Breaking News

গল্পঃ বেলিফুল । পর্ব - ০৫

আদিরা মেয়েটা সারাদিন আমার কাছেকাছে থাকলো।

কোনো কারন ছাড়াই এসে জড়িয়ে ধরলো, কাঁদলো আবার হাসলো।

আমি না চাইতেই সে চা নিয়ে আসলো। কেনো জানি মনে হচ্ছিলো কালকে কিছু খারাপ হতে চলেছে।

আদিরাকে ভালোভাবে লক্ষ্য করলাম কিছু লুকাচ্ছে সে। আজ কথা বলেনি খুব একটা। সেই সকালে একবার বলেছে আর মাঝেমাঝে কিছু লাগবে কিনা সেটা জিজ্ঞেস করেছে। আমি মেয়েটাকে কাঁদাতে চাইনা সত্যিই চাইনা। মেয়েটার হাসিটা সুন্দর বেশ চকচকে সাদা দাঁত।

হাসি থেকে মুক্তা না ঝড়লেও মুক্তার মতোই ঝিকমিক করে। মেয়েটাকে একটু ডাকা দরকার কারন আগামীকাল কি হবে সেটা আমি নিজেও জানিনা।

হয়তো তিন্নিকে সামনে পেলে নিজেকে সামলাতে পারবোনা।

মানুষের জিবনচক্র কত অদ্ভুত তাইনা?

কখনো ঘন কালো মেঘ কাটিয়ে রোদ উঠে আবার কখনো ঝুম বৃষ্টি নামে কখনোবা ঝলমলে রোদের দিনেও ঝুপঝাপ বৃষ্টি এসে প্রকৃতিটা ঠান্ডা করে দিয়ে যায়।

আমার জিবনেও একটা বৃষ্টির দরকার। একটা ঠান্ডা স্বাভাবিক জিবন দরকার। আর আলো আধারের খেলা থেকে বেরুতে সত্যিই একটা ঝুম বৃষ্টির দরকার।

তিন্নি নাকি আদিরা প্রশ্নটা নিজেকে যতটা ক্ষত বিক্ষত করেছে ওই বৃষ্টির ফোঁটায় সেটা মিশে যাওয়া দরকার। আর দরকার কষ্টগুলা ধুয়ে যাওয়ার।

আসলে এই সময়টাও স্বাভাবিক।

মানুষ স্বাভাবিক বিষয়গুলা নিয়ে ভাবতে ভাবতে সেটাকে অস্বাভাবিক করে তোলে। কাল হয়তো দেখা যাবে যেটা নিয়ে এত ভাবছি সেটা হলোই না।

বিকেল হলো,

বিকেলটা বরাবরই আমার ভালো কাটে।

অতিরিক্ত খারাপ দিনেও বিকেলটা ভালো কাটে আমার। আমি জানি আজকের বিকেলটাও ভালো কাটবে।

এখনও একটা রাত একটা দিন। আগামীকাল বিকেলে হবে ফয়সালা পরের দিনগুলা কার সাথে থাকবো সেটার।

আমার সামনে যদি আদিরা আর তিন্নিকে বেছে নিতে বলা হয় আমি হয়তো তিন্নিকেই বেছে নিবো তবে আদিরা মেয়েটা কষ্ট পাবে ভিষন কষ্ট পাবে।

মেয়েটা খুব বোকা। বোকা নাহলে কেউ প্রাক্তনের কাছে যেতে বলবে? বিয়ের পরও?

কেনো জানি মেয়েটাকে আমার ভালোবাসতে ইচ্ছা হয়।

ইচ্ছা হয় এলোমেলো চুলগুলা গুছিয়ে খোঁপায় একটা বেলিফুলের মালা পড়িয়ে দেই।

আবার মন বাধা দেয় সে বলে তিন্নির কি হবে তাহলে?

ভালোবাসিস না তিন্নিকে?

আমি দোটানায় পড়ে যাই, গুটিয়ে নেই নিজেকে।

চায়ের কাপ হাতে বসে বসে ভাবছি হঠাৎ খেয়াল করলাম আম্মু পাশে এসে দাড়িয়েছে।

– আম্মু কিছু বলবে?

আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

– আদিরা মেয়েটা আজ সারাদিন কিছু খায়নি তুইও নাকি খাসনি তাই না খেয়ে বসে আছে, মেয়েটার অভ্যাস নেই শরির খারাপ করবে।

– আচ্ছা তুমি যাও আমি দেখছি।

– আর একটা কথা বলার ছিলো।

– বলো।

– তিন্নি তো চলে গেছে, আদিরা মেয়েটাকে কষ্ট দিসনা, মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে, আমি স্বান্তনা ছাড়া আর কি দিতে পারি বল?

