গল্পঃ এক টুকরো ভালোবাসা
নতুন বউ বাসর ঘরে বসে আছে।
আমি দরজা আটকে খাটে গিয়ে বসলাম।
কি করবো বুঝতে পারছি না।
অবশেষে খাট থেকে একটা চাদর নিয়ে
মেঝেতে শুয়ে পড়লাম।
.
এমন হুট করে বিয়ে মেনে নিতে আমার কষ্ট
হচ্ছে।
আমাকে না জানিয়ে বিয়ের দিন তারিখ
ঠিক করেছে আমার পরিবার।
বিয়ের ৩ দিন আগে আমায় দেখতে পাঠাতে
চেয়েছিল মেয়ের বাড়ি।
আমি কষ্টভরা কন্ঠে বলে দিয়েছিলাম
বিয়ের দিনতারিখ ঠিক করার আগেই যখন
“আমাকে মেয়ে দেখানোর প্রয়োজন মনে
করোনি” এখন আর দেখে কি লাভ?
অবশেষে বাধ্যতামুলক বিয়েটা করে
ফেললাম।
আমি অপরদিকে মাথা দিয়ে শুয়ে রয়েছি
মেঝেতে।
.
প্রায় ঘন্টাখানেক অতিবাহিত হয়ে গেছে।
আমি তিনটা সিগারেট শেষ করে আরেকটা
ধরিয়েছি।
সাধারনত আমি সিগারেট খাইনা।
বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মাঝে মধ্যে ২/১ টা
খাই।
কিন্তু আজ বাসর ঘরে ঢোকার আগেই নানান
চিন্তা ভাবনা মাথার উপর এসে ভর করে।
যার জন্য এক প্যাকেট কিনে নিয়ে ঢুকেছি।
এই সিগারেটে কয়েকটা টান দিতেই মনে
হলো আমার বিয়ে করা বউটা খাট থেকে
নামছে!
কারন পায়ের নুপুরের শব্দ পাচ্ছি।
আমি আগের মতোই চুপ করে শুয়ে আছি।
হঠাৎ সে এসে আমার পাশে বসলো
মেঝেতে।
আমার কপালে একটা হাত বুলিয়ে বলল কি
হয়েছে তোমার?
.
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।
মাথাটা একটু ঘুরিয়ে তাকালাম আমার
বউয়ের দিকে।
দেখে আমার চোখ দুটো কপালে উঠে গেল!
মানুষ এতোটা সুন্দর হতে পারে?!
আমি উঠে বসলাম।
মেয়েটা আমার চেয়ে থাকা দেখে লজ্জায়
মাথা নিচু করে আছে।
-তুমি গিয়ে খাটে শুয়ে পড়ো। (আমি)
-তুমিও খাটে গিয়ে শুয়ে পড়ো। (বউ)
-না’ আমি নিচেই শুয়ে থাকবো। তুমি খাটে
গিয়ে শোও।
-তাহলে আমিও নিচে শোবো তোমার
পাশে।
কি আর করবো? বাধ্য হয়েই খাটে গিয়ে
শুয়ে পড়লাম।
চুপ করে শুয়ে আছি অপরদিকে মুখ করে।
মেয়েটি এসে শুয়ে পড়লো।
তার শরীরের অলংকার গুলো নড়ছে এবং শব্দ
হচ্ছে।
.
একটুপর শব্দ কমে গেল।
-আমি কি শরীরের গয়নাগাটি খুলতে পারি?
(বউ)
-তুমি যা ইচ্ছা তাই করো সমস্যা নাই।
(আমি)
-সত্যি তো? রাগ করবে না তো?
-আরে নাহ।
এরপর আবার শব্দ শুরু হলো।
বুঝলাম শরীরে ওতো গয়না নিয়ে শুয়ে থাকা
ওর ঝামেলা হচ্ছিলো।
একটুপর আবার শব্দ কমে গেল।
আসলে গভীর রাতে একটু শব্দ হলেই কানে
বেশি লাগে।
হঠাৎ মনে হলো কিছু একটা আমার ওপাশে
হাত বাড়িয়ে রাখলো মেয়েটা।
আমি যেহেতু ওপাশেই মুখ করে শুয়ে আছি
তাই চোখ মেলে তাকালাম।
ঝাপসা আলোয় যা দেখলাম তা দেখে
আমার চোখ কপালে উঠে গেল!
