Breaking News

অন্ধ প্রেম


“তুই সুমন না?”

আমি পিছনে ঘুরে তাকালাম। বেশ মোটাকাটা এক ভদ্রলোক দাড়িয়ে আছে। ওজন ১২০-৩০ এর কম হওয়ার কথা না। তাকে কিছুতেই চিনতে পারলাম না। তবে মুখে কিছুটা পরিচিত পরিচিত ভাব আছে।

“চিনতে পারিসনি আমাকে?”

আমি বললাম, “না, এখনো চিনতে পারিনি।”

“আরে আমি শাকিল, শিশু নিকেতনে একসাথে পড়েছি আমরা।”

আমি মনে করার চেষ্টা করলাম। শিশু নিকেতনে শাকিল নামে হাতির বাচ্চা টাইপের কোনো বন্ধু আমার ছিল কি-না। মনে করতে পারলাম না। আমাদের শুধু একটাই শাকিল ছিল, যে একদমই পাতলা হ্যালহ্যালা, ফু দিলে উড়ে যাবে টাইপের। যাকে আমরা ডাকতাম বাতাস বলে।

“এখনো চিনিসনি আমাকে? অবশ্য তোরই বা কি দোষ! আজকাল কেউ চেনে না আমাকে।”

আমি বললাম, “কোনো কারনে তুই বাতাস না-তো?”

“এইতো এবার চিনছিস। সেসময় তোরা আমাকে বাতাস বলে খুব ক্ষ্যাপাতি। আর এখন অবস্থা দেখ? পুরাই হাতির বাচ্চা হয়ে গেছি।”

আমি হকচকিয়ে গেলাম। ও শুধুই হাতির বাচ্চা নয়, হাতি হয়ে গেছে। ওরকম একটা মানুষ এতটা মোটা কেমনে হলো?

জড়িয়ে ধরলে আমি দুই-হাতে কেনো ৪ হাত দিয়েও নাগাল পাবো না। তবুও স্কুল ফ্রেন্ড হিসেবে জড়িয়ে ধরা ছাড়া উপায় নাই। আমি ওকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলাম। ও আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলো। বললো,
“দোস্ত, আজকাল আমাকে দেখলে সবাই না দেখার ভান করে থাকে। আর তুই জড়িয়ে ধরলি। বিশ্বাস কর, আমার কান্না পাচ্ছে।”

আমি তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখে সত্যি সত্যিই পানি এসে গেছে। পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে বললাম, “চল কিছু খাই”।
ওর চোখ চকচক করে উঠলো। বললো, “দোস্ত আর বলিস না.. বাবা-মা আমাকে কড়া ডায়েটে রাখে। কিছুতেই খেতে দেয় না। সকালে বাসা থেকে বের হয়েছি না খেয়ে। আবার পকেটে টাকাও নেই।”

আমি ওকে হোটেলে নিয়ে গেলাম। এত সকালে পরোটা ছাড়া কিছু পাওয়া গেলো না। বললাম, “পরোটা চলবে?”
“সকালের নাস্তার জন্য বেশি কিছু লাগবে না। পরোটা হলেই হবে। চল খাই।”
.
শাকিল গুণে গুণে ৮টা পরোটা খেলো। তারপর থেমে বললো, “দোস্ত, নাস্তা হিসেবে এ পর্যন্তই ঠিক আছে। এর বেশি এখনই খাওয়া যাবে না। একটু পর শিলার সাথে দেখা হবে। ও আমাকে সকালের খাবার খাওয়াবে। প্রতিদিনই ও খাওয়ায়।”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “একটু পরেই আবার খেতে পারবি?”
“কী বলিস! এটাতো শুধু নাস্তা করলাম।”

৮টা পরোটায় ও করলো নাস্তা। অথচ ওর সাথে বসে দুইটা পরোটায় আমার সকালের ভরা পেটে খাওয়া হয়ে গেলো।

বললাম, “শিলাটা কে?”
“আমার গার্লফ্রেন্ড।”

আমি আরো অবাক হয়ে গেলাম। ওর আবার গার্লফ্রেন্ডও আছে? চিন্তা করলাম, নিশ্চয়ই ওর মতো হাতি টাইপেরই একজন হবে। দুজন মিলে ‘মোটামুটি’। এই মোটামুটি চোখের সামনে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। বললাম, “চল তোর গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করবো।”

দুজন দুই রিকশায় করে যাচ্ছি। ও বসার পর আমার পক্ষে আর একই রিকশায় ওঠা সম্ভব হয়নি। গার্লফ্রেন্ড নিয়ে তাহলে কেমনে এক রিকশায় ওঠে? ওরাও নিশ্চয়ই এরকম দুই রিকশায় বসে ডেট করে।

শাকিল আমাকে ওর গার্লফ্রেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। যেরকম ভেবেছিলাম মোটেও সেরকম নয়। এই মেয়ে স্বাভাবিক। শুধু স্বাভাবিক বললে ভুল হবে, অসম্ভব সুন্দরীও বটে।

আমি হা করে তাকিয়ে আছি। বইয়ে পড়েছি, “মানুষ প্রেমে পড়লে অন্ধ হয়ে যায়।”
তবে এতটা অন্ধ হয় যে, চোখের সামনে এরকম হাতি টাইপ মানুষকেও দেখা যায় না.. সেটা কখনোই ভাবিনি।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com