গল্পঃ শেষ কান্না । লেখকঃ মোঃ গোলাম মোস্তফা
আপনি চাইলে আজকেই আমাকে নিয়ে যেতে পারেন।
মানহার কথায় আমি কিছু বললাম না।ধোয়া ওঠা চায়ে চুমুক দিয়ে আমি মেয়েটার দিকে আরও একবার তাকালাম।মলিন মুখে মেয়েটা আমার দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে।ছাদের এই কোনাটাতে দুটো চেয়ারের সাথে একটা আম গাছও আছে।মুকুলও দেখা যাচ্ছে।ছাদে এসব গাছ দেখলে খারাপ লাগে না।বেশ ভালই লাগে।কেমন যেন প্রশান্তি পাই।
.
মানহাকে দেখতে আসার কথা ছিল আরও সপ্তাহ খানেক আগে।অবশ্য তার আগেই আমি ওকে দেখেছিলাম, ছবিতে।মেয়েটার চোখে আমি সেদিন ঘোর লাগানো মায়া দেখতে পেয়েছিলাম।যেই মায়াটা থেকে আমি আজও বের হতে পারিনি।
আজ যখন মানহাকে দেখতে আসলাম তখন আমাদের সামনে বেশ কিছু খাবার দেওয়া হয়েছিল।আর সেটা মানহা নিজেই এনেছিল।মানহাকে আমার ছবিতে দেখেই বেশ ভাল লেগেছে তাই আর নতুন করে দেখার কিছু ছিল না।বাসার সবারই পছন্দ।সেই সুবাদে তারা মেয়েকে আংটি পড়িয়ে দিয়ে যেতে চায়।বিয়েটা কিছুদিন পর হবে।
মানহাকে আংটি পড়ানোর সময় মানহার বাবার মুখে হাসি থাকলেও মানহার মায়ের গোমড়া, রাগি মুখটা আমার চোখ এড়ালো না।আসলে উনি মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে মন খারাপ করে আছেন নাকি কোন কিছু নিয়ে রেগে আছেন এটাই বুঝতে পারলাম না।আমি এসব বুঝতে চাইলাম ও না।আর এই না চাওয়াতেই ওনারা আমাদের এই ছাদে পাঠিয়ে দিলেন।দুজন দুজনকে জানতে,শুনতে।
আমি মানহার দিকে তাকিয়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললাম,
-দেখি, আপনার হাতটা।
আমার কথায় মানহা আবার দিকে অবাক চোখে তাকালো।হয়তো ভাবছে এখন হাত দেখে কি করবো?নয়তো অন্য কিছু।মানহা একটু চুপ থেকে বললো,
-হাত দেখে কি হবে?
-দেখবো আংটিটা ঠিকঠাক লেগেছে কি না।
-শুধু কি এটাই?
আমি এবার মানহার দিকে একটু গিয়ে বললাম,
-নখগুলা দেখতে চাচ্ছিলাম।
-নখ!এটা দেখে কি হবে?
-দেখবো বড় কি না ছোট।মেয়েরা তো বেশ বড় বড় নখ রাখে,শেয়ালের মত।
আমার কথায় মানহা মলিন মুখে বললো,
-আপনার বড় নখ পছন্দ না?
আমি মাথা নাড়িয়ে জানান দিলাম শেয়াল দেখে আমি ভয় পাই।মানহা একটু চুপ থেকে বললো,
-আচ্ছা নখ যদি এখন ছোট করে ফেলি তাহলে কি আজকেই নিয়ে যাবেন আমাকে?বলেন না?বলেন।
মানহার কথায় আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না।আসলে এই মেয়েটা এত বিয়ে পাগল কেন সেটা বুঝে উঠতে পারছি না।ও বারবার আজকেই বিয়ের করার কথাই বা কেন বলছে!
আমি বললাম,
-হ্যা,ছোট হলে আজকেই বিয়ের ব্যপারে ভাবা যেত।
আমার কথায় মানহার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।মেয়েটা এবার চট করেই বললো,
-এখানে তো নেইল কাটার নেই আমি বরং ভেঙে ফেলি নইলে দাত দিয়ে কেটে ফেলি।
কথাটি বলেই মানহা চেয়ারের হাতার সাথে নখগুলা ভাঙার চেষ্টা করছিল কিন্তু এতে যে হিতের বিপরীত হবে এইটা হয়তো ওর মাথায় ছিল না।
আমি মানহাকে নখগুলা ভাঙতে দিলাম না,দাত দিয়েও কাটতে দিলাম না।ওর হাতটা ধরে ফেললাম।আসলে এই মেয়েটা আজকে বিয়ের জন্যে যে কোন কিছু করতে পারে।আমি মানহাকে শান্ত গলায় বললাম,
-তুমি যদি একটা সত্যি কথা বলো তাহলে আজকেই তোমাকে নিয়ে যাব।
-জ্বী বলুন।
-সবাই তো চায় বিয়েতে আয়োজন হোক,হলুদ থেকে শুরু করে বৌ ভাত।কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে আমি ভিন্নটা দেখতে পাচ্ছি।কেন?
