নিস্তব্ধ প্রেমাবেগ | পর্ব-১৮
একের পর এক গয়না খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখছে শ্রেয়া।
আর নানান কথা ভেবে চলেছে!জয় যে তাকে পছন্দ করে না
সে নিশ্চিত আজ!হয়ত করুনা করে বিয়ে করছে!ভালোবেসে তো নয়!সে তো অন্য কাউকে ভালোবাসত..
শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে শ্রেয়াকে এভাবে আয়নার সামনে কিছু একটা ভাবতে দেখে
তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো জয়!কি নিয়ে ভাবছে তা পর্যবেক্ষন করে করে চলছে!
বেশ অনেক সময় পর শ্রেয়া জয়ের দিকে তাকালো। জয়কে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শ্রেয়া পাশকাটিয়ে কাভার্ড থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো!
জয় ল্যাপটপ নিয়ে বসলো কিছু কাজ করতে!
আপনি আমায় কেনো বিয়ে করলেন হ্যা?
চুলে তাওয়াল পেঁচিয়ে জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলল শ্রেয়া!
ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো জয়।
জয়কে চুপ থাকতে দেখে শ্রেয়ার রাগ যেন বেড়ে গেলো!
কি হলো কথা বলছেন না কেনো?করুনা করলেন?আমার বাবা মা নেই বলে?নাকি আমরা গরীব বলে?
নাকি আপনার দাদার কথা রাখতে?বলুন
শ্রেয়ার কথায় ভীষন রকম রেগে গেলো জয়!কোল থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালো!
তুমি যা বললে সবটাই!মানে তুমি এতিম বলে,গরীব বলে তোমায় করুনা করতে বিয়ে করছি।আর দাদুর কথা রাখতে তো বটেই!ফাজিল মেয়ে কোথাকার..
হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো জয়! শ্রেয়া বিছানায় বসে কান্না করতে লাগলো।
জয় তার সাথে অভিনয় করেছে সেদিন?ভেবেই আরো কান্না পাচ্ছে তার!
প্রায় বিশ মিনিট পর ঘরে এলো জয়।শ্রেয়া হিচকি তুলে গুনগুন করে কাঁদছে!
জয় জোড়ে ধমক দিতেই চমকে উঠলো শ্রেয়া।ভ্যা করে কেঁদে দিলো।
জয় দরজা আটকে এসে লাইট অফ করে
ড্রিম লাইট অন করে বিছানায় বসে টেবিল ল্যাম্পটাও জ্বালিয়ে দিলো।
শ্রেয়ার বাহু ধরে টেনে নিজের কাছে আনলো!
শ্রেয়া জয়ের দিকে পিঠ দিয়ে বসে কাঁদছে!
জয়ের থেকে সরে যেতে চাইলে আরো কাছে টেনে নিলো জয়।
কেনো এরকম বলছো বলো তো?আমার অফিসের স্টাফ বাজে বলেছিলো বলে?
সমাজে কিছু মানুষ এই টাইপের থাকেই।
যারা অন্যের দোষ,দুর্বলতা নিয়ে ঘাটাঘাটি করে।
সবাই যদি তাদের কথা নিয়ে পরে থাকে তাহলে জীবনে সামনে আগাবে কি করে বলো তো?
আর আমার বউয়ের নামে কেউ কটু কথা আমার সামনে বলবে
আর আমি তাতে তাল দিবো?
আমি কিন্তু দু-এক টা কথা শুনিয়ে দিয়েছি!আর তার চাকরীটাও খেয়ে দিলাম।
ইট মেরে পাটকেল খেয়েছে।সিম্পল!
শ্রেয়ার কান্না থেমে গেছে।অবাকও হয়েছে বেশ।
মৃদু আলোয় শ্রেয়ার এরুপ চাহনি দেখে মুচকি হাসলো জয়!
ভেজা চুলগুলো স্বযত্নে মুছে দিয়ে ঘাড়ে মুখ ডুবাল।এক মাদকতা আছে শ্রেয়ার চুলে!
যা বারবার আকৃষ্ট করে জয়কে।কিন্তু শ্রেয়াকে পুর্নাঙ্গ ভাবে ভালোবাসে
আর সে ভালোবাসাটা শ্রেয়াকে উপলব্ধি না করিয়ে স্বামীর অধিকার চায় না জয়!
এতে হয়ত দুজনের মধ্যে ভালোবাসার কমতি থাকবে।চাহিদাটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে..!
শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই কিছুসময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পরলো।
ঘুমের মধ্যে জয়কে আকড়ে ধরলো দুবাহুর মাঝে।
জয়ের কাছে এক অন্য রকম অনুভূতিরা ভীড় করলো! হয়ত ভালোবাসার প্রাথমিক পর্যায়…!
কাল সন্ধ্যার মধ্যেই বাসায় পৌঁছাতে পারবে জিসান।
এখন প্লেনে বসে আছে!দাদাভাই-শ্রেয়ার বিয়ের কথা কত দূর আগালো কে জানে?
বাড়ির কেউ তো কথাই বলছে না ঠিকঠাক!
জিসান যা করছে ঠিক করছে তো?
জুঁইয়ের সাথে এরকম একটা কাজ করার পর শ্রেয়াকে বিয়ে করা?
আর শ্রেয়াই বা মানবে তো?
বাড়ির লোক দাদাভাই -ই বা ব্যাপারটা কিভাবে নিবে?
কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।মাথাটা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাবে মনে হচ্ছে…!
এদিকে জুঁইয়ের বাবার অবস্থা ভালো না।সব ভুলে এখন বাবাকে নিয়ে ব্যস্ত জুঁই!
ওপেন হার্ট সার্জারি আজ তার বাবার!ওটিতে নিয়ে গেছে বেশ সময় হয়েছে।
এখনো অাপারেশন থিয়েটারের লাইট অন হয় নি!কি হচ্ছে ভেতরে?
ওয়েটিং সিটে বসে আছে জুঁই। কেঁদে কেঁদে ক্লান্ত হয়ে গেছে।
এখন আর চোখে অবিরাম পানি আসছে না।
কিছুক্ষন পরপর চোখ ঝাপসা হয়ে টুপ করে দুই একফোঁটা পানি নিচে পড়ছে।
পাশে তার বেস্ট ফ্রেন্ড মোনালিসা বসে আছে!
এই একটা মেয়েই আছে দুনিয়াই যে তার বাবা মার থেকেও হয়ত বেশি ভালোবাসে জুঁইকে।
এত কথা-কাটাকাটি হয় ঝগড়া হয় দুজনার মাঝে তবুও
জুঁইয়ের সব বিপদের দিনে সে সবার আগে হাজির!
জুঁই ভাবছে জিসান ও তার জীবন থেকে চলে গেলো।
এখন আল্লাহ না করুক বাবার কিছু হলে কি নিয়ে বাঁচবে ও?কি নিয়ে?
কি হবে শেষ পরিনতি?কারোই জানা নেই!
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com