Breaking News

স্যার যখন স্বামী সিজন-২ | পার্ট-০৮


তমার রুম থেকে বাইরে আসার পর দেখি আন্টি আর আমার পরিবার সবাই সোফায় বসে টেনশন করছে।

আহাদ:- “সরি,, আসলে বুঝতে পারছি আমাদের দুইজনকে নিয়ে তোমরা অনেক টেনশনে
আছ।তোমাদেরকে কিছু না বলে আমি এইভাবে তমার রুমে ঢুকে যাওয়াতে তোমাদের টেনশন
আরো বেশি বেড়ে গেছে।কিন্তু সবার আগে আমার যে কাজটা করার ছিল আমি সেটাই
করেছি।”
মেঘ:- “হুম বুঝতে পারলাম।এখন আসল ঘটনাটা বল,,তোদের এই অবস্থা কি করে হল।”
এরপর আহাদ সবাইকে আসল ঘটনাটা খুলে বলল।বাড়ির সকল সদস্যের টেনশন যেন আরো বেড়ে গেল।

আহাদের মা:- “আহাদ মেয়েটা এখন কেমন আছে?না জানি কি ভয়টা না আজকে পেয়েছে।আমি এখনি তমার কাছে যাচ্ছি।”
আহাদ:- “মা এখন না একটু পরে যাও। আন্টি আপনি আগে যান। ওর হাতটা ড্রেসিং করে দেন।”
তমাকে ড্রেসিং করানোর পর এরপর এক এক করে সবাই ওকে দেখতে গেল আর ওকে শান্তনা দিলো।

“মেঘ কি ব্যাপার,, তোমার কি মন খারাপ?”
“না,,”
“তাহলে,আজকে তোমার সাথে মেসেঞ্জারে কথা বলে এমন লাগল কেন যে কোন কারণে তোমার মনটা খারাপ!!
“আরে না,,তেমন কিছু না।”
“কিছুতো একটা হয়েছে।কিন্তু তুমি বলতে চাচ্ছ না।এই আমি তোমাকে এখনি কল দিচ্ছি।”
“আবির,,প্লিজ।”
“কোন কথা শুনছি না তোমার।কলটা রিসিভ কর।
হ্যালো মেঘ,,এখন বল কি হয়েছে।”

“কি হয়েছে বল?”(কিছুটা রেগে)
এবার মেঘ নিজেকে সামলাতে পারল না।কেঁদেই দিল প্রায়।মেঘের কান্না শুনে আবিরের ভয় যেন আরো বেড়ে গেল।না জানি কেন মেঘ এভাবে কাঁদছে?
“মেঘ প্লিজ কিছুতো বল?আমাকে সব ক্লিয়ার করে না বললে আমি বুঝব কি করে?”
এরপর মেঘ আজকে যা যা ঘটল সব আবিরকে বলল।মেঘের কথা শুনে আবির পুরো স্তব্দ হয়ে গেল।কোন কথা না বলে ও কলটা কেটে দিল।

আমার মেয়েটার সাথে আজকে এই কি হল?না জানি আমার কলিজার টুকরাটা ভিতরে ভিতরে
কত কষ্ট পাচ্ছে।খুব ইচ্ছে করছে মেয়েটার পাশে বসে ওকে শান্তনা দিই।ওকে বুকে
জড়িয়ে ধরে বুঝিয়ে বলি,, তমা মা, তোর বাবা থাকতে তোর কোন ভয় নেই।সে সবসময়
তোর পাশে আছে। আজকে আমার মেয়েটার সবচেয়ে বেশি কাছে প্রয়োজন আমাকে।কিন্তু
আজকে ওর পাশে আমি নেই।আমি নিজেই সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি।নিজের খানিকের
সুখের কথা স্বার্থের মত ভেবে আমি আমার পুরো জীবনের সুখকে আমার থেকে দূরে
ঠেলে দিয়েছি।এই বিপদের দিনে আমার স্ত্রী, আমার মেয়েটার এখন আমাকে সবচেয়ে
প্রয়োজন।কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছি না। 

