প্রতিশোধের আগুন | Writer: Trisha Afrin | দ্বিতীয় পর্ব
আমার কেন এমন হচ্ছে নীলের জন্য?? কেন ওকে বারবার দেখতে মন চাই?? কেন ওর চোখের পানি আমাকেও কষ্ট দেই?? তাহলে কী আমিও ওকে ভালোবেসে ফেললাম?? মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন এসে জমাট বেধেছে।হুমম বুঝেছি আমিও নীলকে ভালোবাসি।না ওকে আর কষ্ট দেওয়া যাবেনা।এবার ওকে বলতেই হবে যে আমিও ওকে ভালোবাসি।
জানি নীল আর কখনো আমার সামনে আসবে না।ও অনেক জেদী।যা করার এবার আমাকেই করতে হবে।তাই সকালে আমি নিজেই নীলকে ফ্লো করলাম।দেখি ও বাসা থেকে বের হয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।বুঝলাম আমাকে দেখা দেবেনা বলে ওই এই পথ দিয়ে যাচ্ছে।পেছন থেকে নীলকে অনেক বার ডাকলাম কিন্তু ও দাড়ালো না।তাই দৌড়ে নীলের সামনে গিয়ে দাড়ালাম।নীল আমার সাইড কেটে চলে যেতে লাগল।এবার আমি ওর হাত ধরলাম।কিন্তু নীল আমার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে হাতটা ঝাড়া দিয়ে ফেলে কিছুটা সামনে চলে গেলো।হঠাৎ নীল দাড়িয়ে গেলো তারপর কী যেন ভেবে আমার সামনে এসে দাড়ালো।আমি মুখ নিচু করে আছি আর নীলও মুখ নিচু করে আছে।এভাবে কিছুক্ষণ কাটার পরে নীল বলল,,
-চলে যেতে পারলাম না।দেখো তোমার চোখে পানি,আর ওই পানিই আএাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।তৃষা তুমি যতই আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করো না কেন আমি তোমাকে ছাড়া কোথাও যাবো না।আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি।তাই মরণের পরেও আমি তোমার কাছে ফিরে আসব।তুমিই তো আমার স্বপ্নের দেশের রাজকণ্যা,আমার নীল রাজ্যের একমাএ সাদা পরী।এ কথা বলতে বলতে নীলের চোখে পানি ফুটে উঠল।আমার চোখ দিয়েও পানি পড়ছে।আমি আস্তে করে বললাম,,আর আমারও একটা মাএ মনের আকাশে একটা মাএই নীলচাঁদ।আর সে হলো তুমি নীল।
-কিছু বললে তৃষা??
-কই না তো নীল ।নীল আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।নীল তখন মুছকি হাসি দিয়ে বলল,
-আমি জানি তুমি কী বলবে তৃষা, তোমার চোখই সবকিছু বলে দিচ্ছে।কিন্তু তুমি না আমিই তোমাকে আগে বলতে চাই।তবে এভাবে নয় অন্যভাবে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সরণীয় ভালোবাসা হয় তৃষা ।আমি আকাশ বাতাস,চাঁদকে সাক্ষী রেখে তোমাকে ভালোবাসতে চাই।কিন্ত সেটা কোথায় ভেবে পাচ্ছি না।
নীলের মুখে হাসি দেখে সত্যিই অনেক ভালো লাগছে।আমি নীলকে বললাম:
-নীল আমাকে একটু ভাবতে দাও আমিই বলল জায়গাটার নাম।আর এই নাও আমার ফোন নাম্বার।বিকালে ফোন দিও তখন বলব।
নীলের কাছে আমার নাম্বারটা দিলাম।তারপর বাসায় চলে আসলাম।আজ অনেক ভালো লাগছে।হ্যাঁ,নীল আমাকে আজ ভালোবাসি বলবে আর আমিও বলব যে ওকে ভালোবাসি।অনেক আনন্দে সারাটা দিন আর ভেবেও নিলাম কোথাই নীলের সাথে দেখা করব।সন্ধ্যার আগেই নীল ফোন দিলো।
-হ্যালো,নীল??
-হ্যাঁ তৃষা জায়গাটা ঠিক করেছো ?? আমার তো সব কমপ্লীট এখন একটু বাজারে যাবো একটা জিনিস নিতে শুধু জায়গাটার অপেক্ষা।
-হুমম নীল ঠিক করেছি,,তুমি বলেছিলে আকাশ বাতাস,চাঁদকে শাক্ষী রাখবে আমি তেমনই একটা জায়গা ঠিক করেছি।আজ রাতে তুমি আমাদের ছাদে আসবে।জানো তো ওখানে আমি ছাড়া আর কেউ যাই না।
-আমি জানতাম তুমি ওই জায়গাটায় ঠিক করবে তাই আগে থেকেই সবকিছু কমপ্লীট করে রেখেছি।তুমি সন্ধ্যায় একবার ছাদে যাবে।
-কেন নীল ছাদে যাবো কেন?? তুমি কী তখনই আসবে??
-আরে না পাগলী।আমি রাত আটটার দিকে আসব।সন্ধ্যার পরে একবার বাজারে যেতে হবে।তুমি গেলেই বুঝবে এখন বাই অনেক কাজ আছে।
তারপর ফোনটা রেখে দিলাম।এবার ছাদে যাওয়ার জন্য অস্তির হয়ে উঠলাম।কি আছে ছাদে?? আমাকে দেখতেই হবে ।তাই সূর্য ডুবে অন্ধকার হওয়ার সাথে সাথে দৌড়ে ছাদে গেলাম।ছাদে গিয়েই আমি অবাক হয়ে গেলাম।ওয়াও,এ কী সুন্দর করে সাজানো ছাদের উপর।চারিদিকে ফুলের সমারাহ।গোলাপ,বেলী,গাঁদা ফুল দিয়ে পুরো ছাদটাই সাজাঁনো।আমি খুশি হয়ে ছাদের এদিক ওদিক দৌড়াতে লাগলাম।ওহ নীল মনে হয় তাহলে এইজন্যই আসতে বলেছিল কিন্তু এইজন্যই হলে তো ও এখনি আমাকে আসতে বলতনা নিশ্চয় সারপ্রাইচ দিতো।হঠাৎ ছাদের ফ্লোরে চোখ গেলো।একি এখানে তো একটা গিফট বক্স।হাতে নিয়ে দেখি ওখানে একটা চিঠি।চিঠিটা খুলতেই দেখি ওখানে লেখা আছে,,
ডিয়ার তৃষা,এখানে তোমার সবথেকে প্রিয় কালারের একটা শাড়ী আছে আর কিছু জিনিস আছে প্লীজ এইগুলো পড়ে আসবে।
হুমম তাহলে নীল এইজন্যই আমাকে আসতে বলেছিল।আমি ওগুলা নিয়ে নিচে চলে আসলাম।ওয়াও এ তো অনেক সুন্দর একটা শাড়ী।আমার পছন্দের নীল কালারের একটা শাড়ী।সাথে একটা নুপুর জোড়া,বেলী ফুলের একটা মালা(খোপায় দেওয়ার জন্য),একটা হারের সেট।সব মিলে জিনিসগুলো সত্যিই অপূর্ব।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাতটা বাজে।নীলের কাছে একবার ফোন দিলাম,কেন জানিনা অনেক ইচ্ছা করছে ওর সাথে কথা বলতে।
-হ্যালো তৃষা, কী হলো আমি তো একটু পরেই আসছি।
-নীল তোমাকে দেখতে অনেক ইচ্ছা করছে।
-হুমম,আমি তো আসছি একটু পরে তখন একেবারেই দেখো।
-না নীল আমার মনটা কেন জানিনা অস্তির লাগছে।প্লীজ একবার ভিডিও কলে কথা বলি??
-না তৃষা, আজ তোমাকে সারপ্রাইচ দিবো।হঠাৎ এসে চমকে দিবো তোমাকে।তুমি তারাতারি গুছিয়ে নাও আমি আটটার মধ্যে আসব তুমি আগে ছাদে যাবে হুমম ।এখন রাখছি বাই।
বলেই নীল ফোনটা রেখে দিলো।মনের ভেতরে কেন জানিনা একটা অশান্তি লাগছে।ডেতত,আমি এমন করছি কেন??নীল তো একটু পরেই আসবে।আমি তারাতারি শাড়ী পড়েনিলাম।মাথায় সুন্দর করে বেলী ফুলের মালাটাও পড়লাম।সত্যিই অপূর্ব সুন্দর লাগছে।নিজেই আয়নার দিকে অপলকে তাকিয়ে আছি।তখনই ছোট বোনটা পেছন থেকে এসে বলল,,
-ওয়াও,আপু আজ তো নীল ভাইয়া তোমার দিক থেকে চোখই ফেরাতে পারবেনা।
-ওই তুই এইসব কী বলিস?? আমি তো এমনিই সাজলাম আর জানিস না বুঝি যে আমি মাঝে মাঝে এমন সাজি।
-হুমম, কিন্তু আজ তো তুমি নীল ভাইয়ার জন্য এইসব জন্য সেজেছো।আমি কিন্তু সব জানি।(ইস ছোটুটাও দেখছি অনেক পেকে গেছে)
-ওই দাড়া তুই,দেখাচ্ছি মজা।
বলতেই ছোটু খিলখিল করে হাসতে হাসতে বাইরে চলে গেলো।আমি রুম থেকে আটটার সময় ছাদে গেলাম।ওখানে গিয়ে দেখি নীল এখনো আসেনি।মনে মনে ভাবলাম,যে নীল নিশ্চয় এখুনি আসবে।আর এসেই আমাকে লাভ ইউ বলবে।মনের ভেতরে একটা সুখের দোলা বয়ে গেলো।কিন্তু কথায় বলে,অপেক্ষার প্রহর কখনো শেষ হয়না।হঠাৎ চোখ গেলো নীচের দিকে রাকিব,আরিফুল, সাব্বির এরা এত রাতে ওইদিকে কোথায় যাচ্ছে?? তো যেখানেই যাক আমার দেখার কী দরকার?? কিন্তু নীল এখনো কেন আসছেনা?? নিশ্চয় কোনো কাজে আটকে গেছে।সময়ও বয়ে গিয়ে ঘড়ির কাটা সাড়ে আটটা,নয়টা,দশটা ছুয়ে দিলো,তবুও নীল এলোনা।আচ্ছা নীলের কাছে কী এখনো আটটা বাজেনি??আজ আসুক ওর মজা দেখাবো,আমার সাথে এমন করার মজা।সময় কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করেনা।ঘড়ির কাটা রাত একটা ছুয়ে গেলো।তবুও নীলের দেখা নেই।নীল কেন এলো না?? আমার সাথে নীল কেন এমন করল?? রাত দেড়টার দিকে হলাশ হয়ে রুমে চলে এলাম।আমি জানি নীল কেন এমন করল?? আমি ওকে চর মেরেছিলাম তাই হয়তো নীল প্রতিশোধ নিলো।কিন্তু ও কী আমার ভালোবাসাটা দেখল না?? যে আমি ওকে কতো ভালোবাসি ।কাল সকাল হোক এই প্রশ্নের উত্তর ওকে দিতেই হবে ও কেন এমন করল?? কিছুতেই ঘুম আসছে না।মনের ভেতরটা কেন জানিনা দুমড়ে মুছড়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে আমার কাছ থেকে কিছু একটা হারিয়ে যাচ্ছে। ঘড়ির কাটা তিনটা ছুয়ে গেলো। হঠাৎ করে নীলদের বাসা থেকে আন্টির কান্নার আওয়াজ আসতে লাগল।জানালা খুলে দেখি নীলের ঘরের জানালা খোলা।আর আন্টি নীলের বিছানার উপরে উপুর হয়ে কাদছে।কী হলো আন্টি এত রাতে কাদছে কেন?? আর নীলকেও তো দেখছিনা।তাহলে কী নীল বাসায় নেই?? একমাএ নীল বাসায় না থাকলে আন্টি এভাবে কাঁদে।নীল যদি আমাকে ঠকাইও থাকে তাহলে বাসায় আসবেনা কেন?? সন্ধ্যা থেকে আমার মনটা ভালো বলছিল না তাহলে আমার নীলের কিছু হয়নি তো?? নীলদের বাসায় যাবো বলে রুম থেকে বাহিরে এলাম।কিন্তু বাহিরে আসার সাথে সাথে আব্বু আমাকে ধরে ফেলল।
-ওই এত রাতে কোথায় যাচ্ছিস।
-আব্বু তোমরা এখনো ঘুমাওনি কেন?