আমি কিছু বললাম না।

আম্মুকে শুধু বললাম আদিরা কে পাঠাও।

আম্মু চলে গেলো।

কিছুক্ষণ পর সিঁড়িতে পায়ের শব্দ পেয়ে বুঝতে পারলাম আদিরা আসছে।

মেয়েটা নিঃশব্দে হাটে। অল্প আওয়াজ হয় সেটা আমার কান এড়ায় না।

মেয়েটা ছাদে আসলো আমি বললাম, রুমে চলুন।

মেয়েটা কিছু বুঝতে না পেরে দু সেকেন্ডের মত মময় দাড়িয়ে রইলো তারপর আবার আমার পিছনে হাটতে লাগলো।

– আপনি খাননি কেনো?

– এমনিতেই।

– আমি খাইনি তাই?

– হ্যা।

– কতদিন না খেয়ে থাকতে পারবেন?

– জানিনা।

– আমি খেলে খাবেন?

– উহু খাবোনা।

– কেনো খাবেন না?

– আমাকে খাইয়ে দিতে হবে।

মেয়েটার মুখের দিকে তাকালাম।

সে প্রায় নিশ্চিত আমি তাকে খাইয়ে দিবো।

আদিরা মেয়েটাকে এখন বউ বউ মনে হচ্ছে।

নতুন বউ অভিমান করে না খেয়ে থাকলে যেমন খাইয়ে দিতে হয় তেমনটাই করছে সে।

খারাপ লাগছেনা বরং কিছুটা ভালো লাগতাছে।

আগেই বলেছিলাম বিকেলটা সর্বদাই আমার ভালো যায়।

খাবার আনলাম। মেয়েটা খাবারটা দু ভাগে ভাগ করলো।

সে বললো,

– আপনিও খাননি, আপনি এখান থেকে আমাকে খাইয়ে দিবেন আমিও আপনাকে খাইয়ে দিবো তাই খাবার ভাগ করলাম আপনিতো আবার আমার এখান থেকে খাবেন না।

আমি কিছু না বলে খাবারটা আবার একসাথে করে ইশারা করলাম,

– নিন শুরু করুন।

মেয়েটা এতটা খুশি হলো যে বলার বাইরে।

জিবনে কাওকে খাইয়ে দিয়েছে কিনা সন্দেহ কারন আমাকে খাওয়াতে গিয়ে নিজেই হা করতাছে বারবার।

আমার হাসি পাচ্ছে মেয়েটার বাচ্চামিতে।

মায়া বাড়ছে মেয়েটার প্রতি।

খাওয়া শেষ করে মাগরিবের নামাজটা পড়লাম।

দোয়া করলাম আল্লাহর কাছে, কালকের দিনটা যেনো খারাপ না হয়।

আমি এখনো কনফিউজড কাকে বেছে নিবো আমি।

আদিরা নাকি তিন্নি।

রাতে দুজনের একজনও ঘুমাইনি। বলতে গেলে ঘুম আসেনি। মেয়েটার ভয় আমার থেকেও বেশি। রাতে মেয়েটাকে কয়েকবার কিস করেছি।

তার কথায়।

সে বললো, আমার একটা কথা রাখবেন?

আমি বললাম কি কথা?

সে বললো আজ আমি যতবার চাইবো আমাকে কিস করবেন? আপনি কাল থেকে জানিনা আর সাথে থাকবেন কিনা আমার ইচ্ছাটা পুরন করবেন?

শুধু কি তার ইচ্ছা পুরন করতেই করেছি নাকি নিজেরও কিছুটা ইচ্ছা ছিলো?

কিছুটা না অনেকটাই ছিলো। আদিরা মেয়েটা ভয়ানক রকমের মায়াবী। মায়ায় আটকা পড়ে গেছি যে, এখন কতশত ভুল করবো মেয়েটার জন্য।

সারারাত ভেবেছি একবার আদিরা একবার তিন্নি।

অতীত ভাবলে তিন্নি মেয়েটার কথা ভাবলে আদিরাকে ভাবতে ইচ্ছা হয়না আর আদিরার কথা ভাবলে তার পাগলামি গুলাকে মনে করলে তিন্নির কথা ভাবতে ইচ্ছা করেনা।

ইচ্ছা অনিচ্ছা তিন্নি আদিরার দোটানা আর বেলিফুলের মালাটা নিয়ে গন্তব্যের দিকে রওনা দিলাম।

বিকেল এ যেতে বলেছে তিন্নি।

আদিরা সেটাই বললো। ঠিকানা খুজতে খুজতে পৌছালাম।

রেলস্টেশন থেকে কয়েক মিনিট হাটলে সামনে যমুনা নদী।

সেই নদীর ধারে কাশফুল হয়েছে প্রচুর।

সাদা সাদা কাশফুলগুলাকে গভীরভাবে দেখলে মনে হবে এ যেনো কাশফুল নয়, মেঘ।

কোথাও কেউ নেই। আমি একা দাড়িয়ে আছি ঘন্টাখানেক হলো।

তিন্নি কি তবে আসবেনা?