আমার কথায় মানহা একটু চুপ থেকে বললো,
-তাহলে কি আপনি আজকেই নিয়ে যাবেন আমাকে?
-হ্যা,আজকেই নিয়ে যাব,একদম বিয়ে করেই নিয়ে যাব।
আমার কথায় মানহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-আসলে আমার মা চায় না বিয়েতে কোন খরচ হোক।ওনার আরও দুইটা মেয়ে আছে,তাদের বিয়েতে নাকি অনেক খচর হবে তাই আমার বিয়েটা এভাবে হয়ে গেলেই উনি খুশি।নইলে আপনারা যাওয়ার পর উনি আমাকে....
কথাটি না বলেই মানহা থেমে গেলো।ওর চোখটা ভিজে উঠেছে।শুনেছি মানহার সৎ মা এটা।তাই বলে যে উনি মানহার উপর এরকম কিছু চাপিয়ে দেবে ভাবতেও পারিনি।মেয়েটা যে এখানে ভাল নেই সেটা ওর চোখের পানিই বলে দিচ্ছে।এই মহিলার হাতে আর হয়তো শাস্তি পেতে চায় না,তাই আমার সাথেই যেতে চাচ্ছে।
আমি মানহার দিকে আরও একটু এগিয়ে গিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললাম,
-বিয়েটা আজকেই হচ্ছে,আর তুমিও যাচ্ছ আমার সাথে।
-কিন্তু নখ তো কাটা হয়নি?
-এটা না হয় বাসায় গিয়ে আমি নিজেই কেটে দিলাম।
আমার কথায় মানহা কিছু বললো না।কান্না ভেজা চোখে শুধু মাথা নাড়ালো।আমি মানহার হাতটা এবার একটু শক্ত করেই ধরলাম আর মনে মনে বললাম,
আজকের পর থেকে আর কাদতে দেবো না।কোন ভাবেই না,কোন মতেই না।এটাই শেষ কান্না, হ্যা শেষ কান্না।
মানহার কথায় আমি কিছু বললাম না।ধোয়া ওঠা চায়ে চুমুক দিয়ে আমি মেয়েটার দিকে আরও একবার তাকালাম।মলিন মুখে মেয়েটা আমার দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে।ছাদের এই কোনাটাতে দুটো চেয়ারের সাথে একটা আম গাছও আছে।মুকুলও দেখা যাচ্ছে।ছাদে এসব গাছ দেখলে খারাপ লাগে না।বেশ ভালই লাগে।কেমন যেন প্রশান্তি পাই।
.
মানহাকে দেখতে আসার কথা ছিল আরও সপ্তাহ খানেক আগে।অবশ্য তার আগেই আমি ওকে দেখেছিলাম, ছবিতে।মেয়েটার চোখে আমি সেদিন ঘোর লাগানো মায়া দেখতে পেয়েছিলাম।যেই মায়াটা থেকে আমি আজও বের হতে পারিনি।
আজ যখন মানহাকে দেখতে আসলাম তখন আমাদের সামনে বেশ কিছু খাবার দেওয়া হয়েছিল।আর সেটা মানহা নিজেই এনেছিল।মানহাকে আমার ছবিতে দেখেই বেশ ভাল লেগেছে তাই আর নতুন করে দেখার কিছু ছিল না।বাসার সবারই পছন্দ।সেই সুবাদে তারা মেয়েকে আংটি পড়িয়ে দিয়ে যেতে চায়।বিয়েটা কিছুদিন পর হবে।
মানহাকে আংটি পড়ানোর সময় মানহার বাবার মুখে হাসি থাকলেও মানহার মায়ের গোমড়া, রাগি মুখটা আমার চোখ এড়ালো না।আসলে উনি মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে মন খারাপ করে আছেন নাকি কোন কিছু নিয়ে রেগে আছেন এটাই বুঝতে পারলাম না।আমি এসব বুঝতে চাইলাম ও না।আর এই না চাওয়াতেই ওনারা আমাদের এই ছাদে পাঠিয়ে দিলেন।দুজন দুজনকে জানতে,শুনতে।
আমি মানহার দিকে তাকিয়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললাম,
-দেখি, আপনার হাতটা।
আমার কথায় মানহা আবার দিকে অবাক চোখে তাকালো।হয়তো ভাবছে এখন হাত দেখে কি করবো?নয়তো অন্য কিছু।মানহা একটু চুপ থেকে বললো,
-হাত দেখে কি হবে?
