গল্প: স্বপ্ন থেকে পাওয়া
এই যে শুনেন?
-জ্বি বলুন।
-কালকে থেকে প্রতিদিন আমায় কলেজ নিয়ে
যাবেন।
-কি বলছেন এসব,আমি তো আপনাকে চিনিই না। –
তো কি হয়ছে,আমি আপনাকে চিনি। -দেখুন,আমি
আপনাকে কলেজ নিয়ে যাবো কেন?
-আমার ইচ্ছে,আমি যেটা বলবো সেটাই করবেন।
আর এই সিগারেট টা যেনো আপনার হাতে আর না
দেখি।
কিছু বুঝার উঠার আগেই হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে
হনহন করে চলে গেলো।
বেশ কিছুক্ষন নিচের দিকেই তাকিয়ে
থাকলাম,চারপাশের মানুষ যেভাবে দেখছে সুবিধার
মনে হচ্ছে না।দোকানের বিলটা দিয়ে চিরকুট
কোনোরকমে পকেটে ডুকিয়ে বাসায় চলে
আসলাম।
রাত ১২:৪৫ মিনিট।
ঘুমোতে যাবো,হঠাৎ করেই চিরকুটটা দেখতে
ইচ্ছে হলো।
চিরকুট দেখে বেশ অবাকই হলাম।এত্তলেখা যে
এগুলো পড়তে আমার পাহাড় সমান ধের্য্য দরকার।
সব শেষে খুব ছোট্ট করে লিখা- তোমার
স্বপ্নের মানবী হতে চাই,।এবং নামটা আরও ছোট্ট
করে লিখা,পাখি।চিঠিটা রেখেই ঘুমোতে চলে
গেলাম।
কলেজে ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডায়
নিজেকে ডুবিয়ে দিচ্ছিলাম। -এই যে আপনার
এতো অহংকার কেনো? মেয়েটার হালকা ধমকে
সবার মধ্যেই কিছু টা ভয় বিরাজ করছে।কলেজে
এসে মেয়েটার সমন্ধে জানতে ইচ্ছে
করলো,হারামি বন্ধুদের দায়িত্ব দেওয়াতে সব তথ্য
পেয়ে গেছি।সবার ভাষ্যমতে মেয়েটা খুব ভদ্র
কোনো ছেলের সাথে স্টাডি সম্পর্কিত
আলোচনা ছাড়া কোনো কথা বলে না। বেশ
মেধাবিও বটে।
-কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না? -জ্বি বলুন।
-আপনি আমার দেওয়া চিঠিটা পড়েন নি? -পড়েছি
তো।
-পড়লে আমাকে সাথে নিয়ে কলেজ আসতেন। –
চিঠির সাথে কলেজ নিয়ে আসার সম্পর্ক কি? -এত
কিছু বুঝতে হবে না,এখন চলুন একসাথে হাঁটবো।
-কি বলছেন এসব?আমি আপনার সাথে হাঁটবো কেনো?
-আমার ইচ্ছে তাই।
ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও যেতে হলো,কারন হারামি
বন্ধু গুলো আমায় ফাসাতে ব্যাস্ত।তার জন্য অবশ্য
ওরা মেয়েটার কাছে থেকে মিষ্টি একটা ধন্যবাদও পেয়েছে।
হাঁটছি আর অবাক হচ্ছি,এই মেয়েটা কখন থেকে
কথা বলে যাচ্ছে আমার মত আনরোমান্টিক একটা
ছেলের সাথে।আমার কথা অবশ্য হা আর না পর্যন্ত
সিমাবদ্ধ।কিন্তু মেয়েটা বিরক্ত হচ্ছে না। -অনেক
তো হাঁটলাম,এবার চলো বসি। কথা বলতে বলতে
মেয়েটা কখন যে আপনি থেকে তুমিতে চলে
আসলো টেরই পেলাম না। এই মেয়েগুলোই
মনে হয় এমনই খুব সহজে সবাই কে আপন করে নেয়।
-হুম বসা যাক।কিন্তু এখানে তো কোনো
হোটেল বা রেস্টুরেন্ট নেই। -ওই যে চায়ের
দোকানটায় বসি। এবারও অবাক হলাম।এখনকার
মেয়েরা তো রেস্টুরেন্ট ছাড়া কিছুই বুঝে না
কিন্তু এই মেয়েটা বেশ বিপরীত।
-চাচা একটা চা দিন।
-একটা কেনো?তুমি খাবে না? -না।
-কেন?
