গল্পঃ বেলিফুল । পর্ব - ০৪
কিস, চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমি অবাক হয়ে দেখলাম সামনে আদিরা নেই।
হঠাৎ করেই যেনো তার সাহসটা বেড়ে গেছে।
কিছুটা ঝাঁপিয়ে পড়েছে আমার ওপর।
বিছানায় পড়ে গেলাম, মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছেনা, বিষ্ময় আর রাগ দুটোর কোনোটাই কন্ট্রোলে নেই।
আদিরা মেয়েটার নিঃশ্বাস আমার মুখের ওপর এসে পড়ছে।
ঠোঁট জোড়া এত কাছো চলে এসেছে যে তার লিপস্টিকের গন্ধ পর্যন্ত পাচ্ছি।
দম বন্ধ হয়ে আসার সময় হয়েছে।
কোনোমতে নিঃশ্বাস নিলাম, কথা বলার সুযোগ নেই আমার আর কিছু করারও নেই।
মেয়েটা কিছুটা পাগলের মতোই আচরন করলো।
ঠোঁট জোড়া চেপে ধরলো আমার ঠোঁটে।
তারপর কতক্ষণ এভাবে ছিলাম মনে নেই।
যখন হুশ ফিরলো আমি তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটা হাসছে।
তার ঠোঁট কেঁটে রক্ত বেরুচ্ছে তবুও হাসছে।
যখন স্বজ্ঞানে ফিরলাম তখন ইচ্ছা হচ্ছিলো থাপ্পড় দিয়ে ৩২ টা দাঁত ফেলে দিবো কিন্তু রক্ত দেখে রাগ পড়ে গেলো।
কিছু বলতে পারলাম না।
মেয়েটাকে রক্তখেকো পিচাশিনী মনে হচ্ছে।
ছোটবেলায় একটা কার্টুন দেখতাম নাম মনে নেই তবে সেখানে যেই পিচাশিনী টা ছিলো ঠিক তেমনই লাগছিলো আদিরাকে।
মেয়েটা ফ্রেস হয়ে আসলো।
রক্ত পড়ছেনা এখন আর তবে বুঝতে পারতাছি কয়েকদিন ভুগতে হবে তাকে। ঝাল কিছু খেতে পারবেনা।
ড্রয়ার থেকে একটা ক্রিম দিয়ে বললাম,
– ঠোঁটে অল্প লাগিয়ে নিন। জ্বলবে একটু তবে ঠিক হয়ে যাবে।
– আপনি লাগিয়ে দিন।
– আমি পারবোনা আপনাকে দিছি আপনি নিজে করে নিন।
– আপনি রাগ করছেন? আবার মারবেন আমাকে?
– আদিরা প্লিজ আপনার অভিনয় থামান। আপনি ধর্ষন করার চেষ্টা করেছেন আমাকে।
– কিহ পুরুষ ধর্ষন? হিহিহি…..হিহিহি……হিহিহি…..
কি বলতে কি বললাম!
বউ হাসছে,হেসেই যাচ্ছে।
এই হাসির দিকে তাকালে মায়ায় আটকাতে বাধ্য।
তিন্নিকে কখনো এভাবে হাসতে দেখিনি সে অনেকটা গম্ভির ছিলো সবসময় একটা ভাব নিয়ে থাকতো।
অনেক ইচ্ছা ছিলো মেয়েটা হাসবে, বেশ শব্দ করেই হাসবে, আমি দেখবো, আমি শুনবো সে হাসি।
মাতাল হবো, প্রেমে পড়বো।
সে হাসি আমি দেখেছি বটেই,
তবে প্রেমে পড়ার সুযোগ নেই।
কোথায় যেনো পড়েছিলাম,
যদি দেখিলে সুন্দরী নারীর অট্টহাসি,
পড়বে প্রেমে সাজা যদিও হয় যাবজ্জীবন বা ফাসি।
– শুনছেন?