-ঘুমিয়েছিলাম,কিন্তু নীলের আব্বু ফোন দিয়ে বলল নীলকে নাকি কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা?? সারা বাজার খুজেও নাকি নীলকে কোথাও পাই নি।
-আব্বু আমাকে ছাড়ো নীলদের বাসায় যেতে হবে।
-আরে তুই এমন কেন করছিস,,তুই ওখানে গিয়ে কী করবি??(আব্বুকে কী করে বলি তারা ধরে রাখাতে আমার আরও বেশী কষ্ট হচ্ছে।নীলের জন্য আমার মন কলিজাটা যেন ছিড়ে যাচ্ছে)এমন সময় আম্মু এসে বলল,,
-এর তোর গায়ের শাড়ীটা তো তোর না এটা কার শাড়ী?? তখন আব্বু আম্মুকে ধমক দিয়ে বলল,,
-আরে দেখছো তো মেয়েটা কেমন করছে আর তুমি শাড়ী দেখছো??মেয়েটাকে ধরে ছোফাতে বসাও।
তারপর কী হলো জানিনা,আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।ভোরে বাইরে মানুষের জোড়ে জোড়ে কথা বলাতে জ্ঞান ফিরল।ভালোভাবে ওদের কথা শুনে দেখি ওরা বলছে,, হাই স্কুলের মাঠে নাকি একটা লাশ পড়ে আছে।ওখানে নাকি অনেক মানুষের ভির।পুলেশেরা নাকি কাউকেই লাশের গায়ে হাত দিতে দিচ্ছেনা” লাশের কথা শুনে কেন জানিনা আমার বুকের ভেতরটা হুড়মুড়িয়ে উঠল।এবার আর কোনো বাধা না মেনে স্কুল মাঠের দিকে দৌড়ে গেলাম।ওখানে গিয়ে মানুষের ভির ঠেলে ভেতরে গিয়ে দেখি একটা ছেলে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।নীল কালারের একটা শার্ট পড়া।হাডিবডি আমার নীলের মতোই লাগছে।তবুও নিজের মনকে শান্তনা দিয়ে বললাম, ও আমার নীল হতেই পারেনা।পাশ থেকে একটা লোক পুলিশকে বলল,লাশটির চিৎ করে শুইয়ে দিতে (মুখ দেখবে তাই)।পুলিশ লাশটা চিৎ করে দিতেই আমি চমকে উঠলাম।একি এতো আমার নীলের মতো দেখতে ।আমি নীল বলে জোড়ে একটা চিৎকার দিতেই পাশ থেকে দুটো মহিলা পুলিশ এসে আমার হাত এটে ধরল।কিন্তু আমার চোখে কোনো পানি নেই।একেবারেই পাথর হয়ে গেছি আমি।চুপ করেই পাগলের মতো দাড়িয়ে আছি আমি।একটু পরে দেখি নীলের এসেছে।একটা মহিলা পুলিশ ওর আম্মুকে ধরে রেখেছে।ওর আম্মু নীলের লাশের দিকে তাকিয়ে কেদে দিল।এবার নিজেকেই প্রশ্ন করতে লাগলাম,,তাহলে এ কী সত্যিই আমার নীল?? কিন্তু নীলের আম্মুর চোখের পানিই বলে দিচ্ছে যে ওটা নীল।আমিও আর পারলাম না চুপ থাকতে।মহিলা পুলিশ দুটোকে জোড়ে ঠেলে ফেলে দিয়ে নীলের লাশের উপরে গিয়ে পড়লাম।তারপর নীলের মাথাটা বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বললাম,,
ওই নীল, নীল উঠো বলছি।এইখানে এইভাবে শুয়ে আছো কেন হুমম?? দেখোতো আমি তোমার দেওয়া শাড়ী পড়েছি।বলোনা নীল আমাকে কেমন লাগছে?? এই আমি তোমার সাথে কথা বলছি কেন?? তোমার সাথে আমার আড়ি,আড়ি,আড়ি।আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও বলো কেন কাল আসলেনা হুমম?? জানো আমার কতো কষ্ট হয়েছিল?? আগে আমাকে ছরি বলো বলছি।তবুও নীল কোনো কথা বলল না।চুপচাপ আমার কাধে মাথে দিয়ে আছে।যেন কত শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে ও আমার কাধে মাথা দিয়ে।পাশ থেকে একটা পুলিশ আমাকে ধরতে গেলো।কিন্তু তখন আর একটা পুলিশ অফিসার বলল,,ওকে ধরোনা।ছেড়ে দাও শেষ বারের মতো ওর কথাগুলো বলতে দাও।এই “শেষ বারের মতো” কথাটাই আমার কানে বাজতে লাগল।এবার আমি নীলকে আরো জড়িয়ে ধরে বললাম,ওই আপনারা একটুও বাজে কথা বলবেন না শেষ বারের মতো মানে কী হুমম?? এই তো আমার নীল আমার কাছে আছে আর সারাজীবন থাকবে।আমার এই বোকামী দেখে নীলের আম্মু আরও জোড়ে কেদে উঠল।ওই নীল ওঠো না কেন দেখছোনা সবাই তোমার জন্য কাঁদছে।তুমি তো কাউকেই কষ্ট দেওনা,তাহলে আজ কেন সবাইকে কষ্ট দিচ্ছো বলো তো?? এবার নীলের পাশে তাকিয়ে দেখি,, ওখানে একটা ছোট বক্স ফেলানো।বক্সের একপাশ ভেঙে গেছে।ওর ভেতরে একটা হীরার আংটি দেখা যাচ্ছে।তার পাশে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল(স্টীক করা) আর বড় একটা ডল(নীল জানতো আমি পুতুল অনেক পছন্দ করি)।পুলিশ ওইগুলো উঠিয়ে আমার কাছে এসে বলল,ম্যাম এইগুলো মনে হয় উনি আপনার জন্যই নিয়ে এসেছিল।দেখুন এই আংটির বাক্সের গায়ে “শুধুই তৃষার” লেখা।পুলিশ ওইগুলো আমার হাতে ধরিয়ে দিলো।আমি এবার নীলকে উঠাতে গেলাম।আর সাথে সাথে হাতে ঠান্ডা কিছু অনুভব করলাম।একি নীলের পেট দিয়ে তো অঝড়ে রক্ত বের হচ্ছে।ওকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হলেছে।তবে একটা আঘাত নয় অসংখ্য আঘাত।এবার আর কান্নাকে আটকে রাখতে পারলাম না।জোড়ে কেদে উঠলাম।নীল তুমি তো বলেছিলে আমাকে সারপ্রাইচ দিবে।কিন্তু এটা কেমন সারপ্রাইচ দিলে আমায়?? তুমি কেন আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলে না বলো?? আমি তোমাকে ছাড়া কী করে থাকব?? নীল, ও নীল,, কেন আমাকে দেখা দাও নি বলো?? শেষ বারের মতো লেন তোমার জীবিত মুখটা দেখতে দিলেনা বলো?? এবার আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে জোড়ে চিৎকার করে বলতে লাগলাম,,হে আল্লাহ,কেন আমার সাথে তুমি এমন করলে?? আমাকে কেন নিজের মুখে ভালোবাসি কথাটা বলার সুযোগও দিলে না বলো?? ও তো তোমার প্রকৃতিকেই সাক্ষী করে আমাকে ভালোবাসে বলতে চেয়েছিল কেন ওকে সেই সুযোগটাও দিলেনা?? ওর ভালোবাসা তো নিষ্পাপ ছিল খোদা।দাও আমার ভালোবাসাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।না হলে আজ থেকে ভালোবাসা মিথ্যা হয়ে যাবে।
আব্বু আম্মু আমার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।কারণ তারা এসব কিছু জানতোনা।এবার অনেকগুলো পুলিশ এসে আমার কাছ থেকে নীলকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল,,ম্যাম লাশটাকে ছাড়ুন,মর্গে নিয়ে যেতে হবে।কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমার নীলকে?? প্নীজ ওকে নিয়ে যাবেন না।আমার অনেক আকুতি মিনতিতে ওরা নীলকে মর্গে নিলোনা।তবে মৃত ব্যক্তি তো আর এই দুনিয়ার রাখা যাবেনা।বাস্তব যতই কঠিণ বা নির্মম হোক আমাদেরকে মানতেই হয়।নীলকেও তেমন করে করব দেওয়া হলো।কিন্তু কবরটা দেওয়া হলো ওদের বাসার সামনে।এবার ক্রাইম পুলেশের দায়িত্ব পড়ল খুনের রহস্য বের করা।সবার মাঝে ক্রাইম পুলিশ প্রশ্ন করল,নীলের সাথে কার শএুতা ছিল।কেউ কিছু বলতে পারলনা।হঠাৎ রাকিব এসে বলল,আমি জানি কার সাথে নীলের শএুতা ছিল বলল,নীল আমার সবথেকে বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিল।কিন্তু ও তৃষাকে ভালোবাসতো।কিন্তু তৃষা ওকে কখনো ভালোবাসতো না।এমনকি একদিন নীলকে চরও মারে।ওর কথার ভিত্তিতে সমস্ত অপরাধ আমার উপরে আসল।তাই পুলিশ আমাকে থানায় নিতে বাধ্য হলো।পুলিশ আমাকে জিরা করতে লাগল আমি নীলের খুনের ব্যাপেরে কিছু জানি কী না?? আমি কোনো কথা বলছি না।কারণ কথা বলার মতো অবস্তাতে আমি নেই।একটু পরে নীলের আম্মু এসে হাজির হলো।উনি বললেন,না তৃষা এটা করতে পারে না।আর হ্যাঁ,তৃষা নীলকে মেরেছিলো।নীল অভদ্রতা করেছিল বলেই তৃষা মেরেছিলে।নীল আমাকে সবই বলেছে।আর তৃষাও নীলকে অনেক ভালোবাসে।আর ওই রাতেই তৃষা নীলকে বলতে চেয়েছিল।তৃষা কখনোই নীলকে মারতে পারেনা।এটা অন্য কোনো চক্রান্ত।আমার উপরে চার্য করেও পুলিশ কোনো তথ্য পেলোনা।তাই আমাকে ছেড়ে দিলো।
.
