গল্পঃ নিস্তব্ধ প্রেমাবেগ | পর্ব-১৯ |লিখা-স্বর্ণালি আক্তার
বাড়িতে এসেই মা বাবা বলে চিৎকার করে ডাকতে লাগলো জিসান। আকাশ সাহেব ঝর্ণা বেগম একটা কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে গেছেন।আমজাদ সাহেব রহমত মিয়ার সাথে গ্রামে গেছে।…বাড়িতে শুধু আদিবা,জয় আর শ্রেয়া।আদিবা ঘুমায়।শ্রেয়া জয়ও যেত।কিন্তু জয়ের একটু জ্বর থাকায় যেতে পারে নি।
জিসান এসেছে!কিছুটা চমকায় জয়। নিজের থেকে কম্বল সরিয়ে উঠে ঘরের বাহিরে আসে।
জিসান তুই?কেমন আছিস?হঠাৎ কাউকে না জানিয়ে এলি যে?
শ্রেয়া কই দাদাভাই?
এরকম প্রশ্নে কিছুটা অবাক হয় জয়।শ্রেয়া তো ঘরে নির্লিপ্তভাবে জবাব দেয় জয়।
জিসান ব্যাগটা রেখে সামনে এগুতেই শ্রেয়া মাথায় কাপড় দিয়ে নিচেনেমে এলো।শ্রেয়াকে দেখেই চোখেমুখে হাসি ফুটলো জিসানের।
শ্রেয়া কেমন আছো?বলেই জয়ের সামনেই শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরল জিসান।শ্রেয়া ভয়ে গুটিয়ে গেলো।
জয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।
জিসান কি অসভ্যতা এটা?ও তোর ভাবি হয়।বড় ভাইয়ের বউ!ছাড় বলছি!
জিসান তড়িৎ গতিতে শ্রেয়াকে ছেড়ে দিলো।
কি বললি দাদাভাই?
যা শুনেছিস তাই!
শ্রেয়ার দিকে তাকালো জিসান।
শ্রেয়া কিছুটা ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে রইলো জিসানের দিকে।
এসব কি শ্রেয়া?শ্রেয়া আমি তোমায় বলেছিলাম আমি তোমায় ভালোবাসি!কেন করলে এটা বলো?
জয় মনে হলো বিদ্যুৎয়ের শক খেলো।জিসানের কথায় বেশ চমকে উঠলো ও।দুজনের মুখের দিকের তাকিয়ে রইলো।
নিচ থেকে চেঁচামেচির শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেলো আদিবার।চোখ মুখ ডলে ডলে নিচে নেমে এলো।এসে জিসানকে দেখে সব ঘুম উবে গেলো তার।জিসান ভাই.. বলেই দমে গেলো আদিবা।
আদিবা তোকে তো সবটা জানিয়ে গেছিলাম আমি!তুই কেনো বলিস নি দাদাভাইকে কথাটা।কেন বাড়ির সবাইকে বলিস নি।
কি হলো সবাই এমন চুপ করে আছো কেনো?শ্রেয়া বলো কেন এভাবে ধোঁকা দিলে।বলো?
দাদাভাই সাকসেসফুল বিজনেস ম্যান বলে?কেনো করলে এমনটা বলো শ্রেয়া!
শ্রেয়া মাথা নিচু করে কাঁদছে। আদিবাও মাথা নিচু করে আছে।জয় আতংকিত দৃষ্টিতে দেখছে সবাইকে।
আদিবা সব সময় তোর দাদাভাইয়ের কথাটাই ভাবলি?আরো একটা ভাই ও যে আছে?সেটা ভাবলি না।তার মন-ভালোবাসা ও তো থাকতে পারে।
সবাই চুপ।
তোমার কাছে আমার ভালোবাসার কোনো দামই ছিলো না শ্রেয়া।হয়ত কোথাও ঘাটতি আছে।যা করেছো বেশ ভালো!
আমার ভালোবাসার মানুষটা আমার ভাইয়ের বউ!বাহ কি দারুন।
এখন বুঝতে পারছি সবাটাই তোমাদের প্ল্যান করা।তাইতো এত এত কল করার পরও দাদাভাই আদিবা মা কেউই ধরে নাই।কেউ কথা বলে নি আমার সাথে।সবটা লুকিয়ে রেখেছিল। সত্য কি চেপে রাখা যায়?
