গল্পঃ লুকোচুরি প্রেম
ভাইয়া, আজকে রোজা রাখছেন?
.
আমি অনন্যার প্রশ্নটা শুনে একটু বিরক্তই হলাম। রোজ দেখা হলেই এক প্রশ্ন করতে হবে কেন? আমি কোন মেয়ে নাকি?
আর আমি ওর মত বাবা মায়ের আদরের মেয়েও না যে মাসে কয়েক টা রোজা রাখবো। ছোট থেকেই ত্রিশটা করে রোজা রাখি।
.
নিজের বিরক্তি ভাব টা কাঁটিয়ে, মাথা নামিয়ে জবাব দিলাম,
-হ্যাঁ,রোজা আছি।
.
আমার কথা গুনে অনন্যাও গলা মেলালো, বলল,
-আমিও আজ রোজা আছি,
আমি মুখে হাসি এনে বললাম,
-গুড,তো আমি যাই এখন?
.
আমি অনন্যার অনুমতির অপেক্ষা না করেই সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগলাম।
দু এক পা ফেলতেই আবার ওর ডাক,
-শোনেন,,
.
আমার আবার বিরক্ত লাগলো। এমনিতেই টিউশনির দেরী হয়ে যাচ্ছে তার উপর ছ তলা সিড়ি নামতে হবে,
রোজার মাসে যা আমার কাছে পাহাড় জয় করার মত।
.
আমি পিছন ঘুরে বললাম,
-বলো?
-আপনি কি প্রেম করেন?
.
ওর প্রশ্ন টা শুনে একটু অবাকই হলাম,
এমন কিছু ওর মাথায় এলো কিভাবে?
তাও সেটা রোজার মাসে।
আমি একটু অনন্যার দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
-কেন তোমার মনে হলো এমন?
-রোজার দিনে ছ তলা সিড়ি ভেঙে প্রতিদিন ওঠা নামা করেন কেন?
-শুধু প্রেমই কাজ,
আর কোন গুরুত্ত্ব পূর্ণ কাজ থাকতে পারেনা?
-পারে?
-হ্যাঁ, আমার টিউশিনি থাকে,
-রোজা দুবেলাই?
-হ্যাঁ,
-আচ্ছা, ঠিকাছে।
-হুম,থাকো যাই।
.
আমি হাসি মুখেই অনন্যাকে বিদায় দিয়ে আসলাম।
অনন্যাকে আমার বেশ লাগে তবে ওর বাচ্চামি ব্যাপার টার কারণে মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে।
বাবা মায়ের একমাত্র আদরের সন্তান হলে যা হয় আর কি?
অবশ্য বাড়ি ওয়ালার মেয়ে না হলে অনন্যার সাথে আমার এত দিনে প্রেম হয়ে যেত।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় অনন্যা আমাকে পছন্দ করে,
তবে আমি অনন্যার সাথে প্রেম করে আমার এত সুন্দর থাকার জায়গাটা কিছুতেই হারাতে চাইনা।
.
প্রথম প্রথম এখানে এসে অনন্যার সাথে কথা বলতে চাইতাম।
ও ছাদের যেখান টায় বসত সেখান টায় গোলাপ রেখে দিতাম।
কিন্তু কয়েক দিন পর যখন শুনলাম আমার আগে নাকি অন্য এক ছেলেকে বের করে দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র অনন্যার সাথে কথা বলার কারণে।
সেদিন থেকে আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম।
অবশ্য আমি কথা বললে খুব সমস্যা হত না কারণ বাড়িওয়ালা আমার গ্রামের লোক।
দুঃসম্পর্ক র চাচা হয়।
তাই সে হিসেবে অনন্যার সাথে কথা বললে তেমন কিছু ভাবার কারণ নেই।
তবুও সেই ঘটনা শোনার পর থেকে আমি একটু ওকে এড়িয়ে চলি বলা যায়।
তবে ইদনিং ও নিজেই এসে কথা বলে,
কে জানে,
কি চলছে ওর মনে?
.
টিউশনি শেষ করে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল,
ইফতারী বাহিরেই করে এলাম।
ইফতারের ব্যাপার টা নিয়ে সমস্যা হয় না তেমন,
সমস্যা হয় সেহরী নিয়ে।
আমার বুয়া গেছে গ্রামের বাড়ি,
রোজার মাসে ফিরবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নাই
আর এ বিল্ডিং এর কারো সাথে খুব একটা ভাল সমর্পক নেই যে রাতে ডেকে নিয়ে গিয়ে সেহরী খাওয়াবে,
আসলে কারো সাথেই কথা বলার মত সময় হয়ে ওঠেনি।
অনন্যার বাবা অবশ্য আমার পরিচিত লোক।
তবে ওনার সাথেও তেমন কথা বার্তা হয় না।
এমনি তেই উনি বাসা ভাড়া দিয়ে আমার অনেক উপকার করেছেন,
আমি চাইনা আর কষ্ট পেতে হোক ওনাকে আমার কারণে।
.
বাহির থেকে ফিরে এসে ঘরে ঢুকে কিছুক্ষন রেস্ট নিতেই কারেন্ট চলে গেলো।
তাই আগত্যা একটু বাতাসের জন্য ছাদে গেলাম,
ছাদ টাও বেশ অন্ধকার হয়ে আছে. আশে পাশে কেউ থাকলেও বোঝার উপায় নেই।
আর এ সন্ধ্যায় ছাদে কারো আসার সম্ভাবনাও কম।
.