আগের মতো জানালাই দাড়ালে নীলকে আর দেখা যাইনা।তবে নীলের কবরটা দেখা যাই।আমার সারাদিনের কাজ ছিলো ওই জানালার সামনে দাড়িয়ে থাকা।নীলের মৃত্যুটা আসলেই মেনে নিতে পারিনি।আর কী করে মানবো ওকে যে অনেক বেশী ভালবাসতাম।ওর সাথেই যে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখেছিলাম।কিন্তু স্বপ্ন দেখার আগেই যদি স্বপ্ন ভেঙে যাই তাহলে কেই বা মানতে পারে?? দাওয়া দাওয়া কিছুই করতাম না। সারাদিন পাগলের মতো জানালার কাছে দাড়িয়ে ওর কবর দেখতাম।আব্বু অনেক চেষ্টা করেছিল মুখে হাসি ফোটানোর কিন্তু কোনো ভাবেই পারিনি।এভাবেই চলতে লাগল দিন।কিছুদিন পরে হঠাৎ বাসায় মীম আর ইবনাত আসল।
-তৃষা চল তো আমাদের সাথে ।(মীম)
-কোথায় যাব?(আমি)
-চল আজ বন্ধুরা মিলে একটা পার্টি দিবো।অনেক মজা হবে চল।(ইবনাত)
-না আমি যাবোনা ভালো লাগেনা।(আমি)
আমি অনেকবার না করা স্বত্বেও ওরা জোড় করে আমাকে নিয়ে গেলো।আজও পার্টিতে কিছুই ভালো লাগছে না।আমার নীলও পার্টিতে আসতে অনেক ভালোবাসতো।পার্টিতে আসতে পারলে ও যেন আনন্দে আন্তহারা হয়ে উঠত।পার্টির এক পর্যায়ে হঠাৎ মীম বলে উঠল,,
-এবার তৃষা একটা গান গাইবে তৃষা গান বল তো।(মীম)
-না আমি কিছুতেই গান গাইব না।দেখ আমাকে জোড় করিস না।(আমি)
-তৃষা প্রতিবারই তো গান গাস তাহলে এইনার গাইবিনা কেন??আজ তোর কোনো না শুনবো না।(মীম)
হ্যাঁ,নীলও তো ওর শেষ পার্টিতে গান গাইছিলোনা।তবুও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ও ঠিক গান গেয়েছিলো।আমার নীলও তো গান গাইতে অনেক ভালোবাসে।তাহলে আমি আজ পার্টিতে গান গাইলে ও নিশ্চয় অনেক খুশি হবে।তাই সমস্ত নীরবতা ভেঙে গাইতে শুরু করলাম,,,,
“বুঝিয়ে রাখার শব্দমালা,হয়ে যাই এলোমেলো,,ফেলে দেখা তোর ছন্দহারায়,সাজানো কাব্যগুলো,,এই মন ছুটে তোর মনের পিছু, রোনয়ো নেশায়,,রুচালো আমায় রইনা কিছু তোর ভালোবাসায়,তোর ভালোবাসায়………”
এইটুকু বলতে না বলতে ইবনাত বলে উঠল,,
-থাম তৃষা, তোর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমরা বন্ধুরা মিলে এত আয়োজন করলাম আর তুই এমন একটা স্যাড মুডের গান গাইছিস?? (ওরা জানেও না যে আব্বু আমার মন ভালো করার জন্য টাকা দিয়েছিলো সেটা আমি দেখে নিয়েছিলাম)প্লীজ তৃষা আগের মতো সুন্দর মুডে তোর সবথেকে প্রিয় রোমান্টিক গানগুলো থেকে একটা বল প্লীজ।
-দেখ ইবনাত তখন আমার জীবনে সব ছিল ।(নীল ছিল)কিন্তু এখন আমার জীবনে কিছুই নেই।তবে তোরা যখন এতো করে বলছিস তাহলে আমি আমার এখনকার প্রিয় গানটাই গাইয়ে পারি।
তখন সবাই একসাথে বলে উঠল,,
-ওকে সেটাই বল।
বেশ তাহলে সেটাই শোন,,,
“তুমি ফিরে এসে দেখো কতো বদলে গেছি আমি, আগের মতো করিনা পাগলামী,,তুমি চলে যাওয়ার পর আমার ভেঙেছে অন্তর,ভালোবেসে হয়েছি বদনামি”
সবাই এবারও আমার গান শুনে মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।কিন্তু আমি আর গাইতে পারলাম না।ওখানেই বসে জোড়ে চিৎকার করে কান্না শুরু করলাম।নীল তুমি কোথায়,নীল?? আমি যে সত্যিই তোমাকে অনেক মিস করছি।আমি যে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না নীল ।কেন আমাকে এইভাবে একা করে দিয়ে চলে গেলে নীল?? প্লীজ তোমার তৃষার কাছে আবার ফিরে এসো নীল ।আমি যে তোমার পথ চেয়ে এখনো বসে আছি নীল।ও নীল, নীল, ও নীল তুমি শুনছো কেন তুমি তোমার তৃষার ডাকে সারা দিচ্ছোনা বলো নীল??
এবার মীম আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে উঠিয়ে ও নিজেই কাদতে কাদতে বলল,
-কাদিস না তৃষা,এভাবে কেন কাদিস বল তো যে একবার চলে যায় সে কী আর কখনো ফিরে আসে বল ??
আমি মীমের কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে বাসায় চলে আসলাম।না,না আমি নীলকে ছাড়া কখনো থাকতে পারব না।আর থাকার কথা আসছে কেন নীল বেচে নেই তাহলে আমি কেন বেচে আছি?? না আমারও বাচার কোনো অধিকার নেই আমি আজই আমার নীলের কাছে চলে যাবো।বলেই একটা ছুরি নিয়ে নিজের বুকে ঢুকাতে গেলাম।ঠিক তখনি চারপাশ থেকে আওয়াজ আসতে লাগল,,
“বাস্তব বড় কঠিণ,তবুও মেনে নিতে হয়,,
জীবন এত জটিল,তবুও মানুষকে বেচে থাকতে হয়,
ভালোবাসা বড়ই কঠিন,তবুও মানুষকে ভালোবাসতে হয়,পৃথিবী এত মায়ার,তবুও তাকে ছেড়ে যেতে হয়,মিত্যু এত যন্তণার,তবুও তাকে বরণ করতে হয়”
তৃষা আমাকে খুন করা হয়েছে আর তুমি কে খুন করছে এটা না দেখে এইরকম একটা জঘন্য কাজ করছো??(বুঝতে পারলাম এটা আমার নীল)
-নীল তুমি কোথায় নীল আমার সামনে এসোকিন্তু নীলের আর কোনো সারাশব্দ পেলাম না।হ্যাঁ,আমার নীল তো ঠিকই বলেছে ওকে তো খুনই করা হয়েছে।আর আমি কিনা সেই খুনির কোনো শাস্তি না দিয়ে নিজেই পালিয়ে যাচ্ছিলাম।না যেভাবেই হোক নীলের খুনিকে খুজে বের করতেই হবে আমাকে।আমার নীলকে যারা মেরেছে,যারা একটা বাবা মাকে সন্তানহারা করেছে তাদের কিছুতেই আমি ছাড়বোনা।বুকের ভেতরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠল।হ্যাঁ,প্রতিশোধের আগুন।নিজের চোখের পানি খুব শক্তভাবে মুছে ফেললাম।না আর কাদবো না আমি।এবার ওই খুনিদের পালা।
কিন্তু আমি বুঝব কী করে বুঝব নীলের খুনি কারা?? তখনই মনে পড়ল রাকিবের কথা।হুমম রাকিব তো বলেছিল যে নীল নাকি ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড।কিন্তু আমি তো জানি যে রাকিব নীলকে একটুও সহ্য করতে পারত না।ওদের মাঝে দা কুমড়োর সম্পর্ক ছিল।তাহলে রাকিব কেন সেদিন মিথ্যা বলল?? আর নীলের মৃত্যুর দিন আমি রাস্তায় রাকিব, আরিফুল আর সাব্বিরকে একসাথে যেতে দেখেছিলাম।নীলের মৃত্যুর দুইদিন পরেই তো রাকিব আব্বুর কাছে এসেছিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে?? কেন ও এত তারাতারিই আসল?? হুমম সমস্ত সন্দেহ রাকিবের দিকেই যাচ্ছে।আমার মনে হয় রাকিবেরই নীলের মৃত্যুর পেছনে হাত আছে।আমাকে আজই রাকিবের শরণাপন্ন হতে হবে ।তাহলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।তাই সুন্দর করে সেজেগুজে রাকিবদের বাসার উদ্দেশ্যে বের হলাম।নীল মারা যাওয়ার পরে আজই মনে হয় এত বেশী সাজলাম।বাসা থেকেও কেউ বের হতে নিষেধ করল না।কারণ আমি সবকিছু আম্মুকে বুঝিয়ে বলেছিলাম।
কিছুক্ষণ পরেই রাকিবদের বাসায় আসলাম।আন্টিরাও আমায় দেখে অনেক খুশি ।রাকিবের কথা জিজ্ঞেস করতেই আন্টি মুখটা কালো করে বলল ও আর কোথায় থাকবে ওর রুমেই আছে।(আসলে রাকিব বাজে ছেলে হওয়ার জন্য ওর বাসার কেউ ওকে পছন্দ করে না)
রাকিবের রুমে যেতেই ও আমাকে দেখে লাফ দিয়ে উঠে বলল,আরে তৃষা যে আসো আসো ভেতরে আসো।ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও নেশাগ্রস্ত অবস্তায় আছে।তার পরেও ওর পাশে গিয়ে বসলাম।অনেকক্ষণ ওর সাথে কথা বললাম তবুও তেমন তথ্য না পেয়েই উঠে আসছিলাম।ঠিক তখনই আমার চোখ গেলো, রাকিবের জূতার সেল্পে।ওর একটা জূতা জোড়াই যেন রক্তের বিন্দু বিন্দু ছোপ দেখা যাচ্ছে।এবার সন্দেহটা ওর উপরেই পুরোপুরিভাবে গেলো ।আবার ফিরে রাকিবের কাছে গিয়ে বসলাম ।
-কী হলো তৃষা কিছু বলবে আবার ফিরে আসলে যে??
-হুমম রাকিব, তোমাকে যে কথা বলতে এসেছিলাম সেটাই তো বলা হলো না।কিন্তু কীভাবে যে বলব সেটাই ভাবছি।
-আরে তৃষা তোমার যা খুশি বলতে পারো।
-হুমম, রাকিব আমি না তোমাকে….
এবার রাকিব উত্তেজিত হয়ে বলল,
-কী আমাকে কী বলো??
-রাকিব নীল তো মারা গেলো ।ওর কথা ভেবে আমার আর কি লাভ বলো?? আমাকেও তো আমার জৌবনটা নতুন করে শুরু করতে হবে না কি?? তাই ভাবছিলাম তুমিও তো আমাকে ভালোবাসো।অবশ্য তুমি যদি চাও তোমার সাথেই আমার জীবনটা নতুন করে শুরু করতে পারি।
-আরে আমি তো একেবারেই রাজি আছি।এতদিনে একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিলে তুমি ।কিন্তু তৃষা আমি তোমাকে আগে প্রপোচ করতে চাই।
-ওকে করে ফেলো।
-না তৃষা এভাবে নয় অন্যদিন উৎযাপনের মাধ্যমে।
-ওকে,কিন্তু রাকিব তোমার একটা কালো জূতা আছে না সেটা কোথায়??
-কেন তৃষা??
-না মানে, ওই জূতাটা আমার অনেক ভালো লাগে।আমি চাই ওইটা তুমি ওইদিন পরে আসবে।
-ওই তো বারো তারিখে বিকালে একবার পড়েছিলাম তারপর আর পড়িনি।ভেবেঙিলাম ওইটা আর পড়বোনা তবে তুমি যখন বলছো ঠিকই পড়ব।
(এবার আর বুঝতে বাকি রইল না যে রাকিবই নীলকে মেরেছে।নীলও মারা গিয়েছিলো বারো তারিখ।মনে হচ্ছে ওকে আমি এখানেই খুন করে দিই।কিন্তু না সবার সামনে ওর অপরাধ নিয়ে আসতে হবে ।তখন মনে করলাম বারো তারিখে রাকিবের গায়ে একটা ব্লু টি-শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়া ছিলো।হুমম যেদিন রাকিব আমাকে প্রপোচ করবে ওইদিনই ওকে ধরব আমি)
-আর রাকিব তোমার ব্লু টি-শার্ট আর কালো একটা প্যান্ট আছেনা ওইগুলো পড়ে আসবে ওইদিন।রাকিব এইবার সন্দেহ করে আমাকে বলল,,
-চলে যেতে পারলাম না।দেখো তোমার চোখে পানি,আর ওই পানিই আএাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।তৃষা তুমি যতই আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করো না কেন আমি তোমাকে ছাড়া কোথাও যাবো না।আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি।তাই মরণের পরেও আমি তোমার কাছে ফিরে আসব।তুমিই তো আমার স্বপ্নের দেশের রাজকণ্যা,আমার নীল রাজ্যের একমাএ সাদা পরী।এ কথা বলতে বলতে নীলের চোখে পানি ফুটে উঠল।আমার চোখ দিয়েও পানি পড়ছে।আমি আস্তে করে বললাম,,আর আমারও একটা মাএ মনের আকাশে একটা মাএই নীলচাঁদ।আর সে হলো তুমি নীল।
-কিছু বললে তৃষা??