মেয়েটা শাড়ি খুলে রেখেছে ওখানে।
-শাড়ি গয়না এগুলা এতো বিরক্তিকর আগে
জানতাম না।
এখন এসব খুলে কতো সুন্দর লাগছে।
এই বলে মেয়েটি আমায় পেছন থেকে
জড়িয়ে ধরলো।
.
আমি পাথরের মূর্তির মতো চুপ করে আছি।
জীবনের প্রথম কোন মেয়ে মানুষের জড়িয়ে
ধরায় আমার শরীরের লোম দাড়িয়ে গেছে।
ভয়েই কি লজ্জায় আমার শরীর শীতল হয়ে
কাঁপছে।
-এই কি করছো এসব?
-আমার স্বামীকে আমি জড়িয়ে ধরেছি।
আর তুমিই তো বললে আমার যা ইচ্ছা আমি
তাই করতে পারি।
তাই জড়িয়ে ধরেছি।
এখন লক্ষি ছেলের মতো চুপটি করে ঘুমাও।
এই বলে মেয়েটি আমায় জড়িয়ে ধরে রইলো।
এরপর এটা ওটা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে
পড়েছি নিজেও জানিনা।
ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো কারো পানির ছিটায়।
চেয়ে দেখি সেই মিষ্ট মেয়েটা (বউ) আমার
মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে খিলখিল করে
হাসছে।
কি অদ্ভুত ধরনের হাসি!
.
এই মেয়ের সামনে যদি কোন কবি থাকতো
তবে সাথে সাথে একটা কবিতা লিখে
ফেলতো।
-কি মশাই উঠবেন নাকি টেনে তুলতে হবে?
-হা উঠতেছি।
বিছানা থেকে উঠে হাত, মুখ ধুয়ে বের হলাম
রাস্তায়।
রাস্তায় এসে মোবাইলটা বের করে জুঁই এর
নাম্বারে ডায়াল করলাম।
কিন্তু জুঁই এর নাম্বার বন্ধ।
না জানি জুঁই কতোটা কষ্ট পেয়েছে আমার
বিয়ের কথা শুনে।
পাগলের মতো জুঁই আর আমি দুজন, দুজনকে
ভালোবেসেছি।
কিন্তু আমাদের এই ভালোবাসার কথা মা,
বাবাকে জানানোর পরেও তারা এই
বিয়েটাই করালো আমায়।
.
আরো কয়েকবার ট্রাই করার পরও জুঁই
নাম্বারে সংযোগ পেলাম না।
মনটা ভার করে পুকুর পাড়ের আম গাছটার
নিচে বসে আছি।
হঠাৎ অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো
মোবাইলে।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল…
-কোথায় এখন তুমি?
-পুকুর পাড়ে। আপনি কে?
-আমার নাম মিমি। তাড়াতাড়ি তোমাদের
বাড়িতে আসো।
.
পুকুর পাড় থেকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে
গেলাম।
বাড়িতে অনেক মানুষ। অনেক আত্মীয় স্বজন।
এদের মধ্যে থেকে কে ফোন করলো বুঝতে
পারছি না।
আমি সোজা আমার রুমে ঢুকলাম।
.
ফোনটা হাতে নিয়ে ঐ নাম্বারে কল দেবো
ওমনি আমার বউ এসে আল্লাদি ভঙ্গিমায়
আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।
-কি গো, কাকে ফোন করো। (বউ)
-আচ্ছা মিমি কার নাম? (আমি)
-তোমার দুষ্টু বউয়ের নাম তুমিই জানোনা
মশাই?
গতকাল কাজি সাহেব যখন বিয়ে পড়াইছে
তখন কানটা বন্ধ ছিল নাকি?
হা আমারি নাম মিমি। একটু আগে আমিই
তোমায় ফোন করেছিলাম।
নতুন বউকে ফেলে কোথায় গিয়ে থাকো
হুমম?
.
