ডায়রিতে প্রেম | ২য় ও শেষ পর্ব | লেখকঃ আসিফ আহমেদ
মিম কাঁপা কাঁপা হাতে ডায়রিটা খুলে পড়তে শুরু করে।
১ম পৃষ্ঠা খোলে ও সেখানে লেখা,
আসিফ আহমেদ অভ্র
মিম মিটমিট করে হাসে আর ভাবে,
বাহ ছেলেটার নামটা তো খুব কিউউট।
পরের পৃষ্ঠায় চলে যায় ও সেখানে লেখা,
কাল ২ জানুয়ারি, কলেজের ১ম দিন আর আমার আজ থেকেই চরম ফিলিংস লাগছে।
নতুন কলেজ নতুন মুখ সবাই কেমন হবে জানি না।
আমার কখনোই ডায়রিতে অতীত জমানোর ইচ্ছা ছিলো না তবে কি মনে করে যেন ভাবলাম কলেজের সব স্মৃতি লিখে রাখবো তাই এই ডায়রিটা লেখা।
পরের পৃষ্ঠায় চলে যায় মিম।
ইয়ায়ায়ায়াহু। আজ আমার জীবনের স্বরণীয় দিন চলে গেল। আমি ভাবতেও পারি নি কলেজের ১ম দিনটা এত্ত সুন্দর হবে। এমনিতেই আমি খুব দুষ্টু আর মিশুক তাই অনেক গুলা ফ্রেন্ডস ও হয়ে গেছে।
সাকিব, নুসরাত, সাদিয়া। ওরাও খুব মিশুক।
আজ আম্মি এত্ত গুলা হ্যাপি।
মিম ভাবে, ছেলেটা তো দেখছি খুব চঞ্চল তবে এখন এত কম কথা বলে কেন!
নাহ ডায়রিটা পুরো পড়তেই হবে। পরের পৃষ্ঠায় চলে যায়।
ক্লাসে খুব এনজয় করি। বিশেষ করে আমি, সাকিব, নুসরাত সবাই। এই কয়টা দিনেই খুব ভালো ফ্রেন্ড হয়ে গেছি। স্যাররাও আমাদের এত্ত মিল দেখে বড্ড খুশি। আসলেই এত অল্প সময়ে আমরা খুব ভালো ফ্রেন্ড হয়ে গেছি।
পরের পৃষ্ঠায় চলে যায়।
. আজ আমি, সাকিব, সাদিয়া আর নুসরাত মিলে ঘুড়তে গেছিলাম কলেজ ফাঁকি দিয়ে। ইশশশশশ
সে কি আনন্দ!
একসাথে এক প্লেটে ফুচকা খাওয়া আর ওরটা কেড়ে নেয়া হিহিহি খুব মজা লাগছে আজকের দিনটা।
.দেখতে দেখতে কলেজ জীবনের ছয়টা মাস চলে গেল। এত্ত তাড়াতাড়ি দিনগুলা যে কি করে গেল বুঝলামই না। আসলেই সময়টা এমনই।
. ইদানিং দেখছি সাকিব আর সাদিয়া দুজনে চুপ করে থাকে। ব্যাপারটা ভালো ঠেকছে না তাই আমি আর নুসরাত মিলে ঠিক করেছি যে ভাবেই হোক কারণটা জানাই লাগবে।
. আজ আমি এততততততত্ত গুলা।
সাকিব আর সাদিয়ার ব্যাপারটা ধরে ফেলছি।
সাকিব নাকি সাদিয়া কে ভালোবাসে প্রপোজ করছিল তাই এতোদিন রাগারাগি। আজ সব রাগ পানি হলো।
সাদিয়াও সাকিবকে ভালোবাসে বলছে।
আমি আর নুসরাত এই সুযোগে একটা ট্রিট পাইছি।
তবে যাই বলি না কেন সাকিব আর সাদিয়ার জুটি টা কিন্তু সিরাম হয়েছে।
পরের পৃষ্ঠায় চলে যায় মিম।
. সাকিব আর সাদিয়া এখন আলাদা আড্ডা মারে
বা***ল। ভালো লাগে না আমার। আগে কত্ত ভালো ছিলাম।
যদিও আড্ডা হয় তবে কেমন যেন লাগে।
এখন আমি আর নুসরাত খুব ভালো ফ্রেন্ড হয়ে গেছি বলা যায় আমরা একে অপরের বেস্টু।
ইদানিং এই নুসরাত টাও কেমন যেন হয়ে গেছে। শুধু কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করে আর বলে জানিস অভ্র সাকিব আর সাদিয়ার প্রেম দেখলে আমার খুব জ্বলে।
কি হিংসুক!
