মৌমিতা ফিরে এসেছে |পর্ব - ২
-What the……!!মাথাটাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার কিসের বাচ্চা কিসের বাবা???
-অর্ক আমি….
-দেখো মৌ আমার বাসার কেউই তোমাকে মানবে না। না বাবা না মা সো প্লিজ লিভ মি!!আর যা টাকা লাগবে আমি দিবো….. তুমি অ্যাবোর্শান ক
(টুট….টুট…. টুট)
অর্কর মুখে ঝাঝালো কথা শুনেই মৌমিতা ফোনের লাইন কেটে দেয়।ঠিক কেটে দেয় নাকি কেটে যায় তা বলতে পারবো না!!!
মৌমিতার গোটা পৃথিবী যখন যেন থেমে যায়।
লাইন কাটার শব্দ পেয়ে অর্ক কান থেকে ফোন নামাতেই দেখে ফোনের স্ক্রিনে ডিয়ার আয়েশা Is calling you লিখাটা ভেসে উঠেছে…….
(এবার চলুন যেনে আসি মৌমিতা আর অর্কর অতীত)
ফ্লাস ব্যাক……
অর্কদের বাসা তিন তলা অর্করা থাকতো দুইতালায় আর একতলা এবং তিনতালা ভাড়া দেওয়া ছিলো।অর্কদের তিন তলায় একটা ফ্লাট ভাড়া নিয়েছিলো মৌমিতার পরিবার।মৌমিতার পরিবার বলতে ছিলো মৌমিতার মা আর মৌমিতা।মৌমিতা যখন খুব ছোট তখন মৌমিতার বাবা মৌমিতার মাকে ছেড়ে চলে যায়।তার অবশ্য এখন নিজেস্ব একটা পরিবার আছে তবে মৌমিতার মা আর কখনো মৌমিতার বাবার সাথে যোগাযোগ করে নি।মৌমিতার বাবাও আর মা মেয়ের খোজ রাখে নি।
মৌমিতার মা ছিলো সেখানকার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
অর্ক তখন পড়তো দ্বাদশ শ্রেণিতে।বৈশাখ মাস।বেশ গরম পড়েছে।অর্ক হটাৎই ঘর থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে যায়।
ছাদে গিয়ে এদিক ওদিক হাটা হাটি করতে করতে অর্কর চোখ যায় অর্ক ঠিক বিপরীত প্রান্তে একটা মেয়ে উল্টো দিক ঘুরে নিজে নিজেই বকবক করছে।অর্ক একটু ভালো করে লক্ষ করতেই দেখে মেয়েটি একটি গোলাপ ফুলের সাথে বকবক করছে….
মেয়েটির মুখ দেখা যাচ্ছে না।মুখের সামনে চুল এসে গোটা মুখটায় ঢেকে দিয়েছে।অর্কর কেন যেন বেশ কৌতুহল হয়।
একটু নিচু স্বরে ডাক দেয়
-এই যে শুনুন
মেয়েটি মুখ তুলে তাকায়।মেয়েটির চোখের নিচে কাজল লেপ্টে আছে।পোনিটেল করে বাধা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে কিছু চুল চোখে মুখে এসে পড়েছে।টুকটুকে গোলাপি ঠোট আর ঠোটে নিচে ছোট্ট একটা তিল।।
মেয়েটির মুখ দেখেই অর্কর বুকের ভেতর লুকিয়ে থাকা প্রেমিক পুরুষ যেন দুম করে জেগে ওঠে।অর্ক মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে।
মেয়েটি অর্কর কাছে এগিয়ে আসে
-জ্বি আমাকে বলছেন??
-ইয়ে মানে হুম্ম।আপনি কে??মানে আপনাকে তো আগে কখনো দেখি নি!!
-আমি হলাম মৌমিতা আপনাদের বাসায় তিন তলায় থাকি আর আমি আপনাকে চিনি আপনি হলেন বাড়িওয়ালার বড় ছেলে।
এইটুকু কথা বলেই মৌমিতা দুম দুম করে নিচে নেমে যায়।
তবে মৌমিতার এইটুকু কথায় অর্কর হৃদয়ে দাগ কেটে যায়।
অর্ক বেশ খোজ খবর নিয়ে জানতে পারে মৌমিতার সম্পর্কে।মেয়েটি এখানকার একটা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে।আর এই বাসায় মা মেয়ে একায় থাকে।
এটাই ছিলো মৌমিতা আর অর্কর প্রথম দেখা।মৌমিতা রোজ ছাদে আসতো অর্কও আসত।তবে কেউ কারো সাথে কথা বলতো না।
একটু একটু করে ভালোলাগা তারপর ভালোবাসা।
তবে এইটুকু বয়সে তারা ভালোবাসার মানে আর গভীরতা সম্পর্কে কতোটুকু বুঝেছিলো কে জানে।
এভাবে দিন কেটে যায় মাস কেটে যায়।একদিন মৌমিতা আর অর্কর সম্পর্কের কথা অর্কর বাসায় যেনে যায়।
তখন অর্কর ফাইনাল পরিক্ষা চলছিলো।অর্কর মা প্রথমে বিষয়টা ভালোভাবে না দেখলেও ছেলেকে কিছুই বলে না।নিজের যতো রাগ ঝাড়ে মৌমিতার মায়ের উপর।
এদিকে মৌমিতার মায়েরও বদলি হয়ে যায় অন্য স্কুলে।মৌমিতার মা বাসা ছেড়ে দেয়।মাঝে কেটে যায় বেশ কয়েক বছর।মৌমিতা আর অর্কর মাঝে কোনো রকম যোগাযোগ নেই বললেই চলে….. অর্কও তার প্রিয়তমার কথা আর ভাবে না।কেন ভাববে তার কাছে সে তো এক ছলনাময়ী।যে তার বলিষ্ঠ হৃদয়ী ভালোবাসার দাগ কেটে দিয়ে চলে গেছে দূরে।এতো দূরে যে আর কখনো তার কন্ঠস্বরও সে শুনতে পায় নি।
অর্ক তখন পড়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে তো অর্কর চোখ কপালে উঠে যায়।এতো দিন নিজের মধ্যে দমিয়ে রাখা দুঃখ কষ্টের রক্তক্ষরন পুনরায় শুরু হয়ে যায়!!!
ছেলেবেলার নিছক পাগলামোর ভূতটা পূনরায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।সেই চোখ সেই ঠোঁট সেই বিশেষ মানুষটি আবার দেখা,পাওয়া না পওয়া আর অনেকটা অভীমান শেষ মেষ ফিরে পাওয়ার ইচ্ছে…..সব যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
চলবে………
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com