এই বলেই মেয়েটি আমার বুকের উপর ঝুকে
পড়েছে।
আমার গলাটা দুহাতে জড়িয়ে দেহটাকে
আমার উপর নিয়ে বিছানায় এলিয়ে দিচ্ছে
আমাকে
আমি মাথাটা খাটের উপর কোনরকম রেখে
বোবার মতো তাকিয়ে দেখছি আমার
বউকে।
মেয়েটার চোখে দুষ্টু, মিষ্টি হাসি।
ওর চোখের ভাষা বলছে ও স্বামীর একটু
ভালোবাসা চায়।
কিন্তু আমি কি করবো? আমি তো
ভালোবাসি তানিয়া কে।
.
ওকে যে আমি কথা দিয়েছি ওকে ছাড়া
কাউকে জীবনসঙ্গী করবো না।
-কি হলো? কি ভাবছো গো মশাই?
-প্লিজ ছাড়ো আমায়। বাইরে একটু কাজ
আছে আমার।
এই বলে কোনরকম জোর করেই ওকে ছাড়িয়ে
খাট থেকে নেমে ঘরের বাইরে এসেছি।
এর মধ্যেই দেখি ভাবি, নানি, দাদিরা
প্রস্তুত বাইরে আমাকে গোসল করানোর
জন্য।
আমাকে দেখেই তারা আমায় টেনে নিয়ে
গেল।
ভাবিরা গেল আমার বউকে ডেকে আনতে
আমার ঘরে।
এরপর কতো রকমের মজা,
.
খেলা হলো এই
গোসল করানোর আগে।
পাশাও খেলতে হলো দুজনকে।
কিন্তু এই আনন্দময় মুহুর্তে আমি খেয়াল
করছি আমার বউ মিমি এর মনটা ভার।
এটাই স্বাভাবিক। একটা মেয়ে বিয়ের পর
চায় শুধু দু-বেলা দু-মুঠো খাওয়া আর স্বামীর
একটু ভালোবাসা।
কিন্তু আমি এখনো পর্যন্ত ওকে বউ হিসেবে
মেনে নিতেই পারিনি।
কি করে পারবো? আমার জন্য যে তানিয়া
অপেক্ষায় আছে।
ওকে যে আমি খুবই ভালোবাসি।
গোসল শেষ করে প্যান্ট, শার্ট পড়ে একটু
রাস্তায় বের হলাম।
আবার তানিয়া এর নাম্বারে কল দিলাম….
.
হা এবার কল ডুকেছে। একটু পরেই রিসিভ
হলো।
-কি হয়েছে, কল দাও ক্যান? তোমার তো
এখন বউ আছে।
এইটুকু বলেই ফোন রেখে দেয় তানি। আমাকে
কথা বলার সুযোগ ই দিলো না।
আবার কল করতে যাবো তখনি বাবার
নাম্বার থেকে কল আসলো।
-তোর কি মাথায় একটুও বুদ্ধি নাই? বাড়িতে
মেহমানে ভরা, একটুপর মেয়ে পক্ষের লোক
আসবে আর তুই থাকিস দূরে গিয়ে…
এই বলেই রাগ করে ফোন কেটে দেয় বাবা।
আবার বিষন্ন মনে বাড়ির দিকে রওনা দেই।
বাড়িতে ঢুকেই মাথাটা খারাপ হয়ে গেল।
.
কাজের লোকের কি অভাব আছে?! সবাই
তো বিয়ে বাড়ির কাজ নিয়েই ব্যস্ত। আমার
কাজটা কোথায়?
মনে মনে বাবার উপর ভীষণ রাগ হলো।
তাদের কথায় প্রিয় ভালোবাসার মানুষকে
ফেলে আজ অন্য কাউকে বিয়ে করতে হলো।
কিছুই ভালো লাগছে না এখন। ঘরে গিয়ে
বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
চোখটা একটু বুঝতেই মনে হলো কেউ এসে
আমার বুকের উপর মাথা রেখেছে।
তাকিয়ে দেখি (বউ) দুই হাত আমার
বুকের দুপাশে ভর করে মাথাটা বুকে
রেখেছে।
.
-আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি? (মিমি)
এই বলে মাথাটা তুলে আমার মুখের সামনে
মুখ এনে আমার জবাবের অপেক্ষা করছে
মেয়েটা।
আমি ওর মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে
আছি।
গোসল করিয়ে ভাবিরা ওকে শাড়ি পড়িয়ে,
গয়না পড়িয়ে সাজিয়ে দিয়েছে।
ওকে দেখে কল্পনার কোন পরীর মতো
লাগছে।
কি অপরুপ হাসি, অপরুপ মুখ এই মেয়েটার।
.
হাল্কা লিপস্টিক করা মিষ্টি ঠোট দুটো
ঠিক আমার মুখের সামনে নিয়ে আমার
জবারের অপেক্ষায় আছে।
কি বলবো ওকে? ওর মতো সুন্দরী মেয়েকে
পছন্দ হয়নি এটা বললে আমাকে পাগল বলবে
লোকে(নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে
আজ)।
তবে কি সত্যটা ওকে বলে দেব এখনি?
নাহ, বিয়ের কটা দিন শেষ হোক তারপর না
হয় বলবো।
.
কি হলো বললে না? বলো তোমার কি
সমস্যা?
তুমি কি অন্য কোন মেয়েকে ভালোবাসো?
ওর এই প্রশ্নে আবার আমি ওর মুখের পানে
তাকালাম।
হাসি মুখটা সামান্য ভার করে আমার দিকে
চেয়ে আছে আমার মুখের উত্তর শোনার
জন্য?(অসাধারণ তার মুখ)
তবুও আমি নিরব হয়ে আছি কি বলবো ওকে?
মিমি এবার কপালে একটা চুমো দিয়ে বলল’
তোমার যে কোন সমস্য থাকলে আমায় বলো।
বউ নয়, বন্ধু হয়ে তোমার উপকার করবো বলো
প্লিজ।
আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনি বাইরে
থেকে বলছে মেয়ে পক্ষের লোক এসেছে।
সাথে সাথে আমার দুই শালী ঢুকে পড়লো
আমার রুমে।
.
তখনো বউ আমার বুকের উপর ঝুকে আছে।
ওরা ঢুকতেই মিমি উঠে স্বাভাবিক হলো।
বড় শালীটা লজ্জা পেলেও ছোটটা এসেই
চোখটিপ মারলো আমায়।
দুজনি এসে আমার পাশে বসল।
আমি দরজা আটকে খাটে গিয়ে বসলাম।
কি করবো বুঝতে পারছি না।
অবশেষে খাট থেকে একটা চাদর নিয়ে
মেঝেতে শুয়ে পড়লাম।
.
এমন হুট করে বিয়ে মেনে নিতে আমার কষ্ট
হচ্ছে।
আমাকে না জানিয়ে বিয়ের দিন তারিখ
ঠিক করেছে আমার পরিবার।
বিয়ের ৩ দিন আগে আমায় দেখতে পাঠাতে
চেয়েছিল মেয়ের বাড়ি।
আমি কষ্টভরা কন্ঠে বলে দিয়েছিলাম
বিয়ের দিনতারিখ ঠিক করার আগেই যখন
“আমাকে মেয়ে দেখানোর প্রয়োজন মনে
করোনি” এখন আর দেখে কি লাভ?
অবশেষে বাধ্যতামুলক বিয়েটা করে
ফেললাম।
আমি অপরদিকে মাথা দিয়ে শুয়ে রয়েছি
মেঝেতে।
.
প্রায় ঘন্টাখানেক অতিবাহিত হয়ে গেছে।
আমি তিনটা সিগারেট শেষ করে আরেকটা
ধরিয়েছি।
সাধারনত আমি সিগারেট খাইনা।
বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মাঝে মধ্যে ২/১ টা
খাই।
কিন্তু আজ বাসর ঘরে ঢোকার আগেই নানান
চিন্তা ভাবনা মাথার উপর এসে ভর করে।
যার জন্য এক প্যাকেট কিনে নিয়ে ঢুকেছি।
এই সিগারেটে কয়েকটা টান দিতেই মনে
হলো আমার বিয়ে করা বউটা খাট থেকে
নামছে!
কারন পায়ের নুপুরের শব্দ পাচ্ছি।
আমি আগের মতোই চুপ করে শুয়ে আছি।
হঠাৎ সে এসে আমার পাশে বসলো
মেঝেতে।
আমার কপালে একটা হাত বুলিয়ে বলল কি
হয়েছে তোমার?