আমিও বলসি তো তুই ও একটা প্রেম কর। ও বলসে করবে খুব তাড়াতাড়িই করবে ।
আমি বুঝি না এই কয়দিন নুসরাত আমার খুব কেয়ার করে। কি করছি, খাইছি কি না ব্লা ব্লা ব্লা। এতো প্যারা ভালো লাগে না। তবে ওর কেয়ারটা ভালোই লাগে হিহিহি।
পরের পৃষ্ঠায় যায় মিম।
একটু আগে নুসরাত ফোন করেছিল। বললো কাল বিকেলে পার্কে দেখা করতে। কি জানি কি বলবে এতো ভেবে কাজ নাই।
পরের পৃষ্ঠায় যায় মিম। তবে কিছুই লেখা নেই আরেকটা উল্টায় সেখানে লেখা,
আমি জানি না আমার কেন এমন লাগছে! এটা কি ভালোবাসা না অন্যকিছু?
আজ বিকেলে নুসরাতের কথা মতো পার্কে গেছিলাম গিয়ে দেখি ও আগেই গিয়ে বসে আছে।
বাপরে আমি গিয়েই ফিদা। খুব সুন্দর লাগছিল ওকে। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর নুসরাত যা বললো তা শুনে আমি শেষ।
ও নাকি আমাকে ভালোবাসে! খুব ভালোবাসে!
আমি কিছু বলিনি কারণ আমি যে ওকে খুব ভালো ফ্রেন্ড ভাবি।
তবে বাসে করে আসার সময় নুসরাত আমার কাধে মাথা রেখেছিল। কেন জানি খুব ভালো লাগছিল আমার।
আচ্ছা এটাই কি ভালোবাসার অনুভূতি ?
মিম হাহা করে হেসে দেয় আর ভাবে,
বাহ্ বোকা ছেলেটা প্রেমে পড়ছে তাও বুঝেনি।
পরের পৃষ্ঠায় চলে যায়।
এখন আর আমার ভালো লাগে না।
আমি পড়তে পারি না, ঘুমাতে পারি না।
কিছুতেই কিছু,,,,,,,,,,,,,,, ধ্যাত লিখতেও পারি না।
শুধু নুসরাতের কথা ভাবতে ভালো লাগে আমার।
এমন কেন হচ্ছে ?
হঠাৎ করেই তিন দিন খুব জ্বর। বিছানা থেকে উঠতেই পারি নাই। আজ বিকেলে ঘুম ভেঙে দেখি পাশেই নুসরাত বসে আছে। চোখ দুটো ফোলা ফোলা।
আমি তাকাতেই জরিয়ে ধরে সে কি কান্না!
