অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২) | পর্ব - ১৭
গাড়িতে বসে আছে রিয়া।কপালে চিন্তার ভাজ।বরাবরের মতো এবারও তার চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু ফাহিম।
সে বুঝতে পারছে না, ফাহিমের মা তার ফোন নাম্বারটা কোথায় পেলো?
আর হঠাৎ কি এমন হলো ফাহিমের যার জন্য তাকে নিতে একদম গাড়ি পাঠিয়ে দিতে হলো।
রিয়া তো তেমন কিছুই বলে নি যার জন্য ফাহিম সুইসাইড টুসাইড করে বসবে।
তাছাড়া ফাহিম একজন বাস্তববাদী মানুষ সে কখনোই এমন অদ্ভুত ডিসিশান নিবে না তাহলে কাহিনীটা কি?
রিয়াকে বকা দেওয়ার জন্য ডেকে পাঠায় নি তো?
কিন্তু সে করেছেটা কি যার জন্য এতো রাতে তাকে বাড়ি ডেকে বকা দিতে হবে।
কি জানি বাবা….ড্রাইভারের ডাকে রিয়ার ভাবনার সুতো কাটলো।চলে এসেছে তারা।
রিয়া গাড়ি থেকে নামতেই ড্রাইভার তাকে ভেতরে যেতে বলে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
রিয়া দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ।যেনো কোনো এক অদৃশ্য অস্বস্তি চেপে ধরেছে তাকে।।
তবুও অসীম সাহস নিয়ে পা বাড়ালো সে।দরজার কলিংবেলে হাত রাখা মাত্রই দরজা খুলে দিলেন
একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা।বিষয়টায় রিয়া বেশ অবাকই হলো,,
বাড়িটা যেনো তার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।রিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মহিলাটির দিকে তাকালো।
মহিলাটাকে দেখে রিয়ার মনে উদয় হওয়া প্রথম বাক্যটি হলো
,”মহিলাটা অসম্ভব রূপবতী” দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি ফাহিমের মা।মুখটা ফাহিমের মতো
গোলগাল হলেও ফাহিমের মতো অত ফর্সা নন রঙটা হালকা চাপা।
কিন্তু তাতে তার রূপ চাপা পড়েনি বিন্দুমাত্র।
আঁটসাঁট থমথমে গড়নের এই মহিলাকে এখনো বিনা জঞ্জাটে বিয়ে দিয়ে দেওয়া যাবে বলেই রিয়ার ধারনা।
মহিলাটা রিয়াকে দেখেই একটা আন্তরিক হাসি দিয়ে ভেতরে আসতে বললেন।
রিয়া বাড়িতে পা দেওয়ার সাথে সাথেই দুতলা থেকে ধুমধাম শব্দ হতে লাগলো।
রিয়া ভয় আর বিস্ময় নিয়ে মহিলাটির দিকে তাকালো।।
মহিলাটিও তার দিকে করুণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,,রিয়া মা?চলো আমার সাথে।
রিয়া বুঝতে পারছে না কি হতে চলেছে বা কি হচ্ছে।
কিন্তু এই মুহূর্তে তার কাছে উনার পেছনে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো অপশন নেই।
তাই ভয় ভয় পায়ে সিঁড়ির পর সিঁড়ি ডিঙোতে লাগলো সে।
দুতলার মাঝামাঝি একটা বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন উনি,,
রিয়াও কৌতূহল নিয়ে তাকালো তার দিকে।।উনি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন….
.
ফাহিম বিকেল চারটা থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে ভাঙচুর করছে।এখন রাত দশটা।
৬ ঘন্টা যাবৎ ঘর বন্ধী।দুপুর থেকে এখন পর্যন্ত কিচ্ছু খায়নি।
এবার সব তোমার হাতে মা,,প্লিজ ওকে একটু ম্যানেজ করো।
.
ফাহিমের মায়ের কথায় রিয়ার চোখ যেন বেরিয়ে আসার উপক্রম।
যে ছেলে বাবা-মা কে তোয়াক্কা করছে না সে শুনবে তার মতো পুচকির কথা??ইম্পসিবল।
ঠিক তখনই ঝনঝন শব্দ করে উঠলো ঘরের ভিতর।
হয়তো কাচ জাতীয় কিছু ভেঙেছে।রিয়া অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো…
.
আন্টি উনি আমার কথা শুনবেন কেন??পরে দেখা যাবে বিরক্ত হয়ে ঠাডিয়ে চড় বসাবে আমার গালে।
.
নাহ,,,তোমায় কিছু করবে না। ও হাইপার হয়ে গেলে আয়ানই শুধু পারে ওকে সামলাতে।
ও তো এখন নেই।কিন্তু আমার বিশ্বাস তুমি পারবে।ট্রাই করো,,আমি ওর জন্য খাবার পাঠাচ্ছি।
.
