গল্পঃ মধ্যবিত্তের ভালোবাসা । পর্ব-১০
লেখকঃ MD A J Mallick
———————————–
-আসলে আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।নিজের জীবনের থেকেও বেশি।প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না।আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।(কান্নাজড়ানো কন্ঠে নীলা বলতে থাকলো কথাগুলো)
.
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।
সোজা নিচে নিজের রোমে চলে গেলাম।
শাওয়ার ছেড়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম।
কিছুই মাথায় আসছে না।
.
এটা কোনোভাবেই সম্ভব না।
.
তাই নীলাকে এড়িয়ে চলতে হবে।
আমার জীবনের সাথে আর কাউকে জরাতে চাই না।
নীলাকে যে আমি পছন্দ করি না তা নয়।
কিন্তু অনুর যায়গা অন্য কাউকে দেয়া যাবে না।
.
শাওয়ার থেকে বের হলাম।
.
হঠাৎ করেই চারদিকে অন্ধকার হয়ে যেতে লাগলো।আমি ধপাস করে পড়ে গেলাম।
.
তারপরে আর কিছু মনে নাই।
.
সকালে নিজেকে ফ্লোরে আবিষ্কার করলম?।
.
মাথা টা ব্যথা করছে।
তখন মনে পড়লো আমি অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম।
.
কোনোভাবে উঠে ফ্রেশ হতে গেলাম।
.
আজ শনিবার তাই অফিস বন্ধ।
.
এমন সময় নিশার ডাক নিলয় ভাইয়া খেতে আসেন।আজ আমি নিজের হাতে রান্না করেছি?।
তুমি কেনো কষ্ট করতে গেলে।প্রথম দিন রান্না করার কি দরকার ছিল কষ্ট করে।
.
-আমার কোনো কষ্ট হয়নি?।আপনি খেতে আসেন?।(নিশা)
-আচ্ছা আসছি।(আমি)
.
ইচ্ছা না থাকা সত্তেও খেতে গেলাম।
.
দেখি আল-আমীন রাগি লুক নিয়ে বসে আছে।
.
-এতক্ষণে মহারাজের আসার সময় হলো?।(আল-আমীন)
-সরি রে।আসলে রাতে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম মনে হয়?।তাই দেরি হয়ে গেল?।(আমি)
-মানে কি?এখন ঠিক আছিস তো?আগে বলবি তো।চল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।(আল-আমীন)
-আরে না তার দরকার নেই।এখন ঠিক আছি?।(আমি)
-খাওয়া শুরু কর?।তোর বোনের হাতের রান্না কেমন লাগে দেখে নে?।(আল-আমীন)
-একটা কথা বলার ছিলো।(আমি)
-হুমম্ বল।(আল-আমীন)
-আমি ফ্ল্যাটটা বদলাতে চাই।তোদের তো এখানে বিয়ে হয়ে গেছে তাই।(আমি)
-কি যে বলিস।আচ্ছা এই বাসায় আরো একটা ফ্ল্যাট খালি আছে আমরা ওইটায় শিফট হয়ে যাবো?।(আল-আমীন)
-যা ভালো মনে করছ।(আমি)
.
একটু খেয়ে রোমে চলে আসলাম?।
.
আজ আল-আমীন অন্য ফ্ল্যাটে চলে গেলো।আমি আর আল-আমীন সবকিছু গোছগাছ করলাম।
.
এখন যতটুকু পারি নীলাকে এড়িয়ে চলি।
.
অফিসে যাই আর অফিস থেকে আসি।
.
কারো সাথে কোনো কথা বলি না।খুব প্রয়োজন হলে কথা বলি।
.
অফিস থেকে বাসায় ফিরেই দরজা বন্ধ করে রাখি?।
.
এর মধ্যে নীলা আমার সাথে অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেছে।কিন্তু আমি এড়িয়ে গেছি প্রত্যেকবার।
.
এভাবেই চলছে দিন।
একা একা খুব খারাপ লাগছে।
আজ একটু ছাদে গেলাম অনেকদিন পর।
.
অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি।হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম।আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এটা নীলা।তাই আমি আর দেরি না করে সোজা নিচে নেমে আসতে গেলাম।
.
এমন সময় নীলা আমার পথ আটকে…
-আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে?।(কান্নাজড়িত কন্ঠে নীলা)
-আমার আপনার সাথে কোনো কথা নাই।আর আমি আমার জীবনের সাথে আর কাউকে জড়াতে চাই না।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করবেন?।(আমি)
-এখন আমি আপনি হয়ে গেলাম।আমাকে ভালো না বাসার কারণ টা কি জানতে পারি?(নীলা)
-কারণ আমার আগে একটা বিয়ে হয়েছে।আর আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।(আমি)
-কিন্তু সে তো তোমাকে ভালো বাসে না।কেনো আমাকে এতো কষ্ট দিচ্ছো??আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।প্লিজ আমাকে এইভাবে অবহেলা করো না।আমার খুব কষ্ট হয়?।(নীলা)
-সরি।তুমি অনেক ভালো ছেলে পাইবা।যে তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসবে।অনেক সুখে থাকবে।(এই কথা টা বলেই আমি নিচে চলে আসছিলাম)
-তুমি আমার ভালো থাকাটা বুঝলে না?।(নীলা)
-আমি একটু পিছনে ফিরে দেখি নীলা কেমন যেন হয়ে গেছে।একেবারে রোগা আর চোখের নিচে কালো দাগ পড়া।(চাঁদের আলোয় দেখলাম নীলাকে।অনেকদিন পর ওর দিকে তাকালাম)
.
