Breaking News

গল্পঃ ভালোবাসা অবিরাম

তিলো: কাব্য হচ্ছে নাতো ঠিক করে ছবি গুলো তুল
আমি: আর পারবো না, আমি গেলাম।
তিলো: এই দাঁড়া বলছি, ফটোগ্রাফার হয়েছিস কেন হু শুধু অন্যদের বিয়ের সুন্দর মুহূর্ত গুলো ফ্রেমবন্ধি করার জন্য? আমি না তোর বন্ধু তাহলে এমন করছিস কেন? আমার বিয়ে কোথায় তুই সুন্দর মুহূর্ত গুলোর ছবি তুলে রাখবি তা না উল্টো…
আমি: ওকে তুলছি, বল আর কি কি ছবি তুলতে হবে।
তিলো: আমার মেহেন্দির ছবি তো তুলে ফেলেছিস এখন গায়ে হলুদ আর বিয়ের ছবি তুলে রাখবি তুই। বুঝতেই তো পারছিস বিয়ে বলে কথা। এই ছবি গুলোই তো স্মৃতি হয়ে থাকবে।
আমি: হুম বুঝতে পারছি ভালো করে, দাঁড়া আমি দু মিনিটের মধ্যে আসছি।
তিলো: কাব্য কোথায় যাচ্ছিস? কাব্য এই কাব্য…
তিলোর ডাকে সাড়া না দিয়ে দৌড়ে বাগানে চলে আসলাম। খুব অস্থির লাগছে তাড়াতাড়ি একটা সিগারেট ধরালাম। আগামীকাল তিলোর বিয়ে, পুরো বাড়ি জুড়ে আলোর ছড়াছড়ি, মেহমানের আনাগোনা তবুও আমার কিছু ভালো লাগছে না, অস্থির অস্থির লাগছে সবকিছু, বড্ড একা লাগছে নিজেকে।
তিলো আমার চাচাতো বোন আবার বন্ধুও বটে। সমবয়সী হওয়াতে দুজন একসাথে বড় হয়েছি একসাথে পড়াশোনা করেছি আবার একসাথে মারপিটও করেছি। একদিন ক্যাম্পাস থেকে ফেরার পথে এক ছেলে তিলোকে খারাপ কথা বলেছিল, ব্যাস দুজন মিলে ছেলেটাকে রাস্তায় ফেলে কেলিয়েছিলাম। আর একদিন তো এক মেয়ে আমাকে প্রপোজ করার জন্য আমার সামনে গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়েছিল, আমার তো বেশ লাগছিল কিন্তু তিলো পাগলীটা কোথা থেকে যেন এই দৃশ্য দেখে ফেলেছিল। ব্যাস দৌড়ে এসে মেয়েটিকে পিছন থেকে চুলের মুঠি ধরে দফাশ করে মাটিতে ফেলে দিয়ে কি কেলানিটাই না দিয়েছিল। আজ এসব স্মৃতি গুলো মনে পড়ছে খুব। তিলো পাগলীর বিয়ে হয়ে গেলে খুব মিস করবো ওকে।
পাশে রাখা ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে তিলোর মেহেন্দির ছবিগুলো দেখতে লাগলাম। মেহেদি রঙের শাড়িটায় বেশ মানিয়েছে তিলোকে। দুহাত ভর্তি মেহেদি সাথে তিলোর মায়াবী মুখে এক ছলক মিষ্টি হাসি সত্যি মন কেড়ে নেওয়ার মতো একটি ছবি। আর তিলোর হাব্বিটা তো খুব ভাগ্যবান, এমন মিষ্টি একটা বউ পাবে।
ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো, পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই স্কিনে ভেসে উঠলো “তিলো পাগলী” মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করলাম।
তিলো: ওই হারামী কই তুই? তোর কি আমার সাথে এতোই শত্রুতা যে আমার একমাত্র বিয়ের সুন্দর মুহূর্ত গুলোর ছবি না তুলে আমাকে কষ্ট দিচ্ছিস।
আমি: বিয়ে আবার একমাত্র হয় নাকি?
তিলো: তো বিয়ে কি কয়েকবার হয় নাকি? একবারই তো হয়। জলদি আয় আমার গায়ে হলুদ শুরু হয়ে গেছে।
আমি: আসছি।
সবাই তিলোকে হলুদ লাগানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ও কিছুতেই হলুদ মাখতে চাইছে না, ওর দুচোখ কাকে যেন পাগলের মতো খুঁজছে।
তিলো: ওই তো হারামিটা চলে এসেছে। এই কাব্য এদিকে আয় বলছি।
আমি: কি বল।
তিলো: আমি চাই আমার গালে হলুদের স্পর্শটা প্রথম তোর হাত দিয়ে লাগুগ।
আমি: মানে কি?
চাঁচি: তিলোত্তমা এসব কি বলছিস?
তিলো: আমি যখন বলেছি তখন কাব্য’ই লাগাবে প্রথম হলুদ।
আমি: ওকে ওকে দিচ্ছি তোকে হলুদ লাগিয়ে।
একটুখানি হলুদ হাতে নিয়ে তিলোর গালে স্পর্শ করতেই ও চোখ দুটু বন্ধ করে ফেললো সাথে মুখে মিষ্টি হাসি, আজব তো।
আমি: এই তিলো কি হয়েছে হলুদ তো গালে লাগিয়েছি তুই চোখ বন্ধ করলি কেন?
তিলো: ও তুই বুঝবি না।
আমি: তুই বুঝতে থাক আমি ছবি তুলছি।
তিলো: আমার হাতের ছবি তুল এইযে এই জায়গাটা। (তিলো ওর হবু বর এর নামটা দেখিয়ে দিলো, কেন যেন সামির নামটা দেখেই বুকের ভিতর ছ্যাদ করে উঠলো। পারলাম না ছবি তুলতে, ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি সরে গেলাম তিলোর সামনে থেকে)
রাত প্রায় তিনটা বাজে, ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছন ফিরে তাকালাম, একটা হলুদ পরী এসেছে। মুগ্ধ নয়নে দেখছি তিলোকে, ওকে হলুদ শাড়ি আর হলুদ ফুলের গহনায় ঠিক একটা হলুদ পরীর মতোই লাগছে।
তিলো: কিরে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেন?
আমি: রাতের আধারে পেত্নী দেখছি।
তিলো: (মৃদু হাসলো)
আমি: হাসছিস কেন পেত্নী বললাম রাগ করবি না?
