গল্পঃ- পুতুল বউ | পর্ব -১ | লেখক: Rj Juwel Khan
রিয়ার সাথে আমার বিয়ে হয়েছিল বাবা-মায়ের পছন্দ অনুসারে।
কোত্থেকে এমন মেয়ের খোঁজ পেয়েছিল আব্বু আম্মু তা জানা যায়নি।
দেখতে যে আহামরি সুন্দরী ছিল তা নয়।
তবে আমার মত কালো ছেলের সাথে বেশ মানায়।আমি ভাবিনি অ্যারেঞ্জ ম্যারিজ এতটা রহস্যময় রোমান্টিক
ধরণের হতে পারে। হঠাৎ একদিন আম্মু এসে বলল
তোর বাবা মেয়ে ঠিক করেছে সামনের সপ্তাহে বিয়ে।
তোর বন্ধুদের দাওয়াত করিস।কালকে বিয়ের কার্ড বাসায় আসবে।
কোনোদিন বাবা মায়ের অবাধ্য হইনি কিন্তু ঐদিন হয়েছিলাম।
কিন্তু ফলাফল তাদের পক্ষেই গিয়েছিল।
বিয়ের সব আয়োজন শেষে বাসর ঘরে ঢুকছি দূরদূর বুক নিয়ে।
ভয় লাগছে একটা অচেনা মেয়ের সাথে আজ ঘুমাতে হবে
এটা ভেবে।
যদি মেয়েটা মানুষরূপী পেত্নী হয়ে থাকে
তাইলে আমার ঘার মটকাবে
আবার যদি লেসবিয়ান হয় তবে আমি শেষ
আবার যদি রক্তখেকো হয়
তবে গলায় কামড় দিয়ে রক্ত খেয়ে পালিয়ে যাবে।
সিনেমাতে এসব দেখে এখন অচেনা মেয়ের সাথে ঘুমাতে ভয় লাগছে।
আচ্ছা অচেনা মেয়ে বলছি কেন? ও তো আমার বিয়ে করা বউ।
আচ্ছা ওর নাম কেন বলছিনা?
সর্বনাম ব্যবহার করে ওকে ডোমিনেট করার চেষ্টা কেন করছি আমি?
রিয়া!যাকে আজ বিয়ে করেছি সেই মেয়েটার নাম রিয়া।
দরজা আটকে পেছন ফিরে দেখি রিয়া আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
ভয় পেয়েছি অনেক।
–কি চাও তুমি? ঘার মটকাবে? রক্ত খাবে? নাকি পালিয়ে যাবে?
কথা শুনে রিয়া আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
–আমি কোনো পেত্নী,রক্তখেকো কিংবা বাজে মেয়ে নই যে পালিয়ে যাব।
যাকগে বাঁচা গেল আব্বু আম্মু ভালো মেয়েই আনছে।
লজ্জায় আমি কোনো কথা বলতে পারছিনা।আমাকে চমকে দিয়ে সে পায়ে সালাম করল
আর সোজা বিছানায় গিয়ে মাঝখানে বসে পড়লো।
অচেনা মেয়ে কি থেকে কি বলে ফেলব
এই ভয়ে কাছে গিয়ে বললাম চলো ঘুমিয়ে পড়ি
অনেক রাত হয়ে গেছে।রিয়া শুয়ে পড়ল।
আমি ওর দিকে মুখ ঘুরাতেই অবাক হয়ে গেলাম।আরে এটা তো একটা পুতুল।
আব্বু আম্মু আমাকে কি বিয়ে করালো যে ঘুমায় পুতুলের মত?
ছোট বেলায় পুতুল বিয়ে দিতাম এখন সেই কথা মনে পড়ছে।
তার মানে আমিও একটা পুতুল বউ পেয়েছি।
রিয়া আমার পুতুল বউ।
আসলেই রিয়া ঠিক পুতুলের মত করে ঘুমায়।
আব্বু আম্মুর চয়েস আছে।
এমন মেয়েকে আমার গলায় ঝুলালো যে কয়েক মিনিটেই
আমি প্রেমে পড়ে গেলাম। কি মেয়েরে বাবা!
