পিচ্চি বউয়ের কারসাজি | পর্ব - ১০ (শেষ পর্ব)
সকাল বেলা মৌমির ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার আগেই ফারহান ওর কেবিন থেকে চলে গেলো।
ডাক্তার পরীক্ষা করে জানিয়েছেন ওর শরীরে ড্রাগ পাওয়া গেছে। প্রচুর ভয় এবং শক পাওয়ার কারনে মৌমি পাগল হয়ে গেছে। এবং ওর অবস্থা এখন এত ক্রিটিক্যাল যে ফারহান সামনে আসলে যেকোন কিছু করে ফেলতে পারে।
ডাক্তার পরীক্ষা করে জানিয়েছেন ওর শরীরে ড্রাগ পাওয়া গেছে। প্রচুর ভয় এবং শক পাওয়ার কারনে মৌমি পাগল হয়ে গেছে। এবং ওর অবস্থা এখন এত ক্রিটিক্যাল যে ফারহান সামনে আসলে যেকোন কিছু করে ফেলতে পারে।
আড়ালে গিয়ে এসব ভেবে চোখের পানি ফেলছিল ফারহান।
— কেমন আছেন দুলাভাই?
— হ্যা ভাল। গুড মরনিং। তুমি এত সকাল উঠে গেলে যে।
কোন মতে রাগ সামলে নিয়ে বললো ফারহান।
— হুমম, ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তাই ভাবলাম আপনাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসি। আপু কেও তো দুধ খাওয়াতে হবে।
— হ্যা ভাল। গুড মরনিং। তুমি এত সকাল উঠে গেলে যে।
কোন মতে রাগ সামলে নিয়ে বললো ফারহান।
— হুমম, ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তাই ভাবলাম আপনাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসি। আপু কেও তো দুধ খাওয়াতে হবে।
— কেন?
— আরে উনি তো খুব অসুস্থ। এত ঔষদ খাচ্ছেন প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে না?!
— তোমার কথা ঠিক। আচ্ছা দেও, আমি নার্স কে দিয়ে আসি খাওয়ানোর জন্য। আর তুমি বাইরে যাও। এখন বাসায় যেতে হবে জরুরী কথা আছে।
— ক্বি কথা? দুলাভাই..?
— আরে ভয় পাচ্ছো কেন? আমাদের বিয়ের কথা। তুমি তো এর অপেক্ষা করছিলে তাই না?
— জ্বি মানে…
— যাও তো। আর ভণিতা করতে হবে না।
তারপর ফারহান কেবিনে এসে নার্স এর হাতে নাস্তা গুলো দিয়ে বাইরে দুধ ফেলে দিল। আর নার্স কে বললো, আজ থেকে বাহিরের কোন খাবার, দুধ যেন মৌমিকে দোওয়া না হয়। যতই আপন লোক হোক।
— জ্বি স্যার।
ফারহান রাখিকে নিয়ে বাসায় আসলো। সবার আসতে এখন ও একঘন্টা দেরী হবে।
ও ফোন রেকর্ড অন করে পকেটে আগেই রেখে দিয়েছে।
ও ফোন রেকর্ড অন করে পকেটে আগেই রেখে দিয়েছে।
— রাখি, তুমি আমাকে ভালবাসো?
— আপনি স্মার্ট, যোগ্যতাসম্পন্ন, ভালো তো যেকোন মেয়েই বাসবে।
— যেকোন মেয়ে নয়, আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছি।
— জ্বি, ভালবাসি।
— বিয়ে করতে চাও?
— ইয়ে মানে, মৌমি আপু?
— ওর বিষয় আমাকে ছেড়ে দাও। ও তো এখন পাগল।
— আপনি স্মার্ট, যোগ্যতাসম্পন্ন, ভালো তো যেকোন মেয়েই বাসবে।
— যেকোন মেয়ে নয়, আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছি।
— জ্বি, ভালবাসি।
— বিয়ে করতে চাও?