-কই না তো নীল ।নীল আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।নীল তখন মুছকি হাসি দিয়ে বলল,
-আমি জানি তুমি কী বলবে তৃষা, তোমার চোখই সবকিছু বলে দিচ্ছে।কিন্তু তুমি না আমিই তোমাকে আগে বলতে চাই।তবে এভাবে নয় অন্যভাবে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সরণীয় ভালোবাসা হয় তৃষা ।আমি আকাশ বাতাস,চাঁদকে সাক্ষী রেখে তোমাকে ভালোবাসতে চাই।কিন্ত সেটা কোথায় ভেবে পাচ্ছি না।
নীলের মুখে হাসি দেখে সত্যিই অনেক ভালো লাগছে।আমি নীলকে বললাম:
-নীল আমাকে একটু ভাবতে দাও আমিই বলল জায়গাটার নাম।আর এই নাও আমার ফোন নাম্বার।বিকালে ফোন দিও তখন বলব।
নীলের কাছে আমার নাম্বারটা দিলাম।তারপর বাসায় চলে আসলাম।আজ অনেক ভালো লাগছে।হ্যাঁ,নীল আমাকে আজ ভালোবাসি বলবে আর আমিও বলব যে ওকে ভালোবাসি।অনেক আনন্দে সারাটা দিন আর ভেবেও নিলাম কোথাই নীলের সাথে দেখা করব।সন্ধ্যার আগেই নীল ফোন দিলো।
-হ্যালো,নীল??
-হ্যাঁ তৃষা জায়গাটা ঠিক করেছো ?? আমার তো সব কমপ্লীট এখন একটু বাজারে যাবো একটা জিনিস নিতে শুধু জায়গাটার অপেক্ষা।
-হুমম নীল ঠিক করেছি,,তুমি বলেছিলে আকাশ বাতাস,চাঁদকে শাক্ষী রাখবে আমি তেমনই একটা জায়গা ঠিক করেছি।আজ রাতে তুমি আমাদের ছাদে আসবে।জানো তো ওখানে আমি ছাড়া আর কেউ যাই না।
-আমি জানতাম তুমি ওই জায়গাটায় ঠিক করবে তাই আগে থেকেই সবকিছু কমপ্লীট করে রেখেছি।তুমি সন্ধ্যায় একবার ছাদে যাবে।
-কেন নীল ছাদে যাবো কেন?? তুমি কী তখনই আসবে??
-আরে না পাগলী।আমি রাত আটটার দিকে আসব।সন্ধ্যার পরে একবার বাজারে যেতে হবে।তুমি গেলেই বুঝবে এখন বাই অনেক কাজ আছে।
তারপর ফোনটা রেখে দিলাম।এবার ছাদে যাওয়ার জন্য অস্তির হয়ে উঠলাম।কি আছে ছাদে?? আমাকে দেখতেই হবে ।তাই সূর্য ডুবে অন্ধকার হওয়ার সাথে সাথে দৌড়ে ছাদে গেলাম।ছাদে গিয়েই আমি অবাক হয়ে গেলাম।ওয়াও,এ কী সুন্দর করে সাজানো ছাদের উপর।চারিদিকে ফুলের সমারাহ।গোলাপ,বেলী,গাঁদা ফুল দিয়ে পুরো ছাদটাই সাজাঁনো।আমি খুশি হয়ে ছাদের এদিক ওদিক দৌড়াতে লাগলাম।ওহ নীল মনে হয় তাহলে এইজন্যই আসতে বলেছিল কিন্তু এইজন্যই হলে তো ও এখনি আমাকে আসতে বলতনা নিশ্চয় সারপ্রাইচ দিতো।হঠাৎ ছাদের ফ্লোরে চোখ গেলো।একি এখানে তো একটা গিফট বক্স।হাতে নিয়ে দেখি ওখানে একটা চিঠি।চিঠিটা খুলতেই দেখি ওখানে লেখা আছে,,
ডিয়ার তৃষা,এখানে তোমার সবথেকে প্রিয় কালারের একটা শাড়ী আছে আর কিছু জিনিস আছে প্লীজ এইগুলো পড়ে আসবে।
হুমম তাহলে নীল এইজন্যই আমাকে আসতে বলেছিল।আমি ওগুলা নিয়ে নিচে চলে আসলাম।ওয়াও এ তো অনেক সুন্দর একটা শাড়ী।আমার পছন্দের নীল কালারের একটা শাড়ী।সাথে একটা নুপুর জোড়া,বেলী ফুলের একটা মালা(খোপায় দেওয়ার জন্য),একটা হারের সেট।সব মিলে জিনিসগুলো সত্যিই অপূর্ব।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাতটা বাজে।নীলের কাছে একবার ফোন দিলাম,কেন জানিনা অনেক ইচ্ছা করছে ওর সাথে কথা বলতে।
-হ্যালো তৃষা, কী হলো আমি তো একটু পরেই আসছি।
-নীল তোমাকে দেখতে অনেক ইচ্ছা করছে।
-হুমম,আমি তো আসছি একটু পরে তখন একেবারেই দেখো।
-না নীল আমার মনটা কেন জানিনা অস্তির লাগছে।প্লীজ একবার ভিডিও কলে কথা বলি??
-না তৃষা, আজ তোমাকে সারপ্রাইচ দিবো।হঠাৎ এসে চমকে দিবো তোমাকে।তুমি তারাতারি গুছিয়ে নাও আমি আটটার মধ্যে আসব তুমি আগে ছাদে যাবে হুমম ।এখন রাখছি বাই।
বলেই নীল ফোনটা রেখে দিলো।মনের ভেতরে কেন জানিনা একটা অশান্তি লাগছে।ডেতত,আমি এমন করছি কেন??নীল তো একটু পরেই আসবে।আমি তারাতারি শাড়ী পড়েনিলাম।মাথায় সুন্দর করে বেলী ফুলের মালাটাও পড়লাম।সত্যিই অপূর্ব সুন্দর লাগছে।নিজেই আয়নার দিকে অপলকে তাকিয়ে আছি।তখনই ছোট বোনটা পেছন থেকে এসে বলল,,
-ওয়াও,আপু আজ তো নীল ভাইয়া তোমার দিক থেকে চোখই ফেরাতে পারবেনা।
-ওই তুই এইসব কী বলিস?? আমি তো এমনিই সাজলাম আর জানিস না বুঝি যে আমি মাঝে মাঝে এমন সাজি।
-হুমম, কিন্তু আজ তো তুমি নীল ভাইয়ার জন্য এইসব জন্য সেজেছো।আমি কিন্তু সব জানি।(ইস ছোটুটাও দেখছি অনেক পেকে গেছে)
-ওই দাড়া তুই,দেখাচ্ছি মজা।
বলতেই ছোটু খিলখিল করে হাসতে হাসতে বাইরে চলে গেলো।আমি রুম থেকে আটটার সময় ছাদে গেলাম।ওখানে গিয়ে দেখি নীল এখনো আসেনি।মনে মনে ভাবলাম,যে নীল নিশ্চয় এখুনি আসবে।আর এসেই আমাকে লাভ ইউ বলবে।মনের ভেতরে একটা সুখের দোলা বয়ে গেলো।কিন্তু কথায় বলে,অপেক্ষার প্রহর কখনো শেষ হয়না।হঠাৎ চোখ গেলো নীচের দিকে রাকিব,আরিফুল, সাব্বির এরা এত রাতে ওইদিকে কোথায় যাচ্ছে?? তো যেখানেই যাক আমার দেখার কী দরকার?? কিন্তু নীল এখনো কেন আসছেনা?? নিশ্চয় কোনো কাজে আটকে গেছে।সময়ও বয়ে গিয়ে ঘড়ির কাটা সাড়ে আটটা,নয়টা,দশটা ছুয়ে দিলো,তবুও নীল এলোনা।আচ্ছা নীলের কাছে কী এখনো আটটা বাজেনি??আজ আসুক ওর মজা দেখাবো,আমার সাথে এমন করার মজা।সময় কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করেনা।ঘড়ির কাটা রাত একটা ছুয়ে গেলো।তবুও নীলের দেখা নেই।নীল কেন এলো না?? আমার সাথে নীল কেন এমন করল?? রাত দেড়টার দিকে হলাশ হয়ে রুমে চলে এলাম।আমি জানি নীল কেন এমন করল?? আমি ওকে চর মেরেছিলাম তাই হয়তো নীল প্রতিশোধ নিলো।কিন্তু ও কী আমার ভালোবাসাটা দেখল না?? যে আমি ওকে কতো ভালোবাসি ।কাল সকাল হোক এই প্রশ্নের উত্তর ওকে দিতেই হবে ও কেন এমন করল?? কিছুতেই ঘুম আসছে না।মনের ভেতরটা কেন জানিনা দুমড়ে মুছড়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে আমার কাছ থেকে কিছু একটা হারিয়ে যাচ্ছে। ঘড়ির কাটা তিনটা ছুয়ে গেলো। হঠাৎ করে নীলদের বাসা থেকে আন্টির কান্নার আওয়াজ আসতে লাগল।জানালা খুলে দেখি নীলের ঘরের জানালা খোলা।আর আন্টি নীলের বিছানার উপরে উপুর হয়ে কাদছে।কী হলো আন্টি এত রাতে কাদছে কেন?? আর নীলকেও তো দেখছিনা।তাহলে কী নীল বাসায় নেই?? একমাএ নীল বাসায় না থাকলে আন্টি এভাবে কাঁদে।নীল যদি আমাকে ঠকাইও থাকে তাহলে বাসায় আসবেনা কেন?? সন্ধ্যা থেকে আমার মনটা ভালো বলছিল না তাহলে আমার নীলের কিছু হয়নি তো?? নীলদের বাসায় যাবো বলে রুম থেকে বাহিরে এলাম।কিন্তু বাহিরে আসার সাথে সাথে আব্বু আমাকে ধরে ফেলল।
-ওই এত রাতে কোথায় যাচ্ছিস।
-আব্বু তোমরা এখনো ঘুমাওনি কেন?
