Breaking News

গল্পঃফিরে পাওয়া

বাস থেক নেমে এসে সোজা হাইস্কুলের লাইব্রেরীটাতে ঢুকলাম।
যেই লাইব্ররেরীর প্রত্যেকটা বই এবং প্রত্যেকটা চেয়ার জুড়ে রয়েছে আমাদের অনেক স্মৃতি।
কেউ একজন অপর পাশ করে পত্রিকা পড়ছিলো।ওনার পত্রিকা পড়ার এই ধরণ টা দেখে আমার আনিকার কথা মনে পড়ে গেল। আনিকা আমার ক্লাসমেট ছিল।দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসতাম। তবে মুখফুটে বলা হয়নি কোনোদিন।সেই সময়গুলোর কথা মনে আসলে হাসি পায় আমার।আনিকা পত্রিকা পড়তে ভালোবাসতো।এমন কোনো দিন থাকতো না যেদিন আনিকা পত্রিকা পড়তোনা।আমাদের ক্লাস শুরু হতো ১০ টায়। আর আমি সবার আগে স্কুলে চলে আসতাম। এসেই লাইব্রেরীতে ঢুকতাম।সেদিনের পত্রিকাটা হাতে নিয়ে সেখানে সুন্দরভাবে আমার নাম লিখে দিতাম। এই আশায়,,,,, আনিকা পত্রিকাটা পড়বে আমার নামটা দেখবে,অন্যরকম ভালোবাসা ছিল আমাদের মাঝে।তবে মেয়েটা অনেক জেদি ছিল, নিজে যেটা বলবে সেটাই হতে হবে।তবুও মেয়েটাকে অনেক বেশি ভালোবাসতাম মেয়েটাকে। ক্লাসের সবাই জানতো আমরা একজন অন্যজনকে ভালোবাসি। বিপত্তি টা ঘটলো আমাদের বিদায় অনুষ্ঠানের সময়। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে লাইব্রেরীতে আড্ডা দিচ্ছিলাম, হঠাত জুনিওর একটা মেয়ে আসলো হাতে একটা ফুল নিয়ে সম্ভবত মেয়েটা ক্লাস নাইনে ছিল।ফুলটা আমার হাতে দিয়ে সুন্দর করে বলে দিল I Love U…আমি মৃদু হেসে উঠলাম। মনে মনে ভাবছিলাম মেয়েটাকে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বলবো, এই ভেবে একহাতে ফুলটা হাতে নিলাম অন্যহাত মেয়েটার মাথায় দিলাম, হঠাত দেখলাম আনিকা লাইব্রেরীর দরজায় দাড়িয়ে সবকিছু দেখছে । আমার চোখাচোখি হওয়ার সাথে সাথে সেখান থেকে সরে যাচ্ছিলো। আমি দৌড়ে লাব্রেরী থেকে বের হয়ে আনিকার পিছু নিলাম,আর তাকে ডাকতে লাগলাম কিন্তু সে উত্তর দিচ্ছিলোনা। এক পর্যায়ে আমি তার হাত ধরে ফেললাম, সাথে সাথে সে আমার গালে চড় বসিয়ে দিল এবং বলতে লাগলো,

=স্পর্শ করবিনা আমায়, আমি জানতাম না যে, তোর চরিত্র এত খারাপ, তোকে ভালোবাসাটাই ভুল হয়েছে আমার।
=আসলে ওইসব কিছুই না, আমি জাস্ট………
আমাকে বলার সুযোগ না দিয়েই সে চলে গেল।এরপর কোনোভাবেই তাকে সত্যটা বলার সুযোগ পাইনি।অনেকবার তার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম, উত্তরে সে বললো সে আমার মুখ ও দেখতে চায়না।
আমিও চলে এলাম গ্রাম ছেড়ে, এর পর থেকে তার সাথে সেকেন্ডের জন্যেও দেখা হয়নি।
আজ প্রায় তিন বছর পর গ্রামে এলাম। আজ আমাদের ব্যচটার পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান।
লাইব্রেরীর দরজায় দাড়িয়ে এতক্ষন কথাগুলো ভাবছিলাম। পেছন থেকে কেউ একজন থেকে কেউ একজন ধাক্কা দিয়ে উঠলো, তাকিয়ে দেখি শুভ। শুভ হাইস্কুলে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটি ছিল। এই তিনটি বছর তাকে ছাড়া কিভাবে যে কাটিয়েছি আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা।
শুভকে জড়ি ধরলাম। সে বলে উঠলো ,
=কিরে স্বার্থপর? কেমন আছিস?আমাদের ছাড়াতো খুব ভালোই কাটছে বোধহয়!
=নারে একদম না।সবাই এসেছে?
=হা। তোর জন্যেই ওয়েট করছিলাম।
=চল।

কারো সাথে দেখা না করেই সোজা স্টেজে উঠে গেলাম। হাইস্কুলে যেই গুনটার জন্যে সবার কাছে পরিচিত ছিলাম সেটা হলো, খুব ভালো গাইতাম আমি।
আর স্টেজে উঠেই পিরান খানের তুমি চাইলে গানটা গাওয়া শুরু করলাম,
তুমি চাইলে ঠিকি পারতে,
ছায়া হয়ে পাশে থাকতে।
তুমি পাগল এই আমি টাকে,
বুকে জড়িয়ে রাখতে।
গান শেসে সবাই মোটামোটি হাততালি দিচ্ছিলো। পেছনের সারির একজনের উপর নজর পড়লো আমার, যে কিনা সেখান থেকে উঠে চলে যাচ্ছিল। খুব পরিচিত মুখ আমার। হা ঠিক ধরেছেন সে আনিকাই ছিল। সবার সাথে মোটামোটি দেখা হয়ে গেল। আমি আবার ফিরে গেলাম লাইব্রেরীতে।

এবারো কেউ একজন বসে আছে পত্রিকা হাতে নিয়ে। নাহ এখন আর পত্রিকা পড়ছেনা। মনে হচ্ছে নিজের কান্না আটকানোর চেস্টা করছে।
তার না তাকিয়েই আমি বলে উঠলাম,
আগের মতোই রয়ে গেছিস,একটুও বদলাসনি।অনেক পারিস তুই।
=আর তুই? একটুও যোগাযোগ রাখার চেস্টা করিসনি।
=কার সাথে রাখবো যোগাযোগ? যার কাছে আমার কোনো মুল্য নেই তার সাথে?
=ক্ষমা করে দিস আমার।
=ব্যর্থতা তো আমার ছিল। কোনোভাবেই বুঝাতে পারিনি তোকে ব্যপারটা।
=একদম মনে আনবিনা পুরনো কথা
এই বলে আনিকা জড়িয়ে ধরলো আমায়।আর শুরু হলো আরেকটি ভালোবাসার গল্প।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com