নিস্তব্ধ প্রেমাবেগ |পর্ব -১৩
চকলেট কালার শার্টে বেশ লাগছে জিসানকে!
বাবার মাথার পাশ থেকে উঠে এসে জিসানের সামনে দাঁড়ালো জুঁই!
তুমি হঠাৎ
চমকালে বুঝি
একটু..কিন্তু বাসায় কেনো?
আসতে পারি না বুঝি
না না তেমন না আসলে কতবার তোমায় বাসায় আসতে বলি তুমি তো আসতেই চাও না।তাই জিগ্যেস করলাম।
আংকেল কল করে ডেকেছেন
বাবা তোমায় ডেকেছেন?
হুম
কিন্তু কেনো?
সেটা আমি কি করে জানবো?
আচ্ছা বস।বাবা ঘুমাচ্ছে। উঠলে না হয় কথা বোলো।
আচ্ছা সমস্যা নেই।
জিসানকে বসতে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো জুঁই!বাবা যেহেতু ডেকেছেন নিশ্চয়ই তার মনের আশা পূরণ হতে চলেছে।ভাবতেই পুলকিত হচ্ছে জুঁই..
পুরো বাড়িতে মানুষজনে ভর্তি।পিচ্চিরা দৌড়াদৌড়ি করছে।একদিকে সাউন্ড বক্স বাজছে।সারাবাড়িতে লাইটিং করা হয়েছে যদিও সকাল বলে বোঝা যাচ্ছে না।
বাগানের পাশে বড় খোলা জায়গাটা গায়ে হলুদের স্টেজ করা হয়েছে।
সকাল থেকেই বাড়ির সবাই খুব ব্যস্ত।গায়ে হলুদ বলে কথা!
সারা সকাল কাজ করেই কেটে গেলো সবার।
দুপুরেও যে যেভাবে পেরেছে খেয়ে নিয়েছে।বিকেলের শেষে সাজতে বসে গেছে সবাই।আস্তে আস্তে জয়ের বন্ধু আদিবা ইরিনার বন্ধুবান্ধবরাও আসা শুরু করে দিয়েছে।
বেশ উৎসব মুখর পরিবেশ মাহমুদ ভিলায়!
আদিবা রেডি হয়ে এসে শ্রেয়াকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু তার দেখা নেই।অবশেষে ছাদে পেলো তাকে।পুরো ছাদ ফাঁকা কেউ নেই!কেবল এক কোনায় দাঁড়িয়ে শ্রেয়া!আদিবা দ্রুত পায় কাছে গিয়ে বলল এমা শ্রেয়া এখনো রেডি হও নি!জলদি চলো।
বাঁধ সাধলো শ্রেয়া।না আদিবা আমি রেডি হবো না।আমি এমনিতেই ঠিকাছি
কি বলছো বাসায় পড়ার জামা পড়ে থাকবে?
কই নতুনই তো
দেখো শ্রেয়া অনেকেই জানে তুমি এ বাড়ির বউ হবে তা যদি তোমার সাজগোছ না দেখে ফোঁড়ন কাটে
তখন ব্যপারটা তুমিসহ মা দাদাভাই দাদান সবার খারাপ লাগবে আর আমারও।চলো চলো রেডি হবে
আবার মেহেদী পড়াতে হবে চলো।
শ্রেয়া আর কিছু বললো না। আদিবা ওর হাত ধরে নিচে নিয়ে গেলো।
সব ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবি আর মেয়েরা হলুদ -বেগুনি শাড়ি পরেছে।শুধু ইরিনা লাল হলুদ লেহেঙ্গা!
আদিবার পিছু পিছু স্টেজে এলো শ্রেয়া।সবাইকে একরকম লাগছে।ঘুরে ঘুরে দেখতেই হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লাগলো।চোখ তুলে তাকিয়ে বলল চোখে দেখতে পান না?