কিন্তু আন্টি….
.
.
রিয়ার কথা সম্পূর্ণ না হতেই হাঁটা দিলেন ফাতেমা।
রিয়া অসহায়ের মতো একবার উনার যাওয়ার দিকে তো একবার বন্ধ দরজার দিকে তাকাতে লাগলো।
হায় আল্লাহ, আজ যে রিয়ার কপালে কে আছে কে জানে??
কে বলেছিলো, ফোন দিয়ে বলতেই নেচে নেচে চলে আসতে??
আসলেই সে একটা ডাফার।আর এই ভাইরাসটাকেও বলিহারি যায়,,,
এতোই ভাঙার শখ তো সাউন্ড প্রোফ রুমে ভাঙচোর কর।ওর জন্য যে রিয়ার মতো অবলা
শিশু ফেঁসে গেলো তার কি হবে???হুহ।রিয়ার ভাবনার মাঝেই আবারো ধুমধাম শব্দ করে উঠলো ভেতরে।।
এবার আর দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে না।।কাঁপা কাঁপা হাতে দরজায় নক করে ডেকে উঠলো রিয়া,,
কিন্তু ভেতরের তুমুল শব্দে কোনো ভাটা পড়লো বলে মনে হলো না।
আরো দু একবার ডাকার পরও কোনো সাড়া না পেয়ে, মাথায় রক্ত উঠে গেলো রিয়ার।
ভাইয়া,স্যার এসব সৌজন্যতা ভুলে গিয়ে ভাইরাস বলে দিলো এক চিৎকার।
.
ওই ব্যাটা ভাইরাস?দরজা খুলবি তুই?নাকি আমি ভাঙবো দরজা।ও হ্যালো?
শুনছেন??ওকে তাহলে আমি ভাঙলাম দরজা,,রেডি ওয়ান,, টু…
.
এটুকু বলার সাথে সাথেই দরজাটা খুলে গিয়ে কেউ একজন ঝরের গতিতে জাপটে ধরলো রিয়াকে।ঘটনার আকস্মিকতায় বোকা বনে গেলো রিয়া।দুই মিনিট আহাম্মককের মতো দাঁড়িয়ে থেকে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই চেঁচিয়ে উঠলো সে।।প্রায় সাথে সাথেই তার মুখ চেপে ধরে রুমের ভেতরে নিয়ে দরজা আটকে দিলো ফাহিম।।
.
অদিতি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ঠিক তখনই ঘরে ডুকলো আয়ান।
ব্যাগ থেকে দুটো কৌটা বের করে।
তার থেকে বেশকিছু টেবলেট নিয়ে অদিতিকে পাশ কাটিয়ে পানির গ্লাসটা তুলে নিলো হাতে।
অদিতির চোখ তো চড়ক গাছ।আরে এই পাগলের ডাক্তার করে কি??
পাগল সাড়াতে সাড়াতে নিজেই পাগল হয়ে গেলো না তো??
এত্তোগুলো টেবলেট একসাথে কেউ খায় নাকি??লোকটা সুইসাইড করতে যাচ্ছে না তো??
এমা!! সাইক্রিয়াট্রিস্ট নিজেই যদি সুইসাইড করে তাহলে রোগীরা কি করবে??
আয়ান টেবলেটগুলো মুখের কাছে আনতেই আটকে দিলো অদিতি।
কেউ চোখের সামনে সুইসাইড করবে তা কি হতে দেওয়া যায়??কখনো না।।
অদিতি স্বাভাবিকভাবে আয়ানের হাত ধরলেও আয়ানের কাছে বিষয়টা মোটেও স্বাভাবিক লাগছে না।
ব্যাপারটায় সে বেশ অবাক।।
.
কি সমস্যা?হাত ধরেছো কেন?(ভ্রু কুচকে)
.
তার আগে বলুন এসব কিসের টেবলেট??আর এতোগুলো টেবলেটই বা কেনো খাচ্ছেন???
.
আয়ান অদিতির মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই হেসে উঠলো বেশ জোরেসোরেই।এবার অদিতির অবাক হওয়ার পালা।।সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অদিতি। আয়ানের হাসির মতো কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে।।
.
এভাবে হাসছেন কেন?
.
লাইক সিরিয়াসলি মিস ঝগড়ুটে?? আমি সুইসাইড করবো ভাবলে কিভাবে??আয়ান চৌধুরী এমন কাপুরুষের মতো কাজ করে না।।এসব করার হলে ২২ বছরে করে নিতাম আজকের দিনের জন্য ওয়েট করতাম না।।এসব তো হ্যাডেক,পেশার আর ঘুমের টেবলেট।ওই মহিলার কথা মনে পড়লেই আমার এসব খেতে হয়।নয়তো ঘুমও আমার সাথে বেইমানি করে।।এনিওয়ে হাত ছাড়ো ঔষধ খাবো।
.
