Breaking News

গল্পঃ ভুয়া দলিল - রম্য গল্প

আজ বাজারে গিয়ে তোমাকে ২ কেজি মাপের একটা ইলিশ মাছ কিনে আনতেই হবে!
টাকা কই পাবো? যে টাকা হাতে ছিল সব তো ব্যাংকে জমা রাখছি!
টাকা কই পাবা মানে? প্রতিদিনের বাজার করার টাকা কি আমার বাপে দিবে?
ডাউল আর শুঁটকি মাছ রাখা আছে ওসব দিয়েই চালিয়ে নিতে হবে!
ডাউল আর শুঁটকি রাঁধতে যে মশলা লাগে সেগুলো কে কিনে দিবে? কিছুই তো নাই?
তাহলে ডাউল ভর্তা করো শুধু!

নাহ, আর সহ্য করা গেল না ৷ তোর মত কিপ্টার সাথে আর সংসার করতে পারলাম না ৷ তুই শুধরবিনা!
কি বাপের বাড়ি চলে যাবা? গুড ডিসিশন, চলে যাও! কয়েকদিন ভাল মন্দ খেয়ে আসো ৷ আমি সুযোগ পেলে ঘুরে আসব!
খাটাশ, বাপের বাড়ি গেলে চিরদিনের জন্য যাব!
বাহ আরো ভাল ৷ আমার খরচ বেঁচে যাবে ৷ বউ তার বাপের বাড়ি খাবে আর আমি মাঝেমধ্যে বউকে দেখে আসব ৷ চমৎকার তো ব্যাপারটা!
নির্লজ্জ কোথাকার!

এটাই ছিল আমার বউয়ের সর্বশেষ সংলাপ ৷ এরপরই সে বাপের বাড়ি চলে যায় ৷ 
ভাবলাম গেছে যাক ৷ কয়দিন পর নিজেই চলে আসবে ৷ ফোনও দিলাম না ৷ 
ফোন সে নিজে থেকে দিবে ৷ কিন্তু তিনদিন পার হয়ে যায় বউ এরবারও ফোন দিলোনা ৷ 
চারদিনের দিন চলে গেলাম শ্বশুর বাড়ি ৷ 
শ্বশুর বাড়ি পৌঁছে শ্বাশুড়ি আম্মাকে হাস্যজ্জ্বল মুখে বললাম, “আম্মা, কেমন আছেন?
উনি মুখটা পোড়া ভাতের মত করে বানিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন কিন্তু কিছু বললেন না ৷
মনে মনে বললাম, “ওনার সাথে তো বেয়াদবি করিনি, এমন ভাবে তাকায় কেন?
শ্বাশুরি আম্মাকে কিছু বললাম না আর ৷
ভাবলাম মেজাজ হয়তো খারাপ, তাই কথা বলতে চাচ্ছেনা ৷ শ্বশুর আব্বার সাথে দেখা করলাম ৷
ওনাকে কিছুই বলিনি, এর আগেই উনি চোখ দুটো মরা গরুর মত
বানিয়ে শকুনের মত রুপ নিয়ে তাকিয়ে আছে, যেন আমি মৃত প্রাণী, কচকচ করে চিবিয়ে খাবে ৷
ওনার ভাবতাল সুবিধার মনে হলোনা ৷ 
এরপরও সাহস সঞ্চয় করে নিচুস্বরে বললাম, শ্রদ্ধেয় আব্বাজান, কেমন আছেন?”

উনি রাগে ফোঁসফোঁস করতে লাগলেন ৷ 
এরপর মুখ ঘুরিয়ে আমার সামনে থেকে চলে গেলেন ৷ 
গেলাম বউয়ের রুমে ৷ সে শুয়ে থেকে মোবাইল টিপছে ৷ আদুরে গলায় বললাম,
বউ কি করো?
বউ কথা না বলার তীব্র বিতৃষ্ণায় জবাব দিল,
এক্স-বয়ফ্রেন্ডের সাথে চ্যাটিং করছি!
খুব ভাল ৷ আমিও শুরু করব রাত থেকে ৷ তুমি চিন্তা করোনা!
তুই কার সাথে চ্যাটিং করবি সেটা তোর ব্যাপার!
তাই? পরে যেন কাঁদো না!