আমি আর কিছু না বলেই চলে আসলাম রোমে।
.
শাওয়ারটা ছেড়ে দাড়িয়ে আছি আর ভাবছি আমার জীবনটা কেনো এমন?।
.
আজ রাতে আর ঘুম আসবে না বুঝতে পারলাম।তাই বেলকনিতে দারিয়ে আছি।
অনেক রাত হয়ে গেছে।
.
হঠাৎ করে আমার ফোনটা কেপে উঠলো।
ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখি আল-আমীন।
আমি তো চিন্তায় পড়ে গেলাম।
যাই হোক এতো না ভেবে ফোন টা রিসিভ করলাম।
আর আল-আমীন যা বললো তা শুনার জন্যে আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না?।
-ওই তুই কি ঘুমিয়ে আছিস?(আল-আমীন)
-না কেনো?(আমি)
-তাড়াতাড়ি নিচে আয়।নীলা সুইসাইড এটেন্ড করেছে?।(আল-আমীন)
.
আমার হাত থেকে ফোন টা পড়ে গেলো।
আমি তাড়াতাড়ি করে নিচে গিয়ে দেখি এম্বুলেন্সে করে নীলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
.
-তাড়াতাড়ি বাইক বের কর।(আল-আমীন)
.
আমি বাইক বের করলাম।পরে আল-আমীন আর আমি এম্বুলেন্সের পিছনে যেতে লাগলাম।
.
নীলাকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হলো।
.
সবাই কান্না করছে।আর নীলার মা বলতে লাগলেন শেষ অনেকদিন ধরেই নীলা ঠিকমতো খেতো না,ঠিকমতো ঘুমাতো না?।
.
আল-আমীন আমাকে একটু দুরে ডেকে বলতে লাগলো তোকে কি কিছু বলেছে?কেনো এমন করলো তার কোনো কারণ জানিস?
.
আমি আল-আমীনকে সবকিছু খুলে বলতেই অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
.
কেনো এমন করলি?আজ নীলার কিছু হয়ে গেলে আমি তো তোকে ক্ষমা করে দিবো।কিন্তু তুই কি পারবি নিজেকে ক্ষমা করতে?।
.
নীলার কিছু হয়ে যাবে কথাটি শুনতেই আমার বুকের বাম পাশটায় চিন চিন ব্যথা অনুভব করলাম।
.
আমিও ভাবছি কিভাবে পারলাম আমি এরকম করতে।
যে আমাকে ভালোবাসে না তার কথা ভেবে নিজের ভালোবাসাকে এভাবে অবহেলা করতে পারলাম।(ভাবতেই চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো?)
.
একটু পরে ডাক্তার ইমার্জেন্সি থেকে বের হলেন।
এখন উনি সুস্থ আছেন।কিন্তু এখন কেউ দেখা করতে পারবেন না।
কিন্তু আপনাদের মধ্যে নিলয় কে?(ডাক্তার)
-আমি নিলয় বলেন।(আমি)
-পেশেন্ট বারবার আপনার নাম নিচ্ছিলো।আপনি চাইলে দেখা করতে পারবেন।(ডাক্তার)
-থ্যাংক ইউ ডাক্তার।(বলেই আমি নীলার কেবিনে চলে গেলাম)
.
আমাকে দেখে নীলা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বললো আমাকে ভালো বাসতে হবে না।কিছু দিন পর আমি এমনিতেই চলে যাবো?।
.
-আমি যদি যেতে না দেই তবে?(আমি)
-তুমি কেনো আমাকে যেতে দেবে না। তুমি তো আর আমাকে ভালোবাসো না?।(কান্না করতে করতে নীলা)
-কে বলেছে।আমি আমার পাগলীটাকে খুব ভালো বাসি।(আমি)
-কি সত্যি?।সত্যি আমাকে ভালোবাসো?।(নীলা)
-মিথ্যা ভালো কি বাসা যায়?(আমি)
-তবুও তোমার সাথে কথা বলবো না?।(নীলা)
-কেনো আমি আবার কি করলাম?(আমি)
-এতোদিন আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছো?।(নীলা)
-তাহলে আমার কি শাস্তি দেয়া হবে?(আমি)
-আমাকে জড়িয়ে ধরো?(নীলা? কিছুটা লজ্জা পেয়ে)
.
.
–চলবে….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com