Breaking News

গল্পঃ ছাত্রী এখন বউ | লেখা- পলাশ ইসলাম | পার্ট -২


আমি মিতুকে বলতে শুরু করলাম।
=> দেখো মিতু আমার বাসা গ্রামে। গ্রামে বাবা মা ভাই আছে। আমাদের পরিবার এতো বড় নয়। সাধারন একটা পরিবার আমার। আমার বাবা যা আয় করে তা সংসারের কাজে ব্যয় হয়। তারওপর আবার আমি শহরে এসেছি পড়তে। আমার লেখাপড়ার খরচ দিতে বাবার অনেক কষ্ট হয় তাই আমার একটা টিউশনি করা প্রয়োজন ছিলো। আমি মিনহাজকে টুউশনির কথা বললে ও তোমার কথা বলে। তাই আমি তোমাকে পড়াতে যাই। কিন্তু তুমি মনে হয় আমার কাছে পড়তে চাওনা। কয়েকদিন থেকে তুমি শুধু অজুহাত দেখিয়ে আমাকে যেতে বারন করেছো কিন্তু পরে আন্টি আমায় জিজ্ঞাসা করেছিলো। আমি তোমার সমস্যা ভেবে যাইনা আর আন্টি ভাবে আমি মনে হয় এরকম ছেলে। তুমি যদি পড়তে না চাও তাহলে আমাকে বলো আমি আর কাল থেকে তোমাকে পড়াতে যাবোনা। কিন্তু আমাকে ছোট করিওনা। আমার বাবা মা আমাকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে এখানে পাটিয়ে দিয়েছে, হ্যা হয়তো একটু আমার কষ্ট হবে কিন্তু আমি মানিয়ে নিতে পারবো। তুমি কি চাও বলো।
'
কথাগুলো বলতে কখন যে চোখ দিয়ে পানি পড়েছে আমি বুঝতেই পারিনি। মিতু আমার চোখের দিকে তাকিয়ে শুধু কথাগুলো শুনছে।
'
=> বলো তুমি যা বলবা আমি তাই করবো তুমি চাইলে আমি কাল থেকে তোমাকে আর পড়াতে যাবোনা।
=> না আপনি কাল থেকে আসবেন আমি পড়বো।
=> ভালো করে বলো তুমি চাইলে আমি আন্টিকে বলে বাদ দিতে পারি।
=> না প্রাইভেট বাদদিতে হবেনা। আপনি কাল থেকে আসেন।
=> আচ্ছা ঠিক আছে তুমি এখন যাও।
'
মিতু চলে যাচ্ছে তবে কয়েকবার ও আমার দিকে তাকালো। ওর তাকানোটা কিরকম যেনো ছিলো।
আমিও চলে গেলাম ম্যাসে। ফ্রেস হয়ে একটা ঘুম দিলাম। পরেরদিন বিকেলে পড়াতে গেলাম। মিতুর ভাই দরজা খুলে দিলো,
'
=> হাই ভাইয়া,কেমন আছো?
=> ভালো আছি। আপনি বসুন আমি আপুকে ডাকছি।
=> আচ্ছা যাও।
'
আমি বসে আছি,কিছুক্ষন পর মিতু আসলো। এসেই আগে বাড়ির কাজগুলো দিলো। আমি রিতিমতো অবাক। আমার এতোটুকু কথাই এতো কাজ করলো, আগে জানলেতো অনেক জায়গাতেই এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারতাম। আর আজ পড়াগুলো ঠিকভাবেই পড়েছে। খুব খুশি লাগছে আজকে।
'
=> মিতু আমি যে কাল তোমায় কথাগুলো বলেছি তুমি কি মন খারাপ করছো?
=> না ভাইয়া।
=> মন খারাপ করিওনা, দেখো আমি কথাগুলো তোমার ভালোর জন্যই বলেছি,আর আমি তোমাকে পড়িয়ে যদি তোমাকে কিছু শেখাতে না পারি তাহলেতো আমি ব্যর্থ হয়ে যাবো । কিছু মনে করোনা তুমি।
=> জ্বি ভাইয়া।
'
আমি মিতুকে পড়িয়ে বাসার দিকে যাচ্ছি হটাৎ আন্টি ডাক দিলো,
'
=> জ্বি আন্টি কিছু বলবেন?
=> তুমি কি মিতুকে কিছু বলেছো?
=> কেনো আন্টি?
=> না, কাল দেখলাম ও রাত জেগে পড়তেছে, আমিতো পুরা অবাক হয়ে গেছি,যে মেয়ে কথা শোনানা শুধু ফোন নিয়ে পড়ে থাকে সে মেয়ে পড়তেছে।
=> এখন থেকে ও পড়বে আন্টি।
=> তাহলেতো ভালোই বাবা।
=> আচ্ছা আন্টি আমি আসি।
'
আমি আন্টিকে বিদায় জানিয়ে বাসায় আসলাম। এভাবেই চলছে, তবে দিন দিন মিতুর আচরন পরিবর্তন হচ্ছে। আপনি থেকে এখন তুমিতে নেমে এসেছে। আগে আমাকে ভয় করেই কথা বলতো আর এখন এমনভাবে কথা বলে যেনো আমি ওর কতো কাছের ফ্রেন্ড। যাইহোক আমি বেশি একটা পাত্তা দেইনা এসব বিষয়ে আর আমি ওর সাথে ফ্রেন্ডলি হলেইতো ভালো। ওর পড়াটাকে আরো ভালোভাবে এগিয়ে নিতে পারবো। এভাবেই একদিন ওকে পড়াতে গেলাম।
'
=> ভাইয়া তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?