খুব অসহায় লাগছে আজকে নিজেকে।
আমার একমাত্র আদরের মেয়ে আমার কলিজার টুকরা আমাকে মাফ করে দে মা।তোর বাবাটা
খুব খারাপ।আমার কারণেই তুই এতদিন তোর বাবার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত ছিলি,আমি
থাকলে তুই আর তোর মা খুব নিরাপদে দিন কাটাতে পারতি।আমাদের স্বামী-স্ত্রীর
মধ্যে যদি সব কিছু স্বাভাবিক হত তাহলে তোর এই বাবা ছায়া হয়ে সবসময় তোর পাশে
থাকত।বিপদে পড়লে তুই তোর বাবাকে সবার আগে পেতি।

কিন্তু এর কিছুই আমি করতে
পারছি না।শুধু দূর থেকে তোদের খবর নিচ্ছি।তোদের কাছে যাওয়ার সাহসটুকুও আমার
নেই।জানি তোরা দুইজনেই আমাকে অনেক ঘৃণা করিস।আমি কাজটায় এমন করেছি যে আমার
মতন অমানুষকে শুধু ঘৃণায় করা যায়।
একজন স্বামী, একজন বাবা হিসেবে আমি
সত্যিই ব্যর্থ।কোন দায়িত্বও আমি ঠিকভাবে পালন করতে পারে নি।তোরা মা,মেয়ে
দুইজনে আমাকে মাফ করে দিস।
.
.
আবির এইভাবে কলটা কেন কেটে দিল
তা মেঘের মাথায় ঢুকল না।মেঘ এখনো মোবাইল ধরে বসে আছে এই বুঝি আবির কল দিল
বলে।আজ ৩টা বছর ধরে আবিরের সাথে মেঘের মেসেঞ্জারে কথা হয়।বলতে গেলে আবিরের
সাথে মেঘের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটা অনেক ভালো। অনেক কিছুই সে আবিরের সাথে
শেয়ার করে।মেঘের যখনি মন খারাপ থাকে আবির কেমন করে জানি তা বুঝে যায়।
মূহুর্তের মধ্যেই আবির মেঘের মনটা ভালো করে দিতে পারে।

এই বয়সে এইরকম একটা
ভালো বন্ধু যে মেঘ খুঁজে পাবে ও কখনো তা ভাবতে পারেনি।কোন স্বার্থ ছাড়াই
আবির মেঘের অনেক সমস্যার সমাধান করে দেয়।বলতে গেলে আবির মেঘের কাছে এখন
একটা ঔষুধের মতন।ওর মনের মানসিক শান্তির জন্য আবির নামক ঔষুধটা আজকাল বড্ড
প্রয়োজন। এই ঔষুধটা ছাড়া ও কোন শান্তি খুঁজে পায় না।
.
.
এর কিছুক্ষণ পর মেঘের মোবাইলে কল আসল,
“আবির সাহেব আপনি হঠাৎ করে কল কেন কেটে দিলেন?”
“ও নেটওয়ার্ক সমস্যা ছিল, কথা বুঝা যাচ্ছিল না তাই আর কি……”
“ও আচ্ছা।”
“মেঘ একটা প্রশ্ন করি?”
“জ্বী করেন…..”
“মেঘ আমি মানুষটা খুব খারাপ না!?!
“এমনভাবে কেন বলছেন?আজকে ৩বছর যাবত আমি আপনার সাথে কথা বলছি।আমি আপনার
মধ্যে খারাপ কিছু এখনো খুঁজে পায়নি।একজন বন্ধু হিসেবে বলছি আপনার মতন মানুষ
হয় না।”

“মেঘ যদি বলি তোমার স্বামী তোমার সাথে যে অন্যায়টা করেছে ঠিক
তেমন ভাবে আমিও যদি আমার স্ত্রীর সাথে অন্যায় করি তাহলে তোমার জায়গা থেকে
বল সে কি আমাকে মাফ করে দিবে!?”
“আবির সাহেব,,যদি আপনি আমার স্বামী
তন্ময়ের মতন এমন খারাপ কাজ করে থাকেন তাহলে আমি আমার জায়গা থেকে বলছি,, সে
কখনো আপনাকে মাফ করবে না।”