-ঘুমিয়েছিলাম,কিন্তু নীলের আব্বু ফোন দিয়ে বলল নীলকে নাকি কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা?? সারা বাজার খুজেও নাকি নীলকে কোথাও পাই নি।
-আব্বু আমাকে ছাড়ো নীলদের বাসায় যেতে হবে।
-আরে তুই এমন কেন করছিস,,তুই ওখানে গিয়ে কী করবি??(আব্বুকে কী করে বলি তারা ধরে রাখাতে আমার আরও বেশী কষ্ট হচ্ছে।নীলের জন্য আমার মন কলিজাটা যেন ছিড়ে যাচ্ছে)এমন সময় আম্মু এসে বলল,,
-এর তোর গায়ের শাড়ীটা তো তোর না এটা কার শাড়ী?? তখন আব্বু আম্মুকে ধমক দিয়ে বলল,,
-আরে দেখছো তো মেয়েটা কেমন করছে আর তুমি শাড়ী দেখছো??মেয়েটাকে ধরে ছোফাতে বসাও।
তারপর কী হলো জানিনা,আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।ভোরে বাইরে মানুষের জোড়ে জোড়ে কথা বলাতে জ্ঞান ফিরল।ভালোভাবে ওদের কথা শুনে দেখি ওরা বলছে,, হাই স্কুলের মাঠে নাকি একটা লাশ পড়ে আছে।ওখানে নাকি অনেক মানুষের ভির।পুলেশেরা নাকি কাউকেই লাশের গায়ে হাত দিতে দিচ্ছেনা” লাশের কথা শুনে কেন জানিনা আমার বুকের ভেতরটা হুড়মুড়িয়ে উঠল।এবার আর কোনো বাধা না মেনে স্কুল মাঠের দিকে দৌড়ে গেলাম।ওখানে গিয়ে মানুষের ভির ঠেলে ভেতরে গিয়ে দেখি একটা ছেলে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।নীল কালারের একটা শার্ট পড়া।হাডিবডি আমার নীলের মতোই লাগছে।তবুও নিজের মনকে শান্তনা দিয়ে বললাম, ও আমার নীল হতেই পারেনা।পাশ থেকে একটা লোক পুলিশকে বলল,লাশটির চিৎ করে শুইয়ে দিতে (মুখ দেখবে তাই)।পুলিশ লাশটা চিৎ করে দিতেই আমি চমকে উঠলাম।একি এতো আমার নীলের মতো দেখতে ।আমি নীল বলে জোড়ে একটা চিৎকার দিতেই পাশ থেকে দুটো মহিলা পুলিশ এসে আমার হাত এটে ধরল।কিন্তু আমার চোখে কোনো পানি নেই।একেবারেই পাথর হয়ে গেছি আমি।চুপ করেই পাগলের মতো দাড়িয়ে আছি আমি।একটু পরে দেখি নীলের এসেছে।একটা মহিলা পুলিশ ওর আম্মুকে ধরে রেখেছে।ওর আম্মু নীলের লাশের দিকে তাকিয়ে কেদে দিল।এবার নিজেকেই প্রশ্ন করতে লাগলাম,,তাহলে এ কী সত্যিই আমার নীল?? কিন্তু নীলের আম্মুর চোখের পানিই বলে দিচ্ছে যে ওটা নীল।আমিও আর পারলাম না চুপ থাকতে।মহিলা পুলিশ দুটোকে জোড়ে ঠেলে ফেলে দিয়ে নীলের লাশের উপরে গিয়ে পড়লাম।তারপর নীলের মাথাটা বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বললাম,,
ওই নীল, নীল উঠো বলছি।এইখানে এইভাবে শুয়ে আছো কেন হুমম?? দেখোতো আমি তোমার দেওয়া শাড়ী পড়েছি।বলোনা নীল আমাকে কেমন লাগছে?? এই আমি তোমার সাথে কথা বলছি কেন?? তোমার সাথে আমার আড়ি,আড়ি,আড়ি।আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও বলো কেন কাল আসলেনা হুমম?? জানো আমার কতো কষ্ট হয়েছিল?? আগে আমাকে ছরি বলো বলছি।তবুও নীল কোনো কথা বলল না।চুপচাপ আমার কাধে মাথে দিয়ে আছে।যেন কত শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে ও আমার কাধে মাথা দিয়ে।পাশ থেকে একটা পুলিশ আমাকে ধরতে গেলো।কিন্তু তখন আর একটা পুলিশ অফিসার বলল,,ওকে ধরোনা।ছেড়ে দাও শেষ বারের মতো ওর কথাগুলো বলতে দাও।এই “শেষ বারের মতো” কথাটাই আমার কানে বাজতে লাগল।এবার আমি নীলকে আরো জড়িয়ে ধরে বললাম,ওই আপনারা একটুও বাজে কথা বলবেন না শেষ বারের মতো মানে কী হুমম?? এই তো আমার নীল আমার কাছে আছে আর সারাজীবন থাকবে।আমার এই বোকামী দেখে নীলের আম্মু আরও জোড়ে কেদে উঠল।ওই নীল ওঠো না কেন দেখছোনা সবাই তোমার জন্য কাঁদছে।তুমি তো কাউকেই কষ্ট দেওনা,তাহলে আজ কেন সবাইকে কষ্ট দিচ্ছো বলো তো?? এবার নীলের পাশে তাকিয়ে দেখি,, ওখানে একটা ছোট বক্স ফেলানো।বক্সের একপাশ ভেঙে গেছে।ওর ভেতরে একটা হীরার আংটি দেখা যাচ্ছে।তার পাশে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল(স্টীক করা) আর বড় একটা ডল(নীল জানতো আমি পুতুল অনেক পছন্দ করি)।পুলিশ ওইগুলো উঠিয়ে আমার কাছে এসে বলল,ম্যাম এইগুলো মনে হয় উনি আপনার জন্যই নিয়ে এসেছিল।দেখুন এই আংটির বাক্সের গায়ে “শুধুই তৃষার” লেখা।পুলিশ ওইগুলো আমার হাতে ধরিয়ে দিলো।আমি এবার নীলকে উঠাতে গেলাম।আর সাথে সাথে হাতে ঠান্ডা কিছু অনুভব করলাম।একি নীলের পেট দিয়ে তো অঝড়ে রক্ত বের হচ্ছে।ওকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হলেছে।তবে একটা আঘাত নয় অসংখ্য আঘাত।এবার আর কান্নাকে আটকে রাখতে পারলাম না।জোড়ে কেদে উঠলাম।নীল তুমি তো বলেছিলে আমাকে সারপ্রাইচ দিবে।কিন্তু এটা কেমন সারপ্রাইচ দিলে আমায়?? তুমি কেন আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলে না বলো?? আমি তোমাকে ছাড়া কী করে থাকব?? নীল, ও নীল,, কেন আমাকে দেখা দাও নি বলো?? শেষ বারের মতো লেন তোমার জীবিত মুখটা দেখতে দিলেনা বলো?? এবার আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে জোড়ে চিৎকার করে বলতে লাগলাম,,হে আল্লাহ,কেন আমার সাথে তুমি এমন করলে?? আমাকে কেন নিজের মুখে ভালোবাসি কথাটা বলার সুযোগও দিলে না বলো?? ও তো তোমার প্রকৃতিকেই সাক্ষী করে আমাকে ভালোবাসে বলতে চেয়েছিল কেন ওকে সেই সুযোগটাও দিলেনা?? ওর ভালোবাসা তো নিষ্পাপ ছিল খোদা।দাও আমার ভালোবাসাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।না হলে আজ থেকে ভালোবাসা মিথ্যা হয়ে যাবে।
আব্বু আম্মু আমার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।কারণ তারা এসব কিছু জানতোনা।এবার অনেকগুলো পুলিশ এসে আমার কাছ থেকে নীলকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল,,ম্যাম লাশটাকে ছাড়ুন,মর্গে নিয়ে যেতে হবে।কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমার নীলকে?? প্নীজ ওকে নিয়ে যাবেন না।আমার অনেক আকুতি মিনতিতে ওরা নীলকে মর্গে নিলোনা।তবে মৃত ব্যক্তি তো আর এই দুনিয়ার রাখা যাবেনা।বাস্তব যতই কঠিণ বা নির্মম হোক আমাদেরকে মানতেই হয়।নীলকেও তেমন করে করব দেওয়া হলো।কিন্তু কবরটা দেওয়া হলো ওদের বাসার সামনে।এবার ক্রাইম পুলেশের দায়িত্ব পড়ল খুনের রহস্য বের করা।সবার মাঝে ক্রাইম পুলিশ প্রশ্ন করল,নীলের সাথে কার শএুতা ছিল।কেউ কিছু বলতে পারলনা।হঠাৎ রাকিব এসে বলল,আমি জানি কার সাথে নীলের শএুতা ছিল বলল,নীল আমার সবথেকে বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিল।কিন্তু ও তৃষাকে ভালোবাসতো।কিন্তু তৃষা ওকে কখনো ভালোবাসতো না।এমনকি একদিন নীলকে চরও মারে।ওর কথার ভিত্তিতে সমস্ত অপরাধ আমার উপরে আসল।তাই পুলিশ আমাকে থানায় নিতে বাধ্য হলো।পুলিশ আমাকে জিরা করতে লাগল আমি নীলের খুনের ব্যাপেরে কিছু জানি কী না?? আমি কোনো কথা বলছি না।কারণ কথা বলার মতো অবস্তাতে আমি নেই।একটু পরে নীলের আম্মু এসে হাজির হলো।উনি বললেন,না তৃষা এটা করতে পারে না।আর হ্যাঁ,তৃষা নীলকে মেরেছিলো।নীল অভদ্রতা করেছিল বলেই তৃষা মেরেছিলে।নীল আমাকে সবই বলেছে।আর তৃষাও নীলকে অনেক ভালোবাসে।আর ওই রাতেই তৃষা নীলকে বলতে চেয়েছিল।তৃষা কখনোই নীলকে মারতে পারেনা।এটা অন্য কোনো চক্রান্ত।আমার উপরে চার্য করেও পুলিশ কোনো তথ্য পেলোনা।তাই আমাকে ছেড়ে দিলো।
.
আগের মতো জানালাই দাড়ালে নীলকে আর দেখা যাইনা।তবে নীলের কবরটা দেখা যাই।আমার সারাদিনের কাজ ছিলো ওই জানালার সামনে দাড়িয়ে থাকা।নীলের মৃত্যুটা আসলেই মেনে নিতে পারিনি।আর কী করে মানবো ওকে যে অনেক বেশী ভালবাসতাম।ওর সাথেই যে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখেছিলাম।কিন্তু স্বপ্ন দেখার আগেই যদি স্বপ্ন ভেঙে যাই তাহলে কেই বা মানতে পারে?? দাওয়া দাওয়া কিছুই করতাম না। সারাদিন পাগলের মতো জানালার কাছে দাড়িয়ে ওর কবর দেখতাম।আব্বু অনেক চেষ্টা করেছিল মুখে হাসি ফোটানোর কিন্তু কোনো ভাবেই পারিনি।এভাবেই চলতে লাগল দিন।কিছুদিন পরে হঠাৎ বাসায় মীম আর ইবনাত আসল।
-তৃষা চল তো আমাদের সাথে ।(মীম)
-কোথায় যাব?(আমি)
-চল আজ বন্ধুরা মিলে একটা পার্টি দিবো।অনেক মজা হবে চল।(ইবনাত)
-না আমি যাবোনা ভালো লাগেনা।(আমি)
আমি অনেকবার না করা স্বত্বেও ওরা জোড় করে আমাকে নিয়ে গেলো।আজও পার্টিতে কিছুই ভালো লাগছে না।আমার নীলও পার্টিতে আসতে অনেক ভালোবাসতো।পার্টিতে আসতে পারলে ও যেন আনন্দে আন্তহারা হয়ে উঠত।পার্টির এক পর্যায়ে হঠাৎ মীম বলে উঠল,,
-এবার তৃষা একটা গান গাইবে তৃষা গান বল তো।(মীম)
-না আমি কিছুতেই গান গাইব না।দেখ আমাকে জোড় করিস না।(আমি)
-তৃষা প্রতিবারই তো গান গাস তাহলে এইনার গাইবিনা কেন??আজ তোর কোনো না শুনবো না।(মীম)
হ্যাঁ,নীলও তো ওর শেষ পার্টিতে গান গাইছিলোনা।তবুও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ও ঠিক গান গেয়েছিলো।আমার নীলও তো গান গাইতে অনেক ভালোবাসে।তাহলে আমি আজ পার্টিতে গান গাইলে ও নিশ্চয় অনেক খুশি হবে।তাই সমস্ত নীরবতা ভেঙে গাইতে শুরু করলাম,,,,
“বুঝিয়ে রাখার শব্দমালা,হয়ে যাই এলোমেলো,,ফেলে দেখা তোর ছন্দহারায়,সাজানো কাব্যগুলো,,এই মন ছুটে তোর মনের পিছু, রোনয়ো নেশায়,,রুচালো আমায় রইনা কিছু তোর ভালোবাসায়,তোর ভালোবাসায়………”
এইটুকু বলতে না বলতে ইবনাত বলে উঠল,,
-থাম তৃষা, তোর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমরা বন্ধুরা মিলে এত আয়োজন করলাম আর তুই এমন একটা স্যাড মুডের গান গাইছিস?? (ওরা জানেও না যে আব্বু আমার মন ভালো করার জন্য টাকা দিয়েছিলো সেটা আমি দেখে নিয়েছিলাম)প্লীজ তৃষা আগের মতো সুন্দর মুডে তোর সবথেকে প্রিয় রোমান্টিক গানগুলো থেকে একটা বল প্লীজ।
-দেখ ইবনাত তখন আমার জীবনে সব ছিল ।(নীল ছিল)কিন্তু এখন আমার জীবনে কিছুই নেই।তবে তোরা যখন এতো করে বলছিস তাহলে আমি আমার এখনকার প্রিয় গানটাই গাইয়ে পারি।
তখন সবাই একসাথে বলে উঠল,,
-ওকে সেটাই বল।
বেশ তাহলে সেটাই শোন,,,
“তুমি ফিরে এসে দেখো কতো বদলে গেছি আমি, আগের মতো করিনা পাগলামী,,তুমি চলে যাওয়ার পর আমার ভেঙেছে অন্তর,ভালোবেসে হয়েছি বদনামি”
সবাই এবারও আমার গান শুনে মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।কিন্তু আমি আর গাইতে পারলাম না।ওখানেই বসে জোড়ে চিৎকার করে কান্না শুরু করলাম।নীল তুমি কোথায়,নীল?? আমি যে সত্যিই তোমাকে অনেক মিস করছি।আমি যে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না নীল ।কেন আমাকে এইভাবে একা করে দিয়ে চলে গেলে নীল?? প্লীজ তোমার তৃষার কাছে আবার ফিরে এসো নীল ।আমি যে তোমার পথ চেয়ে এখনো বসে আছি নীল।ও নীল, নীল, ও নীল তুমি শুনছো কেন তুমি তোমার তৃষার ডাকে সারা দিচ্ছোনা বলো নীল??