.
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।
মাথাটা একটু ঘুরিয়ে তাকালাম আমার
বউয়ের দিকে।
দেখে আমার চোখ দুটো কপালে উঠে গেল!
মানুষ এতোটা সুন্দর হতে পারে?!
আমি উঠে বসলাম।
মেয়েটা আমার চেয়ে থাকা দেখে লজ্জায়
মাথা নিচু করে আছে।
-তুমি গিয়ে খাটে শুয়ে পড়ো। (আমি)
-তুমিও খাটে গিয়ে শুয়ে পড়ো। (বউ)
-না’ আমি নিচেই শুয়ে থাকবো। তুমি খাটে
গিয়ে শোও।
-তাহলে আমিও নিচে শোবো তোমার
পাশে।
কি আর করবো? বাধ্য হয়েই খাটে গিয়ে
শুয়ে পড়লাম।
চুপ করে শুয়ে আছি অপরদিকে মুখ করে।
মেয়েটি এসে শুয়ে পড়লো।
তার শরীরের অলংকার গুলো নড়ছে এবং শব্দ
হচ্ছে।
.
একটুপর শব্দ কমে গেল।
-আমি কি শরীরের গয়নাগাটি খুলতে পারি?
(বউ)
-তুমি যা ইচ্ছা তাই করো সমস্যা নাই।
(আমি)
-সত্যি তো? রাগ করবে না তো?
-আরে নাহ।
এরপর আবার শব্দ শুরু হলো।
বুঝলাম শরীরে ওতো গয়না নিয়ে শুয়ে থাকা
ওর ঝামেলা হচ্ছিলো।
একটুপর আবার শব্দ কমে গেল।
আসলে গভীর রাতে একটু শব্দ হলেই কানে
বেশি লাগে।
হঠাৎ মনে হলো কিছু একটা আমার ওপাশে
হাত বাড়িয়ে রাখলো মেয়েটা।
আমি যেহেতু ওপাশেই মুখ করে শুয়ে আছি
তাই চোখ মেলে তাকালাম।
ঝাপসা আলোয় যা দেখলাম তা দেখে
আমার চোখ কপালে উঠে গেল!
মেয়েটা শাড়ি খুলে রেখেছে ওখানে।
-শাড়ি গয়না এগুলা এতো বিরক্তিকর আগে
জানতাম না।
এখন এসব খুলে কতো সুন্দর লাগছে।
এই বলে মেয়েটি আমায় পেছন থেকে
জড়িয়ে ধরলো।
.
আমি পাথরের মূর্তির মতো চুপ করে আছি।
জীবনের প্রথম কোন মেয়ে মানুষের জড়িয়ে
ধরায় আমার শরীরের লোম দাড়িয়ে গেছে।
ভয়েই কি লজ্জায় আমার শরীর শীতল হয়ে
কাঁপছে।
-এই কি করছো এসব?
-আমার স্বামীকে আমি জড়িয়ে ধরেছি।
আর তুমিই তো বললে আমার যা ইচ্ছা আমি
তাই করতে পারি।
তাই জড়িয়ে ধরেছি।
এখন লক্ষি ছেলের মতো চুপটি করে ঘুমাও।
এই বলে মেয়েটি আমায় জড়িয়ে ধরে রইলো।
এরপর এটা ওটা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে
পড়েছি নিজেও জানিনা।
ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো কারো পানির ছিটায়।
চেয়ে দেখি সেই মিষ্ট মেয়েটা (বউ) আমার
মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে খিলখিল করে
হাসছে।
কি অদ্ভুত ধরনের হাসি!
.
এই মেয়ের সামনে যদি কোন কবি থাকতো
তবে সাথে সাথে একটা কবিতা লিখে
ফেলতো।
-কি মশাই উঠবেন নাকি টেনে তুলতে হবে?
-হা উঠতেছি।
বিছানা থেকে উঠে হাত, মুখ ধুয়ে বের হলাম
রাস্তায়।
রাস্তায় এসে মোবাইলটা বের করে জুঁই এর
নাম্বারে ডায়াল করলাম।
কিন্তু জুঁই এর নাম্বার বন্ধ।
না জানি জুঁই কতোটা কষ্ট পেয়েছে আমার
বিয়ের কথা শুনে।
পাগলের মতো জুঁই আর আমি দুজন, দুজনকে
ভালোবেসেছি।
কিন্তু আমাদের এই ভালোবাসার কথা মা,
বাবাকে জানানোর পরেও তারা এই
বিয়েটাই করালো আমায়।
.