তিলো: উঁহু আজ আর রাগ করবো না কারণ আজ আমি তোকে কিছু কথা বলতে এসেছি।
আমি: আমার সময় নেই।
তিলো: কাব্য প্লিজ একটু সিরিয়াস হয়ে কথাগুলো শুন।
আমি: ওকে ওকে বল।
তিলো: কাব্য তুই কি কিছুই বুঝিস না? এতোটাই অবুঝ তুই?
আমি: আজব তো কি বুঝবো আমি?
তিলো: আমার মন কি চায় তা কি তুই সত্যি বুঝিস না?
আমি: তোর যখন যা প্রয়োজন হয়েছে তাতো তুই আমাকে বলেছিস তাহলে আ…
তিলো: সব কথা বলিনি কাব্য, সব কথা বলা যায় না।
আমি: না বললে আমি বুঝবো কিভাবে?
তিলো: কাব্য এই মেহেন্দি গায়ে হলুদ সবকিছুতে তোকে আমি ছবি তুলতে বলেছি কতোটা অভিমান নিয়ে বলেছি সেটা কি তুই এতটুকুও বুঝতে পারিসনি?
আমি: তুই আবার অভিমানী হলি কবে থেকে?
তিলো: প্লিজ কাব্য হাসিস না একটু সিরিয়াস হ প্লিজ।
আমি: তিলো পাগলী তুই কাঁদছিস?
তিলো: কাঁদবো নাতো কি করবো? আমার সবকিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে যে…
আমি: মানে?
তিলো: তুই কখনো আমাকে বুঝিসনি আর হয়তো বুঝবিও না, যদিও বুঝিস সেটা আমাকে হারানোর পর বুঝবি।
আমি: তিলো দাঁড়া কোথায় যাচ্ছিস?
দ্যাত চলে গেল কিন্তু কি বলে গেল এসব? তিলো পাগলী আমাকে কিছু বুঝাতে চাইছিল কিন্তু কি বুঝাতে চাইছে আমি বুঝতে পারছি না কেন?
“বর এসেছে বর এসেছে” বাগানের কাছে বসে ঝিমুচ্ছিলাম সবার চেঁচামেচিতে হকচকিয়ে উঠে তাড়াতাড়ি স্টেজের কাছে আসলাম। সামিরকে তিলোর বর সাজে দেখে কেমন যেন হিংসে হচ্ছে, উফফফ সবকিছু এতো অসহ্য লাগছে কেন?
ভাবি: কাব্য এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে হবে? তিলোত্তমার সাজগোজ তো শেষ, ছবি তুলতে হবে না?
আমি: আসছি।
ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে তিলোর রুমে এসে ঢুকলাম, সবার হুড়োহুড়িতে তিলোকে দেখতেই পাচ্ছি না। হঠাৎ একটি মেয়ে সরে যেতেই তিলোকে দেখতে পেলাম। লাল টুকটুকে বেনারসিতে খুব সুন্দর লাগছে পাগলীটাকে, কিন্তু পাগলীর মুখটা এতো বিষাদময় কেন? ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসিও নেই।
ভাবি: ওহ কাব্য এসেছিস এদিকে আয় ঝটপট তিলোর কিছু ছবি তুলে নে।
আমি: হুম।
কাব্য: তিলো মাথাটা একটু তুলে এদিকে তাকা।
তিলো: (নিশ্চুপ)
আমি: তিলো…(ওর তুথুনি ধরে আমার দিকে ফিরাতেই তিলো হুহু করে কেঁদে দিলো)
আমি: তিলো কি হয়েছে বল আমাকে।
তিলো: তোকে বলে কি হবে তুই তো আমার মনের কথা বুঝিসনা। (তিলো আমাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কাঁদছে। নাহ ওর কাছে আর থাকা যাবে না, এখানে থাকলে আমার চোখেও পানি চলে আসবে আর আমি একবার কেঁদে ফেললে তিলোকে আর থামানো যাবে না। তিলোকে ছাড়িয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসলাম)
তিলোর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেন তবে কি আমি তিলোকে ভালোবাসি? তিলোই বা এভাবে কাঁদছিল কেন তাহলে কি তিলোও আমাকে ভালোবাসে? দুজন দুজনকে এতো ভালোবাসি কিন্তু একবারের জন্যও বুঝতে পারিনি। তিলো আমাকে অনেক বার বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু আমি এতোটাই বোকা যে কিছুই বুঝিনি, বুঝবোই বা কি করে আমি তো কখনো সিরিয়াসই ছিলাম না। কিন্তু এখন কি করবো? যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে সময় যে খুব কম…
রাত বারোটা বাজে আস্তে আস্তে দরজা খুলে রুমের ভিতরে ঢুকলাম। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে খাটের মাঝখানে লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে থাকা তিলো পাগলী একটু নড়েচড়ে বসলো। কোনো কথা না বলে পাগড়ীটা খুলে নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। তিলো ঘোমটা না সরিয়েই কথা বলা শুরু করলো।
তিলো: সামির শুনোন আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাইনি নিরুপায় হয়ে বিয়েটা করেছি। আমি একটা হাবলাকে ভালোবাসি কিন্তু ওকে কখনো সেটা বুঝাতে পারিনি আর তাই পরিবারের কথামতো বিয়েটা করেছি। আমি না হাবলাটাকে ছাড়া একদম ভালো থাকতে পারবো না।
তিলো হুহু করে কেঁদে দিলো, নাহ আর চুপ হয়ে থাকতে পারবো না। আস্তে আস্তে এসে তিলোর পাশে বসলাম, ওর হাতের উপর আমার হাত রাখতেই এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিলো।
আমি: সরিয়ে নিলি তো, আজ তো বাসররাত দেখিস এই রাতে তোকে একবারো ছুঁয়েও দেখবো না।