-দেখবো।তুমি যে দোকানটায় বসে চা খাও আমার
বাসা থেকে দেখা যায়, আমি প্রতিদিন তোমার চা খাওয়া
দেখি।ইচ্ছে ছিলো কাছে থেকে দেখবো। –
যত সময় যাচ্ছে তত বেশি অবাক হচ্ছি। -কি বিড়বিড়
করছো,চা টা খেয়ে নাও। -হুম খাচ্ছি।কিন্তু তুমিও খাও।
-না।আমি খাবো না।
-ওকে।
-গুড বয়।
-সিগারেট খাই একটা?
-কি??
-না কিছু না।এমনি বললাম। -ঠিক আছে খাও।
-ঠিক বলছো তো?
-হুম খাও,আমিও খাবো।
-তুমি খাবে কেনো?
-অভ্যাস করে নিবো।তুমি যদি এইটা খাওয়া না ছাড়তে
পারো তাহলে তো আমারই শিখতে হবে। .
-আচ্ছা তুমি সবসময় এমন বোবার মতো থাকো
কেন?অবশ্য ছেলেদের এটাই থাকা দরকার কিন্তু
তুমি একটু বেশিই। -হুম,অনেকেই বলে।
-অনেকে মানে?
-মানে বন্ধুরা আর কি।
-ঠিকই বলে।
-হু।
.
ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিলাম।আজকের
দিনটার কথা ভাবছি,সব কিছু যেনো স্বপ্ন থেকেই
পেয়ে গেলাম।ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে মোবাইলটা
বাজতে শুরু করলো।
-হ্যালো!
-কি করছো?
-এইতো শুয়ে আছি।
-রাতের খাবার খেয়েছো? -না।একটু পর খাবো। –
আচ্ছা,খেয়ে নিও।
-হুম।
-তাহলে আজকের মতো রাখি।
-হুম রাখো।
-আচ্ছা রাখছি।
-শুনো?
-হ্যা বলো?
-ভালবেসে ফেলেছি।
-অনেক পরে।
-বাসবে না ভালো?
-না।অনেক মিস করবো।
-মিস করলে কি হবে?
-ভুলতে পারবে না।
-এমনিতেও ভুলতে পারবো না। -সত্যি তো?
-হুম।
-বাসবো অনেক।
-হারাতে দেবো না।
-জানি তো।
-শুনো?
-তোমায় যেনো স্বপ্নে থেকেই পেয়ে
গেলাম।
-কিভাবে পেলে,আমার জানামতে তুমি তো স্বপ্ন
দেখো না।
-হুম।তবে বাস্তবটাই স্বপ্ন মনে হচ্ছে। -যাই
হোক,কাল অপেক্ষা করবো।একসাথে কলেজ
যাবো।
.
সিগারেট হাতে নিতে ইচ্ছে করছে না,কিন্তু কেন
ইচ্ছে করছে না সেটাও বুঝতে পারছি না। ইচ্ছা না
থাকা সত্ত্বেও ভাবনায় হারিয়ে যেতে ইচ্ছে
করছে।ভাবতেই কিছুটা অবাক হচ্ছি যে এখন
থেকে স্বপ দেখতে হবে।তাও আবার একটা
জগৎসংসার পাওয়ার স্বপ্ন
(সমাপ্ত)
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com