যাদু জানে নাকি যে আমার সম্মোহন করে প্রেমে ফেলল?
হঠাৎ বুকের মাঝে গরম নিঃশ্বাস অনুভব করলাম।চোখ খুলে দেখি রিয়া আমার বুকের মধ্যে।
আরে!জোশ তো!এরকম ভালো লাগা অনুভব এর আগে কোনোদিন করিনি তো!
মেয়েটা কি সত্যি সত্যি আমাকে সম্মোহন করল?সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখি রিয়া আমার পাশে নেই।
আম্মুর সাথে কিচেনে রান্না করছে।
এটা কেমন মেয়ে?
রাতে পুতুল হয় আর দিনে মানুষ হয়।
গোসল করতে যেয়ে দেখি টাওয়াল দেয়া।
গোসল শেষে দেখি বিছানা গুছনো আর পোশাক দেয়া আছে।
যথাসময়ে খাওয়া শেষে অফিস গেলাম।
মাঝখানে অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসল।
ধরতেই দেখি সেই পুতুল বউয়ের কণ্ঠ।
–পৌছাইছো অফিসে?
–হ্যা,এইতো আর পাঁচ মিনিট।
মেয়েটা এতো কেয়ার নেয় কেন?
বিকেলে বাসায় ফিরে দেখি পুতুলের মুখটা শুকানো ওকে এরকম লাগছে কেন?
খায়নি নাকি? খাওয়ার সময় বললাম এসো একসাথে খাই।
মেয়ে খুশিতে আত্মহারা। সাথে সাথে প্লেট নিয়ে বসে পড়ল।
কিন্তু ও খাবার মাখতে পারছেনা।
–কি ব্যাপার রিয়া? খাচ্ছ না কেন?
–একটা হাসি দিয়ে বলল খাচ্ছি তো।
–কই খাচ্ছো তুমি?
লক্ষ্য করলাম ও খেতে পারছেনা, হাত কেমন যেন করছে।
–একি!তোমার হাত পুড়লো কেমনে?
–ও কিছুনা তুমি খাও। কিছুনা মানে? দেখি দেখি?
ইশ…খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা? এসো আমি খাইয়ে দেই তোমাকে।
ওর মুখে খাবার দিতেই চোখে পানি নিয়ে আসছে।ব্যথায় কাঁদছো কেন? ঠিক হয়ে যাবে।কথাটা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
মনে মনে বলছে গাধা জামাই একটা।
অপমানবোধ করলাম একটু।
হুর…বউয়ের কাছে আবার কিসের অপমান?খাওয়া শেষে ওর পোড়া হাতে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে টিভিতে খেলা দেখছি।
এসেই রিমোট নিয়ে বলে এসব চলবেনা।
এখন আমাকে সময় দাও।
একদিনের পরিচয়ে আমার উপর কেমন ভয়ংকরভাবে অধিকার খাটাচ্ছে!
জীবন মনে হয় ত্যানা ত্যানা করে দিবে মেয়েটা।সারাটা সন্ধা তার মুখে যতো স্বপ্ন আর চাওয়া আছে সব কানে তুললাম।
উফ…কান ঝালাপালা করে দিছে মেয়েটা। রাতে ওকে খাইয়ে দিয়ে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।
হা হা হা…কেমন পুতুলের মত ঘুমায়।
ওই ছোঁচা জামাই আয় আমার কাছে। দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে কি দেখিস?
মাঝরাতে হঠাৎ কে যেন ডাকছে। ওমা এ যে পুতুল বউ!কি হইছে?
এতক্ষণ জ্বালায়াও স্বাদ মেটে নাই?না! উঠো ঘুম থেকে। কেন?