— ইয়ে মানে, মৌমি আপু?
— ওর বিষয় আমাকে ছেড়ে দাও। ও তো এখন পাগল।
সো আমাদের আর কোন বাধা নেই। কি রাজি তো?
— জ্বি।
— এজন্য তোমাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। যদি দেও আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
— কি প্রশ্ন? আমি সব বলবো।
— বলো তো তোমার প্ল্যান এ আর কে কে ছিল? অবশ্য আমি দুজন কে চিনতে পারছি।
— কি কি বলছেন এসব? বলে রাখি পিছনে যেতে লাগলো। — যাচ্ছো কোথায়? তুমি কি মনে করছো তুমি এসব করে পার পেয়ে যাবে?
যা করছো বলে দাও, তাহলে কাউকে কিছু বলবো না।
আর না বললে তো বুঝতে পারছো।
রাখি ফারহানকে বলা শুরু করলো ওর মৌমিকে পাগল করার মিশন…
মৌমির বিয়ে আপনার মত একজনের সাথে হয়েছে সেটা আমি আর আম্মু মেনে নিতে পারিনি।
আমার আম্মু আপনার আম্মুকে বিয়েটা না হওয়ার জন্য অনেক কিছু বলেছে।
কিন্তু উনি মানেন নি। ও ছোটবেলা থেকেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছিল।
তাই আমরা চাচাতো ভাইবোন রা মিলে ওকে খুব ভয় দেখাতাম, এটা ওটা করাতাম।
বড়দের মত হতে দিতাম না। এভাবেই আমরা ওকে মানসিক ভাবে টর্চার করে,
আর ওর ব্রেইন কে কাজে লাগিয়ে ছোট রেখে দেই।
কিন্তু ওর বিয়ের পর আমার ভিতর জিদ চাপে যেভাবেই হোক
ওকে পাগল করে ঘর ছাড়া করবো আর আমি এ ঘরের বউ হয়ে আসবো।
এ বাড়িতে যখন আসি তখন ই প্রস্তুতি নিয়ে আসি ওর জন্য আমার সব প্ল্যান রেডি ছিলো।
হাত কাটা, শরীর পোড়ানো,
ওর সামনে বউ সেজে ওকে বলা যে ফারহান তোকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে বিয়ে করেছে।
তুই এ বাড়ি থেকে চলে যা।
যায়নি, তাই যদি বলে দেয় সেজন্য আপনাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়েছি।
কিন্তু পাগলী টা আপনাকে পাহারা দেওয়ার জন্য সবসময় আপনার পাশে থাকতো।
এতে আমি আরও জেলাস ফিল করতাম। তারপর ওকে ড্রাগ দেওয়া শুরু করলাম।
ড্রাগ নেওয়ার পর ও যখন নেশা গ্রস্ত থাকতো ওকে হরর মুভি দেখাতে শুরু করি।
তারপর প্রতিদিন আপনি যাওয়ার পর, হরর সাউন্ড ঘরের সব রুমে সেট করি যাতে ও আরও ভয় পায়।
আপনার রুমে তো আরও বেশি ভয়ংকর কাজ শুরু করলাম।
এটা ওটা তার দিয়ে টেনে ভেঙ্গে দিতাম। আলতা বাথরুমে রেখে আসতাম।
ও রক্ত মনে করে ভয় পেতো। একদিন আপনার রুমে সাজতে গিয়ে ড্রয়ারে অনেক টাকা পাই।
এগুলো আমার ভাইকে দিয়ে ওর ফ্রেন্ড সহ এখানে আসতে বলি।
পাশাপাশি বাসা ওরা ভাড়া নেয়। আম্মু ও ঐখানে আসেন।
তারপর আপনার চেহারার স্কিন মাস্ক পরে আমার ভাই আর তার ফ্রেন্ড ওকে ভয় দেখাতে থাকে।
মেরে ফেলার, কেটে ফেলার। আরও অনেক ধরনের।
আস্তে আস্তে মৌমি আপনাকেও ভয় পেতে শুরু করে।
চার দেয়ালের মধ্যে নিজেকে বন্ধী করে ফেলে। আর আমি ও আম্মু এটাই চেয়েছিলাম।
— গত পরশু তোমার আম্মু কেন আসছিলেন?
