নিস্তব্ধ প্রেমাবেগ |পর্ব-১৭ |লেখা-স্বর্ণালি আক্তার
জয়ও হুড়মুড় করে উঠে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো।ভোর আনুমানিক পোনে চারটা!রাতই বলা চলে।
এসময়ে ঘর ভর্তি ধোঁয়া আর দেয়ালে আগুন দেখে যেকেউই ভয় পাবে।
শ্রেয়ার রীতিমতো শ্বাসকষ্ট শুরু হচ্ছিলো।ভয়ে ঘেমে একাকার অবস্থা।জয় দৌড়ে ওয়াশরুমে যায়।
বালতি ভরতে দিয়ে মগ নিয়ে এসে পানি দিচ্ছে.. দরজা আটকানো কেউ আসছেও না।জয় মা বাবা বলে চেচিয়ে পানি দিচ্ছে।
শ্রেয়া পিছনে যেতে যেতে সোফার সাথে লেগে পড়ে গেলো।
জয় পানি দেওয়া রেখে দরজা খুলে লাইট জ্বালালো।
জয় শ্রেয়াকে বাহু ধরে তুলে বুকের সাথে জড়িয়ে এক কোনে দাঁড়িয়ে রইলো।চিৎকার করে মাকে ডাকছে।
আগুন বেড়েই চলেছে।এমন চলতে তাকলে তো পুরো বারি জ্বলে যাবে ভেবেই আরো ভয়ে গুটিয়ে গেলো শ্রেয়া।
মা মাকে ডাকুন অস্পষ্ট সুরে বলল শ্রেয়া।
মা মা বলে বার কয়েক ডাক দিয়ে শ্রেয়াকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো জয়। শ্রেয়া শান্ত হও!একটু আস্তে শ্বাস নিতে চেষ্টা করো বলেই আস্তে আস্তে ফ্লোরে বসে পড়লো শ্রেয়াকে নিয়ে।
ড্রয়িংরুমে বসে আছে সবাই।মোম থেকে টেবিল ক্লথে তার থেকে কাঠ বেয়ে আগুন ধরে গেছ বলে ধারনা করছে বাড়ির সবাই।
মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন ঝর্ণা বেগম।সোফা থেকে একটু দূরে রোদ তার পাশে আদিবা দাঁড়িয়ে আছে।আকাশ সাহেবের মুখ চিন্তায় ভার হয়ে গেছে!
কত বড় একটা বিপদ গেলো।তা বলছে রহমত মিয়া আর আমজাদ সাহেব।
জয়ের কোলে মাথা রেখে সোফায় ঘুমিয়ে আছে শ্রেয়া।।শরীরে কাথা টেনে দিয়ে মাথায় হাত বুলালো জয়।
ফজরের আযান শুনে ঝর্ণা বেগম উঠে পড়লো। বললো
বাবা কাল তো রিসেপশন!এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেলো।এখন কি করে?
চুপ করে রইলেন আমজাদ সাহেব!
মৌনতা ভেঙে আকাশ সাহেব বললেন নাহ ঝর্ণা এটা পেছানো যায় না।
যদি আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে হতো তাহলে এক কথা!অফিস সহ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ক্লাইন্টরাও আসবে।পেছালে মানসম্মান কোথায় দাঁড়াবে ভাবতে পারছো?
আর তাছাড়া যা হবার হয়ে গেছে এখন তো ওরা বিপদ মুক্ত!
ঝর্ণা বেগম মাথা দুলিয়ে চলে গেলেন।
বাবা কি বলো?
আমজাদ সাহেব ধুম ধরে থেকে বললেন হুম যা ভালো বুঝো!
নামাযে এসো।আয় রহমত।বলেই উঠে গেলেন তিনি।
রহমত নাতনির মুখ পানে তাকিয়ে দেখে আমজাদ সাহেবের সাথে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
আকাশ সাহেব উঠে দাড়িয়ে বলল জয় বাবা শ্রেয়াকে নিয়ে জিসানের ঘরের পাশের ঘরটায় যা!তোর ঘরটা রিপেয়ার করা অব্ধি ওখানেই থাক!ক্লিন করা আছে।
আচ্ছা বাবা।
আকাশ সাহেব চলে যেতেই জয় শ্রেয়াকে কোলে তুলে নিলো!
আস্তে ধীরে উঠে এলো সিঁড়ি বেয়ে!
বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিজের ঘরে গেলো জয়।কম্বলটা নিয়ে ও ঘরে রওনা হলো।
শ্রেয়ার গায়ে কম্বল দিয়ে মাথার পাশে বসল।চোখমুখ লাল হয়ে গেছে!বিয়ের সব ঝামেলা মিটে গেলেই একটা ভালো ডক্টর দেখাতে হবে!কি অবস্থা হয় হ্যা
শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছে জয়!
পাশে শুয়ে আলতো করে শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে একসময় নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো জয়!
দুপুর আড়াইটার দিকে আদিবার ডাকে ঘুম ভাঙল জয়ের।শ্রেয়া এখনো ঘুমাচ্ছে!
আস্তে আস্তে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
এসে শ্রেয়াকে ডেকে তুলল।
শ্রেয়া ফ্রেস হয়ে এসে বিছানায় যে বসলো তো বসলোই। সাড়ে তিনটা বেজে গেছে তবুও উঠছে না।
রেডি ডেকোরেশন দেখতে নিচে গিয়েছিলো জয়। এসে শ্রেয়াকে এভাবে দেখে বলল কি হয়েছে তোমার?
জয়ের দিকে তাকিয়ে কয়েকদফা চমকালো শ্রেয়া।মাশাআল্লাহ তার বরকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।
শ্রেয়াকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কাশলো জয়।ভ্রু কুঁচকে তাকালো আবারও
নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল কি পড়বো আজ?
ওই যে প্যাকেটে লেহেঙ্গা আছে।পড়ে নাও।সারাদিন খাও নি।খেতে হবে তো..
শ্রেয়া চুপ করে রইলো।
জয় বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।আদিবাকে ডেকে এ ঘরে পাঠিয়ে নিজে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।আদিবা এসে নিজের মত করে সুন্দরভাবে সাজিয়ে দিলো শ্রেয়া।যদিও পার্লার থেকে লোক আসার কথা ছিলো।শ্রেয়া না করে দিয়েছে।অত ভারী মেকাপ তার কোনো কালেই পছন্দ নয়!
পাশাপাশি দুটো চেয়ারে বসে আছে শ্রেয়া-জয়!একে একে সবাই এসে গিফট দিচ্ছে। জয়কে কনগ্রেস জানাচ্ছে!
প্রায় সব কলিগ সব বিজনেস ম্যানরাই চলে এসেছে। আত্মীয় স্বজন পরিচিত প্রায় সবাই।যে যার মত আনন্দ করছে।
শ্রেয়া উঠে তার দাদার কাছে যেতে নিলেই কিছু কথা তার কানে আসে।দাঁড়িয়ে পড়ে সে!
জয়ের অফিসের কোনো স্টাফ বলছে জয়কে
জয় শেষে কিনা এরকম ভিখারি মেয়েকে বিয়ে করলে? আমি কিসে কম ছিলাম?অফিসের কত মেয়েই তো তোমার জন্য পাগল।এ মেয়ের না আছে জাত না আছে টাকা তাহলে?
পাশের কয়েকজন অট্ট হাসিতে মেতে উঠলো।শ্রেয়া তখন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো জয়ের দিকে। জয় এক রহস্যময় হাসি হেসে চুপ করে রইলো। কিছুটা কান্না আর অনেক পরিমাণ অভিমান নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো শ্রেয়া।ভেবেছিলো জয় হয়ত কিছু বলবে!
শ্রেয়া চলে যেতেই জয় মোহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল শ্রেয়ার মাঝে যা আছে তার শতভাগের একভাগ ও তোমার মাঝে নেই!আর যাইহোক আমার বউ তোমার মত সস্তা না।অন্তত পর পুরুষদের সামনে নিজেকে বিকিয়ে দেয়না!
কাল ভদ্রভাবে রিজাইন দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যাবে নয়ত আমি ভুলে যাবো তুমি আমার ক্লাসমেট বা ভালো ফ্রেন্ড ছিলে।
বলেই সামনে এক পা এগুলো জয়।আবার পিছনে এসে বলল খেয়ে যেও।কষ্ট করে টাকা খরচ করে গিফট নিয়ে এসেছো যখন!
জয় চলে যেতেই সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মোহনার দিকে।মোহনা রাগে খেই হারিয়ে ফেলেছে।দুটাকার মেয়ের জন্য ও এভাবে অপমানিত হলো?
জয়কে দেখে নিবে ও!বোঝা পোড়ার শুরুতো সবে!হাতের মুঠো শক্ত হয়ে এলো মোহনার।
চলবে
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com