গল্প:- হারিয়ে ফেলেছি তোমায় | লেখা: তানিম আহমেদ
মেঘা:- কে আপনি?বার বার আমার পিছু নেন কেনো?
শুভ্র:-জি মানে,একটা কথা বলার ছিলো.
মেঘা:-আমিতো আপনাকে চিনি না!কি এমন কথা বলতে চান আমাকে!আজেবাজে কথা বললে কিন্তু ভাইয়াকে ডাকবো। অনেক মাইর খাবেন তখন।
শুভ্র:-তাহলে থাক।আমি চলে যাই কেমন?
মেঘা:- কই যাবেন আপনি?
শুভ্র:-মেসে চলে যাবো।আমি জগন্নাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। মাঝে মাঝে কিছু কাজে আসা হয় মিরপুরে।আমি ওখান কার স্টুডেন্ট মেসেই থাকি।
মেঘা:-আপনি কি ভয় পাইছেন?
শুভ্র:-কিছুটা।অচেনা এলাকা তো।পরিচিত কেউ নেই।আপনি ইচ্ছে করলে আমাকে আটকে রাখতেও পারেন।
মেঘা:-আশ্চর্য! আপনি এমন ভাবছেন কেনো?আপনি অনেক ক্ষন থেকে চেয়ে ছিলেন আমার দিকে।এ জন্য ই বলা আর কি.
শুভ্র:-চেয়ে ছিলাম সত্যি.আর কখনো এমন করবোনা কেমন?আর আসবোও না এই এলাকাতে।
মেঘা:- চেয়ে ছিলেন কেনো?
শুভ্র:-এমনিতে।আপনি দেখতে অনেক কিউট তো এ জন্য?
মেঘা:-ও বুঝলাম।আর দেখতে ইচ্ছে করবেনা?
শুভ্র:-করবে।কিন্তু?
মেঘা:-- কিন্তু কি?
শুভ্র:-সেটা কি করে সম্ভব?
মেঘা:-আমাকে কি আপনার ভালো লাগে?
শুভ্র:- হুম,অন্নেক।এ জন্য ই তো সময় পেলে সাইকেল নিয়ে চলে আসি।আমাকে কেমন লাগে তোমার? তুমি করে বলি কেমন?তুমি তো অনেক পিচ্চি।
মেঘা:-হুম সমস্যা নাই ভাইয়া।আপনার চেহারা মোটামুটি।সামনে একটা দাত নাই কেনো?
শুভ্র:- ছোট বেলায় সাইকেল থেকে পরে ভেঙে গেছে।
মেঘা:-ভাঙা দাত টার জন্য খারাপ লাগছেনা,বরং ভালই লাগছে।আমি মাত্র ১০ম শ্রেণীতে পড়ি। আমি কিন্তু অনেক দুষ্ট আর জেদী প্রকৃতির।রেগে গেলে হাতের মধ্যে কামড় দেই।আপনি অনার্স কোন ইয়ারে এখন?
শুভ্র:-2nd ইয়ার।বয়স টা একটু বেশী হয়ে গেছে তাইনা?
মেঘা:-এমন বলছেন কেনো ভাইয়া!বয়স দিয়ে কি হবে!
শুভ্র:-তুমি কি আমাকে ইয়ে করো?
মেঘা:-ইয়ে মানে কি ভাইয়া?
শুভ্র:-ইয়ে মানে ইয়ে।এতোক্ষন কি বুঝালাম!কিচ্ছু বোঝোনাই তুমি!
মেঘা:-বুঝছি তো.
শুভ্র:-কি বুঝছো বলো তাহলে?
মেঘা:-আপনি একটা পাগল।
শুভ্র:-পাগল!এটা কেমন কথা!
মেঘা:-এটাই ঠিক কথা।প্রথম দেখাতেই পছন্দ করে ফেললেন আমাকে।একবার ভাবলেনো না মেয়েটা অনেক পিচ্চি।এখনো মায়ের কাছে শাড়ি পরিয়ে নেয়,বাবার কাছে ভাত খাইয়ে নেয়।আচ্ছা আপনি কি বলেন তো!
শুভ্র:-তাহলে কি চলে যাবো?
