গল্পঃ মান অভিমান দুষ্টুমি | লেখকঃ সিয়াম আহমেদ
আমার সাথে নীলার ঝগড়া নতুন কিছু না। প্রতিনিয়তই হয়। ঝগড়া করতেও একটা মজা আছে। ইচ্ছে করেই ঝগড়া করি ওর সাথে (যদিও ব্যাপারটা নীলা জানে না) কারন, ঝগড়া সময় ও আমাকে অনেক কড়া কড়া কথা শুনিয়ে দেয়। নীলার বকা খেতে খারাপ লাগে না, আমি বরং এ ব্যাপারটা খুব উপভোগ করি। ও বকা দেয় আর আমি হাসি। শব্দহীনভাবে হাসার চেষ্টা করি। কিন্তু মাঝে মাঝে হো হো করে হেসেই ফেলি। আর উনি রাগে গজগজ করতে থাকে। আসলে ওর মুখে এতো বকা ঝকা মানায় না। যে মানুষটা তার হাসি দিয়েই আমাকে মোহিত করে রাখে তার মুখে বকাটা যেন বড্ড বেশি বেমানান। মাঝে মাঝে রাগ করে বলে “যাও তমার সাথে আর কথাই নাই”। ৫ মিনিটও আমার সাথে টিক্তে পারবে না।লক্ষ্মী মেয়ের মতো একটু পরেই এসে বলবে,
–“নাহ, বলদের সাথে রাগ করে লাভ নেই। বলদ তো বলদই।’’
আমি আবার হেসে উঠি।
–“বলদ বলেন আর যাই বলেন বলদটা কিন্তু আপনার ই, হা হা হা”।
–হাসবি না কুত্তা। থাবড়া দিয়া তোর দাত সব ফালাই দিবো।
–আচ্ছা দেন। কোন গালে দিবেন? ডান নাকি বাম ?
–এতো প্যাঁচাল পারস ক্যান? হিলের বাড়ি খাবি?
–ছি ছি বেয়াদব মেয়ে!! জামাই পেটাতে চায়!!!
–তুই আমার জামাই হইলি কবে রে??
–আরে বিয়ে তো আমাকেই করবে। তাই এডভান্স ডাকছি আর কি।
–যা তো ভাগ। আমার তো আর কাজ নাই যে তোর মত একটা ষ্টুপিডকে বিয়ে করব।
–আমাকেই করতে হবে। আমার মতো পাত্রআর পাইবা না। আফটার অল আমি তো তোমায় ভালোবাসি
–ভালোবাস না তো ছাই। আমাকে শুধু কাঁদাও।
–আমিও কি কম কাঁদি??? তুমি যে বারবার মরার কথা বলো।
–ভুল তো বলি নি। যদি সত্যিই মারা যাই???
–দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।
কথাটা বলেই আমি লাইনটা কেটে দিলাম। নাহ, এভাবে আর হচ্ছে না। ওকে একটু মজা দেখানো দরকার।
তখন শীতকাল ছিলো, “আম্মুকে বললাম, আম্মু খেলতে যাচ্ছি। একঘণ্টার মাঝেচলে আসব”। আমার ব্যাডমিন্টনের রেকেট হাতে আর কালো জ্যাকেটটা গায়ে জরিয়ে বেরিয়ে পরলাম। শীতের রাতে রাস্তায় লোকজন খুব কম ছিলো, রিকশাও নেই। অগত্যা হেঁটেই রউনা হলাম আমার বদমাশ নীলার বাসায়।
রাগ করে ফোন কেটেছিলাম বলে নীলা বারবার ফোন দিচ্ছিলো। আমিও বারবার কেটে দিচ্ছিলাম। ১৫ মিনিট পর আমি নীলাদের বাসার সামনে। ফোন দিলাম ওকে,
–হ্যালো!!! কই ছিলা তুমি?? ফোন কেটে দিচ্ছিলা যে?
–নিচে নামেন। কথা আছে।
–মানে?
–নামো তাড়াতাড়ি।
(ওর রুমের জানালার পর্দাটা নড়ে উঠলো। বুঝলাম ও আমাকে দেখেছে। এক্ষুনি নিচে আসবে।)
–তুমিইইইইইইইইইইই এখানে কি করছো!!!!!!! কেই দেখলে তো সর্বনাশ।
–আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলবো। বলবো যে আপনার মেয়ে শুধু আমাকে কাঁদায়। আমাকে বলে সে নাকি মারা যাবে।
–বাবার সাথে কথা বলতে যাবে?সাহস আছে? ত যাও বাবার সাথে কথা বলো।
(ও ভেবেছিলো আমি হয়ত ওর সাথে মজা করছি। আমি সত্যিই সিঁড়ী বেয়ে উপরে উঠতে লাগলাম।
ও আমার হাত ধরে ফেললো )
–আরে তুমি দেখি পাগল হয়ে গেছ। আব্বু জানলে তো সব শেষ।
–তুমিই তো বারবার সবকিছু শেষ করে দিতে চাইছ। মরার কথা কেন বলো তুমি ? আমার কি খারাপ লাগে না!!!
( কথাটুকু বলেই আমি কেঁদে দিলাম )
–এই যে কান ধরলাম আর কখনো বলবো না এমন কথা ।তুমি কেঁদ না প্লিজ। দেখি তো এদিকে তাকাও।
(ওড়না দিয়ে আমার চোখ মুছে দিলো)
–:’(
–কেঁদো না আমার বাবুটা।
–হুম। আজকের কথাটা যেন মনে থাকে।
–অবশ্যই। এখন বাসায় যাও।
–একটা কথা বলবো ???
–হ্যা বলো।
–তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।
–বদ পোলা!! ভাগ এখান থেকে।
–আচ্ছা।
(আমি উল্টো ঘুরে চলে যাচ্ছিলাম। এমনসময় পেছন থেকে ও ডাক দিলো।)
–এই শোন
আমি পেছন ফিরতেই কোমল দুটি হাত আমাকে জড়িয়ে নিলো শক্ত করে।আমিও খুব শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম আমি। আমার কানে কানে ও বললো, “I love u babu,এভাবে আমাকে আগলে রেখ সারাজীবন”
মানুষ যে কতটা আনন্দে,কতটা ভালোলাগায় কাঁদতে পারে তা বুঝতে পারলাম। দুচোখের জল অস্থির হয়ে গেলো। আমিও ওর কানে কানে বলাম, “I love u so much babuni” বলেই কেঁদে দিলাম।
নীলা বললো, “আবার কাঁদছো!!!!! দাঁড়াও কাল রাতে আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলতে যাব”
এবার দুজনেই হেসে উঠলাম।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com