এটা বলে রুম থেকে বেড়িয়ে বারান্দার খাটে বসে গুণগুণ করে গান গাইছিলাম ৷ ওদিকে শ্বশুর আব্বা বারান্দার এককোণে রাখা চেয়ারে বসে সিগারেট ফুঁকছিলেন! ওনার নিকট গিয়ে বললাম, “এই বয়সে ভাল কিছু খান ৷ শুধু শুধু টাকা অপচয় করছেন সাথে শরীরটাও নষ্ট করছেন!” উনি চেতে উঠে জবাব দিলেন, “ভাল মন্দ কিছু কেনার টাকা দিতে পারনা তুমি?” শুনে চুপ হয়ে গেলাম ৷ টাকা দিয়ে সাহায্য এসব চ্যাপ্টার আমার সাথে চলেনা!
.
বিকেলবেলা শ্বশুর বাড়িতে আমার দুই শালিকা এলো তাদের স্বামীকে সাথে নিয়ে ৷ তারা আমাকে দেখে কেমন কেমন করে যেন তাকালো? সন্ধ্যা পর শ্বশুর আব্বা তার দু মেয়ের জামাইকে দামি শার্ট আর প্যান্ট গিফট করলেন ৷ কিন্তু আমাকে কিছুই দিলেননা ৷ বহু কষ্ট পেলাম, বহু! সহ্য করে রইলাম ৷ ভাবলাম এই অপমানের প্রতিশোধ যেভাবে হোক নিতে হবে ৷ রাতে খাওয়ার সময়ও আমার সাথে দুর্নীতি করা হলো ৷ শ্বাশুরি আম্মা তার দু মেয়ের জামাইকে বাটি ভরে মাংসের টুকরো প্লেটে ঢেলে দিলেন কিন্তু আমাকে গুণে গুণে তিন পিস দিলেন ৷ এত বড় অপমান সহ্য করা যায়না! এরপরও ইচ্ছা করেই যতটুকু পারলাম খেলাম ৷ তিন প্লেট ভাত তো খেয়েছিই! খাওয়া দাওয়া পর বউয়ের রুমে গেলাম! বউ এবারও মোবাইল টিপছে ৷ তার পাশে শুতে গেলে বলল,
নো, আমার সাথে তো শোয়া যাবেনা ৷ নিচে শো, তোর সাথে ঘুমাব না আমি!
আমার সহজ সরল জবাব,
ঠিক আছে, মেঝেতে শুলাম!

মেঝেতে শুয়ে ভাবছিলাম বউকে কেমনে জ্বালানো যাই? চাপাবাজি তো মেরেছিলাম এক্সের সাথে কথা বলব! কিন্তু আমার কোনো কালেই তো এক্স ফেক্স ছিলনা ৷ ওসব প্রেম মানে টাকা খরচ তাই পা বাড়াইনি! ভাবলাম নাটক করব ৷ মিছামিছি ফোনে কথা বলে বউকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারব ৷ বউ ফোন টেপায় ব্যস্ত তখনই ফোনটা ফ্লাইড মোড করে কানে ধরলাম ৷ এরপর উচ্চস্বরেই বললাম,
হাই জান কেমন আছো? খায়ছো? চলোনা কাল মিট করি? তুমি তো চেয়েছিলে আমরা বিয়ে করি ৷ বেকার ছিলাম বলে করতে পারিনি ৷ এবার রাজি আছি!
বিরতি নিয়ে এসব নানা রকম কথা বলছিলাম ৷ হঠাৎ দেখি কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে ৷ নিশ্চয় বউই কাঁদছে! কিন্তু কেন?
ফোনটা হোল্ড করেছি ভান ধরে বউয়ের কাছে গিয়ে আদুরে গলায় বললাম,
কাঁদো কেন? কি হয়েছে?

বউ আমাকে জড়িয়ে ধরলো ৷ বুঝলাম ট্রিকস কাজে লেগেছে ৷ জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো স্বরে বউ আমাকে বলল,
সত্যি বলছি আমি কারো সাথে চ্যাটিং করিনি ৷ তুমি যাতে জিলাস ফিল করো এজন্যই এমনটা করছিলাম ৷ কিন্তু তুমি আমার ব্যবহারে না জ্বলে উল্টা আমাকে কষ্ট দিতে এক্সের সাথে কথা বলছো ৷ প্লিজ তুমি এমনটা করোনা ৷ তোমার কিপ্টামি আমার সহ্য হয়না ৷ কিপ্টামি একটু ছাড়ো!
বউকে স্বান্তনা দিতে বললাম,
আর কিপ্টামি করবনা বউ ৷ আমাদের ভবিষ্যত সন্তানের জন্য ব্যাংকে টাকা জমাচ্ছি ৷ তাই একটু হিসাব করে চলি!

