Breaking News

ভাবনা | ৩য় পর্ব

পুলিশের লোক যে আমার পিছনে ঘুরেফিরে নজর রাখছে তা টের পেয়েছি একটু আগেই ।
আজ একটু বাজার করতে বেরিয়ে দেখতে পেলাম কেউ একজন আমাকে ফলো করছে কিন্তু খুব সাবধানে।
লোকটা হয়তো ভেবেছে আমি তাকে দেখতে পায়নি।
কিন্তু আমি তার গতিবিধি শনাক্ত করে বুঝতে পারছি সে অন্য কিছু নয় পুলিশের ইনফর্মার।
চারপাশে তার চোখের নজর ঘুরলেও আমিই যে লক্ষ্য বস্তু তা বুঝতে আমার সময় লাগেনি।
ইচ্ছে করেই বাজারের একটি দোকানের আড়ালে ঢাকা দিয়ে ছিলাম আর তাতেই সে
পুরোপুরি ধরা খেয়েছে আমার কাছে।
আমাকে হারিয়ে সে পাগলের মতো আচরণ শুরু করে দিয়েছিলো।
একেবারে রাগে হাত-পা ছুড়তে শুরু করে মাথার চুল ধরে টানতে থাকে।
এতেই আমার জলের মতো সব পরিস্কার হয়ে যায়।
প্রথম প্রথম একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম কিন্তু পরে নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছি।
আমার স্বাভাবিক কাজ আমাকে করে যেতে হবে নয়তো আরও বেশি সন্দেহ করবে ওরা।
আর অনেক কিছুই হয়তো থামিয়ে রাখা যায়। কিন্তু পেট কারও জন্য বসে থাকতে চায়না।
এটাই বাস্তব! তাই আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে বাজার করতে লাগলাম।
আনাজ তরকারি নিয়ে সোজা বাসায় চলে এলাম। তারপর কেটেকুটে রেঁধে ফেললাম খিচুড়ি।
সহজ খাবার ভাত তরকারি দুটোই আছে এতে। আলাদা করার কি দরকার।
এক পেটেই তো যাবে। আর সময়ও লাগলো কম।
সত্যি বলতে আমি খিচুড়িটাই রাঁধতে পারি। তরকারি ভালো হয়না।
একটা সিগারেট ধরিয়ে গলির মোড় থেকে একটা চক্কর দিয়ে এলাম।
দেখতে পেলাম এখনো সেই লোক পত্রিকা পড়ার ছলে আমার উপর নজরদারি করছে।
ঘরে এসে ভাবি তবে কি পুলিশ এখন আমাকেই সন্দেহ করছে।
করুক গে আমাকে কেমন করে ধরবে। এতে যে আমার হাত রয়েছে তা কি করে প্রমাণ করবে?
প্রমাণ যা ছিলো তা তো ফেলে দিয়ে এসেছি।
তাই একটা দিবানিদ্রার আয়োজন করলাম। এখন কয়দিন ধরে আমি একেবারে ফ্রী। কোন কাজ কর্ম নেই। মানে চাকরিটা হয়তো গেছে। আর কি করে থাকবে। অফিসের কতগুলো টাকা তো আমার কাছে রয়েছে। সেগুলো না নিয়ে কেমন করে যাই। আর টাকা আমি কোথায় পাবো। পুরো সাত লক্ষ টাকা! যা হবার হবে। বউ গেছে সংসার গেছে তার সাথে চাকরিটাও গেল বুঝি। আমি এখন পথের মানুষ! বাড়ি ভাড়া দিতে না পারলে ঘাড় ধরে বের করে দিবে।
ঘুম থেকে উঠে আবার একটু বাইরে ঘুরতে গেলাম। দেখি সেই লোক এখন আর নেই।
চা স্টলে বসে একটা চা অর্ডার করে পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরিয়ে নিলাম।
আয়নাতে খেয়াল করলাম একজন আমার দিকেই তাকিয়ে আছে পিছনে বসে।
সে যে পুলিশের আরও একজন লোক তা বুঝতে বাকি রইলো না আমার।
বাহ্! ভালোই হলো বিনি পয়সার বডিগার্ড নিয়ে সাথে ঘুরছি! যাক তার কাজ সে করুক আমার কাজ আমি।
চা পান শেষ করে সোজা বাসায় চলে এলাম।
এসে দেখি দুয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অফিসের লোক। আমাকে দেখেই বললেন,
এই যে হাসান সাহেব! বস আপনাকে যেতে বলেছে।
আমি জবাব দিলাম তা তো বুঝতে পারলাম কিন্তু কি করে যাই বলুন তো?