=> হ্যা বলো।
=> তোমার কি কোনো গার্ল ফ্রেন্ড আছে?
=> মিতু, পড়ার সময় এসব কি আজে বাজে প্রশ্ন করতেছো, পড়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে বলো।
=> বলোনা প্লিজ ভাইয়া।
=> দেখো এসব প্রশ্ন করা বাদ দিয়ে মন দিয়ে পড়।
=> আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেই আমি আরো ভালোভাবে পড়বো।
=> না নেই।
=> কেনো? আমিতো শুনেছি যে ভার্সিটিতে আসলে নাকি সবাই প্রেম করে, তুমি করোনা কেনো?
=> সবাই সমান না, আর তোমাকে আমি বলেছি না আমার পরিবারের কথা? আমি ওসব বিষয়ে মন দিতে চাইনা, আগে বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরন করবো তারপর।
=> তারমানে তুমি সিংগেল আছো, ভালোই হলো।
=> ভালো হলো মানে?
=> না কিছুনা।
=> আজে বাজে চিন্তা বাদ দিয়ে পড়ায় মন দাও।
=> পড়তেছিতো।
'
এই মেয়ের ভাব বেশি ভালো মনে হচ্ছেনা। এর থেকে একটু দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। মিতুকে পড়িয়ে বাসায় মানে আমার ম্যাসে গেলাম। যেতেই মিতুর ফোন।
'
=> কি হলো ফোন দিলে যে?
=> না মানে তুমি কি বাসায় পৌছাইছো?
=> হ্যা আসছি, কেনো?
=> না এমনি,আচ্ছা ঠিক আছে।
'
এটা কি হলো? কোনো কারন নেই কিছু নেই, শুধু শুধু ফোন দিলো। যাইহোক ওসব ভাবার সময় নেই। আমি খেয়ে একটু পড়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
পড়দিন সকালে কলেজে গেলাম। গেট দিয়ে ঢুকছি এমন সময় রিমার ডাক। রিমা আমার ক্লাশমেট।
'
=> হ্যা বল
=> তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো মনির।
=> বলে ফেল।
=> আমি তোকে খুব পছন্দ করি, ভালোবাসতে চাই তোকে আমি।
=> এটা আমার পক্ষে সম্ভব না রিমা।
=> কেনো সম্ভব না, তুই কি কাউকে ভালোবাসিস?
=> না বাসিনা, কিন্তু আমি এখনেই এসবে জড়াতে চাইনা।
=>কিন্তু কারনটাতো বলবি=> দেখ আমার পরিবার নিম্ন, আর আমি এখন এসবে মন দিতে চাইনা, তাই আমি পারবোনা।
=> কিন্তু,,,,,
=> প্লিজ, আমাকে আর এই ব্যাপারে বলিসনা, আমি সরি।
'
আমি ওখান থেকে চলে আসলাম। কলেজে ক্লাশ করে ম্যাসে চলে গেলাম। বিকেলে মিতুকে পড়াতে গেলাম। মিতু এসে আমার সামনে বসলো। কিন্তু আজ ওকে একটু অন্য রকম লাগছে। অনেক সেজেছে, আর খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে।
'
=> কি ব্যাপার কোথাও যাবা নাকি?
=> না, কেনো?
=> না, এতো সেজেছো তাই বললাম।
=> তোমার জন্যইতো এতো সেজেছি( বিরবিরিয়ে বললো)
=> কিছু বললা?
=> কই নাতো।
=> আচ্ছা ঠিক আছে কাজ করো।
=> তোমার সামনে বসলেইতো কাজের কথা ভুলে যেতে ইচ্ছা করে।( বিরবিরিয়ে)
=> কি বললা।
=> কই কিছুনাতো
=> আচ্ছা ঠিক আছে।
=> ও ভালো কথা, আম্মু আজ তোমাকে আগে যেতে মানা করছে, আম্মুর সাথে দেখা করতে বলেছে।
=> আচ্ছা ঠিক আছে।
'
আমি মিতুকে পড়িয়ে আন্টির কাছে গেলাম।
'
=> আন্টি আপনি আমায় ডেকেছেন?
=> হ্যা বাবা আসো, আমার মেয়ে আজ অনেক খাবার রান্না করেছে আসো।
=> না আন্টি ,,,,,,
=> আরে আসো লজ্জা করতেছো কেনো, এটাও তোমার নিজের বাসা মনে করবা।
'
আমি গেলাম, আন্টি খাবার দিয়ে কোথায় যেনো গেলো। একটু পর মিতু আসলো ও আমাকে খাবার সার্ভ করছে।
'
=> কেমন হয়েছে?