এবার আমি বুঝেছি এটাই হয়তো ভালোবাসা।
মিম মুচকি করে হাসে আর ভাবে,
যাক বোকাটা তাহলে বুঝেছে ভালোবাসা কি।
আবার পড়তে শুরু করে।
জীবনের সেরা একটা দিন ছিল আজ।
একটু শরীরটা ভালো ছিল আর বিকেলে নুসরাত বাসাতে এসেছিল। দুজনে বসে গল্প করছিলাম হঠাৎ করেই নুসরাত আমাকে জরিয়ে ধরে ঠোটে***********
হিহিহি লজ্জা লাগে বলতে ।
নুসরাত আমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসে। আমাকে জরিয়ে ধরে কথা দিয়েছে কোনদিন একা করে যাবে না। আর আমিও ওকে খুব ভালোবেসে ফেলছি।
এখন কলেজে আড্ডাটা আবার আগের মতোই জমে।
সাকিব আর সাদিয়া আমি আর নুসরাত মাঝে মাঝে তো ঝগড়ালেই লেগে যায় যে কারা বেশি সুইট জুটি হিহিহি।
তবে সত্যি আমরা একে অপরকে অনেক অনেক ভালোবাসি।
পরের পৃষ্ঠায় চলে যায় মিম।
জীবন থেকে কি করে যে একটা বছরের বেশি চলে গেল বুঝলামই না। মাঝে মাঝে নুসরাতকে বলি এইতো সেদিন আমরা ১ম ক্লাস করলাম তাই না?
সাকিব আর সাদিয়ার জুটি যেমন শক্ত ছিল ঠিক তেমনি আমাদেরও।
আসলে ফ্রেন্ড থাকার এই এক সুবিধা বোঝাপড়াটা খুব ভালো হয়।
আর আমি যে নুসরাতকে আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসি আর পাগলিটাও আমাকে খুব ভালোবাসে।
পরের পৃষ্ঠায় যায় মিম।
আর কিছুদিন পর এইচএসসি বোর্ড পরীক্ষা আমরা দুজনেই চিন্তা করেছি ভালো রেজাল্ট করবো।
কারণ দুজনের একই ভার্সিটিতে যে থাকতেই হবে।
এখন আমার আর নুসরাতের দেখা কথা সব বন্ধ কারণ সামনে পরীক্ষা দুজনেরই ভালো করতে হবে যে।
শেষ যেদিন নুসরাতের সাথে দেখা করলাম পাগলিটার সে কি কান্না। আমারো খুব খারাপ লেগেছে।
আবার দেখা হবে পরীক্ষা তে।
পরের পৃষ্ঠায় চলে যায় মিম।
কাল থেকে আমার পরীক্ষা নিয়মিত আর ডায়রি লেখা হবে না।
তারপর কয়েকটা পৃষ্ঠা ফাঁকা তারপর কিছু কিছু জায়গায় লেখা।
পাগলিটার সাথে পরীক্ষার হলে একটু একটু দেখা হয় বুকের ভেতর কেমন যেন করে আর কয় টা দিন তাই তো অপেক্ষাটা শেষ।
আবার কিছু পৃষ্ঠা ফাঁকা।
পরের পৃষ্ঠায় চলে যায়।
ইয়ায়ায়ায়াহু
আজ আমার সব পরীক্ষা শেষ। পরীক্ষা দিয়েই পাগলিটাকে নিয়ে ঘুড়তে গেছিলাম।
পাগলিটা জরিয়ে ধরে রাখছিলো। আমিও নিজেকে আটকাতে পারি নি কান্না করে দিসিলাম হুহুহু।
এখন থেকে পাগলিটার সাথে প্রায় সারা রাত দিন কথা হয়। পাগলিটা একটুও চোখের আড়াল হতেই দেয় না। তবে পরীক্ষা শেষ তো তাই দেখাটা কম হয়।
.আজ বাসাতে সবাই খুব বকা দিছে।
সবাই জেনে গেছে যে আমি নুসরাত কে ভালোবাসি।
আমাকে অনেক বকা দিছে সবাই।
মনটা খারাপ ছিল তবে আপু বলছে চাকরি পাইলেই নুসরাতের সাথে আমাকে বিয়ে দেবে। এতোদিন ভালোভাবে থাকতে বলেছে। নুসরাতের বাসাতেও সব্বাই রাজি।
ভাবতেই লজ্জা লাগছে আমি বর হবো হিহিহি।