মেঘা:-জি মানে,আমি জানিনা।
এরপর ও খিলখিল করে হাসতে হাসতে বাসার পথ ধরে ছুটতে শুরু করলো.মাঝে মাঝে পেছনে তাকাচ্ছিলো আর মিষ্টি করে হাসছিলো।কি অপরুপ সেই হাসি!আমি এক পলকে চেয়েই রইলাম।এ কোন বিপদে পরলাম আমি!ও চলে যাওয়ার পর এমন লাগছে কেনো আমার!মনে হচ্ছে বিশাল একটা পাহারের স্তুপ চেপে ধরা হয়েছে বুকের মধ্যে. মেঘাকে অনেক বেশী ভালো বেসে ফেলেছি।
""ভালোবাসা এমনই হয়।পরিকল্পনা করে কাউকে ভালোবাসা যায় না কিছুতে।প্রেম আসে অজান্তে""
এরপর অনেক বার এই এলাকাতে এসেছি।শুধু একটি বার ওর মিষ্টি মুখ খানি দেখার জন্য।কাছে গিয়ে মোহনীয় সেই কণ্ঠস্বর শোনার জন্য।সকাল ১০ টা থেকে বিকেল অবধি বসে থাকতাম।সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় একবার আবার স্কুল থেকে বেড় হওয়ার সময় একবার কথা বলার চেষ্টা করতাম।ও কেনো জানি দেখেও না দেখার ভান করে আমাকে এড়িয়ে যেতো।অনেক বেশীই অবহেলিত ছিলাম ওর কাছে।
আজ আমি আর অবহেলিত হয়ে থাকবো না।অচেনা পরিবেশ তাতে কি হয়েছে!আমিতো আর অযোগ্য ছেলে নই।আমার ব্রাইট ফিউচার আছে।আজ ওর পথের গতি রোধ করে দাড়াবোই।এর পর যা হওয়ার হবে!
এইতো এদিকেই আসছে।একা আসছে।
মেঘা:-সরে যান বলছি!প্লীজ আমাকে আর জ্বালাইয়েন না!আমার লাইফ টাকে একেবারে অতিসঠ করে দিয়েছেন!বাসায় জানতে পারলে আমার স্বপ্নটা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। আমার বিয়ে দিয়ে দিবে।দয়াকরে আর কখনো আমার সামনে আসবেন না।আমি আপনাকে ভালোবাসিনা।আর কখনো আমাকে ডিস্টার্ব করলে ভাইয়াকে বলবো. ওনার বন্ধুরা মিলে আপনাকে মাড়তে মাড়তে একেবারে শে'স করে ফেলবে।এটা কি আপনি চান?
কি হলো!lamp post এর মতো দাড়িয়ে আছেন যে?
শুভ্র:-তোমাকে না দেখলে আমার কেমন জানি লাগে!প্লীজ আমাকে ভালোবেসে বুকে টেনে নাও।
মেঘা:-আশ্চর্য! এমন অশ্লীল কথা আর উচ্চারন করবেন না।সন্মান নিয়ে ফিরে চলে যান। রাস্তা ছাড়েন?
এরপর আমারো অনেক অভিমান জন্মেছিলো ওর প্রতি।প্রায় এক মাস যাইনি আর ওর এলাকাতে।কতোদিন আর নীরবে কষ্ট সয়ে যাওয়া যায়!
রুপা:-তারপর কি হয়েছিলো? আপনি কি আবারো দেখা করতে গিয়েছিলেন?ও কি আপনাকে শেষ অবধি মেনে নিয়েছিলো?
শুভ্র:-সেদিন শুক্রবার ছিলো. আমি যখন ওর বাসার সামনে গিয়ে দাড়িয়েছিলাম সেদিন ওর এস এস সি রেজাল্ট দিয়েছিলো।ওর বন্ধুরা অনেকেই আমাকে চিনতো।ওরা আমাকে দেখে কেনো জানি পাগলের মতো ছুটে আসছিলো।সিনিয়র রা ও ওদের সাথে তাল মিলিয়ে আমাকে অনেক মেরেছিলো।এলাকার কিছু সমাজ সেবী আমাকে রক্তাত্ব অবস্থায় রক্ষা করেছিলো. না হলে ওখানেই মরে পরে থাকতাম।আমি প্রায় তিন ঘন্টা মেডিকেলে অচেতন হয়ে পরে ছিলাম।মাথা ফেটে রক্ত ঝড়ছিলো, নাক কান দিয়েও বেড় হচ্ছিলো অবিরাম।আমাকে নাকি এভাবে মার খাওয়াতে চায়নি মেঘা।শুধু শাসিয়ে বিদায় করে দিতে বলেছিলো।কিন্তু আমি জেদ করে বারবার বলছিলাম,ওকে ভালোবাসি,ওর জন্য মরতেও পারি,ওকে ছেড়ে যেতে পারবোনা আমি।আমার এ অবস্থা দেখে নাকি ও ছাদ থেকে চিৎকার করে কেদেছিলো।কেউ শোনেনি ওর ডাক।আমাকে পশুর মতো মেরেছিলো লোহার শিক ইট আর পাথর দিয়ে।
রুপা:-আমার নিজেরি অনেক খারাপ লাগছে।তারপরো যে বেচে ফিরেছেন এটাই মহান আল্লাহর কৃপা।প্রায় দুবছর আগের গল্প বললেন।মেঘা এখন বড় হয়েছে।অনেক পরিনতিবোধো এসেছে ওর মধ্যে. খুব জানতে ইচ্ছে করছে, ও এখন কোথায় আছে।ও কি ওর প্রকৃত ভালোবাসাকে চিনতে পেরেছে?