না খাবেন না।
.
মানে?(অবাক হয়ে)
.
এসব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষ….
.
ক্ষতিকর।আই নো বাট আই ডোন্ট কেয়ার।আই নিড আ সাউন্ড স্লিপ সো প্লিজ নিজের কাজে মন দাও।
.
ট্রাই তো করুন।দেখবেন এমনি ঘুম ধরা দিয়েছে।।একসময় দেখবেন ঘুম নিজেই আপনার সাথে বন্ধুত্ব করে নিয়েছে।নিজ দ্বায়িত্বে।।
.
এসব কাব্যিক কথা বাদ দাও প্লিজ।।আর নিজের কাজ করো।।এসব ছাড়া আয়ান চৌধুরীর ঘুম আসবে না।
.
যদি আসে
.
ইম্পোসিবল।।
.
চ্যালেঞ্জ??
.
আয়ান অদিতির কথাবার্তায় অবাক হয়ে চলেছে বারবার।আয়ানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি অদিতির চোখে মুখে।।অদিতি ঠিক কি করতে চাইছে তা তার বোধগম্য হচ্ছে না মোটেও।কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে কয়েকসেকেন্ড চিন্তা করেই রাজি হয়ে গেলো আয়ান।যার অর্থ চ্যালেঞ্জ একসেপ্টেট। আয়ানের কথা শুনামাত্রই অদিতি বিছানায় পা উঠিয়ে আরাম করে বসলো।।আয়ান তাকাতেই হাতের ইশারায় তাকে কাছে ডেকে কোলে মাথা রাখতে বললো সে।আয়ান ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলো…
.
কি হচ্ছে টা কি.?সরো ওখান থেকে আমি ঘুমাবো।
.
তাই তো বলছি,,এসে শুয়ে পড়ুন।
.
.
অদিতি এসব ফাজলামো হয়ে গেলো যাও এখান থেকে।এসব আদিক্ষেতা ভালো লাগে না আমার।।(রাগী চোখে)
.
অদিতি আয়ানকে তোয়াক্কা না করে চুপচাপ বসে রইলো।।
যার অর্থ সে সরছে না ব্যস।।
আয়ান এবার রাগী চোখে তাকালো কিন্তু অদিতির নড়ন চড়ন না দেখে একরাশ
বিরক্তি নিয়ে মাথা রাখলো অদিতির কোলে।একধরনের অস্বস্তি কাজ করছে তার মধ্যে।।
এর আগেও অনেক মেয়েদের সাথে টাইম স্পেন্ড করেছে আয়ান কিন্তু এই অস্বস্তি
নামক জিনিসটা তাকে কখনোই আট্যাক করতে পারে নি।।
তাহলে আজ কেন??তবে এই অস্বস্তির সাথে যে মৃদু ভালোলাগাও কাজ করছে তা কিন্তু স্পষ্ট।
মৃদু বললে ভুল হবে মৃদুর থেকে একটু বেশিই ভালোলাগছে তার।।
কেমন একটা শান্তি লাগছে মনে।অদিতি আয়ানের চুলে হাত বুলাতেই দু’হাতে অদিতির
কোমর পেচিয়ে ধরলো আয়ান।এবার অদিতি নড়ে চড়ে উঠলো।।
তার শরীরে কম্পন স্পষ্ট।শাড়ির উপরে আয়ানের ঠোঁটের স্পর্শ পেটে শীতল অনুভূতি বয়ে আনছে বারবার।।
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে পেছনে ঠেস দিয়ে বসলো অদিতি।
আয়ানের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে গানের পসরা নিয়ে বসলো সে….
.
সখী ভাবনা কাহারে বলে,সখী যাতনা কাহারে বলে।
তোমরা যে বলো দিবসও রজনী ভালোবাসা ভালোবাসা
সখী ভালোবাসা কারে কয়?
সে কি কেবলই যাতনাময়। সে কি কেবলই চোখের জল, সে কি কেবলই দুঃখের আশ
লোকে করে কি তবে সুখেরও তরে এমনই দুঃখেরও আশ।
আমার চোখে তো সকলই শোভন, সকলই নবীন,সকলই বিমল।।
সুনীল আকাশ,শ্যামল কানন,বিষদও যতনা কুসুমও কোমল।
সকলই আমারই মতো তারা কেবলই হাসি,কেবলই গায়,
হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়।।
না জানি বেদন,না জানি রোদন,না জানি স্বাদের যাতনা কত।
ফুল সে হাসিতে হাসিতে ঝরে…..”””””
চলবে……..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com