মিম এতোটুকু পড়েই ফিক করে হেসে দেয় আর ভাবে,
ছেলেটা বড্ড লাজুক তো।
পরের পৃষ্ঠায় চলে যায় ও।
ধ্যাত্তেরি কি ভালো লাগে না।
আপু বললো খুব তাড়াতাড়ি কোচিং এ ভর্তি হতে।
তাই ঢাকা যেতে হবে আর নুসরাত ও ঢাকা যেতে চাইলো বাট ওর বাবা যেতে দিলো না।
পাগলিটা খুব কান্না করেছে আমাকে জরিয়ে ধরে।
তবুও স্বার্থপরের মতো চলে এসেছি ঢাকাতে কোচিং করতে।
পাগলিটার সাথে কথা কম কম হলেও ভালোবাসাটা কিন্তু এতটুকুও কমে নি।
কয়েকটা পৃষ্ঠা আবার ফাঁকা মিম আবার পড়তে শুরু করে।
.আজ আমার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিছে খুব টেনশনে ছিলাম কি হবে।
তবে আল্লাহর রহমতে আমাদের দুজনের রেজাল্টই ভালো হয়েছে।
পাগলিটা আমার বাসাতে এসেছিল মিষ্টি নিয়ে আমার মুখে পুরে দিয়ে আবার খুব কান্না, খুব ভালোবাসে তো।
.কয়েকটা ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিয়েছি নুসরাত আর আমি। দুজনের ই ভালো হয়েছে তবে কোথায় যে টিকবো সেটা নিয়ে চিন্তায় আছি।
.
.ভাগ্যটা হয়তো সাথে ছিলোনা তাই ওয়েটিং এ থাকলেও কোন পাবলিকে টিকি নি আমরা কেউই।
তবে এটা ভেবে একটু ভালো লাগছে যে দুজনে একসাথেই তো আছি।
বাসায় থেকে খুব বকা দিছে আজ কোথাও চান্স পাইনি বলে। তবে আমিই বা কি করবো চেষ্টা তো করেছিই না কি ¿
অবশেষে নিজের জেলার ভার্সিটিতেই ভর্তি হয়েছি দুজনে।
তবে আফসোস নুসরাত আর আমার ডিপার্টমেন্ট আলাদা। কিছুতেই আর এক হতে পারলাম না তবে কাছাকাছি তো আছি এটাই বা কম কিসে।
. ভার্সিটিতে এসে প্রেমটা আরো জমে গেছে। সাকিব আর সাদিয়াও সেম ভার্সিটিতেই আর পুরোনো জুটি বলে কথা। তার উপর কিছু বলার কেউ নেই তাই প্রেমটা ভালোই হচ্ছে।
দুজনের ক্লাস আলাদা হলেও মনটা একসাথেই থাকে। প্রতিদিন ক্লাস শেষে একসাথে আড্ডা দেয়া ঘুড়তে যাওয়া কাধে মাথা রেখে নদির পাড়ে বসে থাকা সব মিলিয়ে দারুন কাটছে ভার্সিটির জীবন।
ইদানিং আড্ডাটা হচ্ছে না বা*****ল। আমি ক্লাস না করে দাড়িয়ে থাকি আর মহারানির নাকি বিশেষ ক্লাস থাকে তাই আসতে পারেন না। আর ভালো লাগে না।
.অসহ্য লাগছে কয়টা দিন। পাগলি টা আগের মতো কথা বলছে না। ঘুড়তে যায় না শুধু ক্লাস ক্লাস করে। এতো পড়ে কি হবে? আমি তো ওকে বিয়ে করে খাওয়াবো না কি হিহিহি?
মিৃ পরের পৃষ্ঠায় চলে যায়।
ফাঁকা
তার পরের পৃষ্ঠায় যায় ফাঁকা। অনেকগুলা পৃষ্ঠা একদম ফাঁকা।
উল্টাতে উল্টাতে একদম শেষের দিকে চলে যায় ও। সেখানে কিছু লেখা
পড়তে শুরু করে।
আজ ছয় মাস পর ডায়রিতে লিখতে বসেছি।
হাহাহা
কলেজে থাকতেই ভেবে রেখেছিলাম এই ডায়রিতে শুধু আনন্দ গুলোই রাখবো ভাবি নি কষ্ট গুলো হুট করে এসে বাকি জায়গাটা দখল করে নেবে।
মিমের কাছে কথাগুলা কেমন যেন লাগে।
এসব কি লেখা!