শুভ্র:-মেডিকেলে যে কয়দিন বেডে শুয়ে ছিলাম প্রতিটা দিন ও স্কুল ছুটির পর আমাকে দেখতে এসেছিলো।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো।আমার জন্য খাবার নিয়ে এসে খাইয়েও দিতো.ওর বন্ধুরাও অনেক যত্ন নিয়েছিলো আমার।আমি বিধাতার কাছে শুয়ে বলতাম তিনি যেনো আমাকে এভাবে বিছানায় শুইয়ে রাখেন।মেঘা যেনো এভাবে আমাকে প্রতিদিন দেখতে আসে।তারপর আমি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম।মেঘাও আমাকে অনেক বেশী ভালোবেসে ফেলে।আমাকে না দেখে থাকতেই পারেনা।কোনোদিন কাজের চাপে দেখা না হলে, ফোন দিয়ে অনেক সময় ধরে কাঁদতো।অনেক ভালো মানসিকতা ছিলো আমার প্রেয়সীর।আমার জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত ছিলো।
কিন্তু ওর পরিবার এক সময় জেনে গেলো।জোর করে বিয়ের ব্যবস্থা করা হলো।মেঘা ওর বাবা মা আর ভাইকে অনেক বেশী ভয় পেতো। কিচ্ছু বলার শাহস ছিলো না ওর।ওরা অনেক পাওয়ার ফুল হওয়ায় আমারো কিচ্ছু করার ছিলোনা।মেঘা নাকি বিয়ের দিন অনেক অনেক কেদেছিলো আমাকে শেষ বারের মতো কাছে পাওয়ার জন্য।কিন্তু আমি যেতে পারিনি।প্রধান ফটকেই যে অনেক নিরাপত্তা রক্ষী বসে ছিলেন।
রুপা:-কি হলো ভাইয়া!আপনার চোখে অশ্রু কেনো?
কাদবেন না প্লীজ।এই সব শব্দহীন নীরব কান্না অনেক বেশী কষ্ট দেয় মানব মন কে।এর পর বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো তাই না?
শুভ্র:- না বিয়ে হয়নি।আমি আর বলতে পারছিনা।প্লীজ আর শুনতে চেয়োনা রুপা?
রুপা:-কেনো!বলেন প্লীজ!
শুভ্র:-মেঘা,আমাকে কথা দিয়েছিলো,আমি ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ ওকে স্পর্শ করতে পারবেনা কখনো। ও কথা রেখেছিলো।ও ১৩ টা ঘুমের tablet খেয়েছিলো বাসর ঘরে।শশুর বাড়ির লোকেরা মেডিকেলে নিয়েছিলো খুব দ্রুততার সাথে।কিন্তু বাঁচাতে পারেনি।ও হারিয়ে গেছে অনেক অনেক দূরে। আর কখনো ফিরবেনা ও।তাইতো আমি স্বপ্নহীন হয়ে পথে প্রান্তে বিচরন করি।ওকে ছাড়া যে অন্য কিছুই ভালো লাগেনা আমার।
রুপা:-চোখের পানি মোছেন ভাইয়া।আমি না বুঝে আপনাকে অনেক সময় উন্মাদ বলে গালি গালাজ দেই অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে।আজ বুঝতে পারলাম কেনো আপনি এমন হয়ে গেছেন।কেনো আপনি রাস্তা ঘাটে রাত দিন পরে থাকেন।আমায় ক্ষমা করে দিয়েন,,,,
-- সমাপ্ত --
শুভ্র:-জি মানে,একটা কথা বলার ছিলো.