বউ আমার কথায় পটে গেল ৷ বউয়ের কেস খালাস এবার শ্বশুরকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে!
সকালে ঘুম থেকে জেগে শুরু করলাম পেট ব্যাথার অভিনয় ৷ এমন ভাবে অভিনয় করলাম যে তারা মনে করলো সত্যি সত্যি আমার পেট ব্যথা!
ব্যথায় জর্জরিত কন্ঠের মত স্বর বানিয়ে বউকে বললাম,
বউ সর্বনাশ হয়ে গেছে, পুরোনো দিনের সেই অসুখটা শুরু হয়েছে ৷ তিনটা ইনজেকশন দিতে হবে ৷ ২ হাজার টাকা লাগবে ৷ আমি তো টাকা সাথে আনিনি ৷ তোমার বাপ মাকে বলো টাকা দিতে, পরে শোধ করে দিব!
বউ আমার ব্যথায় কাৎড়ানো অবস্থা দেখে আর কথা শুনে তার বাবা, মাকে বলে ২হাজার টাকা নিলো ৷ তারপর টাকাগুলো নিয়ে বউকে বললাম, “আমাকে ডক্টরের সাথে দেখা করতে হবে ৷ কি আর করব ব্যথা নিয়েই চললাম ৷ দেরি করলে আরো বেড়ে যাবে ব্যথাটা!

এটা শুনে বউও আমার সাথে যেতে চাইলো কিন্তু যেতে দিলাম না ৷ একাই চললাম তবে ডক্টরের নিকট না, মার্কেটে শপিং করতে ৷ শ্বশুরের জন্য শার্ট আর লুঙ্গি, শ্বাশুরি আম্মার জন্য একটা শাড়ি কিনে ফিরলাম শ্বশুর বাড়ি ৷ শ্বশুর ও শ্বাশুরির হাতে শপিংগুলো দিলে খুশিতে গদগদ হলো ৷ তাদের চোখ দুটো ছলছল করছিল আনন্দে ৷ শ্বশুর আব্বা আমাকে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
জামাই এসবের কি দরকার ছিল বলো? আর টাকা কই পেলে? তোমার কাছে তো টাকা ছিলনা!
মুচকি হেসে জবাব দিলাম,
রাস্তায় এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছিল, ওর থেকে ১০ হাজার টাকা পেতাম ৷ সেই টাকা দিয়ে তো আপনার জন্য ৩ হাজার টাকা দামের ব্র্যান্ডের একটি শার্ট, আর ১হাজার টাকা দামের লুঙ্গি কিনেছি আর আম্মার জন্য ৬হাজার টাকায় শাড়ি কিনেছি!

এটা শুনে দুজনেই খুশিতে কবুতরের মত কুতুর কুতুর করছিল!
রাতে শ্বশুর অাব্বা আমার হাতে Samsung Galaxy এর লেটেস্ট ভার্সনের ফোন হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
জামাই তোমার তো দামি ফোন নাই ৷ অামার মেয়ে বলল তোমাকে যেন একটা ফোন কিনে দেই, এজন্য ছোট জামাইকে দিয়ে ফোনটা কিনালাম ৷ চমকে দিলাম তোমাকে ৷ ফোনটা নিশ্চয় তোমার পছন্দ হবে!
আমি বললাম,
পছন্দ না হয়ে উপায় আছে? ১০ হাজার টাকা দামের ফোন পেলে কে না খুশি হবে?
কি বলো জামাই? ছোট জামাই তো আমার থেকে ৩৬ হাজার টাকা নিলো!
তাহলে ২৬ হাজার টাকা সে মেরে নিছে!
শ্বশুর আব্বা তার ছোট মেয়ের জামাইকে সেই রকম ভাবে কথা শুনালো ৷ সেই কথা শুনে ছোট জামাই বাধ্য হয়ে ২৬ হাজার টাকা দিয়ে দিলো! টাকাগুলো শ্বশুর আব্বা আমার হাতে দিয়ে বলল,
জামাই, এই ফোনটা মেয়েকে দিয়ে তুমি ২৬ হাজার টাকায় আরেকটা কিনে নিও!
নিজেই নিজের বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হলাম ৷ ভাবলাম এত বুদ্ধি আমার?