“সে আপনাকে কেন মাফ করবেন
সেটা বলেনতো?একজন স্ত্রী তার জীবিত অবস্থায় যদি দেখে তার স্বামী অন্য
আরেকটা মেয়ের সাথে দিন নাই রাত নাই উল্টাপাল্টা চলাফেরা করে,নিজের স্ত্রীর
থেকে বাইরের আরেকটা মেয়েকে বেশি গুরুত্ব দেয় তাহলে সে কিভাবে তা সহ্য
করবে।”

“যে স্ত্রীর পুরো দুনিয়াটায় জুড়ে তার স্বামী
থাকে যাকে কেন্দ্র করেই সে নতুন একটা সকালের স্বপ্ন দেখে সেই যদি তার
স্ত্রীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তার পুরো দুনিয়াটা উল্টে দেয়, স্বপ্নে দেখা
নতুন সকালকে সে অন্ধকারে পরিণত করে তাহলে,,তাহলে সে কি করবে বলতে পারবেন?”

“বাইরের মেয়ের জন্য যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে
তাহলে সেই অফুরন্ত ভালবাসাটা আর কোথায় থাকে?আর দিনশেষে সেই স্বামীই যদি
তার স্ত্রীর কাছে এসে বলে যার সাথে এতদিন সে অবৈধভাবে চলে এসেছে তারই গর্ভে
ওর সন্তান তাহলে সে কিভাবে বাঁচবে বলতে পারবেন?”

“একটা
মেয়ে তার ভালবাসার ভাগ অন্য আরেকটা মেয়েকে কখনোই দিতে পারে না সে যতই মহান
হোক না কেন।যে আমার ভালোবাসা,আমার পুরো দুনিয়াটায় অন্য আরেকটা মেয়েকে জায়গা
দিয়ে আমার এতদিনের ভালোবাসাকে অমর্যাদা করেছে তাকে আমি কিভাবে মাফ করব?ওর
জায়গায় যদি আমি নিজে এই কাজটা করতাম সে কি আমাকে কখনো মাফ করত?জীবনেও করত
না।পারলে কুকুরের মতন আমাকে ধূরধূর করে তাড়িয়ে দিত এরপর নিজে আরেকটা বিয়ে
করে সংসার করত।সে আমার ভালোবাসাকে অপমান করে যখন আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল তখন
আমি কি পারতাম না ওকে ভুলে গিয়ে আরেকটা বিয়ে করে সবকিছু শুরু করতে?কিন্তু
আমি তা করেনি। মেয়েদের মন একটাই থাকে।তা যদি একবার ভেঙ্গে যায় না তাহলে তা
হাজারো জোড়াতালি দিয়ে তা ঠিক করা যায় না।”

“এরপর ও কি
বলবেন ও এতকিছু করার পর আমি ওকে মাফ করে দিব।ও আমাকে জিন্দা লাশ বানিয়ে
দিয়েছে।ওকে কখনো আমি মাফ করব না।আর একি কাজটা যদি আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে
করে থাকেন তাহলে আমি বলবো সেও আপনাকে মাফ করবে না।মাফ করা উচিতও না।”

“আবির সাহেব আপনি কি সত্যি এমন কিছু আপনার স্ত্রীর সাথে করেছেন?!
“আরে না,,শুধু তোমাকে গেস করতে বললাম এই যা ”
“ও….তাই বলেন।আমি আরো ভাবলাম……”
“মেঘ!”
“হুম বলেন,”
“পারলে আমাকে মাফ করে দিও।”
“হঠাৎ এইভাবে বলার কারণটা কি?”
“যদি কখনো জানতে পার আমি তোমার কাছে একটা সত্য কথা লুকিয়ে অনেক বড় অন্যায় করেছি তাহলে পারলে আমাকে মাফ করে দিও।”
“কি অন্যায় করেছেন?”
“সময় আসলে সব জানতে পারবে।”

