গল্পঃ ভাবনা | লেখা - অজানা পৃথিবী
বউয়ের সাথে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। রাতে বাড়ি ফিরে দেখতে পেলাম ঘরে বউ নেই।
ঘরের দরজা খোলা রেখে কোথায় গেল সে? ভাবতে লাগলাম!
ঘরে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলাম মনে হয় ঝড় বয়ে গেছে ঘরের ভিতর।
সব জিনিস পত্র এলোমেলো। কাপড় চোপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।
আমার বিয়ের পাঞ্জাবিটা সিলিং ফ্যানের ব্লেডের সাথে ঝুলছে!
কাঁচের গ্লাস থেকে শুরু করে সব তৈজসপত্র ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে মেঝেতে ।
সাবধানে পা ফেলে আরেক রুমে গিয়ে দেখি আলমারি খুলে ভিতর থেকে সব ফেলে দেওয়া হয়েছে মেঝেতে। আলমারিকে কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
টাকা পয়সা থেকে শুরু করে সোনার গহনা সব উধাও!
এমনকি আমাদের বিয়ের ফটোটা পর্যন্ত ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে।
আমি এসব দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারছিনা। আমার এতো বড় ক্ষতি কে করলো।
আর আমার বউ ভাবনা কোথায় গেল? তাকে কেন খুঁজে পাচ্ছি না।
তার কোন ক্ষতি হয়নি তো!
তার কোন ক্ষতি হয়নি তো!
আমি গ্রামের ছেলে শহরে এসেছি চাকরির খাতিরে। তাই দুই রুমের একটা ছোট বাসা নিয়ে ভাড়া থাকি।
এই বাড়িতে আরও দুই ঘর ভাড়াটিয়া আছে কিন্তু তারা কেউ এখন বাড়িতে নেই।
এক পরিবারের দুই জনই চাকরি করে। আরেক পরিবার বাড়িতে ছুটি কাটাতে চলে গেছে।
তাই বাড়িতে কেউ ছিলোনা।
বউয়ের জন্য বড্ড চিন্তা হচ্ছে! শহরে আমি যেমন নতুন সেও তো নতুন! ঘরের ভিতর যে
একটা মহা কেলেংকারী হয়ে গেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে কি ডাকাত পড়লো? তাই হবে হয়তো।
আমার তো সব কিছু লুট হয়ে গেছে! আমি এখন সর্ব শান্ত! কিন্তু আমার প্রিয়তমা স্ত্রী কোথায় গেল।
ওকি ভয় পেয়ে কোথাও গিয়ে লুকিয়ে আছে? মনে হয় তাই হবে।
ঘরের দরজার সামনে গালে হাত দিয়ে বসে বউয়ের জন্য অপেক্ষা করছি।
সবকিছু লুটপাট হলেও তার চেয়ে বউয়ের জন্য চিন্তা হচ্ছিল বেশি।
ওর মোবাইলে ফোন দিলাম কিন্তু বারবার বন্ধ দেখাচ্ছে। হয়তো ফোনটাও নিয়ে গেছে ডাকাতরা।
হঠাৎ আমার মনে হলো ওর তো কোন ক্ষতি হয়নি? ডাকাতরা কি ওকে ধরে নিয়ে গেছে?