এবার মীম আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে উঠিয়ে ও নিজেই কাদতে কাদতে বলল,
-কাদিস না তৃষা,এভাবে কেন কাদিস বল তো যে একবার চলে যায় সে কী আর কখনো ফিরে আসে বল ??
আমি মীমের কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে বাসায় চলে আসলাম।না,না আমি নীলকে ছাড়া কখনো থাকতে পারব না।আর থাকার কথা আসছে কেন নীল বেচে নেই তাহলে আমি কেন বেচে আছি?? না আমারও বাচার কোনো অধিকার নেই আমি আজই আমার নীলের কাছে চলে যাবো।বলেই একটা ছুরি নিয়ে নিজের বুকে ঢুকাতে গেলাম।ঠিক তখনি চারপাশ থেকে আওয়াজ আসতে লাগল,,
“বাস্তব বড় কঠিণ,তবুও মেনে নিতে হয়,,
জীবন এত জটিল,তবুও মানুষকে বেচে থাকতে হয়,
ভালোবাসা বড়ই কঠিন,তবুও মানুষকে ভালোবাসতে হয়,পৃথিবী এত মায়ার,তবুও তাকে ছেড়ে যেতে হয়,মিত্যু এত যন্তণার,তবুও তাকে বরণ করতে হয়”
তৃষা আমাকে খুন করা হয়েছে আর তুমি কে খুন করছে এটা না দেখে এইরকম একটা জঘন্য কাজ করছো??(বুঝতে পারলাম এটা আমার নীল)
-নীল তুমি কোথায় নীল আমার সামনে এসোকিন্তু নীলের আর কোনো সারাশব্দ পেলাম না।হ্যাঁ,আমার নীল তো ঠিকই বলেছে ওকে তো খুনই করা হয়েছে।আর আমি কিনা সেই খুনির কোনো শাস্তি না দিয়ে নিজেই পালিয়ে যাচ্ছিলাম।না যেভাবেই হোক নীলের খুনিকে খুজে বের করতেই হবে আমাকে।আমার নীলকে যারা মেরেছে,যারা একটা বাবা মাকে সন্তানহারা করেছে তাদের কিছুতেই আমি ছাড়বোনা।বুকের ভেতরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠল।হ্যাঁ,প্রতিশোধের আগুন।নিজের চোখের পানি খুব শক্তভাবে মুছে ফেললাম।না আর কাদবো না আমি।এবার ওই খুনিদের পালা।
কিন্তু আমি বুঝব কী করে বুঝব নীলের খুনি কারা?? তখনই মনে পড়ল রাকিবের কথা।হুমম রাকিব তো বলেছিল যে নীল নাকি ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড।কিন্তু আমি তো জানি যে রাকিব নীলকে একটুও সহ্য করতে পারত না।ওদের মাঝে দা কুমড়োর সম্পর্ক ছিল।তাহলে রাকিব কেন সেদিন মিথ্যা বলল?? আর নীলের মৃত্যুর দিন আমি রাস্তায় রাকিব, আরিফুল আর সাব্বিরকে একসাথে যেতে দেখেছিলাম।নীলের মৃত্যুর দুইদিন পরেই তো রাকিব আব্বুর কাছে এসেছিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে?? কেন ও এত তারাতারিই আসল?? হুমম সমস্ত সন্দেহ রাকিবের দিকেই যাচ্ছে।আমার মনে হয় রাকিবেরই নীলের মৃত্যুর পেছনে হাত আছে।আমাকে আজই রাকিবের শরণাপন্ন হতে হবে ।তাহলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।তাই সুন্দর করে সেজেগুজে রাকিবদের বাসার উদ্দেশ্যে বের হলাম।নীল মারা যাওয়ার পরে আজই মনে হয় এত বেশী সাজলাম।বাসা থেকেও কেউ বের হতে নিষেধ করল না।কারণ আমি সবকিছু আম্মুকে বুঝিয়ে বলেছিলাম।
কিছুক্ষণ পরেই রাকিবদের বাসায় আসলাম।আন্টিরাও আমায় দেখে অনেক খুশি ।রাকিবের কথা জিজ্ঞেস করতেই আন্টি মুখটা কালো করে বলল ও আর কোথায় থাকবে ওর রুমেই আছে।(আসলে রাকিব বাজে ছেলে হওয়ার জন্য ওর বাসার কেউ ওকে পছন্দ করে না)
রাকিবের রুমে যেতেই ও আমাকে দেখে লাফ দিয়ে উঠে বলল,আরে তৃষা যে আসো আসো ভেতরে আসো।ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও নেশাগ্রস্ত অবস্তায় আছে।তার পরেও ওর পাশে গিয়ে বসলাম।অনেকক্ষণ ওর সাথে কথা বললাম তবুও তেমন তথ্য না পেয়েই উঠে আসছিলাম।ঠিক তখনই আমার চোখ গেলো, রাকিবের জূতার সেল্পে।ওর একটা জূতা জোড়াই যেন রক্তের বিন্দু বিন্দু ছোপ দেখা যাচ্ছে।এবার সন্দেহটা ওর উপরেই পুরোপুরিভাবে গেলো ।আবার ফিরে রাকিবের কাছে গিয়ে বসলাম ।
-কী হলো তৃষা কিছু বলবে আবার ফিরে আসলে যে??
-হুমম রাকিব, তোমাকে যে কথা বলতে এসেছিলাম সেটাই তো বলা হলো না।কিন্তু কীভাবে যে বলব সেটাই ভাবছি।
-আরে তৃষা তোমার যা খুশি বলতে পারো।
-হুমম, রাকিব আমি না তোমাকে….
এবার রাকিব উত্তেজিত হয়ে বলল,
-কী আমাকে কী বলো??
-রাকিব নীল তো মারা গেলো ।ওর কথা ভেবে আমার আর কি লাভ বলো?? আমাকেও তো আমার জৌবনটা নতুন করে শুরু করতে হবে না কি?? তাই ভাবছিলাম তুমিও তো আমাকে ভালোবাসো।অবশ্য তুমি যদি চাও তোমার সাথেই আমার জীবনটা নতুন করে শুরু করতে পারি।
-আরে আমি তো একেবারেই রাজি আছি।এতদিনে একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিলে তুমি ।কিন্তু তৃষা আমি তোমাকে আগে প্রপোচ করতে চাই।
-ওকে করে ফেলো।
-না তৃষা এভাবে নয় অন্যদিন উৎযাপনের মাধ্যমে।
-ওকে,কিন্তু রাকিব তোমার একটা কালো জূতা আছে না সেটা কোথায়??
-কেন তৃষা??
-না মানে, ওই জূতাটা আমার অনেক ভালো লাগে।আমি চাই ওইটা তুমি ওইদিন পরে আসবে।
-ওই তো বারো তারিখে বিকালে একবার পড়েছিলাম তারপর আর পড়িনি।ভেবেঙিলাম ওইটা আর পড়বোনা তবে তুমি যখন বলছো ঠিকই পড়ব।
(এবার আর বুঝতে বাকি রইল না যে রাকিবই নীলকে মেরেছে।নীলও মারা গিয়েছিলো বারো তারিখ।মনে হচ্ছে ওকে আমি এখানেই খুন করে দিই।কিন্তু না সবার সামনে ওর অপরাধ নিয়ে আসতে হবে ।তখন মনে করলাম বারো তারিখে রাকিবের গায়ে একটা ব্লু টি-শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়া ছিলো।হুমম যেদিন রাকিব আমাকে প্রপোচ করবে ওইদিনই ওকে ধরব আমি)
-আর রাকিব তোমার ব্লু টি-শার্ট আর কালো একটা প্যান্ট আছেনা ওইগুলো পড়ে আসবে ওইদিন।রাকিব এইবার সন্দেহ করে আমাকে বলল,,
-কেন তৃষা আমার এগুলো শার্ট প্যান্ট থাকতে ওইগুলোই বা কেন পড়ব??
-ছি রাকিব তুমি আমাকে সন্দেহ করছো?? হুমম তা তো ঠিক আমাকে কেইই বা ভালোবাসবে??