মেঘা:-আমিতো আপনাকে চিনি না!কি এমন কথা বলতে চান আমাকে!আজেবাজে কথা বললে কিন্তু ভাইয়াকে ডাকবো। অনেক মাইর খাবেন তখন।
শুভ্র:-তাহলে থাক।আমি চলে যাই কেমন?
মেঘা:- কই যাবেন আপনি?
শুভ্র:-মেসে চলে যাবো।আমি জগন্নাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। মাঝে মাঝে কিছু কাজে আসা হয় মিরপুরে।আমি ওখান কার স্টুডেন্ট মেসেই থাকি।
মেঘা:-আপনি কি ভয় পাইছেন?
শুভ্র:-কিছুটা।অচেনা এলাকা তো।পরিচিত কেউ নেই।আপনি ইচ্ছে করলে আমাকে আটকে রাখতেও পারেন।
মেঘা:-আশ্চর্য! আপনি এমন ভাবছেন কেনো?আপনি অনেক ক্ষন থেকে চেয়ে ছিলেন আমার দিকে।এ জন্য ই বলা আর কি.
শুভ্র:-চেয়ে ছিলাম সত্যি.আর কখনো এমন করবোনা কেমন?আর আসবোও না এই এলাকাতে।
মেঘা:- চেয়ে ছিলেন কেনো?
শুভ্র:-এমনিতে।আপনি দেখতে অনেক কিউট তো এ জন্য?
মেঘা:-ও বুঝলাম।আর দেখতে ইচ্ছে করবেনা?
শুভ্র:-করবে।কিন্তু?
মেঘা:-- কিন্তু কি?
শুভ্র:-সেটা কি করে সম্ভব?
মেঘা:-আমাকে কি আপনার ভালো লাগে?
শুভ্র:- হুম,অন্নেক।এ জন্য ই তো সময় পেলে সাইকেল নিয়ে চলে আসি।আমাকে কেমন লাগে তোমার? তুমি করে বলি কেমন?তুমি তো অনেক পিচ্চি।
মেঘা:-হুম সমস্যা নাই ভাইয়া।আপনার চেহারা মোটামুটি।সামনে একটা দাত নাই কেনো?
শুভ্র:- ছোট বেলায় সাইকেল থেকে পরে ভেঙে গেছে।
মেঘা:-ভাঙা দাত টার জন্য খারাপ লাগছেনা,বরং ভালই লাগছে।আমি মাত্র ১০ম শ্রেণীতে পড়ি। আমি কিন্তু অনেক দুষ্ট আর জেদী প্রকৃতির।রেগে গেলে হাতের মধ্যে কামড় দেই।আপনি অনার্স কোন ইয়ারে এখন?
শুভ্র:-2nd ইয়ার।বয়স টা একটু বেশী হয়ে গেছে তাইনা?
মেঘা:-এমন বলছেন কেনো ভাইয়া!বয়স দিয়ে কি হবে!
শুভ্র:-তুমি কি আমাকে ইয়ে করো?
মেঘা:-ইয়ে মানে কি ভাইয়া?
শুভ্র:-ইয়ে মানে ইয়ে।এতোক্ষন কি বুঝালাম!কিচ্ছু বোঝোনাই তুমি!
মেঘা:-বুঝছি তো.
শুভ্র:-কি বুঝছো বলো তাহলে?
মেঘা:-আপনি একটা পাগল।
শুভ্র:-পাগল!এটা কেমন কথা!
মেঘা:-এটাই ঠিক কথা।প্রথম দেখাতেই পছন্দ করে ফেললেন আমাকে।একবার ভাবলেনো না মেয়েটা অনেক পিচ্চি।এখনো মায়ের কাছে শাড়ি পরিয়ে নেয়,বাবার কাছে ভাত খাইয়ে নেয়।আচ্ছা আপনি কি বলেন তো!
শুভ্র:-তাহলে কি চলে যাবো?