ভালোই করোছো।শ্রেয়া…..ভালো থাকো…
বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো জিসান।ব্যাগটা নিয়ে।আদিবা জয় পিছু ডাকলো বেশ কয়েকবার কানে নিলো না সে!
শ্রেয়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো জয়।কিছুক্ষণ পরই হাত ধরে টানতে টানতে নিজেদের ঘরে নিয়ে গেলো।বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো শ্রেয়াকে।ভয়ে আরো গুটিয়ে গেলো শ্রেয়া।
এসব কি শুনলাম আমি শ্রেয়া?কি বলে গেলো জিসান?জিসান তোমাকে ভালোবাসে।আর তুমি তা জানতে?বিয়ের আগে থেকে?
কেনো তাহলে বলো নি আমায়।কেনো তোমার দাদাকে জানাও নি।কাউকে বলো নি কেনো?
চুপ শ্রেয়া!
কি হলো বলো..
তবুও চুপ শ্রেয়া।
বা হাতের বাহু ধরে টেনে দাঁড় কারালো শ্রেয়াকে।ঠাসস করে চড় বসিয়ে দিলো। শ্রেয়া কিছুটা সরে গেলো।
জয় চিৎকার করে বলছে বল কেনো বলিস নি?কেনো আমার ভাইকে এতটা কষ্ট দিলি? বল বলছি!
কি বলবো হ্যা কি বলবো?আপনার ভাই আমাকে ভালোবাসে।এ বিয়েটা সম্ভব না এটা বলবো?
কেনো বলবো?বললে কি হতো?আপনি বিয়ে করতে না।বাড়ির সবাই আপনার ভাইয়ের সাথে আমায় বিয়ে দিত?আপনার ভাই কষ্ট পেত না..তাই?
আমার কি মন নেই?আমি কি মানুষ না?
আপনার ভাই আমাকে ভালোবাসলেও আমি তাকে ভাইয়ের মত দেখি!আমি তো আপনাকে ভালোবাসি। তাহলে কেনো আমি বলবো?কেন আটকাবো এ বিয়ে।আমার ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে আপনার ভাইকে সুখী থাকতে বিয়ে করে নিতাম?এতে আপনার ভাই সুখী হলেও আমি হতাম না।
আমি আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি।তাহলে কেনো তার কথা আমি আপনাকে জানাবো বলুন কেনো?
আমরা গরীব বলে যা খুশি তাই আপনারা করতে পারেন না।যার ইচ্ছে তার সাথে বিয়ে দিতে পারেন না।আমার ও একটা মন আছে।আমিও একটা মানুষ…
এক দমে কথা গুলো বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো শ্রেয়া।জয় থমকে গেলো শ্রেয়ার কথায়।ধপ করে বিছানায় বসে দুহাতে মাথা চেপে ধরলো।
বন্ধুর বাসায় উঠেছে জিসান।কালই সে ইউএস ব্যাক করবে।আর কখনো এ বাড়িতে ফিরবে না।এরকম টা কেনো হলো তার জীবনে? কেনো এরকম এলোমেলো হয়ে গেলো সব কিছু?কেনো?ফ্লোরে বসে কাঁদতে লাগলো জিসান।
হঠাৎ ফোনে জুঁইয়ের কল এলো।মুখ তুলে ফোনটা হাতে নিয়ে নাম্বারটা দেখেই দেয়ালে ছুঁড়ে মারলো।কয়েক দফা বাড়ি খেয়ে ভেঙে গেলো ফোনটা।
পাশের রুম থেকে শায়ক এসে দেখে জিসান ফোনটা ভেঙে আগের ন্যায় বসে আছে।বন্ধুর দিকে কয়েক মিনিট তাকিয়ে থেকে খাবার আনতে চলে গেলো।
চারপাশে ঘন কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।ছাদে বসে কাঁদছিলো শ্রেয়া।সন্ধ্যা পেড়িয়েছে অনেক্ষন।গাড়ির হর্ন পেয়েই উঠে দাঁড়ালো।চোখমুখ মুছে নিচে এসে পড়লো।
বাবা মা এসেছেন।শ্রেয়া মাথায় কাপড় টেনে দাঁড়াতেই ঝর্ণা বেগম বললেন আমরা ডিনার সেরে এসেছি শ্রেয়া।তুই জয় আদিবা খেয়ে নে।
আমি খুব টায়ার্ড।একটু রেস্টের প্রয়োজন।ঘরে যাচ্ছি।
শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো।একে একে সব খাবার গরম করে টেবিলে দিতে দিতে জয় আদিবা খেতে আসলো।সবাই চুপচাপ।তবে জয়কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক রেগে আছে!
