Breaking News

গল্পঃ কঠিন পরিক্ষা

শ্বশুর বাড়ি গেলে আমার পাঞ্জাবীর পকেট থেকে হাজার টাকার বেশ কয়েকটা নোট উধাও হয়ে যায় ৷ মাত্র ৩ মাস হলো বিয়ে করেছি, যদি বলি টাকা চুরি হয়েছে তবে আমারই প্রেস্টিজ পান্সার ৷ এবারও শ্বশুর বাড়ি এসে টাকা চুরি হয়েছে! টাকা চুরি কে করতে পারে? এটা ভেবে রাতে ঘুমই হলোনা ৷ ঘুম হয়না জন্য বউ বলে, “কি এক্স-এর সাথে ফোনে চুরি করে কথা বলবা এজন্য ঘুমাচ্ছো না? কিন্তু আমাকে কি বোকা মনে করো? আমিও ঘু্মাব না আজ, তোমার কীর্তি দেখব!” বউয়ের কথা শুনে জগতের সমস্ত রাগ এসে ঘাড়ে চাপলো ৷ কিছু বলতে গিয়ে বললাম না, রাতে ঝগড়া করে দুশ্চিন্তার মুডটাকে ঝগড়ার মুডে রুপান্তর করতে চাইনা ৷ চোখ বন্ধ করে, নাক ডাকার শব্দ করে টাকা কে চুরি করলো এটা নিয়ে ভাবতে লাগলাম ৷ শ্বশুর,শালা, শালিকা সকলকে সন্দেহ করলাম ৷ বউ টাকা চুরি করেনা, বাসায় লাখ খানেক টাকা টেবিলে ফেলে রেখেছিলাম সে একটা টাকাও নেয়নি! তাই বউকে সন্দেহ করা বাদ দিলাম ৷ শালাকে সন্দেহ করলাম বেশি ৷ সকালে ঘুম থেকে জেগে শালা বাবুকে কিছুই বললাম না ৷ শ্বশুর বাড়ি থেকে গেলাম মার্কেটে দরকারি জিনিস কিনতে ৷ পরেরদিন সকালে শালাবাবুকে আদুরে গলাতেই বললাম,
_শালাবাবু, গতকাল গেছিলাম বাইকের শপে! কি করে আসছি জানো?

আমি জানি শালাবাবু বাইক পাগল ৷ বাইকের কথা শুনে সে হুড়মুড় করে উঠলো ৷ মুখে এক চিলতে হাসি এনে তোডজোর করে বলল,
কি করছিলেন দুলাভাই? আমি এবার গলার স্বরটা উঁচু করে মিষ্টি হেসে বললাম, তোমার জন্য Ninja ব্র্যান্ডের বাইক পছন্দ করে আসছি!

শালা বাবু এবার খুশির আতিসায্যে লাফিয়ে উঠে উল্লসিত কন্ঠে বলল,
_তারপর দুলাভাই? বাইকটা কিনেননি?

কিনেছিলাম….. কিন্তু কি হয়েছিল জানো? কি হয়েছিল?
_বাইকের দাম ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা! মিটমাট করলাম ২লাখ ২৭ হাজারে ৷ কিন্তু…

শালাবাবুর ধৈর্য্য মনে হচ্ছিল গরম কড়াইয়ের ফুটন্ত পানির মত উতলে উতলে উঠছিল ৷ হাত পা নাড়িয়ে চাড়িয়ে সে বললো,
_কিন্তু কি দুলাভাই? বাইকটা কি আপনাদের বাসায় রেখে আসছেন?

আমি এবার চেঁচিয়ে উঠে বললাম,
_আরে নাহ, টাকা দিতে গিয়ে দেখি ২ লাখ ২০ হাজার টাকা আছে ৷ বাকি ৭ হাজার টাকা গায়েব!

এটা বলাও সাড়া শালাবাবুর চোখ দুটো দেখি ছলছল করছিল ৷ সে কেঁদে দিবে বলে মনে হচ্ছিল!
শালাবাবু কান্নার স্বর বানিয়ে বলল,
_নিশ্চয় ৭ হাজার টাকার জন্য বাইকটা কিনতে পারেননি? আপনিও না দুলাভাই! মাত্র ৭টা হাজার টাকা আমার থেকে চাইলেই পারতেন!
আমি কি দিতাম না?

এবার ধরা পড়লো শালাবাবু ৷ বুঝতে পারলাম আমার স্বাদের ৭হাজার টাকা এই ব্যাটায় চুরি করছে! ওরে ক্ষিপ্ত স্বরে বললাম,
পয়েন্টে আসছো বাবু! এবার বলো তো আমার পকেট থেকে ৭হাজার টাকা কে চুরি করছে? কথা ঘুরাবানা, জানি তুমিই নিয়েছো! হায় আল্লাহ! দুলাভাই শেষপর্যন্ত আপনি আমাকে চোর বানায়লেন? সেই মানুষ আবার আমাকে বাইক কিনে দিবে দু-লাখ ২৭ হাজার টাকা দিয়ে? কষ্ট পেলাম দুলাভাই খুব কষ্ট পেলাম!
ও তোমার খুব কষ্ট? সত্যি করে বলো টাকা কে নিয়েছে? আপনার টাকার আমি নিকুচি করি ৷ ৭হাজর টাকা আমি দশ সেকেন্ডে ইনকাম করি!!