মেঘা:-জি মানে,আমি জানিনা।
এরপর ও খিলখিল করে হাসতে হাসতে বাসার পথ ধরে ছুটতে শুরু করলো.মাঝে মাঝে পেছনে তাকাচ্ছিলো আর মিষ্টি করে হাসছিলো।কি অপরুপ সেই হাসি!আমি এক পলকে চেয়েই রইলাম।এ কোন বিপদে পরলাম আমি!ও চলে যাওয়ার পর এমন লাগছে কেনো আমার!মনে হচ্ছে বিশাল একটা পাহারের স্তুপ চেপে ধরা হয়েছে বুকের মধ্যে. মেঘাকে অনেক বেশী ভালো বেসে ফেলেছি।
""ভালোবাসা এমনই হয়।পরিকল্পনা করে কাউকে ভালোবাসা যায় না কিছুতে।প্রেম আসে অজান্তে""
এরপর অনেক বার এই এলাকাতে এসেছি।শুধু একটি বার ওর মিষ্টি মুখ খানি দেখার জন্য।কাছে গিয়ে মোহনীয় সেই কণ্ঠস্বর শোনার জন্য।সকাল ১০ টা থেকে বিকেল অবধি বসে থাকতাম।সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় একবার আবার স্কুল থেকে বেড় হওয়ার সময় একবার কথা বলার চেষ্টা করতাম।ও কেনো জানি দেখেও না দেখার ভান করে আমাকে এড়িয়ে যেতো।অনেক বেশীই অবহেলিত ছিলাম ওর কাছে।
আজ আমি আর অবহেলিত হয়ে থাকবো না।অচেনা পরিবেশ তাতে কি হয়েছে!আমিতো আর অযোগ্য ছেলে নই।আমার ব্রাইট ফিউচার আছে।আজ ওর পথের গতি রোধ করে দাড়াবোই।এর পর যা হওয়ার হবে!
এইতো এদিকেই আসছে।একা আসছে।
মেঘা:-সরে যান বলছি!প্লীজ আমাকে আর জ্বালাইয়েন না!আমার লাইফ টাকে একেবারে অতিসঠ করে দিয়েছেন!বাসায় জানতে পারলে আমার স্বপ্নটা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। আমার বিয়ে দিয়ে দিবে।দয়াকরে আর কখনো আমার সামনে আসবেন না।আমি আপনাকে ভালোবাসিনা।আর কখনো আমাকে ডিস্টার্ব করলে ভাইয়াকে বলবো. ওনার বন্ধুরা মিলে আপনাকে মাড়তে মাড়তে একেবারে শে'স করে ফেলবে।এটা কি আপনি চান?
কি হলো!lamp post এর মতো দাড়িয়ে আছেন যে?
শুভ্র:-তোমাকে না দেখলে আমার কেমন জানি লাগে!প্লীজ আমাকে ভালোবেসে বুকে টেনে নাও।
মেঘা:-আশ্চর্য! এমন অশ্লীল কথা আর উচ্চারন করবেন না।সন্মান নিয়ে ফিরে চলে যান। রাস্তা ছাড়েন?
এরপর আমারো অনেক অভিমান জন্মেছিলো ওর প্রতি।প্রায় এক মাস যাইনি আর ওর এলাকাতে।কতোদিন আর নীরবে কষ্ট সয়ে যাওয়া যায়!
রুপা:-তারপর কি হয়েছিলো? আপনি কি আবারো দেখা করতে গিয়েছিলেন?ও কি আপনাকে শেষ অবধি মেনে নিয়েছিলো?
শুভ্র:-সেদিন শুক্রবার ছিলো. আমি যখন ওর বাসার সামনে গিয়ে দাড়িয়েছিলাম সেদিন ওর এস এস সি রেজাল্ট দিয়েছিলো।ওর বন্ধুরা অনেকেই আমাকে চিনতো।ওরা আমাকে দেখে কেনো জানি পাগলের মতো ছুটে আসছিলো।সিনিয়র রা ও ওদের সাথে তাল মিলিয়ে আমাকে অনেক মেরেছিলো।এলাকার কিছু সমাজ সেবী আমাকে রক্তাত্ব অবস্থায় রক্ষা করেছিলো. না হলে ওখানেই মরে পরে থাকতাম।আমি প্রায় তিন ঘন্টা মেডিকেলে অচেতন হয়ে পরে ছিলাম।মাথা ফেটে রক্ত ঝড়ছিলো, নাক কান দিয়েও বেড় হচ্ছিলো অবিরাম।আমাকে নাকি এভাবে মার খাওয়াতে চায়নি মেঘা।শুধু শাসিয়ে বিদায় করে দিতে বলেছিলো।কিন্তু আমি জেদ করে বারবার বলছিলাম,ওকে ভালোবাসি,ওর জন্য মরতেও পারি,ওকে ছেড়ে যেতে পারবোনা আমি।আমার এ অবস্থা দেখে নাকি ও ছাদ থেকে চিৎকার করে কেদেছিলো।কেউ শোনেনি ওর ডাক।আমাকে পশুর মতো মেরেছিলো লোহার শিক ইট আর পাথর দিয়ে।
রুপা:-আমার নিজেরি অনেক খারাপ লাগছে।তারপরো যে বেচে ফিরেছেন এটাই মহান আল্লাহর কৃপা।প্রায় দুবছর আগের গল্প বললেন।মেঘা এখন বড় হয়েছে।অনেক পরিনতিবোধো এসেছে ওর মধ্যে. খুব জানতে ইচ্ছে করছে, ও এখন কোথায় আছে।ও কি ওর প্রকৃত ভালোবাসাকে চিনতে পেরেছে?
