Breaking News

অন্যরকম বউ | পর্ব -০২


দোস্ত প্রথমেই দেখতিস আমি কলেজে একা থাকতাম?(ইতু)
হুম
কেনো তুই ছাড়া আমার আর কোনো বন্ধু নেই জানিস?
না কেনো?
কারন তুই ছাড়া সবাই জানে আমি মেয়ে বা ছেলে নই..
মানে?তাহলে তুই কি?
আমি ছেলে আর মেয়ের মাঝামাঝি..মানে হিজরা..
এটা আমার থেকে লুকিয়েছিস কেনো?
আমিতো লুকাতে চাইনি..কিন্তু তুই যেভাবে আমাকে অতিষ্ট করে তুলেছিলি সেজন্য বন্ধু করি..আমি তোর সাথে বন্ধুত্ত করার পর থেকে নিজেকে আর একা লাগতোনা..তাই তোর বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে সত্যটা বলতে পারিনি..

ওহ..কিন্তু তোকে দেখে কোনো ভাবেই বোঝা যায়না তুই হিজরা..
তোর কথাবার্তা,চালচলন সবই মেয়েদের মতো
হুম..আমি অন্যসব হিজরাদের থেকে আলাদা..
আর হ্যা তোর কাছে একটাই অনুরোধ আমাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট করিসনা প্লিজ
ইতু শোন আমি এতোটা খারাপ না..যে সামান্য কারনে বন্ধুত্ব নষ্ট করবো
ধন্যবাদ দোস্ত
কি বললি?
সরিইই
ওকে..আর যেনো না শুনি
ওকে..

ইতু হিজরা জানা সত্তেও ওর সাথে বন্ধুত্ব রেখেছি..কারন ইতুকে ছাড়া আমি অচল।তাছাড়া আমি ওকে ভালোবাসি।হোক হিজরা তাতে কি?ওতো মানুষ।
তবে আমার একটা বিষয়ে খটকা লাগছে..ইতু হিজরা হওয়া সত্তেও সব কিছুই মেয়েদের মতো..কোনোভাবেই বোঝা যায় না ইতু হিজরা..

অবশেষে আমরা অনার্ষ শেষ করলাম..এই ৪বছর আমার আর ইতুর বন্ধুত্ব অটুট রয়েছে..
আর ইতুর ব্যাপারে আমি বিদেশী ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি..তিনি আমাকে গ্রীন সিগনাল দিয়েছে..তবে কিছু পার্সোনাল তথ্য তাকে জানাতে বলছে।কিন্তু এসব তথ্য ইতু নিজেই বলতে পারবে..
আর ইতুকে এই ৪বছরে আরো ভালোবেসে ফেলেছি..
এতটাই ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে ইতুর প্রতি..এক বেলা ভাত না খেয়ে থাকতে পারলেও ইতুর সাথে কথা বলে থাকতে পারিনা..

তাই ইতুকে নিজের করে নেওয়ার কথা ভাবছি..
তাই ওকে ফোন দিয়ে পার্কে আসতে বললাম..
ইতু আর আমি পার্কের একটা বেধ্ঞে বসে আছি..
কেমন আছিস?(আমি)
খুব ভালো..তুই?
আমিও..তোকে কেনো ডেকেছি জানিস?
না বললে জানবো কি করে?
তাহলে বলি?
হ্যা বল..
ইতু আমি তোকে বিয়ে করতে চাই..প্লিজ না করিস না..
চয়ন এমন হয়না..বিয়ে ছেলে আর মেয়ের হয়..হিজরাদের নয়
ইতু..তুইতো ভালোই জানিস তোর সাথে আমি কথা না বলে এক মূহুর্ত থাকতে পারিনা..তাই তোকে নিজের করে নিতে চাই
আমি পারবোনা..তুই চাইলে আমি সারাজিবন বন্ধু হয়ে থাকতে রাজি আছি
ইতু এটাই তোর শেষ কথা?
হুম..
ওকে..তোর বাবার নাম্বার দে..আমি আ্কেলের সাথে কথা বলবো..
চয়ন আমি অনাথ..আমার মা বাবা কেউ নাই..
কি বলিস?
হ্যা ঠিকই বলছি..
তাহলে আমাকে এতদিন জানাসনি কেনো?আর তোর চলে কিভাবে?
আমি রাতে আউটসোসিং করি..যা পাই তাতে খুব ভালোই চলে আমার।
এই কথাটা ৪বছর আমার কাছে লুকিয়ে রেখেছিস?
হ্যা..কারন আমি প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলাম।তুই আমার প্রেমে পড়েছিস?
আর এজন্য আমার অনেক কেয়ার করতিস..
যদি আমি অনাথ জেনে আমার থেকে দুরে চলে যাস এজন্য কিছু বলিনি
এতোটা খারাপ ভাবিস আমায়?তাহলে এখনতো জেনেই গেলাম তুই অনাথ।
তাহলে যা আজকে থেকে তুই আমার বন্ধু না..
এমনটা করিসনা চয়ন..তোর ছাড়া মরেই যাবো।
চুপ এমন কথা আর বলবিনা
ঠিক আছে
ওকে..

এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর..আমি একটা জব পেলাম..
এর মধ্যে ইতুকে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছি..
বাসায় মা বাবাকে বলেছি ইতুর ব্যাপারে..তারাও রাজি।
কারন এখন আমি বড় হয়েছি তাই আমি জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার মতো হয়েছি..
এই বিশ্বাস আছে আমার উপর মা বাবা..
তাই দেরি না করে তাড়াতাড়িই ইতুকে বিয়ে করেছি..
আর এখন আমি আর ইতু বাসর ঘরের আছি..যদিও আমাদের বাসর অন্যদের মতো হয়নি..

ইতুকে বিয়ে করেছি আজ প্রায় ৮মাসে মতো হয়েছে..
ইতু মেয়েদের মতোই সংসারের কাজকর্ম করে..মা বাবাও ইতুকে পেয়ে খুশি..
ইতুর বিরুদ্ধে বাবা মার কোনো অভিযোগ নেই..
তবে ইদানিং মা বাবা..মাঝে মাঝে বলছে নাতি নাতনির কথা..কিন্তু তা কখনোই সম্ভব না মা বাবা জানে..
এজন্য মা বাবা একটুও অসন্তুষ্ট নয় ইতুর উপর..তার ঠিক আগের মতোই ভালোবাসে ইতুকে..
কিন্তু ইতু বিষয়টা বুঝতে পেরেছে..

তাই আজকে অফিস থেকে আসার পর ইতু বললো
চয়ন একটা কথা ছিলো..
হুম..বলো
তুমি একটা বিয়ে করো..
মেজাজ খারাপ করতে এসেছো?এসব আজেবাজে কথা বলে মানে কি?
না মানে..মা বাবা প্রায়ই নাতি নাতনির জন্য আপসোস করে..তাই বলছিলাম আমিতো বেবি জন্ম দিতে পারবোনা..যদি তুমি বিয়ে করো তাহলে মা-বাবা নাতি-নাতনির মুখ দেখতে পাবে।
তোমাকে এত ভাবতে হবেনা..আর তোমাকে এসব নিয়ে মা বাবা কিছু বলেছে?
না..বাবা মা খুব ভালোবাসেতো আমাকে..এজন্য বলছিলাম
এখন যাও..আর তোমাকে এসব ভাবতে হবেনা..
আচ্ছা..ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো
যাও..আসছি

ইতুর কথা শোনার পর আমার মনে পড়লো আমাদের বিয়ের আগে..আমি অনলাইনে একটা বিদেশী ডাক্তারের সাথে কথা বলেছিলাম..তিনি আমার কাছে পার্সোনার কিছু তথ্য চেয়েছিলেন..
রাতে খাওয়া দাওয়া করে ইতুর কাছ থেকে ওর পার্সোনাল তথ্য গুলো জেনে ডাক্তারের কাছে পাঠালাম..
বেশকিছুদিন পর সেই ডাক্তার খবর দিলো..খবরটা আসলে খুশির খবর..
তিনি বললেন,ইতু হিজরা নয়।ওর দেহে হিজরাদের হালকা একটু সংমিশ্রন আছে..যা অপারেশন করলেই ঠিক হয়ে যাবে..

তারপর ইতু বাচ্ছা জন্ম দিতে পারবে..
খুশির খবরটা সবাইকে জানালাম..
বিদেশী ওই ডাক্তারকে দেশে আসার কথা বললাম ইতুর অপারেশনের জন্য..তিনি আমাদের দেশীয় এক ডাক্তারের কথা বললেন..
তারপর কিছুদিন পর ইতুর অপারেশন করালাম..এতে অবশ্য একটু খরচ হয়েছে

অবশেষে ইতু এখন সুস্থ।তাহলে এখন আমাদের বাসর হতেই পারে..
হোকনা বিয়ের ১বছর পরে বাসি বাসর..
ইতু শুনো একটু
হুম..আরে জড়িয়ে ধরলে কেনো?
মা বাবার জন্য নাতি নাতনীর ব্যাবস্থা করতে হবেনা?
যাহ..দুষ্টু লজ্জা লাগে
আহারে লজ্জাবতী উম্মামাআআ..
ধ্যাত
অতঃপর ইতিহাস জানতে চাহিয়া লজ্জা দিবেন না..বাই..বাই

ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য
<>সমাপ্ত<>

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com