Breaking News

গল্প : চুমো খেয়ে প্রেগন্যান্ট

তখন আমার বয়স উনিশ বা বিশ। নাকের নিচে কালচে গোঁফের রেখা সবে স্পষ্টতর হতে শুরু করেছে।
ওসময় নতুন নতুন প্রেম হয়েছে আমার। প্রেমিকা ক্লাস নাইনে পড়ে, নাম মিম।
পরী'র মতন ফুটফুটে প্রেমিকা আমার, ফুলের মতন নিষ্পাপ!
আমাদের দু'জনার মনেই অফুরান আনন্দ। প্রায়শই ঘুরতে যাই এদিক সেদিক...সাগরের
পাড়ে,রেস্টুরেন্টে কিংবা পার্কে।
আমাদের মধ্যে খুনসুটি চলে,গল্প চলে,আহ্লাদ
চলে...মাঝেমাঝে মারামারিও চলে! ওর ভয়ে আমি
চুলে কদম ছাঁট দিয়ে রাখি,যেন মুঠো ভরে চুল ধরতে না পারে!
সে আগে ছোলামুড়ি,ফুচকা এ জাতীয় সস্তা
স্ট্রীটফুড খুব একটা পছন্দ করতো না। তার বাসায়
রাস্তার এসব ভাজাপোড়া জাঙ্ক ফুড নিষিদ্ধ। আমার সাথে ঘুরে ঘুরে সে ডালপুরী,ভেলপুরী
,আলুপুরী,ফুচকা ইত্যকার খাবার খাওয়া শিখেছে।
একদিন খুব বৃষ্টি ছিলো। আমরা রতন মামা'র
দোকানে ফুচকা খাচ্ছিলাম। মামা'কে বললাম শুকনো
মরিচের গুঁড়ো বাড়িয়ে দিতে, বৃষ্টির দিনে ঝাল ছাড়া জমে না।
আমরা দু'জনে মিলে পাঁচ প্লেট ফুচকা খেলাম
প্রচণ্ড ঝাল দিয়ে। তখন আমাদের চোখে পানি আর মুখে হাসি!
খাওয়া শেষে ফেরার জন্য রিকশা নিলাম। তখনও
প্রচণ্ডরকমভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। সামনে প্লাস্টিকের
পর্দা ভেদ করে যেন আমরা দু'জন ভিজছি।
মিম'কে টকটকে লাল জামা'তে অসাধারণ
লাগছে। বৃষ্টি'র পানি'তে তার সারা শরীর ভিজে
চুপচুপে হয়ে গিয়েছে। তার ফর্সা মুখখানি
অনেকক্ষণ ধরে ভিজে ভিজে আরও ফর্সা হয়ে
উঠেছে, গোলাপী ঠোঁট হয়ে উঠেছে লাল...
তাকিয়ে থাকতে থাকতে বেশীক্ষণ সংবরণ
করতে পারলাম না আর দু'জনের কেওই। একে
অন্যকে জড়িয়ে ধরে গভীর আবেগে চুম্বন
এঁকে দিলাম পরষ্পরের ওষ্ঠে; দীর্ঘ সময় ধরে।
সে বা আমি- কেওই এর আগে কাওকে চুমো
খাইনি; সেবারই প্রথম। সে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা আমাদের দু'জনের জন্যই।
চুমো খাবার পর থেকে আমরা কেও কারও দিকে
লজ্জায় তাকাতে পারছি না, কথাও বলছিনা।
মিম এর বাসা'র কাছাকাছি আসলে সে অন্যদিকে
তাকিয়ে বললো "আমি এখানে নামবো"...
রিকশা থামলো, নেমে গেলো মিম।
রিকশা চলা শুরু করার পর হুডের ফাঁক দিয়ে দেখি মিটমিট করে হাসছে সে!
বাসায় ফিরলাম, গোসল করলাম, কাপড় পাল্টালাম।
বেডরুমে ফিরে দেখি আমার ফোনে
অনেকগুলো মিসড কল; মিম।
আমি হন্তদন্ত হয়ে মা'র চোখ এড়িয়ে ছাতা নিয়ে
বের হয়ে গেলাম কথা বলার জন্য। মিমে'র
নাম্বারে ডায়াল করার পর একবার বীপ হতে না
হতেই সে রিসিভ করে হাউমাউ করে কান্না শুরু করলো।
ওরেব্বাস! ব্যাপারখানা কি?
-কি হয়েছে বাবু, কাঁদছো কেন?
-ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া...
-আরে বাপ, কথা তো বল...কি হয়েছে?
- আমার মনে হয়...আমার মনে হয়...
-কি মনে হয়?
- আমার মনে হয় আমি মা হতে চলেছি, আমার
অনেক পেট ব্যথা...আর বমি'ও হয়েছে একবার...
- লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লাবিল্লাহ! (মনে মনে)
কি, কি হতে চলেছো?
- মা হতে চলেছি, মা মা মা...
-মানে কি, তুমি হঠাৎ মা হতে যাবে কেন?
- কেন? আজকে রিকশায় কি করেছো মনে
নেই? বদমাশ! আমার জীবন শেষ করে দিলে...
-রিকশায় আবার কি করলাম, চুমো'ই তো খেয়েছি...
-চুমো খেলে বাচ্চা হয় জানোনা? সিনেমায় তো
দেখায় যে নায়ক নায়িকাকে চুমো খায়, বৃষ্টি হয়, বাজ
পড়ে আর নায়িকা'র পেটে বাচ্চা চলে আসে...
- আরে ধুর! ওসব তো সিনেমা...আমরা তো
ওরকম কিছু করি নি...
- ওরকম কিছু করোনি মানে? আমাকে চুমো দাওনি
তুমি?
- ইয়ে মানে হ্যাঁ, তার মানে এই না যে চুমো খাবার
দুই ঘন্টার মধ্যে তোমার পেটে বাচ্চা চলে
আসবে...
- শাট আপ! কোন কথা বলবা না...আমি মা হতে
চলেছি, আই এম প্রেগন্যান্ট। তুমি এই বাচ্চার বাবা...
- ও ভাভাঘো...
-কি বললে তুমি?
-নাহ কিছু না, পায়ে পিঁপড়া কামড় দিলো
-শোন, এখন কি করবো?
-কি করবে মানে?
-বাচ্চা নিয়ে কি করবো?
আচ্ছা শোন, তুমি ফার্মেসী থেকে আমার জন্য
ঔষধ নিয়ে আসবা। ওইযে টিভিতে
দেখায়,ফেমিকন- ওটা।
- তুমি কি আসলেই মনে কর যে আমার চুমো
খেয়ে তুমি প্রেগন্যান্ট হয়ে গিয়েছো?
- চোপ আহাম্মক। যা বলেছি,তাই কর...!
যা শালা, ভালো বিপদে পড়লাম তো! এখন
মিমকে কিভাবে বাচ্চা হয়, কি কি কাজ করলে
কেও গর্ভবর্তী হয়, এসব বোঝাতে গেলে
তুলকালাম বেঁধে যাবে। মনে মনে গাল দিলাম
"বালের আর্টসের স্টুডেন্ট"...
যা বুঝলাম, রতন মামা'র অতিরিক্ত ঝাল দেয়া ফুচকা
খেয়ে বদহজম বা এসিডিটি হয়েছে...
আমি আবার ফোন করলাম মিমকে। ফোন
ধরলো একটু পরেই।
-হ্যালো
-ফেমিকন কিনেছো?
-ইয়ে হ্যাঁ, এইতো বৃষ্টি একটু কমে যাক, তারপর
যাচ্ছি।
-এখনও যাওনি? আধাঘন্টা হয়ে গেলো...
-একটি কথা জানতে চাইছিলাম।
- কি?
- মানে তুমি কি নিশ্চিত যে চুমো খাবার পর তোমার
পেটে আমার বাচ্চা চলে গিয়েছে? ফুচকা খেয়ে
পেট খারাপ করেনি তো?
- কি? ফাজলামী কর আমার সাথে? আমি মেয়ে, আমি
বুঝি কোনটা পেট খারাপ আর কোনটা বাচ্চা...আমার
পেটে নড়াচড়া করছে ওটা, একটু পর পর গুঁতোও
দিচ্ছে, গুড় গুড় করে ডাকছে। তুমি জলদি ঔষধ
নিয়ে এসো।
বুঝলাম যে একে কোনকিছু বলেই মানানো যাবে
না। অগত্যা ফার্মেসীতে গেলাম। গিয়ে এক পাতা
সিপ্রোসিন, এক পাতা ফিলমেট আর এক পাতা
ওমিপ্রাজল কিনে মিম এর বাড়ী'র পাশে গেলাম।
ঔষধগুলো পলিথিনে ভালো করে মুড়ে
দেয়ালের ওপারে ছুঁড়ে দিয়ে মিমকে
ফোনে জানালাম। সে তারপর ঔষধ নিয়ে গেলো ভেতর থেকে এসে।
ফোন করলাম আবার।
-ঔষধের প্যাকেট পেয়েছো?
