গল্পঃ প্রতিস্থাপন
আজ প্রায় এক বছর পূর্ণ হলো নীল নিজেকে গৃহবন্দী করেছে। একাকিত্বটাকে আপন করে নিয়ে নিজেকে সবার কাছ থেকে সরিয়ে রেখেছিল।কিন্তু এমন অবস্থা মেনে নিতে পারছিলেন না নীলের আম্মা।অনেক চেষ্টা করেছেন ছেলেকে স্বাভাবিক করতে।কিন্তু বার বারই ব্যার্থ হয়েছেন।আর ছেলের টেনশনেই আজ সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।এখন হাসপাতালের স্পেশাল কেয়ারে ভর্তি হয়ে আছেন।কাল সকালে সাধারন ওয়ার্ডে দেয়া হবে।তাইতো আজ নীল নিজেকে গৃহবন্দী দশা থেকে মুক্ত করে নিয়েছে মায়ের সেবা করবে বলে।
হসপিটালে মায়ের পাশে বসে আছে নীল।মায়ের এমন অবস্থার জন্য নিজকেই কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছে।কিন্তু আমার সাথেই কেন এমন হয়।কেনই বা বিধাতা আমার কাছ থেকে কাছের মানুষ গুলোকে এমন করে কেড়ে নেয়।ভাবতে ভাবতে চোখের পাতা ভিজে গেছে নীলের,এইতো সেদিনের কথা…..
একই কলেজে পড়তো নীল আর মৌমি। কলেজ শেষে ভার্সিটি আলাদা হয়ে গেলও নীলকে মৌমির থেকে আলাদা করা যায় নি।পড়াশোনার পাশাপাশি সম্পর্কটাকেও প্রাধান্য দিয়েছে দুইজন।আর পড়াশোনায় ভালো ছিল বলে ফ্যামিলিও মেনে নিয়েছিল দুজনকে। এঙ্গেজমেন্ট এর দিনটা ছিলো নীলের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোর একটি।তাইতো দুজন মিলে বের হয়েছিল লং ড্রাইভে।তবে বিধাতা হয়তো অন্য কিছুই ভেবে রেখেছিলো।রোড় এক্সিডেন্টে মৌমির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারেনি নীল।হসপিটাল থেকে ফিরে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছিলো সবকিছু থেকে।দূরঘটনার জন্য নিজেকে দোষী মেনে নিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলো একাকিত্বের অন্ধকারে।এসব ভাবতে ভাবতেই কেটে যায় সারাটা দিন।
মাকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে ছোট বোনটাকে হসপিটালে রেখে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।পথে লক্ষ্য করলো একটা মেরুন কালারের প্রিমো কার খুব দ্রুত ওভারটেক করে যাচ্ছে, যেটা কিনা হসপিটালের পার্কিং থেকে বের হওয়ার সময় নীলকে সাইড থেকে হালকা ধাক্কা দিয়ে স্যরি না বলেই চলে যায়।গাড়ির পিছনে লাগানো ট্যাডি বিয়ারের স্টিকারটা নীলের স্পস্ট মনে আছে।মনে মনে ড্রাইভার কপ গালি দেয় নীল।
পরদিন মায়ের জন্য খাবার নিয়ে দুপুরের দিকে হসপিটালে পৌছাতেই হসপিটালের পার্কিং এ কাল রাতের সেই গাড়িটাকে লক্ষ্য করলো। পিছন দিকে লাগানো স্টিকার দেখে কনর্ফাম হলো এটাই সেই গাড়ি।তবে আশেপাশে কাউকে না দেখতে পেয়ে মায়ের কেবিনের দিকে চলে গেল নীল।
বিকেলে হসপিটালের পার্কিং এর পাশে দাড়িয়ে সিগারেট টানছে,এমন সময় মেঘা নামের ডাক শুনে হঠাৎ পিছনে তাকালো নীল। তাকাতেই লক্ষ্য করলো সেই গাড়িটার ড্রাইভিং সিটে একটা মেয়ে বসে আছে।হঠাৎ করেই গাড়ির কাছে গিয়ে নক করলো,আর গ্লাস খুলতেই মেয়েটাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঝাড়ি দেয়া শুরু করলো –
“এই যে আপনি, কি ভাবেন কি নিজেকে? ঠিকভাবে ড্রাইভ করতে না জানলে রস্তায় বের হন কেন?ড্রাইভার রেখে নিতে পারেন না?আপনাদের মত বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া সন্তানদের জন্য অন্যদের সপ্নের করুন সমাপ্তি হয়।টাকা দিয়ে লাইসেন্স কিনে নেন।আর ড্রাইভ করার সময় রস্তাটাকে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করেন।নিজের ভুলের জন্য স্যরিটুকু বলার ভদ্রতা বোধটুকুও নেই আপনাদের”
কথাগুলো বলেই হেটে চলে গেলো নীল।আর গাড়িতে বসে থাকা মেঘা নীলকে হা করে তাকিয়ে দেখছে।অপরিচিত কারো এমন আকস্মিক বকা শুনে মেঘা কিছুটা থমকে গেছে।তাইতো কোন উত্তর না দিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে।মেঘা এই হসপিটালের ডিরেক্টর এর মেয়ে।মা মরা মেয়ে বলে বাবার অঢেল আদরে মানুষ হয়েছে।তাইতো কিছুটা স্বেচ্ছাচারী হয়েই চলাফেরা করে।আর রিকলেস কার ড্রাইভ ওর হাজার শখের মধ্যে অন্যতম একটি।
ঘড়িতে রাত তিনটা।তবুও চোখে ঘুম নেই মেঘার।তবে আজ ঘুম না হওয়ার কারনটা একটু ভিন্ন।স্বাভাবিক ভাবে কেউ মেঘাকে অপমান করলে প্রতিশোধ না নিলে ঘুম হয় না। তবে নীলের চোখে যেন কেমন একটা কষ্টের ছাপ দেখেছে নীলা।তাইতো….
…………………..চলবে…………………………….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com