আমি ভেবেছিলাম ছাদে কেই নাই,
কিন্তু মিনিট দুয়েক বাদে কেউ বলে উঠল,
-আপনি কখন আসছেন?
-অনন্যা?
-হ্যাঁ,
-মাত্রই,
-ইফতার করে আসছেন?
-হ্যাঁ,তুমি এখানে কি করো?
-ঘরে খুব গরম,
-হুম, আজ একটু বেশি গরম পরেছে,
.
কিছুক্ষন আর কেউ কোন কথা বললাম না।
মিনিট পাঁচেকের নিরবতা ভেঙে অনন্যা বলল,
-সেহরীতে কি খাবেন আজ?
-যা খাই রোজ,
-কি খান?
-ভাত, ডিম ভাজি,
-এই সব, শুকনা,
-হ্যাঁ, এগুলাই রান্না পারি তো,
-বিয়ে করলেই তো পারেন,
-এক মাসের জন্য বিয়ে করবো,
-উহু, তা বলিনাই,
-তাহলে?
-একে বারে বিয়ে করবেন?
-না তা লাগবেনা,
বুয়া গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কারণে একটু প্রবলেম হচ্ছে।
ফিরে আসলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
-ও আচ্ছা,
-হুম
.
আবার দুজনে চুপ করে গেলাম।
কিছুক্ষন যেতে আবার
ও বলল,
-আমার সাথে প্রেম করলে আপনার বেশ লাভ হত.
.
আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
-কিভাবে?
-আমি সেহরীর সময় রান্না করে আনতাম আপনার জন্য,
-ওহ, আমি
-কিন্তু এখন আর প্রপোজ করে লাভ নাই!
-কেন?
-কারণ আপনি নিজের সুবিধার জন্য প্রপোজ করবেন,
-নাহ, আসলে,
-কি?
-আমার তোমাকে আগে থেকেই ভালো লাগতো,
.
আমার কথা শুনে অনন্যা হাসতে লাগল।
অন্ধকারে ওর চেহারা দেখা না গেলেও,
শব্দ পাচ্ছিলাম।
আমি নিজে থেকেই বলতে লাগলাম,
-আমি তোমাকে আগেই বলতাম কিন্তু আগে যে ব্যাচেলর ছেলেটা থাকত তোমাদের বিল্ডিং এ তাকে নাকি তোমার সাথে কথা বলার জন্য বের করে দিছে,
-আপনি ভয় পাইছিলেন?
-ঠিক তা না,
তোমার বাবার বিশ্বাস ভাঙ্গতে চাইনি,
-খুব ভাল।
থাকেন যাই।
আম্মু খোঁজ করবে দেরী হলে,
-শোন আগে,
-আচ্ছা, বলেন?
.
আমি একটু ইতস্তত করে বলেই ফেললাম,
-ছাদে তোমার বসার জায়গায় আমি গোলাপ রাখতাম,
-তাই
-হ্যাঁ,
-প্রমান কি?
-প্রমান তো নাই,,
-আচ্ছা,
মেনে নিলাম।
বাট প্রেম আর সম্ভব নয়
দেরী হয়ে গেছে,
.
আমার একটু মন খারাপ হলো।
আমি চাইতাম না অনন্যার সাথে আমার কিছু হোক,
এখন হচ্ছেনা বলে মন খারাপ কেন হবে,
বুঝলাম না?
আমি তো এমন টাই চাইতাম।
ততক্ষনে কারেন্টও চলে এসেছে,
-আমি যাই এখন,
-আচ্ছা,
.
অনন্যার সিঁড়ির কাছে গিয়ে গলার স্বর উঁচু করে বলল,
-আচ্ছা, তুমি কি কি খেতে ভালবাসো?
.
ওর কথা আমার মাথায় ঠিক মত ঢুকল না।
-কি বললা?
-বলছি, তুমি কি খেতে ভালবাসো?
-তুমি যা রাঁধবা তাই,
-আমি ভালো রাঁধতে পারিনা,
-ট্রাই করো,
-আচ্ছা, দেখি,
.
অনন্যা আর কথা না বাড়িয়ে নিচে চলে গেলো। আমি বেশ খুশি মনেই ছাদে দাঁড়িয়ে রইলাম।
এখন শুধু সেহরীর জন্য অপেক্ষা।
.
শেষ রাতে ঘুম ভাঙলো একটু দেরীতেই।
ঘড়ি চেক করে ঘর থেকে বের হয়ে ছাদে এলাম, হাতে ব্রাশ নিয়ে। সিঁড়ি দিয়ে নিচে অল্প করে তাকানোর চেষ্টা করলাম।
ঐতো সিঁড়িতে শব্দ পাওয়া যাচ্ছে!
কে অনন্যা নয়ত?
আস্তে আস্তে অনন্যাকে দেখা গেল।হাতে একটা টিফিন বাটি।
জানিনা ও বাসায় কি বলে আসছে?
হয়ত লুকিয়ে চুড়িয়ে আসছে।
যেভাবেই আসুক,
রোজার মাসটা তাহলে ভালই যাবে।
.
ও আসলে বলেই দেবো,
পরের বছর আর এভাবে নয়।
মানে লুকিয়ে চুড়িয়ে নয়।
বলবো,
ভাল ভাবে রান্না শিখে নিতে।
কারণ,
কে জানে?
পরের বছরের রোজায় হয়ত এই মেয়েটা আমার ঘরেই রান্না করবে।
তখন রান্না খারাপ হলে একটু সমস্যায় তো পরতেই হবে।
.
…সমাপ্ত….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com