-না তৃষা আমি তোমাকে কেন সন্দেহ করব?? ওকে ঠিক আছে পরেই আসব।
রাকিবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।হুমম খুনি আমার হাতের মাথায় শুধু প্রমাণের অভাবে কিছুই বলতে পারছি না। রাকিবের সাথে বেশ কিছুদিন প্রেমের অভিনয় করলাম শুধুমাএ বিশ্বাস অর্জনের জন্য।এর মধ্যে আব্বুও আমাকে ভুল বুঝল,,
-ছি তৃষা,তুই নাকি নীলকে ভালোবাসতিস?? তাহলে এখন রাকিবের মতো একটা নোংরা ছেলের সাথে তোর কিসের সম্পর্ক?? তোকে আমার মেয়ে বলে ভাবতেও অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার ।
আব্বুর কথায় কোনো উত্তর দিলাম না।কারণ আমি জানি কেন ওই ছেলের সাথে আমি কেন কথা বলছি??অবশেয়ে রাকিব আর আমার প্রপোচের দিন শেষ এসে গেলো।একটা নির্জন নাইট ক্লাবে জায়গা ঠিক করা হলো।আমি ইচ্ছা করেই এটা করলাম কারণ নির্জন জায়গাই আমার জন্য সুবিধা হবে।যাওয়ার সময় সাথে কিছু নেশার ঔষধ নিলাম।আর জানি নাইট ক্লাবে মদ এমনিই থাকবে।মদের সাথে এই ঔষধ মেশালে অনেক কাজে দিবে।আর সাথে করে একটা রেকর্ড ক্যাসেট নিতে ভুললাম না।আমি নীলের দেওয়া সেই শাড়ীটায় পড়ে গেলাম।কারণ নীল আমাকে এই শাড়ীটা পড়তে বলেছিল ভালোবাসি বলবে তাই।তবে সেটা যখন হয়নি তাহলে এই শাড়ীটা পড়েই যেন ওর খুনিদের ধরতে পারি।তাহলে আমার নীল খুশিই হবে ।রাকিব আজ ওই জিনিসগুলোই পড়ে এসেছে যে জিনিসগুলো নীলকে মারার দিন ওর গায়ে পড়া ছিলো।কিন্তু আজ জূতাই কোনো রক্ত নেই।ঠিক সময়ে মদ+নেশার ঔষধ ওখানে সবাইকে খাওয়ে দিলাম।তবে রাকিবকে একটু বেশিই খাওয়ালাম।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই অন্যরকম খেল ঘটে গেলো।রাকিব উঠে আমার দিকে এগুতে লাগল আর আমি পেছনে যেতে লাগলাম।এমনিতেই রাকিব বাজে ছেলে তারউপরে মনে হয় নেশার ডোজটা মনে হয় একটু বেশিই পড়েছে।কী করতে কী করে ফেললাম আমি?? একসময় আমার পিঠ দেয়ালে লেগে গেলো আর রাকিব আমার কাধের উপরে হাত রাখল।ওর বন্ধুরা সবাই হাসছে।না হেরে যাওয়ার মেয়ে আমি নয়।এতদুর এসেছি হারার জন্য নয়।
-রাকিব এমন কেন করছো বলো তো তুমি না আমাকে প্রপোচ করতে চেয়েছিলে??
-কেন ভয় পাচ্ছ তৃষা আমাকে আমি তো তোমাকেই ভালোবাসি।আজ আমি যা বলব তুমি শুধু তাই শুনবে।
-ওকে, ওকে শুনব কিন্তু তার আগে বলো তো নীলকে তুমি কী ভাবে মেরেছিলে??(ওর বন্ধুরা আমার কথা শুনে আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে পড়ল)
-উফ,আমাদের মাঝে আবার নীল?? সালা মরার পরেও দেখি শান্তি দিচ্ছেনা।
-আরে আমিও তো নীলকে সহ্য করতে পারি না।আর তাই তো ওর মৃত্যুর কথা শুনে আনন্দ নিতে চাইছি।
-ওকে তাহলে শোনো,,,
রাকিবের বন্ধুরা এবার বলল,আরে দোস্ত বলিস না তাহলে আমরা বিপদে পড়ব।এখানে আরিফুলও আছে।সেও একই কথা বলছে।(বুঝলাম তাহলে এরাও এইসবের মধ্যে জড়িত)ওর মায়ার জালে পা দিলেই পস্তাবি।
-আরে তৃষা শুনতে চাইছে আর আমি বলবনা তা কী হয়?? শোনো তৃষা,,,,
.
যেদিন তুমি আর নীল রাস্তার মাঝে কথা বলছিলে ওই কথাগুলো আমি আর আরিফুল শুনতে পেয়েছিলাম।আর এটাও শুনতে পেয়েছিলাম যে নীল ওইদিন রাতে তোমাকে ভালোবাসি বলবে আর তুমিও বলবে।এইসব কথা শুনে রাগে আমার শরীর জলে যাচ্ছিলো।তখনই ভেবেছিলাম রাতের আগেই নীলকে মেরে ফেলব।সেই সুযোগটা অনেক কষ্টের পরে আসলো তাই হাতছাড়া করিনি।আমরা তোমাদের বাসার সামনে দিয়ে আসার সময় দেখি তুমি ছাদে দাড়িয়ে আছো।তখন বুঝলাম তাহলে নীল এখনো তোমার কাছে যাইনি।একটু সামনে আসতেই দেখি নীল স্কুলের ওইপাশে আর আমরা তাই স্কুলের গেটের পাশেই দাড়িয়ে পড়ি।আমরা বলতে আমরা পাঁচ জন ছিলাম আমি(রাকিব),আরিফুল, সাব্বির,লিমন,এজাজ আর রাইহান।নীল স্কুলের সামনে আসয়েই আমরা ওর মুখ চেপে ধরে মাঠের মধ্যেই নিয়ে এসে ওর চারপাশ দিয়ে ঘিরে দাড়াই।ও অনেক বার বলেছিল যে আমরা কেন ওকে ধরে নিয়ে এসেছি?? ওর অপরাধ কী?? ওকে নাকি তোমার কাছে যেতে হবে ।আজই নাকি তোমাকে ভালোবাসি বলতে হবে।ওর হাতে একটা আংটি,গোলাপের তোড়া আর একটা পুতুল ছিল।আমি প্রথমে ফাইজলামী করে পুতুলটা নিয়ে নিই কিন্তু ও কিছুতেই ওটা দিবে না।পুতুল নাকি তোমার অনেক প্রিয়।তাই আমি ওর লাথি মারি।তারপর ওটা নিয়ে ফেলে দিই।তারপর গোলাপের তোড়াটা নিয়ে পা দিয়ে পিশে দিই।ওর হাত থেকে আংটিটা নিতে চাইছিলাম কিন্তু ও আংটিটা কিছুতেই দিচ্ছিলোনা।ও নাকি ওটা দিয়েই প্রপোচ করবে তোমাকে ।আরিফুল তখন ওর মুখে একটা চর মারে আর আমি আংটিটা নিয়ে জোড়ে ফেলে দিই।নীল ওইটা নিতে গিয়েছিলো কিন্তু আমরা ওকে ফেলে দিলাম।চারপাশ থেকে সবাই ওকে চেপে ধরে রেখেছিলো।তাও ও শুয়ে শুয়ে আংটি নিতে যাচ্ছিলো তাই আমি আমার পা দিয়ে ওর হাত চেপে ধরি।ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠে নীল ।তবুও নীল কিন্তু আমাদের কাউকে কিছুই বলেনি।আমি সবাইকে বললাম ওকে মারতে।সবাই ওকে মারা শুরু করল।নীল বারবার বলছিলো ওকে ছেড়ে দিতে।ওর নাকি অনেক কষ্ট হচ্ছে।তবুও আমরা কী ওকে ধরেছিলাম ছাড়ার জন্য?? নীল ভাবেনি আমরা একেবারেই ওকে শেষ করব।ও ভেবেছিল ওকে মেরেই আমরা ছেড়ে দিবো।তারপর আমি সবাইকে বলি ওকে দাড় করাতে।ও দাড়ানোর মতো অবস্তাতে ছিল না।আমার কাছে আগেই একটা ছুরি ছিল।নীল বারবার তোমার নাম কতছিল আর বলছিলো তৃষা আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।আমি তোমার কথা রাখতে পারলাম না।আমি তখন আরিফুলকে বলি নীলকে চিরজীবনের মতো চুপ করিয়ে দে।আরিফুল প্রথমে ওকে ছুরি মেরেছিলো আর সবাই নীলকে ধরে রেখেছিল।তারপর আমি কয়েকবার ওকে ছুরি মেরেছিলাম।ওখানেই ও মারা যায়।তবে সালার শেষ নামটাও তৃষাই ছিল ।
-ছি রাকিব তুমি আমাকে সন্দেহ করছো?? হুমম তা তো ঠিক আমাকে কেইই বা ভালোবাসবে??
-না তৃষা আমি তোমাকে কেন সন্দেহ করব?? ওকে ঠিক আছে পরেই আসব।
রাকিবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।হুমম খুনি আমার হাতের মাথায় শুধু প্রমাণের অভাবে কিছুই বলতে পারছি না। রাকিবের সাথে বেশ কিছুদিন প্রেমের অভিনয় করলাম শুধুমাএ বিশ্বাস অর্জনের জন্য।এর মধ্যে আব্বুও আমাকে ভুল বুঝল,,
-ছি তৃষা,তুই নাকি নীলকে ভালোবাসতিস?? তাহলে এখন রাকিবের মতো একটা নোংরা ছেলের সাথে তোর কিসের সম্পর্ক?? তোকে আমার মেয়ে বলে ভাবতেও অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার ।
আব্বুর কথায় কোনো উত্তর দিলাম না।কারণ আমি জানি কেন ওই ছেলের সাথে আমি কেন কথা বলছি??অবশেয়ে রাকিব আর আমার প্রপোচের দিন শেষ এসে গেলো।একটা নির্জন নাইট ক্লাবে জায়গা ঠিক করা হলো।আমি ইচ্ছা করেই এটা করলাম কারণ নির্জন জায়গাই আমার জন্য সুবিধা হবে।যাওয়ার সময় সাথে কিছু নেশার ঔষধ নিলাম।আর জানি নাইট ক্লাবে মদ এমনিই থাকবে।মদের সাথে এই ঔষধ মেশালে অনেক কাজে দিবে।আর সাথে করে একটা রেকর্ড ক্যাসেট নিতে ভুললাম না।আমি নীলের দেওয়া সেই শাড়ীটায় পড়ে গেলাম।কারণ নীল আমাকে এই শাড়ীটা পড়তে বলেছিল ভালোবাসি বলবে তাই।তবে সেটা যখন হয়নি তাহলে এই শাড়ীটা পড়েই যেন ওর খুনিদের ধরতে পারি।তাহলে আমার নীল খুশিই হবে ।রাকিব আজ ওই জিনিসগুলোই পড়ে এসেছে যে জিনিসগুলো নীলকে মারার দিন ওর গায়ে পড়া ছিলো।কিন্তু আজ জূতাই কোনো রক্ত নেই।ঠিক সময়ে মদ+নেশার ঔষধ ওখানে সবাইকে খাওয়ে দিলাম।তবে রাকিবকে একটু বেশিই খাওয়ালাম।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই অন্যরকম খেল ঘটে গেলো।রাকিব উঠে আমার দিকে এগুতে লাগল আর আমি পেছনে যেতে লাগলাম।এমনিতেই রাকিব বাজে ছেলে তারউপরে মনে হয় নেশার ডোজটা মনে হয় একটু বেশিই পড়েছে।কী করতে কী করে ফেললাম আমি?? একসময় আমার পিঠ দেয়ালে লেগে গেলো আর রাকিব আমার কাধের উপরে হাত রাখল।ওর বন্ধুরা সবাই হাসছে।না হেরে যাওয়ার মেয়ে আমি নয়।এতদুর এসেছি হারার জন্য নয়।
-রাকিব এমন কেন করছো বলো তো তুমি না আমাকে প্রপোচ করতে চেয়েছিলে??
-কেন ভয় পাচ্ছ তৃষা আমাকে আমি তো তোমাকেই ভালোবাসি।আজ আমি যা বলব তুমি শুধু তাই শুনবে।
-ওকে, ওকে শুনব কিন্তু তার আগে বলো তো নীলকে তুমি কী ভাবে মেরেছিলে??(ওর বন্ধুরা আমার কথা শুনে আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে পড়ল)
-উফ,আমাদের মাঝে আবার নীল?? সালা মরার পরেও দেখি শান্তি দিচ্ছেনা।
-আরে আমিও তো নীলকে সহ্য করতে পারি না।আর তাই তো ওর মৃত্যুর কথা শুনে আনন্দ নিতে চাইছি।
-ওকে তাহলে শোনো,,,
রাকিবের বন্ধুরা এবার বলল,আরে দোস্ত বলিস না তাহলে আমরা বিপদে পড়ব।এখানে আরিফুলও আছে।সেও একই কথা বলছে।(বুঝলাম তাহলে এরাও এইসবের মধ্যে জড়িত)ওর মায়ার জালে পা দিলেই পস্তাবি।
-আরে তৃষা শুনতে চাইছে আর আমি বলবনা তা কী হয়?? শোনো তৃষা,,,,
.