টাকা ছাড়া বস কি মেনে যাবেন? যাবেনা! আর আমি এতো টাকা কোথায় পাবো। তবুও যেতে হবে।
আমার বাড়ির অবস্থা ভালো নয়। যা,আছে তা দিয়ে কোনমতে তারা দিনাতিপাত করছে। ছোট ছোট ভাইবোনকে লেখা পড়া করাতেই বাবা হিমশিম খাচ্ছে! আর এখন যদি শোনে এখানে এই অবস্থা! তবে তার মুখের দিকে আমি আর তাকাতে পারবোনা। তবুও বস যখন যেতে বলেছে একবার দেখা দিয়ে আসুন। নয়তো পরে পুলিশ কেস হতে পারে! আমি চললাম কথাটা মাথায় রাখবেন হাসান সাহেব।
দূর কিছু আর ভালো লাগছে না আমার কেন যে সেদিন ঝগড়াটা করতে গিয়েছিলাম। তার পরিনামে এখন আমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। কাল সকালেই হয়তো পুলিশের লোক এসে ধরে নিয়ে যাবে।
পাশের বাড়ির মহিলা আবার দেওয়ালের উপর থেকে মাথা তুলে জিজ্ঞেস করলো, কি ভাই কোন কিছু সমাধান হলো? আমার কেন যেন মহিলাকে সন্দেহ হতে লাগলো। তার এতো কৌতুহল কেন? আমি একটু জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা আমার বউ কোথায় গেছে বলতে পারেন? প্রশ্নটা শুনে তিনি চমকে উঠে বললেন, একেমন কথা জিজ্ঞেস করছেন আপনি? আপনার কথায় মনে হচ্ছে আপনার বউ আমার সাথে প্ল্যান করে এসব করেছে। সত্যি বলতে কারও। শুভাকাঙ্ক্ষী হতে নেই! মহিলা অবাক করে দিয়ে বললো, আমার কি মনে হয় জানেন? বললাম বলুন। কাজটা আপনারই হবে। আমার স্পষ্ট মনে আছে সেদিন আপনার বউ আপনার সাথেই ঝগড়া করছিলো। আর আপনার বউ বলেছে আমাকে সেই কথা।
তারপর এক মূহুর্ত দেরি না করে মহিলা সেখান থেকে উধাও হয়ে গেল! আমি চারিদিক থেকে চেপে আসছি। বাচবার কোন পথই নেই! এখন কি করবো পুলিশ বলে দিয়েছে শহর ছেড়ে কোথাও না যেতে। এখন যদি একটি বারের জন্য কোথাও যাই তবে সব দোষ নিজের স্বীকার করে নেওয়ার সামিল! হায়রে বউ আমার! ভাবনা তুই আমারে ভাবনার সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে কোথায় গেলি।
পরদিন সকালে অফিসে গিয়ে হাজির হলাম। স্যার মনের সাধ মিটিয়ে উঠে পড়ে ধমকাচ্ছেন।
যেন আমি তার কৃতদাস! শুধু গায়ে হাত তুলতে বাকি রাখলেন।
আমি কাকুতি মিনতি করে বললাম, স্যার শুনতে পেলেন তো আমার বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে।
স্যার হেঁসে বলে, হুম! তাতে কি প্রমাণ হয় টাকাটা আপনি নয় ডাকাত নিয়ে গেছে? স্যার আমার বউকেও
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি খুব একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি স্যার! হুম!
তাতে কিছুই প্রমাণ হয়না হাসান সাহেব! টাকাটা মেরে দেবার
জন্যই যে আপনি এই নাটক সাজিয়েন না তা কে বলবে শুনি?
কি বলছেন স্যার! আমি টাকার জন্য এই নাটক সাজিয়েছি। হুম! তা নয়তো আর কি?
সেদিন অফিসের টাকা অফিসে জমা দেননি কেন? এতেই অনেক কিছু আন্দাজ করে নেওয়া
যায় মিঃ হাসান! এমনি এমনি এই চেয়ারে কম্পানি আমাকে বসায়নি বুঝলেন তো।
ঘটে কিছু বুদ্ধি আমরাও রাখি! মহা মুশকিল কি করে বোঝাই তাকে।
স্যার সত্যি বিশ্বাস করুন সেদিন কালেকশান করতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো,
তাই আমার বউ বললো শহরের বাড়ি এতো টাকা নিয়ে রাতে না গিয়ে কাল গেলেই হবে।
কিন্তু স্যার আমার একদম মনে ছিলোনা যে পরেরদিন আমাদের অফিস বন্ধ ছিলো!