মিমের ঘুম ঘুম লাগছে। তাড়াতাড়ি উঠে চা বানিয়ে আনে তারপর চায়ে চুমুক দিয়ে আবার পড়তে শুরু করে,
ভার্সিটির প্রথমের দিন গুলা খুব ভালোই যাচ্ছিলো তবে কয়েকটা মাসেই নুসরাত ভালোই বদলে যায়।
বেশি দেখা করে না কথা বলে না বললেও খুব কম। যা আমাকে ভিষণ কষ্ট দিচ্ছিলো। একদম সহ্য করতেই পারছিলাম না আমি। কেমন যেন লাগছিল।
সেদিন ক্লাস ছিলো না তাই ভেবেছিলাম নুসরাত কে নিয়ে ঘুড়তে যাবো তাই ওর রুমে গিয়ে দেখি একটা ছেলের সাথে বসে খুব আড্ডা দিচ্ছে আর হেসে হেসে কথা বলছে।
বিষয়টা তেমন ভাবে নিইনি ভেবেছিলাম ক্লাসমেট কথা বলতেই পারে। ওকে বলেছিলাম চলো ঘুড়তে যাই সেদিন না বলেছিল আমিও চলে এসেছিলাম।
এরপর থেকে আরো অবহেলা শুরু করে আমাকে। দেখাই করতে চাইতো না তবে আমি দেখতাম ক্লাসে খুব ভালোই হাসিখুশি থাকে।
মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসে ছেলেটার সাথে আড্ডাও দেয়। নুসরাত কে বলেছিলাম আমাকেও একটু টাইম দাও চলো কোথাও ঘুড়ে আসি আর ওদের সাথে এতো কেন কথা বলো। উত্তরে নুসরাত বলেছিল ওরা তো ক্লাসমেট ওদের একটু না টাইম দিলে কি হয় বলো।
আস্তে আস্তে আগের নুসরাত আর এখনকার নুসরাতের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে।
যেই নুসরাত একটা ঘন্টা আমি কথা না বললে কষ্ট পাইতো সেই নুসরাত এখন দিনের পর দিন ভুলে থাকছে।
সব সহ্য হলেও অবহেলাটা একদম সহ্য করা যায় না। চিন্তায় চিন্তায় একদম শুকিয়ে গেছিলাম তাই ভেবেছিলাম যা হয় হোক পাগলিটাকে কাল খুব করে বুঝাবো এতটা অবহেলা আর নিতে পারছি না।
পরদিন ভার্সিটি গিয়ে ক্লাস না করেই ওর রুমে গেছিলাম গিয়ে দেখি গায়ে হাত দিয়ে। দুজন হাসাহাসি করছে একদম সহ্য করতে পারিনি
কাছে গিয়েই ঠাসসসস করে ছেলেটাকে কষে চড় বসিয়ে দিয়েছিলাম। নিচে পড়ে গিয়েছিল ছেলেটা।
আমি ছেলেটাকে বেধরক মারছিলাম রাগটা খুব বেশিই ছিল তবে হঠাৎই গালে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে থমকে গেছিলাম।
নুসরাত!!!
নুসরাত এটা করতে পারলো!!
বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে, যে আমাকে এতটা ভালোবাসে সে আমাকে অন্য একটা ছেলের জন্য চড় মারবে।
"কোন সাহসে ওর গায়ে হাত দিস"?