আরো কয়েকবার ট্রাই করার পরও জুঁই
নাম্বারে সংযোগ পেলাম না।
মনটা ভার করে পুকুর পাড়ের আম গাছটার
নিচে বসে আছি।
হঠাৎ অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো
মোবাইলে।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল…
-কোথায় এখন তুমি?
-পুকুর পাড়ে। আপনি কে?
-আমার নাম মিমি। তাড়াতাড়ি তোমাদের
বাড়িতে আসো।
.
পুকুর পাড় থেকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে
গেলাম।
বাড়িতে অনেক মানুষ। অনেক আত্মীয় স্বজন।
এদের মধ্যে থেকে কে ফোন করলো বুঝতে
পারছি না।
আমি সোজা আমার রুমে ঢুকলাম।
.
ফোনটা হাতে নিয়ে ঐ নাম্বারে কল দেবো
ওমনি আমার বউ এসে আল্লাদি ভঙ্গিমায়
আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।
-কি গো, কাকে ফোন করো। (বউ)
-আচ্ছা মিমি কার নাম? (আমি)
-তোমার দুষ্টু বউয়ের নাম তুমিই জানোনা
মশাই?
গতকাল কাজি সাহেব যখন বিয়ে পড়াইছে
তখন কানটা বন্ধ ছিল নাকি?
হা আমারি নাম মিমি। একটু আগে আমিই
তোমায় ফোন করেছিলাম।
নতুন বউকে ফেলে কোথায় গিয়ে থাকো
হুমম?
.
এই বলেই মেয়েটি আমার বুকের উপর ঝুকে
পড়েছে।
আমার গলাটা দুহাতে জড়িয়ে দেহটাকে
আমার উপর নিয়ে বিছানায় এলিয়ে দিচ্ছে
আমাকে
আমি মাথাটা খাটের উপর কোনরকম রেখে
বোবার মতো তাকিয়ে দেখছি আমার
বউকে।
মেয়েটার চোখে দুষ্টু, মিষ্টি হাসি।
ওর চোখের ভাষা বলছে ও স্বামীর একটু
ভালোবাসা চায়।
কিন্তু আমি কি করবো? আমি তো
ভালোবাসি তানিয়া কে।
.
ওকে যে আমি কথা দিয়েছি ওকে ছাড়া
কাউকে জীবনসঙ্গী করবো না।
-কি হলো? কি ভাবছো গো মশাই?
-প্লিজ ছাড়ো আমায়। বাইরে একটু কাজ
আছে আমার।
এই বলে কোনরকম জোর করেই ওকে ছাড়িয়ে
খাট থেকে নেমে ঘরের বাইরে এসেছি।
এর মধ্যেই দেখি ভাবি, নানি, দাদিরা
প্রস্তুত বাইরে আমাকে গোসল করানোর
জন্য।
আমাকে দেখেই তারা আমায় টেনে নিয়ে
গেল।
ভাবিরা গেল আমার বউকে ডেকে আনতে
আমার ঘরে।
এরপর কতো রকমের মজা,
.
খেলা হলো এই
গোসল করানোর আগে।
পাশাও খেলতে হলো দুজনকে।
কিন্তু এই আনন্দময় মুহুর্তে আমি খেয়াল
করছি আমার বউ মিমি এর মনটা ভার।
এটাই স্বাভাবিক। একটা মেয়ে বিয়ের পর
চায় শুধু দু-বেলা দু-মুঠো খাওয়া আর স্বামীর
একটু ভালোবাসা।
কিন্তু আমি এখনো পর্যন্ত ওকে বউ হিসেবে
মেনে নিতেই পারিনি।
কি করে পারবো? আমার জন্য যে তানিয়া
অপেক্ষায় আছে।
ওকে যে আমি খুবই ভালোবাসি।
গোসল শেষ করে প্যান্ট, শার্ট পড়ে একটু
রাস্তায় বের হলাম।
আবার তানিয়া এর নাম্বারে কল দিলাম….
