Breaking News

অবনীর ভালোবাসা | Hosain Ahmed(আমি হিমু) | ২য় পর্ব +শেষ পর্ব

ক্লান্ত হয়ে বাস স্টান্ডে ফিরে এলাম।বাস স্টান্ডে আসতেই অবনীকে দেখতে পেলাম।একটা বেন্চের উপর মাথা নিচু করে বসে আছে।আমি তাড়াতাড়ি অবনীর কাছে গেলাম।
:-তুমি এখানে বসে আছো আর আমি কত জায়গায় খুজেছি জানো?(আমি)
:-নিশ্চুপ।
:-কিহলো কথা বলোনা কেনো?
:-নিশ্চুপ।
হঠাৎ খেয়াল করলাম অবনী কাঁদছে।অবনীর চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারিনা।অবনীর পাশে বসে ওর থুতনি ধরে আমার দিকে ঘুরালাম।
:-কী হয়েছে?কাঁদছো কেনো?(আমি)
:-নিশ্চুপ।
:-ওই কথা বলোনা কেনো?(ধমক দিয়ে)
:-আমার ব্যাগ হারিয়ে গেছে।(অবনী)
:-ধুর পাগলী।সামান্য একটা ব্যাগ হারিয়ে যাওয়ায় কেউ পাবলিক প্লেসে এভাবে কান্না করে?চুপ করো।আমি যাওয়ার পথে নতুন ব্যাগ কিনে দিবো।
:-তুমি বুঝবেনা। এই ব্যাগটা আমার কাছে খুব দামী ছিলো।
:-বাদ দাওতো।বাসায় চলো এখন।
:-না আমি যাবোনা।তুমি আমার ব্যাগ খুজে এনে দাও।
:-আমি কোথায় খুজবো এতো মানুষের ভিড়ে?তাছাড়া কি আছে ওই ব্যাগে যে ওই ব্যাগই তোমার লাগবে?
:-তোমার দেওয়া প্রথম উপহার।
অবনীর কথা শুনে চুপ করে কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।আমার দেওয়া উপহার হারিয়ে যাওয়ার জন্য যেই মেয়ে কান্না করতে পারে না জানি আমি হারিয়ে গেলে কী করবে।উপহারটাও খুব সামান্য ছিলো।একটা ডায়েরী।এর থেকেই বুঝা যায় অবনী আমাকে কতটা ভালোবাসে।
আমি হাত দিয়ে অবনীর চোখের পানি মুছে দিলাম।অনেকেই তাকিয়ে আমাদের এই দৃশ্য দেখছে।
:-যা হবার হয়েছে এখন বাসায় চলো।(আমি)
:-না আমি যাবোনা।তুমি আমার ব্যাগ খুজে এনে দাও।(অবনী)
:-আচ্ছা পাগলী মেয়েতো।ডায়েরী হারিয়েছে তাতে কী হয়েছে!আমিতো আর হারিয়ে যায়নি।যাওয়ার পথে আরেকটা কিনে দিবো।চলো।
:-না আমি যাবোনা।
কী মেয়েরে বাবা।এত করে বলছি তার পরেও যাবেনা।এক প্রকার জোর করে অবনীকে নিয়ে বাসে ওঠলাম।অবনী জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।একটা কথাও বলছেনা।অবনী মন খারাপ করে থাকলে আমার খুব খারাপ লাগে।
:-অবনী?(আমি)
:-নিশ্চুপ।
:-এই।
:-নিশ্চুপ।
:-দেখো আমার গা গরম হয়ে যাচ্ছে।মনে হয় জ্বর আসবে।
:-কই দেখি দেখি।
অবনী আমার দিকে ঘুরে কপালে হাত দিতে দিতে কথাটা বললো।জানতাম এভাবে না বললে একটা কথাও বলবেনা।
:-আমার জন্য তোমাকে রোদের মধ্যে আসতে হলো কষ্ট করে।আমি যে কি।তোমাকে ছাড়া এখনো চলতে শিখলাম না।(অবনী)
:-ওই চুপ থাকো।তোমার জন্য কষ্ট করবো নাতো কার জন্য করবো শুনি?(আমি)
:-তবুও।
:-কোনো তবুও টবুও নেই।
:-তোমার কাঁধে মাথা রাখি?