যেদিন তুমি আর নীল রাস্তার মাঝে কথা বলছিলে ওই কথাগুলো আমি আর আরিফুল শুনতে পেয়েছিলাম।আর এটাও শুনতে পেয়েছিলাম যে নীল ওইদিন রাতে তোমাকে ভালোবাসি বলবে আর তুমিও বলবে।এইসব কথা শুনে রাগে আমার শরীর জলে যাচ্ছিলো।তখনই ভেবেছিলাম রাতের আগেই নীলকে মেরে ফেলব।সেই সুযোগটা অনেক কষ্টের পরে আসলো তাই হাতছাড়া করিনি।আমরা তোমাদের বাসার সামনে দিয়ে আসার সময় দেখি তুমি ছাদে দাড়িয়ে আছো।তখন বুঝলাম তাহলে নীল এখনো তোমার কাছে যাইনি।একটু সামনে আসতেই দেখি নীল স্কুলের ওইপাশে আর আমরা তাই স্কুলের গেটের পাশেই দাড়িয়ে পড়ি।আমরা বলতে আমরা পাঁচ জন ছিলাম আমি(রাকিব),আরিফুল, সাব্বির,লিমন,এজাজ আর রাইহান।নীল স্কুলের সামনে আসয়েই আমরা ওর মুখ চেপে ধরে মাঠের মধ্যেই নিয়ে এসে ওর চারপাশ দিয়ে ঘিরে দাড়াই।ও অনেক বার বলেছিল যে আমরা কেন ওকে ধরে নিয়ে এসেছি?? ওর অপরাধ কী?? ওকে নাকি তোমার কাছে যেতে হবে ।আজই নাকি তোমাকে ভালোবাসি বলতে হবে।ওর হাতে একটা আংটি,গোলাপের তোড়া আর একটা পুতুল ছিল।আমি প্রথমে ফাইজলামী করে পুতুলটা নিয়ে নিই কিন্তু ও কিছুতেই ওটা দিবে না।পুতুল নাকি তোমার অনেক প্রিয়।তাই আমি ওর লাথি মারি।তারপর ওটা নিয়ে ফেলে দিই।তারপর গোলাপের তোড়াটা নিয়ে পা দিয়ে পিশে দিই।ওর হাত থেকে আংটিটা নিতে চাইছিলাম কিন্তু ও আংটিটা কিছুতেই দিচ্ছিলোনা।ও নাকি ওটা দিয়েই প্রপোচ করবে তোমাকে ।আরিফুল তখন ওর মুখে একটা চর মারে আর আমি আংটিটা নিয়ে জোড়ে ফেলে দিই।নীল ওইটা নিতে গিয়েছিলো কিন্তু আমরা ওকে ফেলে দিলাম।চারপাশ থেকে সবাই ওকে চেপে ধরে রেখেছিলো।তাও ও শুয়ে শুয়ে আংটি নিতে যাচ্ছিলো তাই আমি আমার পা দিয়ে ওর হাত চেপে ধরি।ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠে নীল ।তবুও নীল কিন্তু আমাদের কাউকে কিছুই বলেনি।আমি সবাইকে বললাম ওকে মারতে।সবাই ওকে মারা শুরু করল।নীল বারবার বলছিলো ওকে ছেড়ে দিতে।ওর নাকি অনেক কষ্ট হচ্ছে।তবুও আমরা কী ওকে ধরেছিলাম ছাড়ার জন্য?? নীল ভাবেনি আমরা একেবারেই ওকে শেষ করব।ও ভেবেছিল ওকে মেরেই আমরা ছেড়ে দিবো।তারপর আমি সবাইকে বলি ওকে দাড় করাতে।ও দাড়ানোর মতো অবস্তাতে ছিল না।আমার কাছে আগেই একটা ছুরি ছিল।নীল বারবার তোমার নাম কতছিল আর বলছিলো তৃষা আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।আমি তোমার কথা রাখতে পারলাম না।আমি তখন আরিফুলকে বলি নীলকে চিরজীবনের মতো চুপ করিয়ে দে।আরিফুল প্রথমে ওকে ছুরি মেরেছিলো আর সবাই নীলকে ধরে রেখেছিল।তারপর আমি কয়েকবার ওকে ছুরি মেরেছিলাম।ওখানেই ও মারা যায়।তবে সালার শেষ নামটাও তৃষাই ছিল ।
ওর মুখে নীলকে এভাবে মারার কথা শুনে আমার কলিজা যেন ফেটা যেতে লাগল।চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়তে লাগল ।ভালবাসার অপরাধে ওরা নীলকে এতো কষ্ট দিয়ে মারল?? শতো জনমের শএুও কাউকে এভাবে মারতে পারে না।
-তৃষা সবই তো বললাম, এবার আমি তোমার কাছে যেতে পারি??
-হুমম, যাবি কিন্তু আমার কাছে নয় লাকাবে।
-মানে??
-তুই কী করে ভাবলি তোর মতো একটা জঘন্য ছেলেকে আমি ভালোবাসবো?? আমি শুধু আমার নীলের খুনিকে ধরার জন্য এই ফাদ পেতেছিলাম।এই দেই ক্যাসেড এখানে সবকিছু রেকর্ড করা আছে আমি এগুলো পুলিশকে দেখাবো।
-তৃষা সবই তো বললাম, এবার আমি তোমার কাছে যেতে পারি??
-হুমম, যাবি কিন্তু আমার কাছে নয় লাকাবে।
-মানে??
-তুই কী করে ভাবলি তোর মতো একটা জঘন্য ছেলেকে আমি ভালোবাসবো?? আমি শুধু আমার নীলের খুনিকে ধরার জন্য এই ফাদ পেতেছিলাম।এই দেই ক্যাসেড এখানে সবকিছু রেকর্ড করা আছে আমি এগুলো পুলিশকে দেখাবো।
-ও তার মানে তুই আমার সাথে নাটোক করেছিলি?? হা হা হা হা হা হা তো কী হয়েছে তুই বেচে থাকলে তাই তো দেখাবি ?? বলেই রাকিব আমার গলা চেপে ধরল।
ঠিক তখনই পেছন থেকে কেউ বলে উঠল,ইউ আর আন্ডার এরেস্ট।আপনি ধরা পরে গেছেন মিষ্টার রাকিব ।এবার লকাবে চলুন।সাথে সাথে রাকিব আমার গলা ছেড়ে দিলো।
-কী হলো রাকিব ভয় পেলে?? আমাকে বুদ্ধ ভেবেছিলে তাই না?? আমি আগে থেকেই পুলিশকে জানিয়ে রেখেছিলাম।আর তাই উনারা দরজার ওপাশেই ছিল ।এবার দেখি আব্বু-আম্মু,নীলের আব্বু-আম্মু সবাই ভেতরে আসল।আব্বু নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমার কাছে ক্ষমা চাইল।ওই সব কিছুর মধ্যে আরিফুল আর রাকিব পালিয়ে গেলো।পুলিশ আর তিনজনকে ওখানেই ধরে ফেলল।তবে আরিফুল আর রাকিবকে ধরতে পারল না।
.
.
আজ হঠাৎ এই তিন বছরের কথাগুলো মনে পড়ে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।আজও আমি সেই ছাদেই দাড়িয়ে আছি যেখানে নীল আমাকে ভালোবাসি বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু আমার নীল কোথাও নেই শুধুমাএ ওর কবরটাই আছে।ওদের বাড়িঘর পুরোপুরিই অন্ধকার।নীলের ঘরের সেই জানালাটাও বন্ধ থাকে সবসময়।কারণ নীল আন্টি আংকেল কানাডাই চলে গেছে।মাঝে মাঝে আসে নীলের করব দেখতে।আজ আকাশে একফালি চাঁদও উঠেছে।হ্যাঁ,আমি জানি ওইটাই আমার নীলচাঁদ।এমনি রাতে এই চাঁদকেই শাক্ষী রেখে ভালোবাসি বলতে চেয়েছিলো নীল।হঠাৎ আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কেদে দিলাম।নীল আমি এখনো তোমাকেই ভালোবাসি ।আর সারাজীবনই বাসবো যতদিন এই দেহে প্রাণ আছে।তোমার আর দুই খুনিকে না ধরা পর্যন্ত আমার কোনো শান্তি নেই।এমন সময় আম্মু পেছন থেকে এসে বলল,,,
-তৃষা মা,তোর স্বপ্নের আর একটা ধাপ এগিয়ে গেছিস তুই??
-আমার স্বপ্ন হা হা হা হা ।আমার একটাই স্বপ্ন এখন তুমি কোন স্বপ্নের কথা বলছো??
-তৃষা নিচে চল,,একটু আগয় আরিফুল ধরা পড়েছে।
ও
এ কথা শুনে অনেক ভালো লাগল।আম্মুকে বললাম, তুমি নিচে যাও আমি আসছি।আম্মু চলে
ঠিক তখনই পেছন থেকে কেউ বলে উঠল,ইউ আর আন্ডার এরেস্ট।আপনি ধরা পরে গেছেন মিষ্টার রাকিব ।এবার লকাবে চলুন।সাথে সাথে রাকিব আমার গলা ছেড়ে দিলো।
-কী হলো রাকিব ভয় পেলে?? আমাকে বুদ্ধ ভেবেছিলে তাই না?? আমি আগে থেকেই পুলিশকে জানিয়ে রেখেছিলাম।আর তাই উনারা দরজার ওপাশেই ছিল ।এবার দেখি আব্বু-আম্মু,নীলের আব্বু-আম্মু সবাই ভেতরে আসল।আব্বু নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমার কাছে ক্ষমা চাইল।ওই সব কিছুর মধ্যে আরিফুল আর রাকিব পালিয়ে গেলো।পুলিশ আর তিনজনকে ওখানেই ধরে ফেলল।তবে আরিফুল আর রাকিবকে ধরতে পারল না।
.
.
আজ হঠাৎ এই তিন বছরের কথাগুলো মনে পড়ে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।আজও আমি সেই ছাদেই দাড়িয়ে আছি যেখানে নীল আমাকে ভালোবাসি বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু আমার নীল কোথাও নেই শুধুমাএ ওর কবরটাই আছে।ওদের বাড়িঘর পুরোপুরিই অন্ধকার।নীলের ঘরের সেই জানালাটাও বন্ধ থাকে সবসময়।কারণ নীল আন্টি আংকেল কানাডাই চলে গেছে।মাঝে মাঝে আসে নীলের করব দেখতে।আজ আকাশে একফালি চাঁদও উঠেছে।হ্যাঁ,আমি জানি ওইটাই আমার নীলচাঁদ।এমনি রাতে এই চাঁদকেই শাক্ষী রেখে ভালোবাসি বলতে চেয়েছিলো নীল।হঠাৎ আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কেদে দিলাম।নীল আমি এখনো তোমাকেই ভালোবাসি ।আর সারাজীবনই বাসবো যতদিন এই দেহে প্রাণ আছে।তোমার আর দুই খুনিকে না ধরা পর্যন্ত আমার কোনো শান্তি নেই।এমন সময় আম্মু পেছন থেকে এসে বলল,,,
-তৃষা মা,তোর স্বপ্নের আর একটা ধাপ এগিয়ে গেছিস তুই??
-আমার স্বপ্ন হা হা হা হা ।আমার একটাই স্বপ্ন এখন তুমি কোন স্বপ্নের কথা বলছো??
-তৃষা নিচে চল,,একটু আগয় আরিফুল ধরা পড়েছে।
ও
এ কথা শুনে অনেক ভালো লাগল।আম্মুকে বললাম, তুমি নিচে যাও আমি আসছি।আম্মু চলে
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com