- নিরা আসো বলেই একা একা হাটা দিছে রাগি রাক্ষুসটা। গাড়িতে এসে বসেছি রাক্ষুসটা আমার পাশে বসে মোবাইলে কাদের যেনো মেসেজ করছে। আমার তো রাগে শরীর ঝালা উঠে? যাচ্ছে তখনি বলি।
নিরা:- আম্মার সামনে আমার হাতটা ধরে নিলে কি এমন ক্ষতি হত? আম্মা তো মনে করবে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না। বিয়েটা করেছেন একপ্রকার ইচ্ছের বিরুদ্ধে।
আল:- তুমি কি মনে করো তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি?
নিরা:- আমি কি বলেছি নাকী আপনি আমাকে ভালোবাসেন? আমি তো শুধু বলতে চাচ্ছি আম্মার সামনে আমার সাথে একটু ভালোবাসার মত করে দেখাতেন তাহলে তো আমার মা খুশি হয়ে যেতো!
আল:- করিম চাচা গাড়িটা থামাও।
নিরা:- গাড়ি থামাবে কেনো? আল কিছু বলেনি সোজা গাড়ি থেকে নেমে বলে।
আল:- করিম চাচা তোমরা বাড়ীতে যাও আমার জুরুরী কাজ আছে আমি কাজটা শেষ করে বাড়ীতে আসছি।
করিম চাচা:- বাবা আল আজকে তোমার বিয়ে আজকেই তুমি। করিম চাচাকে কথাটা শেষ করতে দেয়নি তখনি আল বলে।
আল:- দেখো ড্রাইভার ড্রাইভারের মত থাকবে যা বলছি তাই করো। আমাকে জ্ঞান দেওয়ার কোনো দরকার নেই আমি তো আগেও বিয়ে করেছি এটা আমার নতুন বা প্রথম বিয়ে নয়। তোমাকে বলছি যেতে যাও। আল কি বলছে এর আগে বিয়ে করছে মানে? তাহলে আলের আগের বউ কোথায়? মনে হাজারো প্রশ্ন তৈরি হয়ে গেলো। তখনি করিম চাচা গাড়িটা চালাতে আরম্ভ করেছে।
নিরা:- চাচা আপনি কিছু মনে করিয়েন না আলের কথায়!
করিম চাচা:- নতুন বউ মা আল বাবার কথায় আমি কিছু মনে করিনি। সত্যি বলতে আল বাবা ওদের পরিবারের সবার থেকে ভালো তবে রাগটা একটু বেশী।
নিরা:- চাচা রাগ একটু বেশী না অনেকটা যা মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য যতেষ্ট। চাচা হেসে দিছে (আচ্ছা চাচাকে কি জিজ্ঞেস করবো আল কি সত্যি বিয়ে করছে আগে! আর যদি বিয়ে করে থাকে তাহলে আগের বউটা কোথায়? নাহ নাহ যদি কিছু বলে দেয় আলকে তার থেকে বেটার হবে আলকে জিজ্ঞেস করলে) এর মধ্যে বাড়ীতে গাড়িটা এসে পড়েছে আমি বসে আছি কিছুক্ষণ পর আলের বাবা এসে দেখে আমি একা বসে আছি আল নেই।
শ্বশুড়:- মা নিরা আল কোথায়?
নিরা:- বাবা আল তো মাঝ পথে নেমে গেছে কি কাজ আছে নাকী।
শ্বশুড়:- এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারা গেলোনা! মা নিরা তুমি এসো। আমি গাড়ি থেকে নেমে হেটেই বাড়ীর ভিতরে গেলাম। বাড়ীর ভিতরে ঢোকার পরেই আমার জন্য এমন সারপ্রাইজ রাখবে আমি কল্পনা করতে পারিনি। বাড়ীর সবাই যার যার মত করে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত আমি যে নতুন বউ এই বাড়ীতে এসেছি সেটা কাওকে দেখে মনে হচ্ছেনা।
শ্বাশুরী:- নিরা দাঁড়িয়ে আছো কেনো তুমি তো আলের রুমটা চিনোই যাও চলে যাও। তখনি আলের ভাবি বলে,,,
ভাবি:- আল আসেনি তোমার সাথে?
নিরা:- নাহ ওনার কি কাজ আছে নাকী সেই কাজে গেছে। তখন ভাবি হাসি দিয়ে বলে।
ভাবি:- বুঝতে পারছি আল কোন কাজে গেছে। আজকে রাতে আর আসবে না তুমি রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ো। আলের ছোট ভাই এসে বলে।
ছোট দেবর:- আল ভাইয়াকে বিয়ে করতে কে বলছে? শুধু শুধু মেয়েটাকে কষ্ট দেবার জন্য বিয়েটা করেছে। এর আগেও একটা বিয়ে করে মেয়েটার সাথে কি আচরনটাইনা করেছে।
শ্বাশুরী:- এই নিরা তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো? তোমাকে না বলছি আলের রুমে যেতে যাও।
নিরা:- হ্যা যাচ্ছি বলে আমি সিঁড়ি দিয়ে উপরে যাচ্ছি। এতদিন ধরে আলদের বাড়ীতে আসা যাওয়া একদিনও জানতে পারিনি আল আগেও বিয়ে করেছে। অথচ বিয়ে হইছে মাত্র কয়েক ঘন্টা আর যেনে গেলাম বিয়ে করেছে। রুমের সামনে এসেছি ভিতরে যাবো আর নিজের প্রতি হাসি আসছে কেমন মেয়ে আমি বিয়ের দিনই নিজেই একা বাসর ঘরে ঢুকতে হচ্ছে। বাসর ঘরে ঢুকে এবার পুরাই সক খেলাম এই আমি কোথায় এসেছি?
!!
চলবে,,,
!!
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com