গল্পঃ জেদের ফল- ২য় পর্ব

ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বললো, নিজেকে শক্ত করুন! কেন স্যার আমার কি হয়েছে? ডাক্তার একটু চুপ করে থেকে বলে আপানার এইডস্ হয়েছে!! কথাটা শোনা মাত্র শিমুলের মাথাটা ঘুরে উঠে! টেবিলে পায়া ধরে নিজেকে কোন রকমে পড়ে যাবার হাত থেকে রক্ষা করে।

ডাক্তার তা দেখে বললো, এখন আপনার একমাত্র পথ হচ্ছে নিজেকে শান্ত করা। নিয়মিত চেকআপে থাকা ও নিয়মিত ঔষধ সেবন করা। কিন্তু স্যার! আপনাদের কোন জায়গায় ভুল হচ্ছে?

ডাক্তার হেঁসে বলে, যাতে ভুল না হয় তার জন্য পরিক্ষাগুলি আমি আলাদা আলাদা জায়গায় কয়েক বার আপনাকে দিয়ে করিয়েছি। তবুও কি ভুল হবে? আর আপনার শরীরে লক্ষ্মণ গুলো স্পষ্ট দেখতে পেয়ে পরেই আমি আপনাকে পরিক্ষা করতে দিয়েছি।

শিমুল জিজ্ঞেস করে স্যার কেন হবে আমার এমন জঘন্য রোগ? ডাক্তার একটু গম্ভীর কণ্ঠে বলে, এটা আপনার অসাবধানতার কারণেই হয়েছে। যৌবনকে মিস ইউজ করেছেন। মানে স্যার?
মানে হয়তো এমন কারও সাথে মেলামেশা করেছেন যার এইডস্ আছে!

শিমুল আকাশ থেকে পড়ে স্যার আমি কোনদিন কোন মেয়ে মানুষের আশেপাশে যায়নি। ডাক্তার শিমুলের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, আমি ডাক্তার আমার সাথে মিথ্যা বলা ঠিক না বুঝতে পারলেন? আর মিথ্যা বলে কোন লাভ নেই!

শিমুল হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে গেছে ভগ্ন কন্ঠে বলে, স্যার আমি মিথ্যা বলছিনা! ডাক্তার তো অবাক হয়ে আবার জিজ্ঞেস করে তাহলে নিশ্চয়ই নেশায় আসক্ত ছিলেন? না স্যার,সিগারেট ছাড়া আর কিছু কোনদিন খায়নি। তাহলে কারও ব্যাবহার করা ইনজেকশনের সুঁই আপনি ব্যবহার করেছেন?
না স্যার আমারএই বিশ বছর বয়সেকোনদিন আমাকে ইনজেকশননিতে হয়নি।

আমি এর আগে কোন দিন শহরেরবড় ডাক্তারের কাছেআসিনি। ডাক্তার বিরক্ত বোধ করে তার ধারণা ছেলেটা মিথ্যা বলছে তাকে। তবে তো অন্য কোন ভাবে এই জীবাণু শরীরে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। এমন রেকর্ড নেই বললেই চলে। শিমুল জিজ্ঞেস করে তবে আমার কেমন করে এই রোগ হবে স্যার?

ডাক্তারের এখনো মনে হচ্ছে শিমুল মিথ্যা বলেছে তাঁকে। ডাক্তার শিমুলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, আপনি এখনো বিয়ে করেননি তো? আপনার বয়স তো একেবারেই কম। শিমুল বলে, জ্বি স্যার করেছি!

ডাক্তার আঁতকে উঠে বলে, সর্বনাশ তবে তো আপানার বউকে পরিক্ষা করতে হবে?
কেন স্যার তাকে কেন পরিক্ষা করাতে হবে? আপনার যেহেতু রোগটা ধরা পড়েছে তাতে করে আপনার স্ত্রীরও এই রোগ হবার সম্ভাবনা আছে! কেন স্যার? শিমুল গ্রামের অশিক্ষিত খেটে খাওয়া মানুষ। তার এইসব কিছুর ধারণা নেই। তার জ্বর হলে তো তার বউয়ের হয়না! আরও কত রোগ আছে যা তার হয় কিন্তু বউয়ের হয়না।

ডাক্তার বলেন এটা নরনারীর মেলামেশার কারণে বেশি ছড়ায়। তাই আপনার রোগ আপনার বউয়েরও হবার সম্ভাবনা বেশি।

ডাক্তার ভাবে ছেলেটা যে ভাবে বলছে তাতে করে মনে হচ্ছে রোগটা প্রথম ওর বউয়ের হয়েছে। অন্যকোন দেশ হলে না হয় সম্ভব ছিলো মেয়েটার আগে হয়েছে কিন্তু আমাদের দেশের মেয়েদের বেলায় তা বিশ্বাস করা কঠিন!

ডাক্তার শিমুলের দিকে তাকিয়ে বলেন, যা হবার হয়ে গেছে। হাজার চিন্তা করে ভেঙে পড়লেও এই মরণ ব্যাধি ভালো হবার নয়। তবে আপনি যদি সবসময় চেকআপে থাকেন নিয়মিত ঔষধ সেবন করেন তবে, এই রোগ নিয়েই আপনি অনেক দিন পৃথিবীতে জীবন যাপন করতে পারবেন। এমন কি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো করে।

তাই ভেঙে পড়বেন না! আরেক বার আসার সময় আপনার বউকে সাথে করে নিয়ে আসবেন।
এখন প্রেসক্রিপশন লিখে দিচ্ছি এই ঔষধ গুলো নিয়মিত সেবন করে পনের দিন পরে আবার দেখা করবেন।

শিমুলের পৃথিবীটা হঠাৎ করেই দুঃখের রাজ্যে পরিনত হলো! ডাক্তার তাঁকে যতই বোজ দেক সে শুনেছে যার,এই রোগ হয় সে আর বেশি দিন বাঁচে না! বাড়িতে এসে দাঁড়িয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠে শিমুল।

মাগো আমার দিন ফুরিয়ে এসেছে। আমি আর বেশি দিন বাঁচবোনা। বিধবার চোখের মনি শিমুল। অল্প বয়সে বিধবা হয়ে ওদের দুই ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সব দুঃখ ভুলেছেন। আজ একি কথা শুনছেন ছেলের মুখ থেকে?