:-এতে অনুমতি নেবার কী আছে।
অবনী আমার কাধে মাথা রাখলো।জানালা দিয়ে বাতাস আসছে।সেই বাতাসে অবনীর চুলগুলো উড়ে এসে আমার মুখে পড়ছে আর আমি মুগ্ধ হয়ে অবনীকে দেখছি।
২ঘন্টার জার্নি শেষে বাসায় পৌঁছালাম।অবনী অবনীর বাসায় আর আমি আমার বাসায় চলে আসলাম।অবনীর ফ্যামিলি থেকেও আমাদের দুজনের ব্যাপারে জানে।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে লম্বা একটা ঘুম দিলাম।
ঘুম ভাঙ্গলো অবনীর ফোন কলে।
:-কোথায় তুমি?(অবনী)
:-ঘুমাচ্ছিলাম।(আমি)
:-একটু আমাদের বাসায় আসতে পারবে এখন?
:-হঠাৎ তোমাদের বাসায়?কোনো প্রবলেম হয়েছে?
:-আগে আসো তারপর বলছি।
:-আচ্ছা আসছি।
ফোন রেখে ফ্রেশ হয়ে অবনীদের বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলাম।হঠাৎ অবনী ওদের বাসায় কেনো ডাকলো বুঝতে পারছিনা।যাইহোক গেলেই দেখা যাবে।অবনীর বাসায় পৌঁছাতে ৩০ মিনিটের মত লাগলো।বাসায় প্রবেশ করতেই প্রথমে অবনীর বাবার সাথে দেখা
:-আসসালামুআলাইকুম।কেমন আছেন আঙ্কেল?(আমি)
:-ওলাইকুমআসসালাম।ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?(অবনীর বাবা)
:-জ্বি ভালো।অবনী কোথায়?
:-ভেতরে আছে।যাও।
:-আপনি কী বাইরে যাচ্ছেন?
:-হ্যাঁ।তুমি ভেতরে গিয়ে বসো আমি যাবো আর আসবো।
:-আচ্ছা।
আমি ভেতরে আসলাম।অবনী,অবনীর আম্মু আর ওর ছোট দুই বোন বসে আছে। আমি গিয়ে অবনীর পাশে বসলাম।সবার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ দেখতে পাচ্ছি।
:-কেমন আছো বাবা?(অবনীর আম্মু)
:-জ্বি আন্টি ভালো।আপনি?(আমি)
:-ভালো।তোমাকে আমিই ডেকেছি।কিছু কথা বলার জন্য।
:-জ্বি বলেন।
:-কথাগুলো তুমি কিভাবে নিবে বুঝতে পারছিনা।তবুও বলছি।
হঠাৎ করে অবনী আর ওর দুই বোন বাইরে চলে গেলো।কেনো গেলো সেটা আমার অজানা।ওদের দিকে মনোযোগ না দিয়ে অবনীর আম্মুর কথার দিকে মনোযোগ দিলাম।
:-আসলে অবনীর একবার বিয়ে হয়েছিলো।ছেলে অবনীর ফুফাতো ভাই।আমার শাশুড়ি মরার আগে ওদের দুজনকে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে গিয়েছিলো।অবনী যখন ক্লাস ৯ এ পড়ে তখন গ্রামের কাজী ডেকে বিয়ে পড়ানো হয়।কথা ছিলো অবনী এসএসসি পাশ করলে তারপর ওরা অবনীকে ঘরে তুলবে।কিন্তু অবনী এসএসসি পাশ করার পরে ওরা অবনীকে ঘরে তোলেনা উল্টো আমাদের কিছু জমি দখল করে নেয়।তখন ঝামেলার কারণে আমাদের সাথে ওদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়।
বিয়ের তেমন কোনো কাগজপত্র না থাকায় অবনীর ডিভোর্সের ব্যাপারে আইনী ব্যবস্থা নিতে পারিনি।এরপর ৪ বছর কেটে গেছে।এখন আবার নতুন করে ওরা বলছে অবনীকে ঘরে তুলবে।অবনী যা বলবে তাই ওরা মেনে নিবে।আমরা এখন সরাসরি না করে দিয়েছি।না করে দেওয়ায় আমাদের ছোট দুই মেয়েকে ওরা জ্বালাতন করছে।স্কুলে যাওয়ার পথে এটা ওটা বলে ভয় দেখায়।বাসায় এসে হুমকি দেয়।এখন বলো বাবা আমরা কী করবো?