নুসরাতের এমন কথাতে অনেকটা থমকে গেছিলাম।
আবারো থমকে গেছিলাম যখন বলেছিল তোর মতো একটা ছেলেকে এতোদিন ভালোবেসেছিলাম।
বুকটা ধক করে থেমে গেছিল যখন বলছিল তোকে আমি আর ভালোবাসি না।
আমি অনেক বার ক্ষমা চেয়েছিলাম।
নুসরাতের পায়েও পরেছিলাম আমাকে যা বলে বলুক যেন ছেড়ে না যায়।
নাহ আমি পারি নি।
আমার ভালোবাসাটা হয়তো খুবই দূর্বল ছিলো।
সেদিন শত চেষ্টা করেও পারিনি পাগলিটাকে আটকাতে। ছেলেটার হাত ধরে এতটুকুই বলেছিল,
যদি সত্যি ভালোবাসিস তো আর কোনদিন আমার কাছে আসিস না।
আমি তো ভালোবাসি তাই আর কিছু বলতে পারি নি।
যাকে এতটা ভালোবাসি তার জন্য এতটুকু কি করতে পারবো না?
শেষ বারের মতো ওর বাসায় গিয়ে ঘুমন্ত মুখটা দেখেই চলে এসেছিলাম।
চলে এসেছিলাম ওর শহর ছেড়ে।
হাহাহা
ভালোবাসা গুলা এমনি, স্বার্থপর হয়।
হাহাহা
তাইতো আর দুটো বছরে ফিরে যাইনি কখনো পাগলিটার শহরে।
ভালো আছে তো থাকুক না আরো ভালো।
চাইনা ওর মাঝে দেয়াল হয়ে থাকতে।
হাহাহা
তবে ভাবতেই অবাক লাগে তিন বছরের প্রেম.
কি পাগলিই না ছিল মেয়েটা।
মানুষ কত টা তাড়াতাড়ি বদলে যায়।
আমিও বদলে গেছি হাহাহা
সেই আমিটা আর এই আমিটা খুব আলাদা খুব।
তবে পাগলিটাকে এখনো ভালোবাসি।
পাগলিটা না হয় কথা দিয়ে কথা রাখেনি তো কি আমি সারাজীবন একাই না হয় ভালোবেসে যাবো।
হাতে চায়ের কাপ,কাপের ভিতর টুপ টুপ করে চোখের জল পড়ছে মিমের।
কেন যেন ছেলেটার জায়গায় অমিৃ নিজেকে ভাবছে আর কষ্ট পাচ্ছে।ও ভাবছে,
ছেলেটার মনে কত কষ্ট তবুও কি সুন্দর ভাবেই না থাকে। যেন কত্ত সুখি ছেলেটা।
আরও ভাবে, ছেলেটাকে কত কথা বলেছি তবুও মুখ ফুটে কিছুই বলেনি।
খুব কষ্ট হচ্ছে ওর।
ডায়রিটা বুকের উপর রেখেই কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে যায় ও।
সকালে ঘুম ভাঙে ওর মায়ের ডাকে।
-- কি হলো ডাকছো কেন?
-- যেই ছেলেটা থাকতো না ঐ যে তোকে বলেছিলাম অভ্র। ও নাকি আজ চলে যাবে এখান থেকে সব কিছু বের করছে একটু দেখা করে আসিস কেমন।
বলেই মিমের মা চলে যায়।
কথাটা শুনে বড় ধরনের শক খায় মিম।
তাড়াতাড়ি উঠে কোন রকমে ফ্রেশ হয়ে ডায়রিটা নিয়ে অভ্রর রুমের দিকে চলে যায়।
গিয়ে দেখে অভ্র সব কিছু ব্যাগে ভরছে।
-- চলে যাচ্ছেন কেন?
কারো কথা শুনে ঘুড়ে তাকায় অভ্র। আবার মিমকে একপলক দেখে চোখটা সরিয়ে নিজের মত ব্যাগ গুছায়।
--কি হলো চলে যাচ্ছেন কেন বলেন?
--আমি চাইনা আমার জন্য কেউ কষ্ট পাক।
আর বার বার আপনাকে ডিস্টার্ব করেছি।
নিষেধ করার পরও ছাদে উঠেছি। শেষ বার বলার পরও অপরাধ টা করেছি।
আমি চাই না আর আপনি বিরক্ত হোন।
এই প্রথম অভ্রর কন্ঠ শুনলো মিম।
এত্ত নরম সূরে কি কেউ কথা বলতে পারে!