খাবার বেড়ে দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে রইল শ্রেয়া।জয় নিজের মত খেতে লাগলো।আদিবা মুখে ভাত নিয়ে বলল তুমিও খেয়ে নাও!
খিদে নেই! নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল শ্রেয়া।জয় একবার শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে ভাতে পানি ঢেলে দিলো। উঠে চলে গেলো ঘরে।আদিবা জয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একবার শ্রেয়ার দিকেও তাকালো।শ্রেয়ার কোনো ভাবান্তর নেই।প্লেট বাটি নিয়ে রান্না ঘরে রেখে এলো।
আদিবার খাওয়া শেষ হলে শ্রেয়ার হাতে হাতে সব ঘুছিয়ে দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।
শ্রেয়া রান্না ঘরের সব কাজ করতে করতে দশটা বেজে গেলো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছে যাবে কি যাবে না।দশমিনিট দাঁড়িয়ে থেকে গুটি গুটি পায়ে রুমে ডুকলো।জয় বোধ হয় শ্রেয়ার আসার অপেক্ষাতেই ছিলো।শ্রেয়া ঘরে ডুকতেই একটা বালিশ নিচে ছুঁড়ে ফেললো।
আমার বিছানায় আমি একাই ঘুমাবো।বলেই ফোনে মনোযোগ দিলো জয়।
শ্রেয়ার যেন বুক ফেটে কান্না আসতে চাইছে।চুপচাপ বালিশ তুলে কাভার্ড থেকে চাদর বের করে
একদম বারান্ধায় চলে গেলো।
জয় ভেবেছিলো শ্রেয়া হয়ত কিছু বলবে বা রাগ করে তার পাশেই শুবে।কিন্তু এরকম করবে ভাবে নি জয়!
আরো রাগ বেড়ে গেলো ওর!চুপ করে বারান্দার দিকে মুখ করে শুয়ে রইলো।
একসময় জয়ের চোখটা লেগে এলো।হঠাৎ বাহির থেকে বৃষ্টির শব্দ পেতেই ঘুম থেকে চমকে উঠলো জয়। এরকম শীতেও বৃষ্টি হচ্ছে? নাকি অন্য কিছুর শব্দ! জয় উঠে বসে দেখলো না সত্যিই বৃষ্টি হচ্ছে! শ্রেয়াকে পাশে না পেয়েই মাথায় এলো সবটা!দ্রুত বারান্দায় গেলো।গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে শ্রেয়া।নিচে কার্পেট বিছানো তার উপর শুয়ে আছে গায়ে পাতলা চাদর নিয়ে।ভেজে নি তবে শরীর খুব ঠান্ডা হয়ে আছে।
আলতো করে কোলে তুলে নিলো জয়। বিছানায় এনে শুয়িয়ে দিয়ে আবার বারান্দা থেকে বালিশ এনে নিলো।
কম্বল টেনে দিলো শরীরে।টেবিল ল্যাম্প জ্বলছিলো তখনো!কিছুটা কাঁপছে শ্রেয়া।ঠোঁট জোড়াও কাঁপছে!
শ্রেয়াকে বুকে টেনে নিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ঘুমন্ত মুখের দিকে।কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে ঠোঁট জোড়া আকড়ে ধরলো।কারো উষ্ণ স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেলো শ্রেয়ার।চোখ মুখ বড় করে তাকিয়ে রইলো জয়ের দিকে।
জয় রহস্যময় হাসি হেসে শ্রেয়াকে বুকে জড়িয়ে নিলো শক্ত করে।
আ’ম সরি শ্রেয়া!ভালোবাসি তোমাকেও! আস্তে আস্তে বললো জয়।
কথাটা যেন কানের কাছে ঝন ঝন করে বাজতে লাগলো।আস্তে আস্তে মুখটা তুলে জয়ের দিকে তাকালো। চোখ জোড়ায় চুমু খেলো জয়!
শ্রেয়া মুচকি হাসলো শুধু।জয় ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে নিতেই শ্রেয়াও রেসপন্স করলো।
জয় নিজের সাথে শ্রেয়াকে জড়িয়ে নিয়ে কানে কানে বলল সরি বউ!সরি ফর এভরিথিং!
জয়ের বুকে গুটিসুটি মেরে শুয়ে রইলো শ্রেয়া।বুকে মুখ লুকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগলো।
চলবে
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com