Breaking News

গল্পঃ ফিরে পাবার অনুভুতি

রেবা বউ হয়ে এসেছে রিফাতের ঘরে তা কয়েকবছর হলো।
যদিও সে রিফাতের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিল এসেই সে ঘর সংসার অার অাগের মরে যাওয়া বউয়ের রেখে যাওয়া মেয়ে সাত বছরের মেয়ে সুমিকে পেয়েছিল।
.
রেবা রিফাত দুজনেই চাকরি করতো কিন্তু রেবা বিয়ের পর সতিনের মেয়ে হিসাবে মনে মনে হিংসা করলেও ভালোবাসতো।
মেয়েটা যখন মা মা বলে ডাকতো তখন অসহ্য রাগ উঠতো তার।
যদিও সে জানতো সতিনের মেয়ে কখনো নিজের মেয়ে হয়না।
.
নতুন বউ পেয়ে রিফাত মেয়ের কথা প্রায় ভুলেই গেল।রেবা যা বলতো রিফাত ও তাই করতো। সুমি বড় একা অার অসহায় হয়ে পড়লো সংসারের সব কাজ এ বয়সেই রেবা চাপিয়ে দেয় সুমির উপরে।সুমি লেখাপড়া অার সংসারের কাজ করে তার শিশুসুলভ সত্ত্বা হারিয়ে গেছে।
.
দু বছর পরই রেবার কোল অালোকিত করে এলো একটা পুত্র সন্তান। রেবা রিফাত খুবই খুশি।
কিন্তু দায়িত্ব বেড়ে গেল সুমির ভাইকে গোসল করানো খাওয়ানো অফিস টাইমে তাকে সামলানো।সুমির স্কুল যাওয়া অফ হয়ে গেল।
কিন্তু সেদিকে রিফাতের কোনো নজর রইলো না।
রেবা অফিস বাড়ি সব মিলিয়ে শত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দিতো তার একমাত্র ছেলেকে।সন্ধ্যায় তাকে পড়তেও বসাত।
সব মিলিয়ে সৎ মা কি হাড়েহাড়ে সেটা সুমিকে বুঝাত।সকালের চা বানানো হতে শুরু করে রাতের খাবার পর্যন্ত সবই সুমিকে করতে হতো।তবুও কোনোদিন সুমি মুখ ফুটে কখনো বাবা বা তার মা রেবাকে কিছুই বলতো না।
কিন্তু রাতে সে ঠিকই কাদঁতো যেদিন মা বলেছিল রেবা তোর অার স্কুলে যাবার দরকার নাই বাড়িতে থাকবি অার তোর ভাইটাকে সামলাবি।বাবাও সায় দিয়েছিল তাতে চাইলেই তো বাবা বলতে পারতো সুমি স্কুলে যাবে।
.
কিন্তু বাবা বলেনি তাই রেবাও অার কারোকাছে কোনোকিছু বলেনা।সে তার মায়ের কাছে ফিরে যেতে চায়।মনে মনে সে সবসময় সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল।শিশু সুমি সংসারের কাজ অার ভাইয়ের দেখাশোনা অার ঘরের মধ্যেই তার সীমাবদ্ধতার বিচরণ।
মানিসক ভাবে বিপর্যস্ত ছিল তারপর এতোটুকু বয়সেই ঘরের সব কাজ করা যা শরীরের সাথে সংকুলান ছিলো না।
.
সে অসুস্থ হয়ে পড়ে ধীরে ধীরে কিন্তু দেখার সময় রেবা বা রিফাতের কারোই ছিলনা।
একদিন রেবা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে সুমি উঠেনি এখনো সব কাজ পড়ে রয়েছে।
রেবার মেজাজ বিগড়ে গেল সুমির রুমে গিয়ে তাকে কর্কশ গলায় ডেকে তুললো।কয়েকটা থাপ্পড় মেরে বললো হারামজাদি এতো ঘুম কোথায় পাস?
সুমি অাচমকা থাপ্পড় খেয়ে টলতে টলতে উঠে দাড়ালো কিন্তু দাড়াতে পারলো না অাবার পড়ে গেল শরীরে প্রচন্ড জ্বর তার।
রেবা রাগে গজগজ করতে রিফাতের কাছে সব ঝাড়লো। রিফাত শুনলো তবে কিছুই বললোনা।
বললো চলো বাহির হতে খেয়ে অফিসে যাব দুপুরেও বাহিরে খাব।
.