— আ-আপনি কোথায় দেখলেন?
— তুমি কি মনে করেছো তুমি বেশি চালাক?
এরপরে কি হলো বলো?
— আম্মু সেদিন ড্রাগ নিয়ে এসেছিলেন। ওকে সেদিন অবার ডৌজ দেওয়ার কারনে বেশি পাগলামী করে আর এখন হসপিটাল।
— আর আজ আবার দুধের মধ্যে ড্রাগ মিশিয়ে নিয়ে গেছো তাইনা…?
— আপনি জানলেন কিভাবে?
— কারন যে মেয়ে মৌমিকে এত টর্চার করে, দুধে ড্রাগ মেশায়, সে কিভাবে ভালো দুধ নিয়ে যেতে পারে?
বাইরে গাড়ির থামার আওয়াজ পাওয়া গেলো।
— যাক উনারা এসে গেছেন।
— যাক উনারা এসে গেছেন।
— কারা? আপনি কাদের আসতে বলছেন?
— কেন তোমার আমার বিয়ে, দাওয়াত দিতে হবে না? রাতেই দিয়েছি। তাই এখন সবাই আসলেন।
উনারা সব আসার পরে, ফারহানের মা জিজ্ঞাসা করলেন মৌমি কোথায়?
— মা, আমার ভুলের জন্য মৌমি আজ পুরো পাগল হয়ে গেছে মা। আমি না করেছিলাম এই মেয়েকে এখানে নিয়ে এসোনা, তুমি শুনলেনা। বলে ফারহান চোখের পানি মুছলো।
তারপর সবাইকে সব কিছু বললো, সিসিটিভি ফোটেজ দেখানো হলো, সাথে রেকর্ড ও শুনালো। সব শুনে মৌমির বড় চাচা বললেন, এদের কে বাড়িতে জায়গা দেওয়া ভুল হবে। আজ থেকে আমার বাড়ি মা মেয়ের জায়গা নেই।
— মা, আমার ভুলের জন্য মৌমি আজ পুরো পাগল হয়ে গেছে মা। আমি না করেছিলাম এই মেয়েকে এখানে নিয়ে এসোনা, তুমি শুনলেনা। বলে ফারহান চোখের পানি মুছলো।
তারপর সবাইকে সব কিছু বললো, সিসিটিভি ফোটেজ দেখানো হলো, সাথে রেকর্ড ও শুনালো। সব শুনে মৌমির বড় চাচা বললেন, এদের কে বাড়িতে জায়গা দেওয়া ভুল হবে। আজ থেকে আমার বাড়ি মা মেয়ের জায়গা নেই।
পরিবারের সম্মানের দিকে তাকিয়ে রাখিকে পুলিশ এ দেওয়া হলো না।
মৌমির কে দূরের একটা জয়গায় দুজন নার্স এর এবং মৌমির মায়ের তত্বাবধানে রাখা হলো।
আজ ছয়মাস হয়ে গেলো, মৌমি এখনও ভালো হয়নি। ফারহান ও ওর সামনে যায়নি। একে তো মৌমি ওকে ভয় পায় কাছে গেলে যদি আরও পাগল হয়ে যায়। তারউপর ফারহান কোন মুখে যাবে, মৌমিকে যে জেনেশুনে এক নাগিনীর হাতে ছেড়ে দিয়েছিল।
রবিবার সকালবেলা।
ফারহান অফিসে কাজ করছে।
ফারহান অফিসে কাজ করছে।
— এক্সকিউজমি, আপনাদের অফিসে কোন পদ খালি আছে?
