সারপ্রাইজ । পর্ব -০১
পাত্রীর ডানহাতে ব্লেড জাতীয় কিছু দিয়ে কাটা(R+K ) লেখা দেখে যতটা না অবাক হয়েছি। তার চেয়ে অবাক হয়েছি মেডিকেলে পড়া মেয়ের এমন কাণ্ড দেখে!
বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছি। বিদেশ থেকে পড়াশোনার পার্ট চুকিয়ে বাবার ব্যবসায় হাল ধরেছি সবে-মাএ । বাবা-মায়ের পীড়া-পীড়িতে আজকে প্রথম পাত্রী দেখতে আসলাম। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর, মেয়ের আন্টি মেয়েকে নীল একটা শাড়ি পড়িয়ে আমাদের সামনে নিয়ে আসলো। মেয়েটা আমাদের সবাইকে সুমিষ্ট কণ্ঠে বলল’ আসসালামু আলাইকুম।’ বাবা -মা মেয়েকে দেখেই বলে ফেলল’মাশআল্লাহ’।
মা-বাবার মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝলাম মেয়ে তাদের পছন্দ হয়েছে ।
মা জিজ্ঞেস করল মা তোমার নাম কী?
‘কারিমাতুল জান্নাত কথা ‘।
ওহ্ আচ্ছা! বস মা।
কথা সোফায় বসল। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম! আল্লাহর সৃষ্টি এত সুন্দর! মনে হচ্ছে নিপুণ হাতে তৈরী করেছে মেয়েটাকে। কালো পাড়ের নীল শাড়িতে মেয়েটাকে সাক্ষাত পরী মনে হচ্ছে। চোখে ম্যাচিং করা ব্লু কালারের চশমায় মেয়েটাকে একদম পুতুলের মতো দেখাচ্ছে! দগ সোফায় বসে এসি রুমের মাঝেও মেয়েটা ঘামছে। নাকের ওপর বিন্দু বিন্দু ঘামের দানা বাঁধছে। মনে হচ্ছে মুক্তোর দানা নাকের ওপর চিকচিক করছে।
‘কথা মামনি উনাদের চা দাও।'( আফজাল সাহেব)
‘জ্বি বাবা দিচ্ছি। কথা সবাইকে চা দিয়ে শেষে আমাকে চা দিতে এসে ডানহাতের ওপর থেকে শাড়িটা ক্ষানিকটা সরিয়ে হাতটা দেখালো।
আমি মেয়েটার হাতের দিকে তাকিয়েই চমকে ওঠলাম। মেয়ের হাতে ব্লেড দিয়ে কেটে ( R+k) লিখছে স্পর্ষ্ট দেখা যাচ্ছে। মেয়েটা আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো মনে হচ্ছে চোখ থেকে যদি আগুন বের হতো তাহলে আমাকে চোখের আগুনে ভূস্মীভূত করে ফেলত!
মেয়েটা চা দিয়ে আবারো সোফায় গিয়ে বসল। মনে মনে ভাবছি একটা মেডিকেল স্টুডেন্ট এতটা পাগলী হতে পারে। এরা হবে ডাক্তার তাহলে রোগীর কি হবে ভাবতেই আমি শিহরিত হয়ে যাচ্ছি।
বাবা -মা ইতোমধ্যে বেয়াইন -বেয়াইনসাব বানিয়ে ফেলেছে। এদিকে আমি মনে মনে ভাবছি এ মেয়েকে বিয়ে করলে জীবনটা তেজপাতা বানিয়ে ফেলবে।
বাবা জিসান মেয়ের সাথে কিছু বলার আছে তোমার?
নাহ বাবা তোমরা যা ভাল মনে করো।
হুম বলেছিলাম না বেয়াইন আমার ছেলে অন্য ছেলেদের মতো না।
হুম বেয়াইন। তারপরও দুজনের মাঝে আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকলে ভালো হবে।
মা কথা জিসান বাবাজীকে নিয়ে তোমার রুমটা দেখিয়ে আসো।
জ্বি বাবা। কথার পিছুপিছু বাবা আমাকেও পাঠিয়ে দিল।
রুমে ঢুকতেই কথা দরজা লাগিয়ে দিল।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম একি করছেন দরজা কেন লাগাচ্ছেন?
ভয় কেন পাচ্ছেন ভয় পাবেন না। নিরাপত্তার জন্য দরজা লাগিয়ে দিয়েছি।
ওহ্ আচ্ছা।
চশমার পাওয়ার কত আপনার?
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম’ মাইনাস ৫০ ‘।
ওহ্ গুড বয়। আমার হাতে ব্রেড দিয়ে কাটা ( R+k) লিখাটা দেখেছেন?
ওটা আমার আর আমার বয়ফেন্ডের নাম এড করছি।
হ্যাঁ।দেখেছি।
ও ভালো। শুনেন আমি একজনকে ভালবাসি। বিয়ে করলে ওকেই করব।
জানেন আমার বয়ফেন্ডের সাথে সবকিছু হয়ে গেছে। ভাবছিলার ওর বাবুর মা হবো।
কিন্তু ওই বলেছে বিয়ের আগে বাবু নিয়ে আসা ভালো না।
ওহ্! ভালো কথা। আমার সমস্যা নাই। আপনি কত সুন্দর! বিয়ে করলে আপনাকেই করব।
বিয়ের আগে কতমেয়ের বয়ফেন্ড থাকে।
কি তারপরও আমায় বিয়ে করবেন? বললাম না আমার সব হয়ে গেছে।
আমার সমস্যা নাই। আপনি আমার বউ হলেই চলবে।
কথা মনে মনে ভাবছে এইটারে আর আগের গুলো মতো বুঝালে চলবে না ডাইরেক্ট এ্যাকশন শুরু করতে হবে। এই ভেবে আমার চশমাটা টান দিয়ে খুলে ফেলে।
কি হলো চশমা খুলেন কেন?