“তমা কি ঘুমিয়েছে?”
“হ্যা মেয়েটা এইতো কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়েছে।”
“ওর যত্ন নিও।আর যে ছেলেটা তমাকে সাহায্য করেছে নাম জানি কি ওর….”
“আহাদ,,তমার শিক্ষক।”
“হ্যা সেই। ওকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।যদি তমার বিয়ে দাও তাহলে আহাদের
সাথেই দিও।তোমার কথা শুনে বুঝলাম আহাদ আমাদের মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসে। সে
তমাকে অনেক সুখী রাখবে।”
“তা আমি জানি।কিন্তু আমাদের মেয়ে মানে…..বুঝলাম না।”
“আমাদের বলেছি?”
“তাই তো শুনলাম।”

“আরে আমাদের বলিনি, বলেছি তোমাদের মেয়ে মানে তোমার আর তোমার স্বামীর….”
“তমা শুধু আমার মেয়ে, ওকে এতদিন আমিই পেলে বড় করেছি।এক্ষেত্রে আমার স্বামীর কোন অবদান নেই।ও শুধু আমার মেয়ে।তন্ময়ের না……”
“ও হ্যা তাইতো।”
“আজকের পর থেকে তোমার সাথে আমার আর কথা হবে না মেঘ।”
“কেন?কি হয়েছে?”
“কারণটাও সঠিক সময় আসলে পেয়ে যাবে। শুধু এতটুকু বলব আমার শরীরটা বেশি ভালো যাচ্ছে না।”
“ঔষুধ ঠিকভাবে খান।”
“আর ঔষুধ।ঔষুধে আমার এই রোগ সারবে না।এটা মনের অসুখ।আজকাল মনের থেকে
বাঁচার কোন জোর পাচ্ছি না।আস্তে আস্তে শরীরটা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।”
“কি বলছেন এইসব? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“বললাম তো সব উত্তর সময়ে পেয়ে যাবে।পারলে আমাকে মাফ করে দিও মেঘ।”

“মেঘ,,,”
“শুনছি,,,”
“I……Love…… U…….as a friend.ভালো থাকিও। নিজের আর আমার মানে তোমার মেয়ের যত্ন নিও।সুখী হও।”
“আপনি কি সত্যিই আর আমার সাথে যোগাযোগ রাখবেন না।”
“যতদিন বেঁচে আছি যোগাযোগ রাখব। কিন্তু আজকের পর থেকে আর তোমার সাথে কথা বলব না।এতে তোমার আর আমার জন্যই মঙ্গল হবে।রাখছি।”

আজকে কেন জানি মেঘের মনটা আগের থেকে আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল।কিছুক্ষণ আগে
ওর মেয়ের সাথে যা ঘটল তাতে ওর মনের যে অবস্থা হয়েছে তা কেবল ওই জানে।আবিরের
সাথে কথাটা শেয়ার করার পর কেন জানি মেঘের মনে হল আজকে মেঘ ওর মেয়েকে নিয়ে
যতটা টেনশনে ছিল আবিরও ঠিক ততটাই টেনশনে ছিল।মানুষটার সাথে কথা বলে মনে হয়
অনেকদিনের পরিচিত সে।

আবির যে আগন্তুকের মতন ওর জীবনে আসল,,ওর
দুঃখের সময়ে যে মানুষটাকে মেঘ এই ৩ বছরের জন্য পেয়েছে আজ সেই নিজ থেকে
মেঘের জীবন থেকে ছুটি নিল।আর সাথে নিয়ে গেল মেঘের মনের শান্তির ঔষুধটা।
আজকে কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছি।আর
সেইসাথে সামনে খারাপ কিছু ঘটার পূর্বাবাস পাচ্ছি।সত্যিইই কি আবির আর আমার
সাথে কথা বলবে না।ও কি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছে? কিন্তু সেটা কি?খুব আনচান
করছে মনটা।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com