-হ্যাঁ পেয়েছি। কিন্তু তিন রকম ঔষধ কেন?
ফেমিকন তো এক প্যাকেটে থাকে...
-ফার্মেসী'র ডাক্তার বললো ফেমিকন শুধুমাত্র
বিবাহিতদের জন্য। ক্লাস নাইনের মেয়েদের বাচ্চা হলে এই তিনটি ঔষধ খেতে হয়।
- তো কিভাবে খাবো?
- দিনে দু'বার করে খাওয়ার দশ মিনিট আগে তিনটি
ট্যাবলেট একসাথে খাবে, টানা সাত দিন।
- সাত দিন???
- হ্যাঁ। আর শোন, একদিন খেলেই হয়তো
দেখবে ব্যাথা চলে গিয়েছে, বমিভাব কেটে
গিয়েছে, তখন আবার ঔষধ খাওয়া বন্ধ করোনা। টানা
সাত দিনই খাবে।
- আচ্ছা বাবু...
- নিকুচি করেছি তোর বাবু'র... (মনে মনে!)
এর দুই দিন পর আবার আমাদের ফোনে কথা
হচ্ছেঃ-
- হ্যালো মিম, কি খবর?
- ভালো বাবু!
- ব্যাথা,বমি আছে?
- না বাবু নেই। বাচ্চাটি মনে হয় চলে গিয়েছে...
- কিভাবে বুঝলে যে চলে গিয়েছে?
- ঔষধগুলো খাওয়ার পর একবার টয়লেট
হলো...তারপর ব্যথা আর বমি চলে গেলো...
- তুমি বলতে চাইছো যে পায়খানার সাথে বাচ্চা বের
হয়ে গিয়েছে?
- হ্যাঁ। আমি অনুভব করেছি। এর পর থেকে পেটে
গুড়গুড় আওয়াজ হয়না আর, বমি হয়না, পেটে ব্যথা
হয়না...
- গুড,ভেরী গুড! যাই হোক, ঔষধ চালিয়ে যেও...
-আচ্ছা
পরেরদিন মিম'র সাথে আবার কথা হচ্ছে
ফোনেঃ-
-হ্যালো
-হ্যালো...
-একি, আবার কাঁদছো কেন? বাচ্চা তো চলে গিয়েছে পায়খানা'র সাথে...
-আমার না মায়া হচ্ছে খুব, কান্না পাচ্ছে...
- কেন? আবার কি?
- তোমার আর আমার বাবুটা'র জন্য কান্না পাচ্ছে।
আমরা তো চাইলে বাচ্চাটি রেখে দিতে পারতাম!
- হুমম (কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম!)
-আব্বু আম্মু মেনে নিতো না যদিও...আমরা চাইলে
আলাদা বাসা নিয়ে সংসার করতে পারতাম...
-হুমম...
-কি হুম হুম শুরু করলে? আমি সেলাই কাজ করতাম আর
তুমি রিকশা চালাতে, আমাদের সংসার চলে
যেতো...আমরা আমাদের বাচ্চাকে অনেক আদর
দিয়ে বড় করতাম, সে বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার
হতো...বল,পারতাম না আমরা?
-হুম পারতাম।
-তাহলে বাচ্চাটি মারলে কেন?
-মানে? তুমিই তো বললে ঔষধ আনতে...
-আমি বললেই শুনতে হবে? ইউ ব্লাডি মার্ডারার...
- লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লাবিল্লাহ... (বিড়বিড় করে!)
- কি বললে তুমি?
- নাহ মানে আমারও না একটু পেট ব্যাথা শুরু
হয়েছে। মনে হয় আমিও প্রেগন্যান্ট হয়ে
গিয়েছি...চুমো খেয়ে শুধু তোমার না, আমার
পেটেও বাচ্চা এসেছে।
-ওয়াও! তা আমার তো সেদিনই হলো,তোমার
এতোদিন পর কেন?
- আমি ছেলে তো,তাই আমার পেটে তোমার
চেয়ে একটু পরে বাচ্চা এসেছে। ডোন্ট ওরি,
এই বাচ্চা রেখে দেবো। আমরা বাসা নেবো। তুমি
সেলাই কাজ করবে আর আমি রিকশা চালাবো...
- এ তো আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ!

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com