এতক্ষণ চুপ করে আমি সবকিছু মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম।সবকিছু শুনে যা বুঝলাম অবনীর ফুফাতো ভাইয়েরা প্রভাবশালী।অবনী যদি এখন ওদের বাসায় বউ সেজে না যায় তাহলে অবনীর ছোট দুই বোনের অনেক ক্ষতি হতে পারে।কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম।আমি অবনীর আম্মুর কথা উওর না দিয়ে বাইরে চলে এলাম।বাইরে এসে দেখলাম অবনী আর ওর বোনেরা দাঁড়িয়ে আছে।অবনী আমাকে দেখে এগিয়ে এলো।
:-সরি।আমি অনেক আগেই তোমাকে সবকিছু বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি।আমাকে ক্ষমা করে দিও।(অবনী)
:-একটা কথা জিঙ্গেস করবো?
:-হ্যাঁ।
:-তুমি কী তোমার ফুফাতো ভাইয়ের সাথে মেলামেশা করেছো?
আমার কথা শুনে অবনী চুপ করে রইলো।ও হয়তো ভাবেনি এমন প্রশ্ন আমি করবো।ওর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। অবনীর চোখের পানিই আমার প্রশ্নের উওর দিয়ে দিচ্ছে।
:-আমাকে কী ছেড়ে যাবে তুমি?(আমি)
:-আমি কী করবো জানিনা।আজ বাসায় আসার পর আম্মুর কাছ থেকে শুনলাম ওরা নতুন করে ঝামেলা করছে।একদিকে তুমি আরেকদিকে আমার ফ্যামিলি।আমি কাকে বেঁছে নিবো জানিনা।যদি ওদের কথা না শুনি তাহলে আমার বোনদের স্কুলে যাওয়া হবেনা।ওদের ক্ষতি হবে।তুমিই বলো আমি কী করবো?তাছাড়া আমিতো এখন বাজে মেয়ে।তুমি অনেক ভালো।অনেক ভালো মেয়ে পাবে তুমি।
:-আমাকে এভাবে না ঠকালেও পারতে।
:-বিশ্বাস করো তোমাকে ঠকায়নি আমি।আমার ভাগ্য আমাকে ঠকিয়েছে।
:-আমি যখন সব ঝামেলা তখন আমি চলে যাচ্ছি।আমার একার জন্যতো আর তোমার ফ্যামিলির মানুষদের বিপদে ফেলতে পারিনা।ভালো থেকে।আমি যদি কখনো কষ্ট দিয়ে থাকি ক্ষমা করে দিও আমাকে।
কথাগুলো বলে অবনীদের বাসা থেকে বের হয়ে এলাম।অবনী কাঁদছে।ইচ্ছা করছে অবনীকে নিয়ে দুরে কোথাও পালিয়ো যায় কিন্তু আমার জন্য এতগুলো মানুষের জীবন নষ্ট হোক তা আমি চাইনা।
রাস্তা দিয়ে হাটছি।হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।ভালো করে খোজখবর না নিয়ে ভালোবাসার পরিণতি আজ বুঝতে পারছি।অবনীর হাত ধরার আগে আমি কোনদিন কোনো রিলেশন করিনি।কোনো মেয়ের হাত পর্যন্ত ধরিনি।উপর ওলাকে জিঙ্গেস করতে ইচ্ছা করছে কেনো আমার সাথে এমন করলো?চোখে দিয়ে পানি পড়ছে।বৃষ্টির পানির সাথে চোখের পানি মিশে যাচ্ছে।অবনীকে আমার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম।অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম অবনীকে নিয়ে কিন্তু আজ সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো।আসলে কিছু মানুষের ভাগ্যটাই খারাপ।তারা যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে তাকে পায়না।
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসে ভেজা পোশাক পাল্টালাম।