রেবা রিফাত তাদের ছেলেসহ রেস্টুরেন্টে খেয়ে ছেলেকে স্কুলে দিয়ে অাসার সময় দেখতে পেলো একটা বৃদ্ধলোককে দুটো ছেলে এনে রাস্তার ধারে রেখে গেলো।
বৃধ্দলোকটি বাবা বাবা বলে ছেলেগুলোকে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু ছেলেরা ফিরেও তাকালোনা।
অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ঘটনাটা জানার জন্য অদম্য অাগ্রহ কাজ করছে রিফাতের ভিতর।রেবা বলছে দেরি হয়ে যাচ্ছে চলো রিফাত।
কিন্তু রিফাত বৃদ্ধ লোকটির কাছে এগিয়ে গেল।
কথা শুরু না করতেই রিফাত দেখলো সেখানে একটা অল্পবয়সী বিবাহিত মেয়ে এসে হাজির। সে বাবা বলে তাকে জড়িয়ে নিলো।
বুদ্ধলোকটিও কেদেঁ যাচ্ছে। একটা রিকশা খুজছে পাচ্ছিলনা। রিফাত এগিয়ে গেল মেয়েটার কাছে যা জানতে পারলো।
মেয়েটা বৃদ্ধেরই মেয়ে ছেলেদুটোও বৃদ্ধের ছেলে। মেয়েটার মা মারা গিয়েছিল তারপর বৃদ্ধ বিয়ে করে ছেলেরা বড় হওয়ার পর সেই বউটাও মারা যায়।বৃদ্ধের ছেলে অার বউয়েরা মিলে অসুস্থ বৃদ্ধকে রেখে যায় রাস্তার ধারে।
ভাগ্যিস মেয়েটা ছিলো তাই অাজ বৃদ্ধের রক্ষা হলো রিফাত একটা রিকশা ডেকে তাদেরকে তুলি দিয়ে। অারেকটা রিকশা নিয়ে দ্রুত বাসায় ফিরলো তার অসুস্থ মেয়েটাতো ঘরে।
.
সারারাস্তা তার অনুশোচনা অার নিজের প্রতি অনেক রাগ হয়।অথচ সুমির মা মারা যাবার সময় বারবার তার হাত ধরে বলেছিল সুমির যেন কখনো কোনো কষ্ট না হয়।
অথচ সেই কথা সে রাখেনি। বাসায় এসে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতে করতে সে ডাক দেয় সুমি সুমি মা।
সুমি জ্বরের ঘোরে অচেতন হয়ে মেঝেতে পড়ে রয়েছিল।বাবার ডাক শুনতে পেয়েছিল কিন্তু সাড়া দিতে পারছিলো না।
রিফাতের ভয় বেড়ে গেলো সুমি ঠিক অাছে তো দৌড়ে তার রুমে গেল দেখলে অচেতন সুমি মেঝেতে পড়ে অাছে।
রিফাত বুকের মাঝে কান নিয়ে দেখলো হৃদস্পন্দন এখনো চলছে।
তোর কিছু হবে না বলে রিফাত সুমিকে কোলে করে নিয়ে মেডিকেলে গেল।
ডক্টররা সুমিকে দেখে রিফাতকে জানালো প্রচন্ড মানসিক কষ্টে সুমির এ অবস্থা।
রিফাত জানতে চাইলো সুমি ভালো হবে তো ডক্টরেরা জানালো ভয়ের কিছুই নেই তবে তাকে পর্যাপ্ত যত্নে রাখতে হবে।
.
কয়েকঘন্টা পর সেখানে রেবা অার তার ছেলে এলো।
সুমির কাছ সে প্রথম মা ডাক শুনেছিল অথচ সে মাই হতে পারলোনা।
তবে রেবা অাজ সত্যিই অনুতপ্ত সে বাবা মেয়ের ওখানে যেতে চেয়েও যেতে পারলোনা।
কিন্তু রিফাতই বুঝতে পারলো রেবা এসেছে।
রিফাতই তাকে ডেকে নিলো।
একটু পর সুমির জ্ঞান এলো বাবাকে এভাবে ছেলেমানুষের মতো কাদঁতে দেখে সুমি অবাক হলো।
বাবা কি হয়েছে তোমার?
এবার অারো জোরে কেদেঁ দিল রিফাত সত্যিই অাজ অনুতপ্ত মেয়েকে বললো অামাকে অার তোর মাকে ক্ষমা করে দে মা।
.
সুমি তার হারানো বাবাকে ফিরে পেয়ে সত্যিই অাজ অনেক খুশি।
এ মুহূর্তে সবচেয়ে খুশি লাগছে তার মা বাবা ভাই সহ সবাইকে এতো কাছে পেয়ে।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com