পরদিন সকালে শ্বশুর বাড়ির বাগানে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলাম বন্ধুর সাথে ৷ কিভাবে ৩৬ হাজার টাকা দামের ফোন পেলাম সাথে আরো ২৬ হাজার টাকা সব তাকে খুলে বললাম!
কিন্তু আমার কথাগুলো যে ছোট শালিকা শুনে ফেলেছে সেটা খেয়াল করিনি ৷ শালিকা সোজা শ্বশুরকে বলে দিলো! তালে থাকলাম যে শ্বশুর আব্বা আমাকে নিয়ে কি প্ল্যান করে? দুপুরে বউকে বললাম বাইরে যাব! এটা বলে বাগানে লুকিয়ে থাকলাম ৷ হঠাৎ দেখি শ্বশুর আব্বা তার ছোট জামাইয়ের সাথে কি যেন বলছে? বুঝলাম কুট-বুদ্ধি পাকাচ্ছে!
রাতে শ্বশুর আব্বা বললেন,


শোন তিন জামাই ৷ আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তিন মেয়ের নামে আমার সম্পত্তি যা আছে লিখে দিব ৷ তবে সমান ভাগে নয় ৷ যে জামাই প্রমাণ করবে সে আমাকে বেশি ভালবাসে তাকে সম্পত্তি বেশি দিব! ভালবাসার প্রমাণ কেমনে করবা সেটা তোমরা জানো?

বুদ্ধি পাঁকিয়ে ফেললাম!
শ্বশুর আব্বাকে পরদিন সকালে বললাম,
আব্বা, খুব সস্তায় একটা জমি বিক্রি হচ্ছে ৷ কিনবেন নাকি?
শ্বশুর আব্বা বলল,
কি পরিমাণ জমি? কত দাম?
২ বিগা! মাত্র ১০ লাখ টাকা ৷ অথচ এমন জমির দাম পড়তো ২৫ লাখ টাকা ৷ আপনি চাইলে কাল জমির মালিকের সাথে দেখা করতে পারেন!
রাতের মধ্যে আমার সেই বন্ধুকে ফিট করলাম ৷ তাকে ভুয়া দলিল বানাতে বললাম ৷ এবং সে হবে জমির মালিক ৷ আর অন্য কারো জমিতে বসে আমরা আলাপ করব!
দুপুরে বন্ধু ভুয়া দলিল নিয়ে হাজির হলো জায়গা মত ৷ আমি শ্বশুরকে নিয়ে আগেই হাজির হয়েছি ৷ শ্বশুর আব্বার জমি পছন্দ হলো ৷ ১০ লাখ টাকা উনি সাথেই এনেছেন ৷ ওনাকে বলেছিলাম আপনি আপনার বড় মেয়েকে যে পরিমাণ সম্পত্তি দিবেন সেটার টাকা এই দশ লাখে যোগ হোক ৷ উনি বলেছিলেন ৫ লাখ তো পেতই বড় মেয়েটা ৷ এসব চুক্তি করেই ১০ লাখ টাকা সঙ্গে নিয়ে উনি হাজির হয়েছেন ২বিগা পরিমাণ জমি কিনতে!

শ্বশুরের হাতে ভুয়া দলিল ধরিয়ে দেওয়া হলো ৷ বন্ধু সাথে করে ভুয়া উকিলকে এনেছিল ৷ সেই উকিলই বলল দলিল ঠিক আছে ৷ শ্বশুর আব্বা দলিলে সই দিয়ে ১০ লাখ টাকা বন্ধকে দিয়ে আমাকে রেখে বাড়ি চলে গেলেন ৷ উনি চলে যাবার পর বন্ধুর থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে এবং উকিল ও বন্ধুকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় হলাম!

শ্বশুর বাড়ি থেকে নিজের বাসায় ফিরে শ্বশুর আব্বাকে ফোন দিয়ে কেতাবী ডংয়ে বললাম,
আব্বা, এটা তো হতে পারেনা যে আপনি আপনার বড় মেয়েকে সবার চেয়ে কম সম্পত্তি দিবেন ৷ আমি হিসাব কষেছিলাম খুব বেশি হলে ৫ লাখ টাকা দিবেন ৷ কিন্তু এটা তো আমি মানতে পারিনা ৷ এজন্যই জমি ক্রয়ের নাটক করে আপনার থেকে ১০ লক্ষ্য টাকা খসালাম ৷ রাগ কইরেন না, টাকাগুলো আপনার মেয়ের নামে ব্যাংকে রেখেছি!
শ্বশুর আব্বা এটা শুনে বেহুশ!

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com