বৃষ্টিতে ভেজার কারণে রাতে প্রচন্ড জ্বর আসে আমার।অতিরিক্ত জ্বরের কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।শুধু জ্বরের কারণে বললে ভুল হবে অবনীকে হারানোটাও প্রভাব ফেলেছিলো।
যখন আমার জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি আব্বু আম্মুসহ আরো অনেকে দাঁড়িয়ে আছে।অবনীকেও দেখতে পেলাম।হয়তো আম্মু ফোন করে খবর দিয়েছে।আম্মু এখনো জানেনা অবনীর আগে বিয়ে হয়েছিলো।যদি জানতে পারে তাহলে উনিও হয়তো মেনে নিবেনা অবনীকে।না মানাটাই স্বাভাবিক কারণ কোনো বাবা মাই চাইনা একবার বিয়ে হওয়া মেয়েকে তাদের ঘরে তুলতে।
২দিন পর সুস্থ হলাম।এই ২ দিন অবনী আমাকে ফোন করেনি আর আমিও করেনি।আমি চাইনা আমার জন্য একটা পরিবার শেষ হয়ে যাক।অবনী আমাকে কোনদিন ভুলতে পারবেনা সেটা আমি জানি।ও শুধুমাএ ওর ফ্যামিলির কথা ভেবে ভালোবাসাটাকে কুরবানি দিচ্ছে।অবনীর সাথে কাটনো দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে।আমাদের জীবনে একজনের শুন্যতা আরেকজন পুরণ করতে পারেনা।ঠিক তেমনি অবনীর শুন্যতা কেউ পুরণ করতে পারবেনা।
টেবিলের উপর থেকে ল্যাপটপ নিয়ে অবনীর পিকগুলো বের করলাম।অবনীর সাথে ক্যামেরায় বন্দী হওয়া মুহুর্তগুলো দেখছি।অনেক সুন্দর ছিলো অবনীর সাথে কাটানো সময়গুলো।
বিছানার উপর রাখা ফোনটা বেজে ওঠলো।হাতে নিয়ে দেখি অবনীর আম্মুর নম্বর থেকে ফোন এসেছে।
:-হ্যালো ভাইয়া আমি শামীমা।আপু আত্মহত্যা করার জন্য বিষ খেতে খেয়েছে।আম্মু দেখে ফেলে সেটা।তারপর হাসপাতালে নিয়ে এসেছে।আপনি তাড়াতাড়ি আসুন।
ওপাশ থেকে ফোন কল কেটে গেলো।আমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য ছুটলাম।
হাসপাতালে পৌঁছে দেখি অবনীকে ইমারজেন্সীতে নেওয়া হয়েছে।অবনীর আব্বু আম্মু বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।আমি সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছি।আমি জানি কেনো অবনী আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলো।ও আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা।মেয়েটা খুব অভিমানী।এর আগে একদিন আমার সাথে অভিমান ২দিন না খেয়ে ছিলো।না খেয়ে থাকার ফলে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো।এই সারে তিন বছরের রিলেশনে বুঝেছি একটা মেয়ে কতটা ভালোবাসতে পারে একটা ছেলেকে।
আল্লাহর রহমতে অবনীর কিছু হয়নি।ঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে আসায় বেঁচে যায় অবনী।অবনীর আব্বু আম্মু অবনীকে আমার হাতে তুলে দেয়।আর বলে অবনীর ফুফাতো ভাইয়েরা যা ইচ্ছা করুক এতে তারা ভয় পায়না।আমিও মেনে নিয়েছি অবনীকে।কারণ অবনীকে ছাড়া আমিও বাঁচতে পারবোনা।


                                                                          *সমাপ্ত*

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com