হঠাৎ একটা মেয়ে আসলো।

নাহ তিন্নি না তবে আমার দিকেই আসছে।

– রামিম?

– হ্যা। কিন্তু আপনি?

– চিনবেন না তিন্নি আপু ডেকেছিলো আপনাকে।

– হুম।

তিন্নির কথা শুনেই ভিতরে ভয় লেগে গেলো।

কোথায় সে?

– তিন্নি কই?

– সে আছে হিম ভাইয়ার সাথে।

– তাহলে আমাকে এখানে ডাকার কারন কি?

– এই চিঠিটা আপনাকে তিন্নি আপু দিয়েছে।

আমি কাঁপাকাঁপা হাতে চিঠিটা নিলাম।

ভয়, উত্তেজনা আর চিঠিটাই যেনো প্রান কেড়ে নিবে আর বাড়ি ফেরা হবেনা।

চিঠিটা পড়তে শুরু করলাম,

– প্রিয় রামিম।

তোমার সামনে দাড়ানোর যোগ্যতা আমার নেই তাই চিঠি লিখলাম জানি তুমি রেগে আছো।

আমি কখনোই তোমাকে বোঝার চেষ্টাও করিনি তবুও আমার সব আবদার মেনে নিয়ে তুমি ছিলে।

শেষমেষ বিয়ে পর্যন্তও চলে আসলে।

আমি তোমাকে ইগনোর করতাম মনে আছে? আমি চাইতাম তুমি চলে যাও কিন্তু তুমি যাওনি। শত কষ্টের পরও তুমি থেকেছ আমার সাথে।

কিন্তু এতকিছুর পরও আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারিনি কারন হিমভাই।

লোকটা প্রচন্ড ভালোবাসে আমাকে জানোতো।

হয়তো তোমার চাইতেও বেশি।

তোমার সাথে রিলেশনের ২ মাস পরই তার সাথে পরিচয়।

পাশের বাসাতেই থাকতো সেখানে আমার বান্ধবী থাকতো।

আমি রোজই যেতাম। ছেলেটা আমাকে গিটার বাজানো শেখাতো, ঘুরতে নিয়ে যেতো আরো অনেক কিছু যেগুলা তুমি কখনো পারোনি কারন তোমার বাসা আমার বাসা থেকে দুরে।

আর তোমার সাথে তো তেমন দেখাই হতোনা।

আর এদিকে হিমভাই রোজ রাতে ছাদে আসতো।

কতরাত একসাথে কাটিয়েছি দুজনে হিসেব নেই।

তুমি চাইলেও যেগুলা পারতা না।

আব্বুকে বলেছিলাম সে মানেনি হিমভাইকে।

তাই পালিয়ে যাওয়া।

ভাবছো তাহলে বিয়ে পর্যন্ত কেনো আসলাম?

আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারিনি কখনো কিন্তু এটাও কখনো চাইনি তুমি খারাপ থাকো।

আমি পারিনি তাই আদিরাকে দিয়ে গেলাম মেয়েটাকে ভালোবেসো।

আমি জানিনা কেনো জানি আমি তোমাকে খুব মিস করি। তোমাকে কখনো ভালোবাসিনি তবুও আজ ভিষন মিস করছি।

ভালো থেকো আর তিন্নি নামটা ভুলে যেও।

ইতিমধ্যে চিঠিটা ভিজে গেছে প্রায়।

পাশের মেয়েটা কখন চলে গেছে খেয়ালই করিনি।

আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তিন্নি হাটছে পাশি আমিও হাটছি।

হাতে হাত রেখে খুব কাছাকাছি হাটছি।

শেষটা এমন চাইনি। ছেলেরা নাকি কাঁদেনা।

ছেলেরা এমন গোধুলির সময় নিরিবিলি পরিবেশে কাঁদে।

মেয়েদের মতো সবার সামনে কাঁদতে পারেনা।

আমার মাঝে এতটাই কমতি ছিলো? তুমি বলতে পারতে আমাকে।

আমার আকাশটা আজ বিষণ্ণতায় ঘেরা।

বৃষ্টি নামবেনা, মেঘ জমে চারপাশটা অন্ধকার করে রাখবে। বৃষ্টি কি তবে আর আসবেনা?

আসবে। আদিরা মেয়েটার ভালোবাসায় এই মেঘও কেটে যাবে।

প্রচন্ড জোরে বৃষ্টি নামবে। সেই বৃষ্টিতে ধুয়ে যাবে তিন্নি।

আমি বেলিফুলের মালাটা আদিরার খোঁপায় পড়িয়ে বলবো,

ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।

( বেলিফুল গল্পটা এখানেই শেষ করা হলো। গল্পটা অনেক যত্নে লেখা তবুও ভুল ক্রুটি থাকতে পারে। কোনো পাঠককে কোনো কথায় কষ্ট দিয়ে থাকলে মাফ করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে )

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com