নাহ্! নাহ্ তা ভাবতেই আমার গা শিউরে উঠলো।
আর এই সন্ধ্যা রাতে একটা মানুষকে তুলে নেয়া চাট্টিখানি কথা না।
তাই ঐ চিন্তা বাদ দিলাম। প্রথমে আস্তে আস্তে ডাকলাম ভাবনা! ভাবনা! কিন্তু কোন জবাব পেলাম না।
একটু থেমে আবার জোরে ডাকলাম ভাবনা! ভাবনা কোথায় গেলে? আমি এসেছি।
কিন্তু না এলো ভাবনা, না এলো তার জবাব।
এখন টাকা পয়সা গয়নাগাটি রেখে বউয়ের চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠলাম।
বাড়িতে বাবা-মা, র সাথে সেয়ার করবো তাতে তারা আমার চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়তে পারে ভেবে
তা থেকে আপাতত বিরত রইলাম। অনেক সময় বসে থাকার পর আবার ঘরের ভিতর গেলাম।
সব জিনিস পত্র দেখে আবার সেগুলোর জন্য মায়া হতে লাগলো। কত কষ্ট করে এক এক করে গাঁটের পয়সা খরচ করে কিনেছি। আর ডাকাতরা এক মূহুর্তে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে গেল। হঠাৎ একটি গ্লাস ভাঙা বেখেয়ালে আমার পায়ে বিঁধে গেলো। রক্ত বেরুচ্ছে প্রচুর তারাতাড়ি বেন্ডেজ করে ফেললাম। কিন্তু তবুও রক্ত বেন্ডেজ এর উপর দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। ব্যাথা করছে প্রচন্ড! কাঁচের কাটা ব্যাথাটা তাই একটু বেশি। এখন পা নিয়ে ভাবার সময় নেই। ভাবনাকে আগে খুঁজে পেতে হবে।
এখন নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। কেন যে দুপুরে বউয়ের সাথে ঝগড়া করতে গেলাম। ঝগড়া না করলে তো আমি রাগে ঘরের বাইরে যেতাম না। আর এমন ঘটনাও হয়তো ঘটতো না! ভাবনার জন্য এখন ভীষণ খারাপ লাগছে। বেচারি সারাদিন একা একা বাসায় থাকে। মোবাইল দিয়ে তার সময় কাটে। আর আমি কিনা তাই নিয়ে ওর সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। নিজের মাথার চুল এখন নিজে ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। না হয় একটু বেশিই মোবাইলে সময় দিতো! কেন আমার এতো রাগ হলো?
ঘরে থেকে আর কি হবে সবই তো শেষ! আবার বাইরে এসে দরজার সামনে গালে হাত দিয়ে বসে পড়লাম। এমন সময় ওপাশের বাড়ি থেকে এক মহিলা দেওয়ালের উপর মাথা তুলে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে আপনাদের? আমি বলবো কি না ভাবতে লাগলাম। মহিলা আবার জিজ্ঞেস করে, অনেক কিছু ভাঙাচোরার শব্দ শুনতে পেলাম। তখন আমি ডেকে জিজ্ঞেস করলাম। এই আপনাদের কি হচ্ছে? তখন একটি কম বয়সী মহিলা বের হয়ে বললো, আন্টি এটা আমাদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার!
ঝগড়া হচ্ছে শুনবেন? আমি সে সময় তার কথায় লজ্জা পেয়ে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু কৌতুহল নিয়ে আবার জানতে মন চাইলো। আমি বললাম সে আমার স্ত্রী ভাবনা! তাকে কোথাও দেখেছেন? নাহ্ তো! কেন তাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না নাকি? হ্যা! কোথায় গেল বুঝতে পারছি না। মহিলাটি বললো আপনাকে ভয় দেখাবার জন্য কোথাও লুকিয়ে আছে হয়তো। আর ঝগড়া করতে যান কেন? আমি চুপ করে রইলাম।
মহিলা বললো ঝগড়া করলেই জিনিস পত্র ভাঙতে হবে? এটা কিন্তু ভালো কথা নয়!
মহিলা বললো ঝগড়া করলেই জিনিস পত্র ভাঙতে হবে? এটা কিন্তু ভালো কথা নয়!
এই কথাটা শুনে আমি চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কোন সময় শুনেছেন?
এই তো সন্ধ্যার সময়। মানে ঘন্টা দেড়েক আগে। বলেন কি আমি অস্থির হয়ে বললাম।
আমি তো দুপুরে বউয়ের সাথে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম।
এলাম একটু আগে। এসে দেখি দরজা খোলা! ঘরে আমার বউ ভাবনা কোথাও খুঁজে পেলাম না ।
আর ঘরের তৈজসপত্র ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে মেঝেতে।
আলমারি খুলে সেখান থেকে সব টাকা পয়সা গয়নাগাটি নিয়ে গেছে কেউ!