=> হ্যা ভালো।
'
আমি কোনো রকম খেয়ে চলে আসলাম। মিতুর ভাব দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে। তুমি বলছে ঠিক আছে কিন্তু আজকাল ভাইয়া কথাটাও ওর মুখ থেকে উঠে গেছে। এখন শুধু তুমি করেই বলছে। আমি এসব ততোটা কেয়ার করিনা। আমি ম্যাসে গেলাম একটু পড়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু হঠাৎ মিতুর ফোন আসলো।
'
=>হ্যা বলো মিতু।
=> কি করতেছো?
=> এইতো শুইলাম মাত্র।
=> ও আচ্ছা।
=> কিছু বলবা?
=> হ্যা, কাল আম্মু ব্যস্ত থাকবে তাই আম্মু বলেছিলো যে তোমাকে আমায় মার্কেটে নিয়ে যেতে।
=> কাল যেতেই হবে এমনতো কিছু নেই, পরশু যেও?
=> তুমি যাবানা সেটা বলবা পরশু বলছো কেনো? ঠিক আছে আমি একাই চলে যাবো।
=> এতো রাগ করতে হবেনা, পিচ্ছি মেয়ের এতো রাগ করতে নেই। আচ্ছা ঠিক আছে যাবো।
=> ধন্যবাদ, আর আমি কিন্তু পিচ্ছিনা। আমাকে পিচ্ছি বলবানা।
=> আচ্ছা, তুমি বড় কবে হলা?
=> দেখো আমি কিন্তু কান্না করে দেবো, একদম পিচ্ছি বলবানা।
=> আচ্ছা ঠিক আছে।
'
কি আর বলবো। বলার কিছু নেই তাই ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠে ফ্রেস হয়ে কলেজের জন্য রেডি হচ্ছি এমন সময় মিতুর ফোন।
'
=> হ্যা বলো।
=> কোথায় তুমি?
=> আমি কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি।
=> সেকি তোমার না আজকে আমার সাথে মার্কেটে যাওয়ার কথা?
=> সেতো বিকেলে।
=> না এখনেই, বিকেলে আবার পড়তে হবেনা?
'
যে মেয়ে বই দেখলে দশ হাত দুর দিয়ে হাটে সে পড়ার কথা বলে।
'
=> আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি।
'
গেলাম ওদের বাসায়। মিতু শাড়ি পড়েছে আর অনেক সেজেছে। পরীর মতো লাগছে ওকে। আমার আত্মা আমাকে বলে উঠলো, এই মাস্টার সাবধান এটা তোর ছাত্রী। তাই আর বেশি কিছু না ভেবে বেড়িয়ে পড়লাম। মিতু একটা রিক্সা ডাকলো। উঠে বসলাম। মিতু এমনভাবে বসছে যে কেউ বলবে যে বয়ফ্রেন্ড গার্লগ্রেন্ড যাচ্ছে। আমি যতো দুরে যাচ্ছি ও ততো কাছে আসছে। কিছু বুঝতেছিনা। অনেক অস্বস্তিতে গিয়ে পৌছাইলাম গন্তব্যে। ভাইরে ভাই পুরা ছয় ঘন্টা কাটাইছে একটা মার্কেটের ভেতর। শেষে বেরিয়ে আসলাম। ওকে পৌছে দিয়ে আমি আসতেছি।
'
=> ভাইয়া একটু শুনবা?
'
যাক ভাইয়া ডাকটা শুনে একটু জানটা ফিরে আসলো।
'
=> হ্যা বোন বলো?
=> আমি তোমার কিসের বোন, আমি তোমার বোন না, একদম এসব বলবা না।
'
বোন বলায় মেয়ে একদম আগুন হয়ে উঠেছে। ওর মুখ দিয়ে কথা নয় যেনো গোলা বারুদ বের হচ্ছে।
'
=> আচ্ছা ঠিক আছে, হ্যা মিতু বলো। এবার ঠিক আছে?
=> এবার ঠিক আছে, এটা তোমার জন্য।
=> কি এটা?
=> তোমার জিন্স আর টি সার্ট।
=> আমি নিতে পারবো না।
=> না নিলে কিন্তু পুরিয়ে ফেলবো। আর কাল থেকে পড়াতেও আগের মতো হয়ে যাবো।
=> থাক তা হতে হবেনা দাও আমি নিচ্ছি।
=> হুম, গুড বয়।
=> মানে?
=> না কিছুনা।
'
আমি বিদায় নিয়ে বাসায় আসলাম। খুব ক্লান্ত তাই খেয়ে শুয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে উঠে কলেজে গেলাম। একটু পর মিনহাজের সাথে গিয়ে মাঠে বসলাম।
'
=> মিনহাজ তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।
=> কি বল।
=> আসলে তুইতো জানিস,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,





















চলবে................

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com