গল্পঃ একটু অধিকার । পর্ব-০২
বাসর ঘরে ঢুকতেই পা পিছলে ফ্লোরে পরে গেলাম। বউ এসে কোথায় আমাকে টেনে তুলবে! তানা বরং আমার বুকের উপর এসে বসেছে। নতুন বউয়ের এমন কান্ড দেখে আমি শুধু অবাক হয়নি কিছুটা ভয় পায়ছি। বউকে দেখতে তো হেঙ্গলা পাতলা মনে হচ্ছে। কিন্তু ওজন মনে হচ্ছে ৬০ কেজির কম হবেনা। বুকের হাঁড় গুলি মনে হচ্ছে ভেংগে যাবে যাবে ভাব! কি হলো আপনি বুকের এসে বসেছেন কেনো? কোথায় আমাকে টেনে তুলবেন তানা করে বুকের উপর বসে আছেন।
বউ:- টেনে তুলার জন্য কি ফ্লোরে তৈল ফেলে রাখছি নাকী?
আমি:- মানে কি? আপনি নিজেই তৈল দিয়েছেন ফ্লোরে?
বউ:- হ্যা।
আমি:- কিন্তু কেনো?
বউ:- কারণ আপনাকে আমি বিয়ে করতে চাইনি।
আমি:- বিয়ে করতে চাননি অথচ বাসর ঘরে বউ সেজে বসে আছেন। এসব ফালতু জোক অন্য কোথাও মারবেন!
বউ:- কি আমি ফালতু জোক মারছি? দেখুন মিস্টার আপনার মত অনেক ছেলে আমার পিছে ঘুরঘুর করে আমি কাওকে পাত্তা দেয়নি।
আমি:- কেমন ঘুরঘুর করত তা আমার জানা হয়ে গেছে! যদি এমনি হত তাহলে আর অন্যের বিয়ের দাওয়াত খেতে এসে নিজের বিয়েটা করতেন না। দেখুন এসব চাপা বাজি আমার সাথে চলবেনা এমন অনেক দেখছি। আসল কথা হলো কেউ পাত্তা দেয়নি বলেই সুযোগে সৎ ব্যবহার করেছেন।
বউ:- কি আমি চাপা মারতেছি? আর সুযোগে সৎ ব্যবহার করেছি?
আমি:- হ্যা তা নই তো কি? যদি এমন হত জোর করে আপনাকে আমি বিয়ে করেছি তাহলে এসব বলতে পারতেন। আর তাছাড়া আমি জানিওনা আপনার সাথে আমার বিয়েটা হয়ছে জানলে তখনি বিয়েটা ভেংগে দিতাম।
বউ:- বিয়েটা আমি করতে চাইনি কিন্তু আঙ্কেলের মুখের দিকে তাকিয়ে করেছি! ওনি লজ্জা মুখ দেখাবে কি করে সেইটা চিন্তা করেই আপনাকে বিয়ে করেছি।
আমি:- বিন্তি তার বাবা মায়ের কথা চিন্তা করেনি আর আপনি এসেছেন আঙ্কেল আন্টির কথা চিন্তা করতে! এসেছে সাবার কাছে মহত সাজতে যেহেতু মহত সেজেছেন এবার ঠেলা বুঝবেন মহত সাজার। আপনার মহত্বটা এই বাড়িতে রেখে যায়েন কারণ আমাদের বাড়িতে এই মহত্বের কোনো দাম থাকবেনা।
বউ:- কেনো?
আমি:- সেইটা গেলে বুঝতে পারবেন। আচ্ছা মিস আপনার নামটা জানি কি বলছেন?
বউ:- আমার নাম বলিনি আপনার কাছে তাহলে জানবেন কি করে?
আমি:- থাক আর বলা লাগবেনা টুনটুনি বলে আপনাকে ডাকবো।
বউ:- খবর দ্বাড় এসব ফালতু নামে আমাকে ডাকলে আমি খুন করে ফেলবো আমার নাম তসিবা ইসলাম।
আমি:- ভালো নাম আচ্ছা সারা রাত কি বুকের উপর বসে থাকবেন নাকী উঠবেন?
তসিবা:- আমার কিছু শর্ত আছে সেই গুলি বলা হলেই উঠে যাবো।
আমি:- কিসের শর্ত?