তিলো: কাব্য তুই? (ঘোমটা সরিয়ে তিলো আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে)
আমি: ওহ তুই সামিরকে চাইছিলি দাঁড়া আমি ওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
তিলো: এই একদম চুপ হয়ে বস এখানে।
আমি: বসলাম।
তিলো: এবার বল সামিরের জায়গায় তুই কি করে?
আমি: দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছি পেত্নীটা যে আমাকে ভালোবাসে।
তিলো: কিন্তু…
আমি: ওইতো তুই কবুল বলার দু মিনিট আগে সামিরকে বুঝিয়ে ছাদে নিয়ে গেলাম, আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি সামিরকে এইটা বুঝিয়ে বললাম। সামির ছেলেটা বড্ড ভালো বুঝলি তাইতো সবকিছু মেনে নিলো। ব্যাস সামিরের পাগড়ীটা আমার মাথায় পড়ে স্টেজে বসে পড়লাম তোকে বিয়ে করার জন্য।
তিলো: কেউ কিছু বলেনি?

আমি: কে কি বলবে কাব্য ওর তিলো পাগলীকে বিয়ে করবে এতে কারো কিছু বলার সাহস আছে নাকি বরং সবাই খুব খুশি হয়েছে তাইতো কেউ তোকে কিছু বলেনি।
তিলো: আর আমি তোকে হারানোর কষ্টে এতোক্ষণ ধরে বসে বসে কাঁদছি।
আমি: আহালে।
তিলো: হু। (তিলো আহ্লাদ করে আমার বুকে মাথা রাখলো, শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম ওকে)
তিলো: ভালোবাসি।
আমি: আমিও ভালোবাসি তিলো পাগলী।

সমাপ্ত

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com