সবে তো চশমা খুলেছে তোর প্যান্ট খুলব। হারামি সুন্দরি মেয়ে দেখলেই বিয়ের জন্য উঠে-পরে লাগে!
এই বলে আমায় জড়িয়ে ধরে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎল্লাতে লাগল। কে আছো গো আমাকে বাঁচাও আমার সবশেষ করে ফেলল। মা-বাবা কোথায় তোমরা বাঁচাও আমাকে।
কী আশ্চর্য! এমন করছেন কেন? আমি কি করেছি। আমার বাবা এসব শুনলে মেরেই ফেলব।
কেন তোর বিয়ে করার শখ মিটাচ্ছি। মেয়ে দেখলেই কুরুত ওঠে!
ও আল্লাহ বাঁচাও আমাকে বলে কথা যখন শাড়ি খুলতে যাবে এমন সময়। দরজার ওপাশ থেকে দরজা ধাক্কানোর শব্দ শুনে কথা বিজয় মাক্কা একটা হাসি দিয়ে যখন দরজা খুলতে যাবে। তখনি বললাম’ ম্যাডাম দরজা খুলেন ভালো কথা, তবে আমার ফোনে আপনার কথাগুলো রেকর্ড করা হয়ে গেছে অলরেডি। আপনার বাবাও জানবে আপনি আপনার বয়ফেন্ডের সাথে কি করছেন।
কথার মুঁখটা বেলুনের হাওয়া ছাড়লে যেমন চুপসে যায় তেমনি চুপসে গেল। ওপাশ থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে। কথা কাপড়টা ঠিক করে দরজা খুলতেই। মা-বাবা বলল মামনি কি হয়েছে? বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিলে কেন?
আন্টি জিসানের সাথে যখন কথা বলছিলাম। তখন ইয়া বড় এক আশোলা আমার উপর পড়ে।আর আমি লাফাতে থাকি। আমার না আশোলা দেখে অনেক ভয় করে। ছোট্ট বাচ্চার মতো করুণ সুরে।
আমি রুম থেকে বের হয়ে একটা বিজয়ের হাসি দিলাম।
মা কথার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল ‘ মামনী তুমি না মেডিকেল স্টুডেন্ট! এতোভয় পেলে কি চলে? পাগলী মা আমার।
বাবা কথার বাবাকে বলল’ মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে ‘। তাই কথা মামনিকে এ মাসেই বাদরটার গলায় ঝুলিয়ে দিতে চাই বেয়াই মশাই?
আপনার যেমন মর্জি।
আচ্ছা আজ তাহলে আসি।
বাড়িতে আসার দু’দিনপর রং নাম্বার থেকে একটা ফোন আসল। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে মিষ্টি কণ্ঠে বলল’ আমি কথা। আজ বিকেলে আপনার সাথে দেখা করা যাবে?
আমি কিছু না ভেবেই স্বীকার হয়ে গেলাম।
বিকেল বেলা ব্ল্যাক কালারের একটা টিশার্ট গায়ে জড়িয়ে কথার দেয়া ঠিকানায় চলে গেলাম। গিয়েই দেখি কথা একটা ছেলের কাঁধে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। আমি কাছে গিয়েই শুকনো কাশি দিয়ে চেয়ার টেনে বসলাম।
কথা আমাকে দেখে ছেলেটার কাঁধ থেকে মাথা তুলে বলল, আপনি আসছেন?’। পরিচয় করিয়ে দেয় এই হচ্ছে রাফি।
হুম জানি আপনার বয়ফেন্ড।
আপনি কেমনে জানলেন? আপনাদের রোমাঞ্চ দেখে।
ওহ্ আচ্ছা। বলেন সেদিন রুমে কথা রেকর্ড করেছিলেন কেন?
আপনার চা দেওয়া ভঙ্গিটা আমার কাছে সুবিধাজনক মনে হয়নি।
হঠাৎ রাফি নামের ছেলেটা আমার হাতটা ধরে বলতে লাগল ‘ভাইয়া আমি কথাকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসি। ‘ ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। আপনি অনেক মেয়ে পাবেন। প্লীজ আমাদের কবুতরের জোড়াটা ভাঙবেন না।
আমি মৃদু হেসে বললাম ‘ আপনাদের দু’জনের বিল পরিশোধ করে দিয়েছি। ‘ এখন আমি আসি।
কথা ক্ষানিকটা অবাক হলো। রাতে কথা রুমে শুয়ে আছে। হঠাৎ আফজাল সাহেব রুমে প্রবেশ করে বলল ‘ সামনে শুক্রবার তোর আর জিসানের বিয়েটা সেরে ফেলতে চায়। ‘
‘কিন্তু বাবা’
কোন কিন্তু না মা। ছেলেটা ভালো। সামনে মাসে সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে তাই বিয়েটা সেরে ফেলতে চাচ্ছে। এবং জিসানতো তোকে নিয়েই সিঙ্গাপুর যেতে চাচ্ছে।
বাবার কথা শুনে কথা বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। চামচিকাটাকে এত করে বুঝানোর পরও আমায় বিয়ে করবে। যে করেই হোক কিছু একটা ঘটাতেই হবে। পরের দিন জিসানকে বাসায় নিয়ে আসে অসুস্থতার কথা বলে। রুমে ঢুকতেই কথা জিসানকে জরিয়ে ধরে ””’
এদিকে কথার বাবা দরজা ধাক্কা দিতেই কথা বাঁচাও বলে চিল্লায়ে ওঠে! কথা মনে মনে বলছে এবার কই যাবে চান্দু বিয়ে করার শখ মিটাবো।
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com