-দেখবো আংটিটা ঠিকঠাক লেগেছে কি না।
-শুধু কি এটাই?
আমি এবার মানহার দিকে একটু গিয়ে বললাম,
-নখগুলা দেখতে চাচ্ছিলাম।
-নখ!এটা দেখে কি হবে?
-দেখবো বড় কি না ছোট।মেয়েরা তো বেশ বড় বড় নখ রাখে,শেয়ালের মত।
আমার কথায় মানহা মলিন মুখে বললো,
-আপনার বড় নখ পছন্দ না?
আমি মাথা নাড়িয়ে জানান দিলাম শেয়াল দেখে আমি ভয় পাই।মানহা একটু চুপ থেকে বললো,
-আচ্ছা নখ যদি এখন ছোট করে ফেলি তাহলে কি আজকেই নিয়ে যাবেন আমাকে?বলেন না?বলেন।
মানহার কথায় আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না।আসলে এই মেয়েটা এত বিয়ে পাগল কেন সেটা বুঝে উঠতে পারছি না।ও বারবার আজকেই বিয়ের করার কথাই বা কেন বলছে!
আমি বললাম,
-হ্যা,ছোট হলে আজকেই বিয়ের ব্যপারে ভাবা যেত।
আমার কথায় মানহার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।মেয়েটা এবার চট করেই বললো,
-এখানে তো নেইল কাটার নেই আমি বরং ভেঙে ফেলি নইলে দাত দিয়ে কেটে ফেলি।
কথাটি বলেই মানহা চেয়ারের হাতার সাথে নখগুলা ভাঙার চেষ্টা করছিল কিন্তু এতে যে হিতের বিপরীত হবে এইটা হয়তো ওর মাথায় ছিল না।
আমি মানহাকে নখগুলা ভাঙতে দিলাম না,দাত দিয়েও কাটতে দিলাম না।ওর হাতটা ধরে ফেললাম।আসলে এই মেয়েটা আজকে বিয়ের জন্যে যে কোন কিছু করতে পারে।আমি মানহাকে শান্ত গলায় বললাম,
-তুমি যদি একটা সত্যি কথা বলো তাহলে আজকেই তোমাকে নিয়ে যাব।
-জ্বী বলুন।
-সবাই তো চায় বিয়েতে আয়োজন হোক,হলুদ থেকে শুরু করে বৌ ভাত।কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে আমি ভিন্নটা দেখতে পাচ্ছি।কেন?
আমার কথায় মানহা একটু চুপ থেকে বললো,
-তাহলে কি আপনি আজকেই নিয়ে যাবেন আমাকে?
-হ্যা,আজকেই নিয়ে যাব,একদম বিয়ে করেই নিয়ে যাব।
আমার কথায় মানহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-আসলে আমার মা চায় না বিয়েতে কোন খরচ হোক।ওনার আরও দুইটা মেয়ে আছে,তাদের বিয়েতে নাকি অনেক খচর হবে তাই আমার বিয়েটা এভাবে হয়ে গেলেই উনি খুশি।নইলে আপনারা যাওয়ার পর উনি আমাকে....
কথাটি না বলেই মানহা থেমে গেলো।ওর চোখটা ভিজে উঠেছে।শুনেছি মানহার সৎ মা এটা।তাই বলে যে উনি মানহার উপর এরকম কিছু চাপিয়ে দেবে ভাবতেও পারিনি।মেয়েটা যে এখানে ভাল নেই সেটা ওর চোখের পানিই বলে দিচ্ছে।এই মহিলার হাতে আর হয়তো শাস্তি পেতে চায় না,তাই আমার সাথেই যেতে চাচ্ছে।
আমি মানহার দিকে আরও একটু এগিয়ে গিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললাম,
-বিয়েটা আজকেই হচ্ছে,আর তুমিও যাচ্ছ আমার সাথে।
-কিন্তু নখ তো কাটা হয়নি?
-এটা না হয় বাসায় গিয়ে আমি নিজেই কেটে দিলাম।
আমার কথায় মানহা কিছু বললো না।কান্না ভেজা চোখে শুধু মাথা নাড়ালো।আমি মানহার হাতটা এবার একটু শক্ত করেই ধরলাম আর মনে মনে বললাম,
আজকের পর থেকে আর কাদতে দেবো না।কোন ভাবেই না,কোন মতেই না।এটাই শেষ কান্না, হ্যা শেষ কান্না।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com