ছেলেটা মুচকি হাসলো শুধু।শ্রেয়া আর কিছু না বলে চলে গেলো।
বাড়িতে ডুকতেই আদিবা তাড়া দিয়ে বলল শ্রেয়া আমার সাথে হাতে হাতে একটু নাও তো এগুলো।ফল মিষ্টি কেকের দিকে ইশারা করে বলল।
আদিবা তোমরা ফলের প্লেটগুলো নাও আমি শরবতের ট্রে টা নিচ্ছি!
আচ্ছা
আদিবাসহ ওর বান্ধবী মিহু ফলগুলো নিলে আরো কয়েকজন কাজিন কেক মিষ্টি নিলো।শ্রেয়া শরবতের ট্রে নিয়ে সবার পিছু পিছু হাঁটা ধরল।
হলুদের স্টেজের কাছে যাওয়ার রাস্তার একটু দূরে জয়কে কাজ করতে দেখলো শ্রেয়া।অনেকগুলো ফুলভর্তি একটা সিএনজি।ওটা থেকে ফুল নামাতে বলছে একজনকে।
শ্রেয়া চোখ সরিয়ে সামনে হাঁটা ধরল।এত মানুষের ভীড়ে কোত্থেকে এক পিচ্চি এসে শ্রেয়ার শরীরের এসে ধাক্কা খেলো।পুরো শরবত শাড়িতে পড়ে গেলো।ট্রে টা নিচে পড়ে গেলো আর বাচ্চা পড়লো নিচে।হাতটা কাঁচের উপর পড়ায় একটু কেটে গেলো আর পিচ্চিটা দিলো হৃদয় বিদারক চিৎকার। আশে পাশের লোকজন সবাই এদিকে তাকিয়ে থেমে গেলো।শ্রেয়া বাচ্চাটাকে তুলতে নিলেই জয় এসে কোলে তুলে নেয়।হাত পা বুলিয়ে দেখে হাতের নিচে একটু কেটে গেছে।রক্ত বের হয়নি।বয়স ৬-৭ হবে।খুব কাঁদছে। জয় কোলে নিয়ে থামাতে চাইলো।
এই মেয়ে এই তুমি কি কানা?চোখে দেখো না?যখন তখন যার তার সাথে ধাক্কা খাও।চোখ কি কপালে রেখে হাঁটছিলে?
মেয়েটার মা এসে কোলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো। পানি দিতে নিয়ে চলে গেলো।
আসলে আমি..
চুপ করো একদম চুপ।এতো বেহায়া কেনো তুমি হ্যা এত বেহায়া কেনো?তোমার শরীরে কি মানুষের রক্ত নেই?লজ্জা নেই?কাল যে বললাম হলুদে থেকে কি করবে? তাও এলে।এসে তো গেছো এখন ই মাছুম বাচ্চাটাকে এতটা ব্যাথা দিয়ে দিলে?কাকে দেখে দেখে হাঁটো হ্যা?চোখ একদিকে মন আরেকদিকে থাকে নাকি?ধাক্কা মারো কি করে হু?ফাজিল কোথাকার..যাও এখান থেকে
কি হলো সংয়ের মত দাঁড়িয়ে আছো কেনো যাও..ধমক মেরে বলল জয়।
শ্রেয়া এক প্রকার দৌড়ে বাড়ির ভেতর চলে গেলো।
নিজের ঘরে ডুকেই দরজা আটকে দিলো। চুলগুলোকে টেনে ছিঁড়ে খুলে ফেললো।ভেজা শাড়িটা পড়েই ফ্লোরে বসে কাঁদতে লাগলো। নাহ আর থাকবে না এখানে ও।এবার দাদুকে কল করে গ্রামে চলে যাবে।সারাক্ষণ কথা শুনতে হয়।কেনো কি দোষ ওর?ও কি যেতে চেয়েছিলো হলুদে?নাকি ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়েছে?পিচ্চি মেয়েটাই তো!
এক ঘন্টার মত কান্না করে হিচকি তুলে ফেলেছে শ্রেয়া।শরীর অসার হয়ে আসছে।মাথাটাও খুব যন্ত্রণা করছে।কোনো রকম উঠে শাড়িটা পাল্টে নিলো।মুখে পানি ছিটা দিয়েই শুয়ে পড়লো।নাহ আর বেরই হবে না এ ঘর থেকে যতদিন বিয়ের অনুষ্ঠান চলবে!