— কে বলছেন আপনি?
ফারহান তাকিয়ে দেখলো কালো বোরকা, নিকাব পরিহিতা একটা মেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
— কি আছে কিনা বলেন আগে।
— আপনাকে এখানে কে ঢুকতে দিছে? যত্তসব।
— কেন আমার কি পা নেই নাকি? আমি হেটে এসে ঢুকেছি।
তা বসতে বলবেন না?
তা বসতে বলবেন না?
— দেখুন আমি আপনাকে চিনি না। এক্ষুণি বেরিয়ে যান। নাহলে দারোয়ান ডাকবো।
— আপনি না চিনলেও আমি তো আপনাকে চিনি মি. ফারহান বলে মেয়েটি ফারহানের কোলে এসে বসে গেলো।
— কি কি করছেন এসব অসভ্যতা?
দারোয়ান দারোয়ান…
— কি কি করছেন এসব অসভ্যতা?
দারোয়ান দারোয়ান…
— দারোয়ান কে যতই ডাকুন আসবে না। আচ্ছা আপনি কি আপনার স্ত্রীকে কখনও লিপকিস করেছেন?
— কি হচ্ছে কি এসব? নামুন বলছি।
— নামিয়ে দেবেন, না কোলে বসাবেন,
মৌমির স্বামি…?
বলে মেয়েটি নিকাব তুললো।
— তু তু তুমি? ইয়া আল্লাহ! এ কেমনে সম্ভব?
— আগে কিস করো তারপর শুনবে বলে মেয়েটি ফারহানকে জড়িয়ে ধরে…….।
ফারহান ও ওকে জড়িয়ে ধরে বললো- আমাদের একটা বেবি হবে ঠিক মৌমির মত, দুষ্টু, পাগলী আর কিউট।
— আর ফারহানের মত ভালো, ভালবাসার পাগল একটা ছেলেও চাই।
— জো হুকুম মহারাণী। এখন বাসায় চলো।
— কেন?
— জো হুকুম মহারাণী। এখন বাসায় চলো।
— কেন?
— বেবি আনার প্রস্তুতি নিতে হবে না?
— ছিঃ পাগল একটা।
— কেন? আমি কি অন্য মেয়েকে বলছি?
মেয়েটি কে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন?
আর না বুঝলেও বলে দিচ্ছি। মেয়েটি হচ্ছে ফারহানের মৌমি। ফারহানের প্রতি টান আর ভালোবাসা ওকে ভাল হতে বাধ্য করেছে।
কিভাবে হলো নাই বা বললাম।
আর না বুঝলেও বলে দিচ্ছি। মেয়েটি হচ্ছে ফারহানের মৌমি। ফারহানের প্রতি টান আর ভালোবাসা ওকে ভাল হতে বাধ্য করেছে।
কিভাবে হলো নাই বা বললাম।
আর রাখি… রাখিকে রুমে বন্ধী করে রাখা হয়েছে পাগলামীর জন্য।
সারাক্ষণ ভয় পায় আর বলে কারা ওকে মেরে ফেলবে। ফারহান আসছে ওকে বিয়ে করার জন্য।
ওকে বউ সাজতো হবে।
হয়তো এটা তার কর্মফল। আমাদের এই পৃথিবীতে জালিম আর জুলুমের বিস্তার।
পারিবারিক, পারিপার্শ্বিক হিংসা বিরোধ সবসময় লেগেই আছে। আর দূর্বলরা এই জুলুমের স্বীকার হয়। অনেক সময় এরা প্রতিবাদ করে কখনও কিছু বাধ্যবাধকতার জন্য করে না।
কিন্তু ন্যায় বিচারক তো একজন। উনার আদালত থেকে কেউ মুক্তি পায় না।
অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত। আর ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com