গল্প -বন্ধু মানে ভালবাসা | লেখক - অভি
ক্লাসের সময় তুই আমার দিকে ওইভাবে
তাকিয়ে থাকিস কেনো?
– তোরে আমার ভাল লাগে যে, তাই।
– রাখ তোর ভাল লাগা! আর যেন তাকিয়ে
থাকতে না দেখি?
– আমি আমার চোখ দিয়ে দেখি, তাতে তোর
সমস্যা কী, হু??
– আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবি না।
– উহুহুহুহু,,,,আইছে রে আমার সুন্দরীর ডিব্বা!!
– দেখ,এখন কিন্তু থাপ্পর মেরে তোর গাল লাল
করে দিব।
– দেখি মার তো থাপ্পর???
– তোর মত শয়তানকে থাপ্পর মেরে আমার
হাতটা নষ্ট করবো না।
– কথা শুনে মনে হচ্ছে, কোথাকার জমিদারের
মেয়ে!
– এবার কিন্তু তোকে লাথি মারবো। দূর হ আমার
চোখের সামনে থেকে……..
*
মীম আমাকে ওর “চোখের সামনে থেকে দূর
হ”
বলাতে আমি আরও ওর কাছে গিয়ে অপ্রস্তুত
ভাবে,ওর হাত দুইটা চেপে ধরে, ওর ঠোঁটের
ভাগ নিয়ে নিলাম। হি হি হি*
মীম তো অবাক দৃষ্টিতে থ হয়ে শুধু দাঁড়িয়ে রইল।
নিশ্চয় ভাবতেছে, ফাজিল কী করল এইটা!!
– কুত্তা কী করলি এইটা???
– কই, কিছু করি নি তো!!
– ফাজিল তুই আমাকে কিস খাইলি কেন?
– বলিস কী!! আমি কখন তোকে ওইটা করলাম??
– মিথ্যা বলবি না।
– প্রমান দে………
– ওইইই,,তুই ওইটা করলি কেন???( মীম তো এবার
কেঁদেই ফেলল)
– কাঁন্দিস কেনো???
– তুই আমার সাথে আর কথা বলবি না….
– এতো কাঁন্না করার কী আছে??দুইটা চকলেট
কিনে দিব নি।
– লাগবে না আমার চকলেট….
– তাহলে, কী লাগবে খুকুমণি??
– তোর সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নাই। তাই,
আমার সাথে আর কোন যোগাযোগ করবি না।
– ছোট বাচ্চাই আছিস নাকি এখনও! একটা
ব্যাপার নিয়ে এখনও কাঁন্না করতে হবে??
– তুই জানিস,,কী করছিস তুই এটা???
– বাহ্ রে! আমি তোর জামাই।আর, এতটুকু করতে
পারবো না??
– কুত্তা,,বিলাই,, কবে থেকে তুই আমার জামাই
হইছিস?
– আজ না হলাম,,দুই দিন পর তো হবো!
– আচ্ছা, ভাল।
“ভাল” বলেই মীম কাঁন্না করতে করতে সামনের
দিকে চলে যেতে লাগল। আমি দৌড়ে মীমের
সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
– মীম, ওই মীম দাঁড়া কই যাস্???
– (…………….)
– মীম আর এইরকম কিছু হবে না।এইবারের মত মাফ
করে দে?
– (……………..)
– দে না মাফ করে। আমি তো তোর বেস্ট
ফ্রেন্ড। প্লিজ…………….
– আমাকে আজ থেকে আর বেস্ট ফ্রেন্ড বলবি
না।
– হু, বললেই হল!! আমার বেস্টফেন্ড টা কত্তো
ভাল….
এবার মীমের হাতটা ধরেই ফেললাম। যেন,
যেতে না পারে।
– আমার হাত ছাড়….
– তাহলে, কার হাত ধরবো।বলে দে……
– যেখানে ইচ্ছা, সেখানে গিয়ে মর…..
– ও তাই??? তাহলে, রাস্তায় চলন্ত গাড়ির
সামনে গিয়ে দাঁড়াই?
– যাহ্,,,, যেখানে খুশি যা। মর…..
তখন আমি সত্ত্যি সত্ত্যি চোখ দুইটা বন্ধ করে
রাস্তার দিকে যেতে লাগলাম।। খুব রাগ
লাগতেছিল তখন, আমি কী এমন করেছি যে,, তার
জন্য মীমের এতো কিছু বলতে হবে? সেই
সময়
হয়তো নিজের রাগ-অভিমানকেই খুব বেশি
অগ্রাধিকার দিয়েছিলাম। তখন আমার
বেস্টফ্রেন্ডের কথা মনে ছিল না!”
.
কিছুক্ষণ পর, মনে হচ্ছে কে যেন আমাকে
জোরে
টান দিয়ে নিয়ে, জড়িয়ে ধরে আছে!