নয়তো রাতেই আমি টাকাটা দিয়ে যেতাম। যাই হোক হাসান সাহেব বাসা আমার অফিসের সাথেই। আপনি ইচ্ছে করলে আমার কাছে দিয়ে যেতে পারতেন। আচ্ছা যাই হোক তাতে আমার কাজ নেই, অধৈর্য হয়ে বললেন তিনি। আপনার বউ কে নিয়ে আসুন সাথে আমার টাকা। আপনার চাকরিটা যাতে চলে না যায় আমি দেখবো।
আর নয়তো এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা দিবেন। অন্যথায় পুলিশের কাছে যেতে আমাকে বাধ্য করবেন। এখন আসতে পারেন। মাথা নিচু করে অফিস থেকে বেড়িয়ে এলাম। সবাই কেমন চোরের মতো দেখছিলো আমার দিকে তাকিয়ে! সত্যিই যেন সব অপরাধ আমার!
বাসায় এসে শার্ট খুলে ছুঁড়ে মেরে পাখাটা চালিয়ে দিলাম। বিছানার উপর ক্লান্ত শরীরের বোঝা চাপিয়ে হালকা হতে চাইলাম কিন্তু কোথা হতে একটা দীর্ঘ শ্বাস চলে এলো। দুচোখ গড়িয়ে দুফোঁটা অশ্রু বুকের উপর পড়লো। কোথায় পাবো এতো টাকা আমি! কে দেবে আমায়। কখন যে চোখ লেগে এসেছিলো তা বলতে পারি না।
দরজার কড়া নাড়ার শব্দে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি। পুলিশের লোক দাঁড়িয়ে আছে। বললো এখনি একবার থানায় যোগাযোগ করতে। ফোন বন্ধ কেন? পকেট থেকে বের করে দেখি চার্জ নেই। কি আর বলবো নিজেকেই তো ঠিক মতো চার্জ দিতে পারছিনা! ফোনের চার্জ কখন দেবো।
চললাম থানায়, থানার ছোট বাবু আমাকে একটি নির্জন কক্ষে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আমি আবারও বলছি যা জানেন সত্যি করে বলে দিন। নয়তো এমন অবস্থা হবে আপনার যে উঠে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন না। স্যার আমি যা জানি তা তো আপনাকে বলে দিয়েছি। ছোট বাবু হেঁসে বললেন, সব বলে দিয়েছেন? হ্যা স্যার সত্যি বলছি। তবে এটাও সত্যি সেদিন আপনার বউ পাশের বাড়ির মহিলার কাছে বলেছিলো আপনি আর আপনার বউ ঝগড়া করে ঘরের ভিতর ভাঙচুর করছিলেন। এটা তো বলেননি?
আমি চমকে উঠে বললাম স্যার সেটা মিথ্যা কথা! আমি তখন বাড়িতে ছিলাম না! তবে কি কারণ হতে পারে মহিলার মিথ্যা কথা বলার পিছনে? তার সাথে আপনার কি শত্রুতা? স্যার সেটা আমি বলতে পারবোনা কিন্তু আমি যখন বাসায় গিয়ে দেখতে পাই অমন অবস্থা তখন সেই মহিলা এই কথা আমাকেও বলেছিলো। আমিও শুনে অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু আপনি তো একথা আমদের আগে বলেন নি। কেন বলেননি বলুন মিঃ হাসান? এএই কথা বলে তিনি টেবিলের উপর প্রচন্ড জোরে আঘাত করলেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
স্যার ভয়ে বলিনি তখন, তাহলে পুরো সন্দেহ আমার উপর পড়তো! অফিসার হেঁসে বললেন, এখনো আপনার উপরই আছে। শুধু আর কিছু প্রমাণ পেলেই আমরা আপনাকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো। চিন্তার কোন কারণ নেই। এখনকার মতো আপনি যেতে পারেন।
আমি যেতে গিয়েও আবার পিছনে ফিরে বললাম স্যার! কি বলেন? আমার মনে হয় সেই মহিলা এই ব্যাপারে অনেক কিছু জানে! তিনি আমাকে ধমকে উঠে বললেন, নিজের উপর থেকে দোষ সরাতে অন্যের উপর দোষ ঢেলে দিতে চাইছেন।
বাড়ি এসে দেখি বাবা আমার ঘরের দরজার সামনে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আমাকে দেখে উঠে এসে জিজ্ঞেস করলেন, এসব কি শুনছি হাসান? আমি নিচু স্বরে বললাম ভিতরে এসো বাবা! সব খুলে বলছি।
চলবে,,,,..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com