আমার হাত-পায়ে নেইলপোলিশ দিয়ে দাও।উফ…মেয়েটা ঘুমাতেও দেবেনা।
যাও নিয়ে আসো।খুশিতে আত্মহারা হয়ে নিয়ে আসলো।
ওর পায়ে নেইলপোলিশ দিচ্ছিলাম আর ও মিষ্টি মিষ্টি হাসছিলো।
দেয়া শেষ করে ঘুমাব এমন সময় বললো
এই আমার গরম লাগছে চুলটা বেনি করে বেধে দাও।
আমি বেনি করতে পারিনা।শোনো? আমি কিন্তু তোমাকে সারারাত ঘুমাতে দেবনা
যদি বেনি করে না দাও।
চুল বিলি কেটে বেনি করে দিয়ে শুয়ে পড়ব এমন সময় বলে এই ওঠো।
আবার কি?আমার এখানে ঘুম আসছেনা।
চাঁদ দেখলে ঘুম আসবে,আমাকে ছাদে নিয়ে চলো।এত রাতে ছাদে? নিয়ে চলো নইলে কিন্তু ঘুমাতে দেবনা।
ছাদে গিয়ে দোলনায় আমার কোলে শুয়ে চাঁদ দেখছে।
চারদিক নিরব নিস্তব্ধ। হঠাৎ নিরবতা কাটিয়ে বলে একটা গান গাও।
নিরবতা ভালো লাগছেনা।
এত রাতে কিসের গান,হুম?গাও বলছি।(রেগে গিয়ে)
গান গাইছি হঠাৎ বলে ছিঃ এরকম বেসুরো গলায় কেউ গান গায়?
ভাল্লাগছেনা এটা, তার চেয়ে বরং কবিতা শোনাও।
কবিতা আবৃতি করছি এমন সময় আযান দিয়ে দিল।
এইরে!সকাল হয়ে গেছে!শোনো?খুব ইচ্ছে ছিলো তোমার সাথে ভোর দেখার।
বলতে পারছিলাম না মুখে তাই তোমাকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রেখেছিলাম।
আমার ভোর দেখা হয়ে গেছে,ইচ্ছাটাও পুরন হইছে।
আমি অনেক পাগলামি করেছি তোমার সাথে,অনেক কষ্ট দিয়েছি, আজ রাতে তোমাকে ঘুমাতে দিলাম না।
কেন জানো?নিজের স্বার্থে।হ্যা,আমি অনেক স্বার্থপর আমাকে এখন যে শাস্তি দেবে তাই মেনে নিব।
বাব্বাহ!বউ আমার কত আবেগী! এমন আবেগঘন সময়ে কি বলব বুঝতে পারছি না।
সোজা গিয়ে রিয়াকে জড়িয়ে ধরলাম। ভালোবাসি তোমায় পুতুল বউ।
সেদিন অফিস থেকে ফিরে দেখি রিয়া ওর বাবার বাড়ি চলে গেছে।
বাসায় একদম ভালো লাগছেনা। বোরিং লাগছে,মনে হচ্ছে আমার সুখটাই নেই।
শুন্যতা বিরাজ করছিলো আমার মাঝে।রিয়াকে ফোন দিলাম,ওপাশে ফোন ধরছেনা ও।
বাধ্য হয়ে শশুড়বাড়ি চলে গেলাম।
দেখি রিয়া আমার জন্য অনেক রান্না করেছে। শশুড় শাশুড়ি অনেক খুশি আমাকে দেখে।
কিচেনে গিয়ে রিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই বলে উঠলো, কি মশাই?
দুইদিনেই বউপাগল হয়ে গেলে? কেমন বউ? সোজা অপমান করে দিল? তুমিও বা কম কিসে?যেমন?
এইযে আমার ভালোবাসা আরেকটু বেশি পাওয়ার জন্য নিজের বাড়ি এসে নাটক করছো।
রিয়া আমার কথা শুনেই খিল খিল করে হেসে উঠল।
কেমন হাসি দেয় মেয়েটা!হাসিতেও আমি সম্মোহিত হয়ে গেলাম…..
এই মেয়ে আর কত যাদু দেখাবে?সবেমাত্র শুরু…
দিন যেতে দাও সব দেখবে বুঝবে আর সহ্য করবে।
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com