Breaking News

ভাই বোনের ভালোবাসা

- এই পিচ্চি! চকলেট খাবি?
পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে আমি সামনে তাকাতেই চমকে উঠলাম। জলজ্যান্ত আলিফ ভাইয়া আমার সামনে দাড়ানো!

আলিফ আহমাদ, একজন লেখক। যার সাথে ভার্চুয়ালে আমার পরিচয় হলেও সে আমার আপন ভাইয়ের থেকে কোনো অংশে কম নয়। তার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস 'অর্ধচন্দ্র' পড়ার পরে তার সাথে পাঠক হয়ে আমি প্রথমবারের মত আলাপ করেছিলাম। কিন্তু কে জানতো? লেখক পাঠকের এই সম্পর্কটা একদিন ভাই বোনের সম্পর্কে রুপান্তরিত হবে?
- ওই পিচ্চি! কথা কস না কেন?
- ভাইয়াআআআ- ভাইয়াআআআআআ!
- আস্তে চেচা বোন, আমি ভুত না।
- তুমি আম্রে পিচ্চি কইলা কেন?
- যাহ, তুই বুড়ি।
আমি রাগ করতে গিয়েও হেসে ফেল্লাম। এই মানুষটার সাথে রাগ করা যায় না। পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকে, যারা অনন্য হয়ে থাকে।

এরা ঘরে ঘরে জন্মায় না। যুগে যুগে এমন এক দুজন অসাধারণ মানুষ পাওয়া যায়। যাদের আকাশের মত স্বচ্ছ মন থাকে, যারা নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে জানে। আলিফ ভাইয়া তাদেরই একজন। আমার সব সময় মনে হয়েছে আমি তার আপন বোন। সুন্দর মানষিকতাসম্পন্ন একজন অসাধারণ মানুষ, যার বোন হতে পারা আসলেই ভাগ্যের ব্যপার।
- সমস্যা কি? তাকাই রইছস কেন?
ভাবনার জগত থেকে সরে আলিফের দিকে তাকালাম। সে এক প্যাকেট ডেয়রী মিল্ক চকলেট এগিয়ে দিয়ে বল্ল, ' খেয়ে নে!'

আমি চকলেটটা দু ভাগে ভাগ করলাম। এক ভাগ আমার জন্য, আর এক ভাগ ভাইয়ার জন্য। ভাগ করতে গিয়ে শিয়ালপন্ডিতের মত করে আমি সমান ভাগ না করে কম বেশি ভাগ করলাম। আলিফ ভ্রু কুচকে বল্ল, 'আমার ভাগে কম কেন?'
আমি হাসলাম, ওর হাত থেকে ওর ভাগেরটা কেড়ে নিয়ে আরো ছোটো করে দিলাম।
আলিফ অবাক হয়ে বল্ল, 'এটা কি হলো?'
আমি এবার ওর ভাগের পুরাটুকুই খেয়ে ফেল্লাম, ভ্রু নাচিয়ে বল্লাম, 'অল্পতে তুষ্ট না হওয়ার ফল হলো এই!'

আলিফ ক্যাবলাক্যান্তের মত আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, তার হাবাগোবা ভাব দেখে আমার বড্ড হাসি পেল। হাসি চেঁপে রাখতে না পেরে আমি খিলখিল করে হেসে দিতেই অনুভব করলাম, আমার হাতের চকলেটটা হাওয়া হয়ে গেছে। এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলাম আলিফ আমার ভাগেরটুকু খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম, একেই বুঝি বলে অতি চালাকের গলায় দড়ি! আলিফ তৃপ্তির ঢেকুর ফেলে বল্ল, 'এই হলো, বেশি পেয়ে খুশিতে খিলখিল করে হাসার ফল!'
আমার এবার খুব অভিমান হলো৷ আমি মুখ ফুরিয়ে নিলাম। সেই ফাঁকে আলিফ আমার হাতে কিছু গুজে দিল, তাকিয়ে দেখি এক প্যাকেট সাফারী চকলেট। আমি চকচকে চোখে চকলেটটার দিকে তাকালাম, তারপরেই 'ভাইয়াাাআআআ' বলে চিৎকার দিলাম। আলিফ ভড়কে গিয়ে বল্ল, 'আস্তে বোন! আমি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি না!'

আলিফ হাসলো, সে হাসি মেকি হাসি নয়। ওর হাসিতে প্রাণ ছিল, স্নিগ্ধতা ছিল, আর ছিল পবিত্রতা। আলিফ বায়না ধরলো একসাথে হাটার জন্য।
ঢাকা শহরের ফুটপাত ধরে আমরা দু ভাই বোনে হেটে চলছি, চকলেট খেতে খেতে আমি উদাস হয়ে পড়েছিলাম।
আলিফ সেটা খেয়াল করেই বলে উঠল,
- 'কি হয়েছে তোর?'
আমি ভাঙ্গা গলায় কিন্তু ভীষণ গভীর ভাবে বল্লাম, 'আমি আর বেশি দিন বাঁচবো না ভাইয়া!'
আলিফ আমার মাথায় হাত রাখলো, তারপর তার সেই সুন্দর হাসিটা মুখে ফুটিয়ে বল্ল, 'তুই বাঁচবি বোন। কেবল নিজের জন্যই নয়, বরং এই পুরা পৃথিবীটার জন্যও তুই বাঁচবি। তোকে এখানে ভীষণ দরকার। তুই কোথাও যাবি না!'

আমি আলিফের দিকে তাকালাম। আমার চোখে তখন বিন্দু বিন্দু জল। আলিফ সেগুলো মুছে দিয়ে বল্ল, 'তোকে বাঁচতে হবে, আল্লাহ তোকে নেবেন না। তুই অনেক বছর বাঁচবি!'
আমি ছলছল নয়নেই হেসে দিলাম। আমার মনের উদাসীনতা হারিয়ে গেছে। ফিরে এসেছে আমার আগেকার চঞ্চলতা।

আমার হতাশারা হঠাৎই উবে গেল। আমার মাথার উপর তখনো আলিফের হাত। আমি সে হাতের উপর নিজের হাত রেখে বল্লাম, 'দেখে নিও ভাইয়া! আমি ঠিক বাঁচবো!

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com