মহিলা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে, বলেন কি? কিন্তু আপনার বউ তো বেড়িয়ে এসে বললো,
সে স্বামীর সাথে ঝগড়া করছে! মহিলাটি মাথায় হাত দিয়ে বলে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
এটা কেমন কথা! ঘরে চুরির ঘটনা ঘটে গেছে আর আপনার বউ উধাও!
আর আমাকে বলে গেল স্বামীর সাথে ঝগড়া। কোন কিছুই তো বুঝতে পারছি না ভাই।
মহিলা চলে গেল। যাবার সময় বলে গেল পুলিশের কাছে যেতে। এভাবে বসে সনয় নষ্ট না করতে।
আমি একেবারে হতভম্ব হয়ে গেলাম মহিলার কথা শুনে।
সেই সময় ভাবনা কেন বলবে স্বামীর সাথে ঝগড়া করছে?
তবে কি ওর কারও সাথে কোন সম্পর্ক ছিলো। যদি তাই থাকে তবে চুপ করে চলে যেতে পারতো।
জিনিস পত্র ভাঙাচোরা করার কি দরকার। নাকি ভয় দেখিয়ে ওকে দিয়ে কথা গুলো বলানো হয়েছিল?
ভাবনা আমার ভাবনা! হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে ওর বিরহে!
ভাবনা আমার ভাবনা! হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে ওর বিরহে!
তবে কি আমার ধারণাই ঠিক ও কারও সাথে মোবাইলে কথা বলতো? কারও সাথে ওর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। নাহ্! আর ভাবতে পারছিনা! পুলিশের কাছে যেতে হবে কিন্তু আমি পুলিশ স্টেশন কোন দিন যায়নি। আর এই শহরে কোথায় সেটা জানি না!
এমন সময় সোহেল ভাই আর সোহানা ভাবি এলো।
আমাকে এভাবে দরজার সামনে বসে থাকতে দেখে হেঁসে জিজ্ঞেস করলো,
কি ব্যাপার হাসান সাহেব! বউ ঘরে ঢুকতে দিচ্ছে না বুঝি?
সোহানা ভাবিও সাথে সাথে হেঁসে উঠে বললেন, যান গিয়ে কিছু উপহার কিনে
এনে বউয়ের অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করুন। আমি তাদের উপহাসের জবাবে কেঁদে ফেললাম।
সত্যি বলতে কান্নাটা আর আটকাতে পারলাম না!
সোহেল ভাই তারাতাড়ি আমার সামনে এসে বললেন, একি ছেলে মানুষি হাসান ভাই!
আমি তাকে আমার ঘর দেখিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম।
সোহেল ভাই সবকিছু শুনে ও দেখে বললো, চিন্তা করে কোন লাভ নেই। যা হবার হয়ে গেছে।
এখন আপনাকে পুলিশের কাছে গিয়ে সব খুলে বলতে হবে।
আমি বললাম আমি তো কখনো এর আগে যাইনি।
সোহেল ভাই সোহানা ভাবীকে বললেন,
তুমি একা থাকতে ভয় না পেলে আমি হাসান ভাইয়ের সাথে পুলিশের কাছে যেতাম?
সোহানা ভাবী বললেন, সে পরের কথা। আমি না হয় দরজা বন্ধ করে থাকবো। তোমার এখন হাসান ভাইয়ের পাশে থাকা প্রয়োজন। বেচারার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে!
পুলিশ ইন্সপেক্টর সব শুনে জিজ্ঞেস করলো, আমার মনে হয় এটা হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা। হয়তো এদিক দিয়ে যাবার সময় যেভাবে হোক আপনার বউ বাড়িতে একা এটা দুষ্কৃতকারীরা বুঝতে পারে এবং সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তারা লুটপাট করে পালিয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু স্যার আমার বউ কোথায়?
পুলিশ বললো, হয়তো ভয় পেয়ে কোথাও চলে গেছে। দেখবেন ফিরে আসবে। থানায় ডাইরি করে ফিরে এলাম। কিন্তু একটা কথা পুলিশ কে বলা হয় নাই। মহিলা যে কথা বলেছিল আমাকে। আমি ঠিক এখনো বুঝতে পারছি না, এটা কি ভাবনা বলেছে!
চলবে,,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com