Breaking News

গল্পঃ নিঃসার্থ ভালোবাসা| লিখা-গোলাম মোস্তফা

একটি ছেলে খুবই সাদাসিদে ছিল। সে একটি দোকানে চাকুরি করতো ছেলেটির বেতন ছিল মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। ছেলেটির দোকানের সামনে দিয়ে প্রতিদিন একটি মেয়ে
স্কুলে যেত। মেয়েটি ছিল পর্দাশীল। যদিও তার মুখটি প্রায়ই খোলা থাকতো। একদিন হঠাৎ
ছেলেটির নজর পড়লো মেয়েটির দিকে।এভাবে বেশ কদিন যাবার পর একদিন মেয়েটি বুঝতে পারলো ছেলেটি তাকে লক্ষ করে । মেয়েটিও বাকা চোখে ছেলেটিকে দেখতে শুরু করলো। ছেলেটি মেয়েটির চলাফেরা দেখে মুগ্ধ হয়ে আফসোস করতে লাগলো ।

ইস যদি আমিও আজ পড়াশুনা করতে পারতাম। তাহলে সাহস করে মেয়েটির সাথে কথা বলতে পারতাম । মেয়েটিও বুঝতে পারলো ছেলেটি তাকে বিষন পছন্দ করে । তাই একদিন মেয়েটি ছেলেটির দোকানের পাশে দাড়িয়ে রইলো। তখন দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ছেলেটি বাহির হলো । সে একটি চায়ের দোকানে গিয়ে পাঁচ টাকার একটি রুটি খেয়ে জল পান করে আসতে লাগলো। তখন মেয়েটি তার কাছে গেলো। বললো তুমি ভাত
খেলেনা। রুটি দিয়ে কি পেট ভরবে । তখন ছেলেটি মেয়েটিকে দেখে অবাক হয়ে
গেলো। ছেলেটি বললো আমি ভাত খেলে আমার মা,আর ছোট বোনকে কি খাওয়াবো ।

মেয়েটি শিক্ষিত তাই অল্পতেই বুঝে গেলো। সে ছেলেটির হাত ধরে বলতে লাগলো তাহলে তুমি যে আমাকে পছন্দ করো। তাহলে আমাকে কি খাওয়াবে । তখন ছেলেটি বললো আমিতো তোমাকে আপন করে পাওয়ার জন্য দেখিনা । কারন সে যোগ্যতা আমার
নেই । তবে এটা সত্য যে তোমায় দেখলে আমার খুব ভালো লাগে। তাই দেখি ।মেয়েটি ছেলেটির কথা শুনে চোখের জল ধরে রাখতে পারলোনা । সে বুঝে গেলো ছিলেটির চরিত্র,
এমনকি ভাবনাও সুন্দর। সেদিন মেয়েটি চলে গেলো। বাসায় গিয়ে রাত্রিবেলা মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরেরদিন তাকে ডাক্তার দেখানো হলো।বলা হলো তার দুটো
কিডনিই নশ্ট। তখন মেয়ের বাবা ফোন করে তার বন্ধুর ছেলেকে। যার সাথে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য সে পাগল।

কিন্তুু মেয়েটি বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি নয়। কারন ছেলেটির টাকা থাকলে কি হবে তার চরিত্র খারাপ। সে ছিল নারী লোভী । এদিকে মেয়েটির কোন লোভ ছিলনা। যাই হোক হবু জামাই আসার পর তাকে সব কথা খুলে বলা হলো। এখন কোথাও কিডনিও মিলছেনা। তখন মেয়ের বাবা তাকে বললো তোমার থেকে একটা কিডনি আমার মেয়েটিকে দাও । তুমিতো বলেছো আমার মেয়েকে তুমি অনেক ভালবাসো । তাকে পেলে তুমি ভাল হয়ে যাবে। তাহলে আজ পরিক্ষা দাও। তখন ছেলেটি বললো, আমি আপনার রোগা মেয়েকে বিয়ে করবো কেন…..?? আমার কি সুস্থ মেয়ের অভাব নাকি ।

এই বলে সে চলে গেলো। বাবা তখন কেঁদে কেঁদে মেয়ের কাছে গিয়ে সব খুলে বললো। য়েটি বলে বাবা তুমি কেঁদো না । একটা পথ এখনও আছে।তুমি এক কাজ করো, আমাদের
সামনের মোড়ে একটা বড় গ্যারেজ আছেনা! তুমি সেখানে যাও।গিয়ে “শুভো” নামে একটা ছেলে আছে তাকে নিয়ে আসো। আমার কথা বলো! তখন বাবা ছেলেটিকে নিয়ে
আসলো। মেয়েটিকে দেখে ছেলেটির চোখ বেয়ে জল পড়তে লাগলো।কারন মেয়ের বাবা তাকে সব খুলে বলেছে। তখন ছেলেটিকে মেয়েটি বললো। তুমি আমাকে একটা কিডনি দিবে…?? ছেলেটি বললো কিডনি দেবার জন্যই আমি এসেছি।

মেয়েটি তাকে বললো তুমি কি চাও । ছেলেটি বললো তুমি সুস্থ হয়ে আমার দোকানের সামনে দিয়ে স্কুলে যাবে। আর আমি শুধু তোমাকে দুর থেকে তাকিয়ে দেখবো। এই অনুমতি টুকুই চাই । এ কথা শুনে মেয়ে,এবং বাবা দুজনই চোখের জল ধরে রাখতে পারলোনা । অবশেষে মেয়েটি বিছানা থেকে উঠে ছেলেটির দু পায়ে জোরিয়ে ধোরে বললো। এ জীবনে তোমার থেকে আমাকে একমাত্র মৃত্যুই আলাদা করতে পারবে। আর কেউ পারবেনা। তারপর মেয়েটি বললো আমার কোন কিডনি নষ্ট হয়নি। এ সব ছিল আমার সাজানো নাটক। আমি যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে। তোমাকে দেখেই বুঝেছিলাম একমাত্র তুমি আমার যোগ্য।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com