– এ্যা, হ্যা বলুন।
– আপনি লাগিয়ে দেননা ভিষন জ্বলবে আমি লাগাতে পারবোনা আরো কেটে যাবে চাপ লেগে।
– আচ্ছা এদিকে আসুন।
আমি মনে হয় আদিরাকে কাছে আসতে বলিনি বলেছি আসো আমার শরিরের সাথে মিশে যাও।
সে এতটাই কাছে এসে দাড়ালো।
আমি মাতাল হয়েছি সত্যিই মাতাল হয়েছি।
আমি দেখছি সামনে তিন্নি দাঁড়িয়ে।
সে নিচের ঠোঁটটা এগিয়ে দিয়েছে আমার দিকে।
গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট।
চিকন ঠোঁটে লালবর্ণ ধারন করেছে।
ঠোঁটে ক্রিম লাগাতেই মেয়েটা এমন একটা ভাব করলো যেনো সে প্রচুর ব্যাথা পেয়েছে।
আমি সরে এলাম।
এরপর কি হবে তা আন্দাজ করা কঠিন কিছু না।
মেয়েটা একবার কিস করেছে সাহস বেড়ে গেছে এখন সুযোগ পেলেই করবে।
মানুষ বলতেই এমন,
একবার কোনো কঠিন কাজ করার পর সেটা এতটা সহজ মনে হয় যে তখন আমরা ভুলেই যাই কাজটা করা সত্যিই কতটা কষ্টের ছিলো।
আদিরার বাসা থেকে লোক এসেছে তাকে নিতে।
একজনের দাড়ি সেই লম্বা।
দাদু মনে হয়।
আমি সেভাবে চিনিনা।
লোকটাকে সালাম দিলাম।
তিনি জানালেন আমাদের নিয়ে যেতে চায় তিনদিন তাদের বাসায় থাকতে হবে।
আমি বুঝিয়ে বললাম আমি যেতে পারবোনা।
তারা দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে আদিরাকে নিয়েই চলে গেলো।
যাক কয়েকটা দিন শান্তিতে থাকতে পারবো।
সেদিন রাতে ঘুমালাম তবে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলো।
কই আদিরা কই গেলো? মেয়েটাতো আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় আজ কই সে।
কিছুক্ষণ ভাবলাম আদিরা কোথায় গেলো।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে অনেককিছু মনে থাকেনা তেমনটাই হয়েছে।
প্রায় মিনিট পাচেক ভাবার পর মনে হলো আদিরাকে তো পাঠিয়ে দিয়েছি দুপুরে।
কিছুটা হাসলাম, কিছুটা ভাবলাম ও মেয়েটাকে কি সত্যিই ভালোবেসে ফেললাম নাকি।
সে রাতে আর ঘুম হলোনা।
সকাল হতেই কেনো জানি আমি চাইছিলাম আদিরা মেয়েটা আসুক, আজই চলে আসুক।
আজকে রাতে আবার জড়িয়ে ধরে ঘুমাক, আমি মেয়েটার আশেপাশে থেকেও একটু লুকিয়ে থাকি।
হঠাৎ আদিরাকে নিচে দেখলাম।
সে আসছে, বেশ তাড়াহুড়ো করেই আসছে এদিকে।
আমি জানিনা কেনো আদিরাকে দেখে অনেকটা খুশি হয়েছিলাম।
মেয়েটা রুমে আসতেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে লাগলো।
এতটা শক্ত করে সে এর আগে কখনো ধরেনি আমাকে।
তবে কান্নার কি কারন?
– আদিরা?
– চুপচাপ…..
– আদিরা কি হয়েছে কাঁদছেন কেনো?
– এবারও চুপ…….
এবার বেশ ধমকের সাথেই বললাম,
– আপনি বলবেন নাকি চড় মারবো আমি?
আদিরা কান্না ধামিয়ে বললো,
– আচ্ছা আপনি তিন্নি আপুকে পেলে আমাকে ছেড়ে দিবেন তাইনা?
– হঠাৎ এই প্রশ্ন?
– বলুন ছেড়ে দিবেন কিনা?
– জানিনা।
– তিন্নি আপু কল করেছিলো আপনার সাথে দেখা করতে চায় সে। ঠিকানা রাতে পাঠাবে বলেছে আর বলেছে আপনাকে নাকি একাই যেতে হবে।আপনি কি আমাকে রেখে আপুকে নিয়ে পালিয়ে যাবেন?
আদিরার কথার উত্তর কি দিবো ঠিক বুঝতে পারছিনা। একটু আগেও ভাবছিলাম হয়তো মেয়েটাকে একটু ভালোবাসা দরকার আবার মাঝখানে তিন্নি চলে আসলো। আমি কি সত্যিই কালকে তিন্নিকে নিয়ে পালিয়ে যাবো?
চলবে….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com