শুভ্র:-মেডিকেলে যে কয়দিন বেডে শুয়ে ছিলাম প্রতিটা দিন ও স্কুল ছুটির পর আমাকে দেখতে এসেছিলো।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো।আমার জন্য খাবার নিয়ে এসে খাইয়েও দিতো.ওর বন্ধুরাও অনেক যত্ন নিয়েছিলো আমার।আমি বিধাতার কাছে শুয়ে বলতাম তিনি যেনো আমাকে এভাবে বিছানায় শুইয়ে রাখেন।মেঘা যেনো এভাবে আমাকে প্রতিদিন দেখতে আসে।তারপর আমি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম।মেঘাও আমাকে অনেক বেশী ভালোবেসে ফেলে।আমাকে না দেখে থাকতেই পারেনা।কোনোদিন কাজের চাপে দেখা না হলে, ফোন দিয়ে অনেক সময় ধরে কাঁদতো।অনেক ভালো মানসিকতা ছিলো আমার প্রেয়সীর।আমার জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত ছিলো।
কিন্তু ওর পরিবার এক সময় জেনে গেলো।জোর করে বিয়ের ব্যবস্থা করা হলো।মেঘা ওর বাবা মা আর ভাইকে অনেক বেশী ভয় পেতো। কিচ্ছু বলার শাহস ছিলো না ওর।ওরা অনেক পাওয়ার ফুল হওয়ায় আমারো কিচ্ছু করার ছিলোনা।মেঘা নাকি বিয়ের দিন অনেক অনেক কেদেছিলো আমাকে শেষ বারের মতো কাছে পাওয়ার জন্য।কিন্তু আমি যেতে পারিনি।প্রধান ফটকেই যে অনেক নিরাপত্তা রক্ষী বসে ছিলেন।
রুপা:-কি হলো ভাইয়া!আপনার চোখে অশ্রু কেনো?
কাদবেন না প্লীজ।এই সব শব্দহীন নীরব কান্না অনেক বেশী কষ্ট দেয় মানব মন কে।এর পর বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো তাই না?
শুভ্র:- না বিয়ে হয়নি।আমি আর বলতে পারছিনা।প্লীজ আর শুনতে চেয়োনা রুপা?
রুপা:-কেনো!বলেন প্লীজ!
শুভ্র:-মেঘা,আমাকে কথা দিয়েছিলো,আমি ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ ওকে স্পর্শ করতে পারবেনা কখনো। ও কথা রেখেছিলো।ও ১৩ টা ঘুমের tablet খেয়েছিলো বাসর ঘরে।শশুর বাড়ির লোকেরা মেডিকেলে নিয়েছিলো খুব দ্রুততার সাথে।কিন্তু বাঁচাতে পারেনি।ও হারিয়ে গেছে অনেক অনেক দূরে। আর কখনো ফিরবেনা ও।তাইতো আমি স্বপ্নহীন হয়ে পথে প্রান্তে বিচরন করি।ওকে ছাড়া যে অন্য কিছুই ভালো লাগেনা আমার।
রুপা:-চোখের পানি মোছেন ভাইয়া।আমি না বুঝে আপনাকে অনেক সময় উন্মাদ বলে গালি গালাজ দেই অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে।আজ বুঝতে পারলাম কেনো আপনি এমন হয়ে গেছেন।কেনো আপনি রাস্তা ঘাটে রাত দিন পরে থাকেন।আমায় ক্ষমা করে দিয়েন,,,,
-- সমাপ্ত --
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com