তসিবা:- শর্ত হলো! আমি যেই চাকরিটা করি সেইটা চালিয়ে যাবো! আমি দুই বছরের আগে মা হতে পারবোনা! এই দুই বছর আমরা সাপ্তাহে একবার এক সাথে থাকবো। আমার প্রতি স্বামীর অদিকারটা একটু কম দেখাবেন। যখন তখন আমাকে জড়িয়ে ধরা আমাকে অর্ডার করা এসব একদমি চলবেনা। এসব মেনে কি আপনি আমার সাথে সংসার করতে পারবেন?
আমি:- নাহ আমি পারবোনা! প্রথমে আপনি চাকরি করতে পারেবেন না! আপনি যদি আমার সাথে সংসার করতে চান তাহলে সাপ্তাহে একদিন নই সাপ্তাহে সাতদিন আমার কুল বালিশ হতে হবে। আর দুই বছরে দুইটা করে জমজ বাচ্চা অর্থাৎ চারটা ছেলে মেয়ে লাগবে। আমার যখন ইচ্ছে হবে তখন আপনাকে পেছন থেকে হোক আর সামনে থেকে হোক জড়িয়ে ধরবো। এবার বলেন আপনি কি এসব মেনে আমার সাথে সংসার করতে পারবেন।
তসিবা:- নাহ আমি পারবোনা এসব মানতে। কিন্তু মিস্টার সৌরভ আপনাকে আমার নিয়ম মেনেই আমার সাথে সংসার করতে হবে।
আমি:- করলাম না সংসার আপনাকে ডির্ভোস দিয়ে আরেকটা বিয়ে করবো। যে আমাকে ভালোবাসবে কোনো শর্ত দিবেনা।
তসিবা:- মিস্টার সৌরভ আপনি চাইলে আমাকে ডির্ভোস দিতে পারবেন না!
আমি:- কেনো?
তসিবা:- কারণ আপনি বিয়ের কাবিনে সাইন করার সময় একটা চুক্তি নামাই সাইন করেছেন। আর সেই চুক্তি নামাই লিখা আছে আমি যে শর্ত গুলির কথা বলছি।(ভাবি তো আমাকে একটা কাগজে সাইন করিয়েছে আর আমিও বোকা না পড়ে সাইক করে দিয়েছি ধূরর এখন কি করবো?মনে মনে নিজেকে বকা দিতেছি) কি হলো মন্ত হয়ে গেলেন যে?
আমি:- কিন্তু আমি মানিনা চিটিং করেছেন আমার সাথে?
তসিবা:- আপনি না জেনে শুনে সাইন করেছেন? কেউ বিশ্বাস করবে আপনার কথাবার্তা? আমি যা যা বলছি সব শর্ত মেনেই আপনার বাবা, ভাই, ভাবি আমাকে বিয়ের পিড়িতে বসিয়েছে। আপনি না চাইলেও আমার সব শর্ত মেনেই আমার সাথে সংসার করতে হবে যদি না করেন তাহলে সোজা জেল।
আমি:- জেল খানা পুরুষের জন্য দরকার হলে জেল খাঠবো তাও আপনার শর্ত মত সংসার করতে পারবোনা।
তসিবা:- জেল খানাতে তো আপনি একা যাবেন না। সাথে আপনার মা, বাবা, খরস দাদিটা, আর আদরের ভাবি, ভাই সবাই যাবে।
আমি:- আব্বা সব জেনে শুনে এমনটা করতে পারলো?
তসিবা:- হ্যা তাছাড়া কোনো উপায় ছিলোনা! এখন থেকে আপনি আমার কথা মত চলবেন!