শালার চাপাবাজি শুনে তালগাছ থেকে পড়লাম বলে মনে হলো ৷ ওকে ঝাঁড়ি মেরে বললাম,
_বুঝলাম তো টাকার গাছ গেড়ে বসছো! এবার বলো ৭হাজার টাকা কেন চুরি করলা?

শালা ষাঁড়ের মত চেঁচিয়ে বলল,
_ধুর, আমি টাকা নিইনি!

বলেই শালা বাবু আমার চোখের সামনে থেকে দূর হলো! ভাবলাম এই শালা কিছুতে টাকা চুরি করতে পারেনা ৷ তার জবানে জোর দেখছি!

রাতে খেতে বসছি শ্বশুর, শ্বাশুরি, বউ, শালা ও শালিকাকে নিয়ে ৷ খাবার দিচ্ছিল কাজের মেয়েটা ৷ আমার এখন সন্দেহ শ্বশুর আব্বার উপর ৷ তিনি টাকা পাগল, উনি টাকা নিতে পারেন ৷ শ্বশুর আব্বার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছি আর গরুর গোশত গিলছি ৷ ওদিকে কাজের মেয়েটা কেমন কেমন ভাবে আমার দিকে চেয়ে মিটমিট করে হাসছে ৷ আমার বউ কাজের মেয়ের মতিগতি দেখে আমার দিকে শাপের মত ফনা তুলে চোখ গোলগোল করে তাকিয়ে দেখছে বারবার!
আমি শ্বশুর আব্বার দিকে তাকিয়ে আছি এটা শ্বশুর আব্বা টের পেয়ে কাশি দিয়ে বললেন,
__জামাই কি কিছু বলবে নাকি? কেমন করে তাকিয়ে আছো যেন?

লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বলেই ফেললাম,
_আব্বা, আপনি কি আমার পাঞ্জাবী থেকে ৭হাজার টাকা নিয়েছেন?

এটা শুনেই আব্বাজান বেষম খেলেন ৷ এক গ্লাস পানির কয়েক ঢোক গিলে বললেন,
__জামাই তোমার থেকে এমন আচরণ আশা করিনি! ভুলে যেওনা যে তোমার হাতে মেয়েকে তুলে দিয়েছি ৩ লাখ টাকা যৌতুক দিয়ে সেই আমি তোমার পকেট থেকে টাকা নেব? আমি কি ফকিন্নি?

বলেই শ্বশুর আব্বা খাবার টেবিল থেকে বিদায় নিলেন! বুঝলাম তিনিও টাকা নেননি! শ্বাশুরি আম্মাজান তো আমার টাকা ছুঁবেও না ভুলে ৷ এবার সন্দেহ হলো শালিকার উপর ৷ নিশ্চয় সে ই নিয়েছে!

ছাদে দাঁড়িয়ে “শালি আমার” ফোনে চ্যাটিং করছিল কার সাথে যেনো? আমিও চ্যাটিং করছিলাম আমার ফেসবুক গার্লফ্রেন্ডের সাথে!
শালির পিছে দাঁড়িয়ে তার চুলগুলো টেনে আদুরে গলায় বললাম,
__জান কি করো?

এইতো দুলাভাই!তোমার টাকার দরকার, আমাকে বললেই পারতে ৷ না বলে ৭হাজার টাকা নিতে হবে কেন তোমার? চাইলেই ৭হাজারের কাছে ২৭ হাজার দিতাম ৷ একমাত্র শালিকা তুমি!

এটা শুনে শালিকা তার ফোনের লাইট অন করে আমার দিকে আলো ধরলো ৷ অন্ধকার সত্যেও শালিকার চেহারা মোটামুটি অবলোকন করে বুঝতে পারলাম সে এখন ক্ষ্যাপা বাঘিনীর রুপ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! সে আমাকে শুধু এতটুকু বলল,
_তোর টাকার অামি বুড়ি-আঙ্গুল করি! আমার বয়ফ্রেন্ডকে বললে এখনই ৭ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিবে ৷ কি লাগবে তোর?

বুঝলাম শালিকা বেজায় রাগা রেগেছে ৷ তাই আর কথা বাড়ালাম না!
কিন্তু আমার সন্দেহ যাচ্ছেনা ৷ কে টাকা নিলো তবে? শ্বশুর নেয়নি, শালা নেয়নি, শালিকাও নেয়নি ৷ তবে কি বউ নিলো? নাহ সে তো এমন না ৷ শ্বাশুরি আম্মা কি নিলো?