কি হয়েছে বাবা আমাকে খুলে বল? শিমুল সব খুলে বলে। মাগো! ডাক্তার বলেছে তাই আমার ছোট খাটো অসুখগুলোও সহজে সারতে চায়না!

মা ছেলেকে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদলেন। কিন্তু কি আর করার থাকে মানুষের? তাই একসময় শান্ত হতে হয়। শিমুল বলে মা আমার যেহেতু এই রোগ হয়েছে তখন বিউটিরও হতে পারে। তাই নাকি? মা চিন্তিত মনে জিজ্ঞেস করে! হ্যা মা!
তাঁকে আমার সাথে পনের দিন পরে নিয়ে যেতে বলেছে।

তাহলে বিউটিকে বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে আয়! মা ভাবে তার ছেলের রোগটা তার বউয়েরও হবে? মেয়েটা জন্য তার মায়া হয় পরের মেয়ে স্বামীর কারণে তারও এমন শাস্তি ভোগ করতে হবে? মা শুনেছে যারা খারাপ মেয়েদের সাথে মিশে তাদের এই রোগ হয়। তার ছেলেটা সব দিক দিয়ে ভালো কিন্তু এমন ভুল কেমন করে করলো?

ভাবে পাপ সবার সয় না! হয়তো বন্ধু বান্ধব এর পাল্লায় পড়ে এমন হয়েছে।

পনের দিন পরে ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে বিউটি ও শিমুল। ডাক্তার শিমুলের দিকে তাকিয়ে বললো, আমি আপনার বউয়ের সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে চাই? শিমুল চেয়ার থেকে উঠে বাইরে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।

ডাক্তার একটু হেঁসে জিজ্ঞেস করে, আপনি আমার বোনের মতো একটি সত্যি জবাব দিবেন? বিউটি বলে, হ্যা বলেন! আপনি বিয়ের আগে কখনো কারও সাথে শারীরিক ভাবে মিলামিশা করেছেন? বিউটি চুপ করে থাকে! বোন চুপ করে থেকে লাভ নেই। আপনার স্বামীর কঠিন রোগ হয়েছে! তা কি করে হলো জানা প্রয়োজন আছে। আর ডাক্তারের কাছে কক্ষনো কিছু লুকিয়ে রাখা ঠিক নয়! আর আপনি আমায় যা বলবেন তা গোপনীয় থাকবে। আমি কথা দিলান।

বিউটি বলে, যেহেতু ওর এমন একটা রোগ হয়েছে তা আমারও হবার ঝুঁকি আছে তাই না স্যার? হ্যা! আপনি কিন্তু কথা দিলেন আমায় গোপন রাখবেন? হ্যা!

স্যার এর আগেও আমার আরেক জায়গায় বিয়ে হয়েছিল। ডাক্তার বিউটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে তা কি শিমুলের পরিবারের লোক জানে? হ্যা স্যার!
এতে শিমুলের পরিবারের লোক আপত্তি করেনি? না স্যার!

কারণ শিমুলের সাথে তার আগের বউয়ের ছাড়া ছাড়ি হয়েছিল। আর আমার পরিবারের লোক তাদের জানায় বিয়ে হলেও আগের স্বামীর সাথে কোন সংসার হয়নি! কিন্তু তার সাথে আমার কয়েক দিন সংসার করতে হয়েছিল!

আগের বিয়েটা ভাঙলো কেন? কারণ তার অসুখ ছিলো যার কারণে আমি তার সংসারে থাকিনি। স্যার আমার মনে হয় তার কাছ থেকে রোগটা আমার শরীরে চলে এসেছে। কেমন করে বুঝতে পারলেন? ডাক্তার সাহেব জিজ্ঞেস করে।

কারণ স্যার আমার শরীরে যে কোন রোগ বাসা বেঁধেছে তা কিছুদিন ধরেই আমি টের পাচ্ছি। তাই ঘন ঘন বাপের বাড়ি গিয়ে থাকতে হয় আমাকে!

ডাক্তার সাহেব বললেন তবুও আপনি এই পরিক্ষাগুলো করিয়ে আমাকে দেখান।

চেম্বার থেকে বেড়িয়ে আসতেই শিমুল জিজ্ঞেস করে, কি বললো ডাক্তার সাহেব?
বিউটি বলে, আমার কোন সম্পর্ক আগে কারও সাথে ছিলো কিনা! এবার শিমুল মনের ভিতর জমে থাকা কথা জিজ্ঞেস করে, একটা সত্যি কথা বলবে আমায়? বিউটি স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,কি কথা?
কথাটা আমার মনে কয়দিন ধরে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। তুমি আগের স্বামীর সাথে ঘর করেছিলে তাই না?
বিউটি চুপ করে থাকে! আমি জানতাম তাই হবে। নয়লে আমি তো এমন কোন পাপ করিনি। সত্যি বলতে কি আমার উপর অভিশাপ লেগেছে! বিউটি জিজ্ঞেস করে কার অভিশাপ? সুইটির আমার আগের বউ! যাকে আমি শুধু মাত্র নিজের জেদ পূর্ণ করতে তালাক দিয়েছিলাম। অথচ তা ছিলো সামান্য ব্যাপার!