আমি:- সেইটা সময় বলে দিবে! দেখি এখন উঠেন আমার বুক ব্যথা করছে। আপনার ফালতু পেচাল পরে শুনবো আমার এখন ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো। আমি মরে যাবো তাও আপনার শর্ত মেনে সংসার করবোনা। তখনি তসিবা আমার গলা টিপে ধরেছে। আরে কি করছেন আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ছাড়ুন বলছি।
তসিবা:- কষ্ট হোক ছাড়বোনা! আপনাকে মেরে ফেলে নতুন ইতিহাস তৈরি করবো। আপনি যেহেতু শর্ত মানার চাইতে মরতে পছন্দ করছেন তাহলে মেরেই ফেলবো। তখনি আমি জোরে ধাক্কা দিয়ে তসিবাকে সরিয়ে দিয়েছি। আর সাথে সাথে আমি কাঁশতে আরম্ভ করেছি। আমার এমন অবস্থা দেখে তসিবা অনেকটা ভয় পায়ছে! টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি এনে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে সরি সরি আমি বুঝতে পারিনি নেন পানিটা খান তাড়াতাড়ি করে।
আমি:- আপনি বুঝতে পারেননি মানে? ছিঃ আপনি এমন বলে ঠাস করে এক থাপ্পড় মেরে দিয়েছি। থাপ্পড়টা জোরে দিয়েছি সাথে সাথে হাতের গ্লাসটা ছেড়ে দিয়েছে! দুই চোখ বেয়ে পানি পড়তে আরম্ভ করেছে। এতক্ষন সব চুপ চাপ সহ্য করেছি আর নই। আমি বুঝতে পারছি আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন সমস্যা নেই আমি আপনার সব শর্তে রাজি। তবে আপনি আমাকে কোন দিন স্বামী হিসাবে পাবেন না! আপনি চাইলেও আপনাকে আমি স্পর্শ করবোনা।
তসিবা:- আমি চাইলে আপনাকে স্বামী হিসাবে পাবো কিন্তু আপনি চাইলে আমাকে আপনি স্ত্রী হিসাবে পাবেন না। কারণ আপনার সেই একটুও অধিকার নেই। আমাকে থাপ্পড়টা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ! থাপ্পড়টার জন্য কতটা যন্ত্রনা সহ্য করতে পারেন সেইটা আমি দেখবো।
আমি:- হাসালেন আমাকে। দেখা দেখি ঝগড়া ঝাটি অনেক হয়েছে এখন ঘুমাতে দেন আমার এমনিতেই মাথা ব্যথা করছে।
তসিবা:- তা ঘুমাবেন কোথায় ফ্লোরে তৈল, খাটের উপর এক সাইটে পানি! অন্য সাইটে আমি থাকবো।
আমি:- ঠিক আছে সুফায় শুয়ে পড়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই! কোনো কথা না বলে সোজা সুফায় শুয়ে পড়েছি আর মনে মনে বউটাকে বকা দিতেছি। তখনি তসিবা বলে।
তসিবা:- আর একটা বকা যদি দেন তাহলে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলবো।
আমি:- মানে কখন বকা দিলাম?
তসিবা:- আমি জানি মনে মনে আমাকে বকা বকি করছেন!
আমি:- এই মেয়ে তো আমার জীবনটাকে নিয়ে চিনি মিনি খেলবে! গ্রামের মেয়ে এতটা চালাক হলো কি করে? চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি ঠিক বলতে পারবোনা! সকালে ঘুম ভাংগছে মোবাইলের রিংটনে! মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি আম্মার নাম্বার রিসিভ করে কথা বলছি তখনি দরজার ওপার থেকে ভাবির ডাক।
ভাবি:- সৌরভ দরজটা খুলো আর তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও আমরা এখুনি রওনা হবো ঢাকায়।
আমি:- হ্যা খুলতেছি! তাড়াহুরা করে উঠে দরজটা খুলতে যাবো তখনি চোখটা তসিবার দিকে গেছে। তসিবার শাড়ীটা ওর গায়ের উপরে নেই আমি গিয়ে ওর গায়ের উপর শাড়ীটা ঠিক করে দিতে ছিলাম তখনি তসিবা চোখ মেলে চেয়ে দেখে ওর শাড়ীর আচলটা ধরে রাখছি! শাড়ীর আচলটা ঠিক করতে গিয়ে হাতের মোবাইলটা এমন ভাবে ছিলো মনে হচ্ছে আমি তসিবার ছবি বা ভিডিও করছি। তসিবা এমন দৃশ্য দেখে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আমি কিছুটা হতবম্ভ হয়ে গেলাম! নিরঘাত কপালে সনির দশা আছে আমি কিছু একটা বলবো তখনি তসিবা খাটের উপর থেকে নেমে মুচকি একটা হাসি দিয়ে সোজা উয়াশ রুমের দিকে চলে গেছে! আমি তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি এইটা কি করে সম্ভব?
চলেবে………
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com