পরদিন রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে চ্যাটিং করছি গার্লফ্রেন্ডের সাথে ৷ সে হাজার বার বলেছে আমি যেন তাকে কন্টাক্ট নাম্বার দিই ৷ কিন্তু বউয়ের ভয়ে নাম্বার দিইনি ৷ আজকে গার্লফ্রেন্ড এমন ভয় দেখালো যে নাম্বার না দিয়ে পারলাম না ৷ ইনবক্সে তার কাটা হাতের পিকচার দিয়ে বলল, “আমি হাত কেটেছি, নাম্বার না দিলে পুরোটা কেটে ফেলব!” বাধ্য হয়ে নাম্বার দিলাম ৷ দিলো তখন তখন কল ৷ ফোনে কথা বলছিলাম ৷ তার কন্ঠের জাদুতে মোহগ্রস্ত হয়ে গেলাম ৷ কথা চলছিল! গার্লফ্রেন্ড বেশ কিছু সময় কথা বলার পর থেমে গেল ৷ তার রিপ্লাই না পেয়ে বললাম, কই গেলে? উত্তরে সে বলল, “বলো শুনছি”! বলতে লাগলাম ৷ যখন বললাম,
_জান তোমার মিষ্টি কন্ঠের জাদুতে মোহগ্রস্ত হয়ে সুখের সাগরে ভাসছি ৷ আমরা কবে দেখা করব জান?

এটা বলাও সাড়া তখনই বউ এসে আমার পিঠে হাত দিয়ে শান্ত গলাতে বলল,
_ওগো, একটু রুমে চলো তো!

গেলাম রুমে ৷ বউ দরজা আটকালো! এরপর আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিল ৷ তারপর মিষ্টি করে বলল,
__জান দেখোতো আমার নেকলেসটা কেমন হয়েছে?

নেকলেসের দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম ৷ এ তো ডায়মন্ডের নেকলেস ৷ ভাবলাম সে ডায়মন্ডের নেরলেস কই পেলো? কপালে ভাঁজ ফেলে ভ্রু কুঁচকে গম্ভির গলায় বউকে বললাম,
_ডায়মন্ডের নেকলেস কই পেলে সোনা বউ?

বউ মুচকি হেসে বলল,
_আমার বয়ফ্রেন্ড গিফট করেছে! জানো কত দাম?

আমার মাথায় বাজ পড়লো ৷ কান দিয়ে আর মাথা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছিল মনে হলো! বউ এগুলো কি বলে? তার বয়ফ্রেন্ড থাকবে কেন?
আনি তেড়েফুরে বললাম,
_তোমার বয়ফ্রেন্ড মানে?

আমার গালে চটাস করে থাপ্পর লাগিয়ে দিয়ে বলল,
_বদমাইশ! আমার বোনের সাথে ফেসবুকে প্রেম করিস, নাম্বার নিয়ে পীড়িত করিস লজ্জা করেনা?

এটা শুনে মনে হলো আমার পায়ের নিচে মাটি নাই, হাওয়ায় ভাসছি ৷ আমি কেন শালিকার সাথে প্রেম করব?
বউ দরজাটা খুলে দিলো ৷ শালিকা ভেতরে ঢুকল ৷ তারপর আমার কাছে এসে কান্না করতে করতে বলল,
_সরি দুলাভাই আপুর বুদ্ধিমত আপনার সাথে দেড় মাস হলো ফেইক আইডি দিয়ে কথা বলছি ৷ আপনি প্রেমে পড়ে যাবেন ভাবিনি! আপুর কথাতে এসব করেছি! আপনাকে অন্য একটা মেয়ের পিকচার দিয়েছিলাম! আর যে নাম্বারে কথা বললাম ওটা নতুন সিমের নাম্বার!

আমি মুখে কিছু না বলে বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ বউ আমার গালে আরেকটা থাপ্পর দিয়ে বলল
_লুচ্চা কোনানকার! বাসর ঘরে বলে, “বউ তুমি আমার প্রথম ভালবাসা ৷ তোমার জন্য কখনো প্রেম করিনি এমনকি কারো দিকে তাকাইনি ৷ তাকাবোওনা আর কখনো!” তোর কথাতে টের পেয়েছিলাম তোর মধ্যে ভেজাল আছে ৷ তাই পরীক্ষা নিলাম ৷ তুই সত্যিই ভেজাল মাল!
আর শোন, তুই যে কয়দিন আমার আব্বার বাড়ি এসে টাকা হারায়ছিস ও সব টাকা আমিই চুরি করছি ৷ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বোনটার অভিনয়ের পুরস্কার দেব ঐ টাকা দিয়ে নেকলেস কিনে! এই দেখ নেকলেস!

বউয়ের কথা শুনে পরিবেশটাকে শান্ত মনে হলোনা ৷ শব্দ দূষণের মত মনে হলো ৷ আমি বিষাক্ত শব্দের আঘাতে বেহুশ হয়ে পড়ে রইলাম!

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com