মেহেদীর পর্ব শেষ হতেই মিউজিক বেজে উঠলো। সব মেয়েরা নাচছে।ইরিনাও..!
রোদ ছবি তুলছে।তাকে আদিবা কঠিন আদেশ দিয়েছে।প্রত্যেকটা মোমেন্ট যেন ক্যাপচার করা হয়।নয়ত ব্রেকআপ ব্রেকআপ।আর রোদ বেচারা সেই আদেশ -ই পালনে ব্যস্ত।জয়সহ সব বন্ধুরা মিলে বিয়ার খাচ্ছে এক কোণে।ওদের সার্কেলে কোন মেয়ে ফ্রেন্ড নেই!রোদ জয় আয়ান তিয়াস জাকির!যাদের মধ্যে জাকির বাদে সবাই আনম্যারিড!ওরা নিজেদের ভেতর কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে।
শ্রেয়া কি করলে এটা?তুমি আবারও মেহেদীটা নষ্ট করে দিলে?উফফ___কহিনূর তার বান্ধবীর পিচ্চি মেয়েটাকে ধমকে ধমকে বলতে লাগলো।
কথাটা গেলো জয়ের কানে।তার মানে ও আবার এসেছে?কি বেহায়া মেয়ে..ক্ষিপ্ত হয়ে দ্রুত পায় এলো।এসে দেখে না শ্রেয়া এখানে নেই।ওর কাজিনের ওয়াইফ এক পিচ্চিকে শ্রেয়া বলে ডাকছে।আর এসব বলছে!
জয় আশেপাশে চোখ বুলালো।না কোথাও শ্রেয়াকে আর দেখতে পেলো না।
জয় আবারও নিজের বন্ধুদের সাথে আড্ডায় যোগ দিলো।
রাত প্রায় ১ টার ও বেশি….সব মুরব্বিরা ঘরে চলে গেছে।যার যার বাবু আছে সবাই ঘুমাতে চলে গেছে।
স্টেজের পেছনে একটু আগুন জ্বালিয়ে চারাপাশে গোল হয়ে বসেছে আদিবা মিহু রোদ জয় আয়ান তিয়াস জাকির ওর ওয়াইফ।কাজিন সিফাত শিমু।
গিটার বাজাচ্ছে তিয়াস।প্রথম গান ধরলো রোদ!তারপর আড্ডা শুরু হলো।একে একে তিয়াস মিহু সিফাত আয়ান সবাই গান করলো।
রাত প্রায় তিনটে বাজতে চলল!
একে একে উঠে পড়লো সবাই!আদিবা এগুতেই জয় বললো আদিবা শ্রেয়া কোথায় রে?
সত্যিই তো শ্রেয়া কোথায়?ওকে তো সেই কখন থেকে দেখলাম না!জয়ের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বলল জানি না।নিজে খুঁজে দেখুন।
আদিবা চলে গেলো।রোদ এসে জয়ের পাশে দাঁড়ালো।
তোর বোনটা তোর মত হারামী টাইপ হয়েছে!
রোদের এ কথাটা শুনে চোখমুখ লাল করে ওর দিকে তাকালো জয়।রোদ আস্তে করে কেটে পড়লো!
জয় ঘরে যেয়ে দেখে ড্রয়িংরুমে নিচেও বিছানা পাতা হয়েছে আজ!এত গুলো মানুষ পেড়িয়ে শ্রোয়ার ঘরের দিকে যাওয়া ঠিক হবে না আর তার ইচ্ছে ও নেই!দ্রুত নিজের ঘরে যেয়ে দেখে রোদ তিয়াস আয়ান সবাই যে যার মত শুয়ে পড়েছে।সোফায় একটু জায়গা আছে শুধু!ফ্রেস হয়ে কোন রকম গুটিয়ে শুয়ে পড়লো সেখানে!এই তো কোনো মতে এক ঘন্টা ঘুমাতে পারবে!
চলবে_
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com