.
হা এবার কল ডুকেছে। একটু পরেই রিসিভ
হলো।
-কি হয়েছে, কল দাও ক্যান? তোমার তো
এখন বউ আছে।
এইটুকু বলেই ফোন রেখে দেয় তানি। আমাকে
কথা বলার সুযোগ ই দিলো না।
আবার কল করতে যাবো তখনি বাবার
নাম্বার থেকে কল আসলো।
-তোর কি মাথায় একটুও বুদ্ধি নাই? বাড়িতে
মেহমানে ভরা, একটুপর মেয়ে পক্ষের লোক
আসবে আর তুই থাকিস দূরে গিয়ে…
এই বলেই রাগ করে ফোন কেটে দেয় বাবা।
আবার বিষন্ন মনে বাড়ির দিকে রওনা দেই।
বাড়িতে ঢুকেই মাথাটা খারাপ হয়ে গেল।
.
কাজের লোকের কি অভাব আছে?! সবাই
তো বিয়ে বাড়ির কাজ নিয়েই ব্যস্ত। আমার
কাজটা কোথায়?
মনে মনে বাবার উপর ভীষণ রাগ হলো।
তাদের কথায় প্রিয় ভালোবাসার মানুষকে
ফেলে আজ অন্য কাউকে বিয়ে করতে হলো।
কিছুই ভালো লাগছে না এখন। ঘরে গিয়ে
বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
চোখটা একটু বুঝতেই মনে হলো কেউ এসে
আমার বুকের উপর মাথা রেখেছে।
তাকিয়ে দেখি (বউ) দুই হাত আমার
বুকের দুপাশে ভর করে মাথাটা বুকে
রেখেছে।
.
-আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি? (মিমি)
এই বলে মাথাটা তুলে আমার মুখের সামনে
মুখ এনে আমার জবাবের অপেক্ষা করছে
মেয়েটা।
আমি ওর মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে
আছি।
গোসল করিয়ে ভাবিরা ওকে শাড়ি পড়িয়ে,
গয়না পড়িয়ে সাজিয়ে দিয়েছে।
ওকে দেখে কল্পনার কোন পরীর মতো
লাগছে।
কি অপরুপ হাসি, অপরুপ মুখ এই মেয়েটার।
.
হাল্কা লিপস্টিক করা মিষ্টি ঠোট দুটো
ঠিক আমার মুখের সামনে নিয়ে আমার
জবারের অপেক্ষায় আছে।
কি বলবো ওকে? ওর মতো সুন্দরী মেয়েকে
পছন্দ হয়নি এটা বললে আমাকে পাগল বলবে
লোকে(নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে
আজ)।
তবে কি সত্যটা ওকে বলে দেব এখনি?
নাহ, বিয়ের কটা দিন শেষ হোক তারপর না
হয় বলবো।
.
কি হলো বললে না? বলো তোমার কি
সমস্যা?
তুমি কি অন্য কোন মেয়েকে ভালোবাসো?
ওর এই প্রশ্নে আবার আমি ওর মুখের পানে
তাকালাম।
হাসি মুখটা সামান্য ভার করে আমার দিকে
চেয়ে আছে আমার মুখের উত্তর শোনার
জন্য?(অসাধারণ তার মুখ)
তবুও আমি নিরব হয়ে আছি কি বলবো ওকে?
মিমি এবার কপালে একটা চুমো দিয়ে বলল’
তোমার যে কোন সমস্য থাকলে আমায় বলো।
বউ নয়, বন্ধু হয়ে তোমার উপকার করবো বলো
প্লিজ।
আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনি বাইরে
থেকে বলছে মেয়ে পক্ষের লোক এসেছে।
সাথে সাথে আমার দুই শালী ঢুকে পড়লো
আমার রুমে।
.
তখনো বউ আমার বুকের উপর ঝুকে আছে।
ওরা ঢুকতেই মিমি উঠে স্বাভাবিক হলো।
বড় শালীটা লজ্জা পেলেও ছোটটা এসেই
চোখটিপ মারলো আমায়।
দুজনি এসে আমার পাশে বসল।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com