ভেবে পায় না ও।
কেন জানি মিমের, অভ্রর উপর অধিকার খাটাতে ইচ্ছা করছে।
মিমের মনে হচ্ছে যেন ওকে ধরে রাখি
কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছে না।
ব্যাগটা গোছানো শেষ অভ্র ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বললো,
-- আপনাকে এই কয়টা দিনে অনেক বিরক্ত করেছি। যদি পারেন তো মাফ কইরেন কেমন?
আর ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
বলেই বের হয়ে যায় অভ্র।
কথাটা শুনে মিমের বুকটা কেন জানি ধক করে ওঠে।
মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছে ও।
ওর মাথা কাজ করছে না। তবে খুব করে বুঝছে অভ্রর চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না। চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি পরছে।
দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল মিম।
-- আমি আপনাকে ভালোবাসি।
হঠাৎ এমন কথায় চমকায় না অভ্র। কারণ খুব ভালো করেই জানে যে ডায়রিটা কাল মিমই নিয়েছিল।
মুচকি হাসে অভ্র।
-- আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি নুসরাতের চেয়েও বেশি।
-- আর কিছু বলবেন?
-- দেখেন বেশি বুঝবেন না। আমি সত্যি আপনাকে ভালোবাসি। কান্না করতে করতে মিম বলে।
-- এটা ভালোবাসা না শুধুই আবেগ কিছুদিন পর চলে যাবে।
-- এটা আবেগ না কুত্তা। বলেই মিম অভ্রকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
আর মুচকি মুচকি হাসে অভ্র।
অতঃপর : অভ্র বসে আছে ছাদে আর অভ্রর কোলে মাথা রেখে মিম শুয়ে আছে।
জেদি মিম খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে পর্যন্ত ঠিক করে ফেলেছে। যেন অভ্রকে না হারাতে হয়।
-- একটা গল্প শুনবা? বললো অভ্র।
বুকে ভালো করে মাথা রেখে মিম হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো,
ভার্সিটি যাচ্ছিল ছেলেটা। হঠাৎ একটা মেয়েকে খুব ভালো লেগে যায় তার। কিন্তু কি ভাবে যে তার কাছে যাবে তা খুঁজে পায় না। অতঃপর মেয়েটির বাসায় ভাড়া উঠে আর একটা ডায়রি বানায় নকল। যা দিয়ে মেয়েটাকে একদিন ইমপ্রেস করবে। ছেলেটা খুব বুদ্ধি করো ডায়েরিটা লিখেছিলো। মেয়েটা সেই ডায়রি পড়ে প্রেমেও পড়ে গেলো। অনেক কাহিনীর পর,
মেয়েটা এখন ছেলেটার বুকে।
গল্প টা মাথার উপর দিয়ে যায় মিমের।
তবে যখন ব্যাপারটা আস্তে আস্তে বুঝতে পারে তখন রাগে জ্বলে ওঠে।
-- কিহ! তার মানে তুমি নুসরাত কে ভালোবাসোনি?
-- নাহ।
-- তুমি ছ্যাকা ও খাওনি?
-- না।
-- তুমি কষ্ট ও পাওনি।
-- না।
-- কিইইহ! আমি তো ছ্যাকা খাওয়া অভ্রকে ভালোবেসেছি। তোকে ভালোবাসি না যা চলে যা এখান থেকে।
-- এই পাগলি কিন্তু আমি তো তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি।
-- ভুয়া তোর ভালোবাসা। তোর ডায়রিটার প্রেমে পড়ছি আমি তোর না।
-- ওহহহ আচ্ছা । তাহলে চলে যাই বলে অভ্র পা বাড়াতেই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মিম।
-- যেতে দেবো না তোকে। কোথায় যাবি হুহ?
হোক ডায়রিটা নকল তবুও আমি তোকে ভালোবাসি আর আমি তোকে কখনোই হারাতে চাই না।
অভ্র মুচকি মুচকি হাসে।
অবশেষে নকল ডায়রিতে প্রেম হলো তার।
সমাপ্ত
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com