– হারামি, আর একবার মরতে গেলে আমি
নিজেই তোকে মেরে ফেলবো।
সেইমুহূর্তে আমি যেন বোবা হয়ে আছি। চোখ
গুলো অশ্রু ঝড়িয়ে দিল…..
– মরতে বললাম বলে, মরতে চলে যাবি???
[ মীম এখনও আমায় জড়িয়ে ধরে আছে। ওর
চোখ
গুলোও জলে ভিজে গেছে। তখনও, সে
আমাকে
বকা দিয়েই যাচ্ছে……. ]
– কুত্তা এইটা কী চিনিস???
– কী এইটা?
– থাপ্পর……
– মার না প্লিজ…….
– এরপর কখনও আমাকে একা রেখে মরতে
গেলে
সত্ত্যি সত্ত্যি অনেক গুলো মারবো,,,,
– আজকেই একটু মার না……….
– বেশি কথা বলিস না। চল আমাদের বাসায়…
– তোদের বাসায় যাব কেনো?
– দুপুরে কিছু খেয়েছিস??
– নাহ্। পকেট তো ফাঁকা…..
– সেটা তো বুঝতেই পারছি। আজ আমাদের
বাসায় গিয়ে পেট ভরে খাবি, ঠিক আছে?
– তোর আব্বু-আম্মু কিছু বলবে না?
– সেটা আমি দেখবো নি। চল এবার…..
.
আমি মীমের সাথে ওদের বাসায় যাওয়ার
উদ্দেশ্য রওনা হলাম। নিজের পারিবারিক
অবস্থার কথা বলতে গেলে,একটু লজ্জায় লাগে।
মীম সব সময় আমার পাশে থাকে।যখন যেইটা
চাই,মীম কখনও ‘না’ করে নি। আমাদের
পারিবারিক অবস্থা এমন যে, কবে যেন ঈদ
মার্কেট করেছিলাম আমার ঠিক স্মরণেই আসে
না।হয়তো, ভুলেই গেছি। তারপর থেকে আর
কখনও
ঈদ মার্কেট করা হয় নি।।
তো যাইহোক, সে সব কথা বলে, শুধু কষ্ট
বাড়ানোর কী দরকার!! আর, তা ছাড়া আমি
অনেক ভাল একটা বেস্ট ফ্রেন্ড পাইছি,, তাতেই
আমি হ্যাপি।”
.
মীমের সাথে হাঁটতে হাঁটতে ওদের বাসার
সামনে চলে এসেছি। আগে কখনও মীমদের
বাসায় আসার সুযোগ হয় নি। আমি তো নিজের
চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছি না যে, এইটা
মীমদের বাসা?মীম এত্তো বড়লোকের
মেয়ে!!
কীভাবে আমার মত ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করল?
কেমন যেন লাগছে!
আসলেই মানুষ ভাল হইতে হলে, টাকা পয়সার
দরকার হয় না। প্রয়োজন শুধু একটা পবিত্র মনের।
যেই মনে শুধু ভালবাসায় ভরপুর……
– কি রে, হা করে কী দেখছিস??
– না রে,, তোদের বাসাটা দেখছি…..
– বাসা দেখার কী আছে?
– তোর বাবা অনেক বড়লোক রে!
– বাসার ভিতরে আসবি, নাকি বাহিরে
দাঁড়িয়ে থেকেই এইসব গবেষণা করবি?
– আচ্ছা, চল………
মীমদের বাসার মধ্যে ঢুকে পড়লাম।কিন্তু কেমন
জানি সব কিছু নীরব লাগতেছে। কারোও কোন
সারাশদ্ব পাচ্ছি না।
– তোদের এত্তো বড় বাড়ি এইরকম ফাঁকা
কেনো?সবাই কোথায়??
– আসলে, আব্বু ব্যবসার কাজে বাহিরে।আর,অাম্মু
স্কুলে….
– তোর আম্মু স্কুলে কেনো? পড়াশোনা করতে
গেছে??
– না রে হারামি।আম্মু প্রাইমারি স্কুলের
শিক্ষিকা।
– ওহহহহ….তাইলে, তুই সব সময় একা একাই বাড়িতে
থাকিস??
– তোর এতো জেনে লাভ নাই। বল কী খাবি??
– না রে, আমি বরং বাড়ি চলে যাই…..
– মানে কী???
– আমার পেট ভরে গেছে এমনিতেই…..
[ কথাটা বলার সাথে সাথেই আমার গালে
অনেক কয়টা চড় এসে পড়ল। ঠিক ভাবে গুনতে
পারি নি।তবে, ৪/৫ টার বেশি হবে ]
– ওইইই মারলি কেন? আমি কী করছি?
– আমাকে এখনো আপন ভাবতে পারিস না?
– আপন ভাবি তো। তাই বলে, অসহায়
ছেলেটাকে এত্তো গুলো মারবি?
– খুব লাগছে???
– না লাগবে কেনো,,আমার গাল তো পাথরের
তৈরী!
– এখনই সহ্য করতে পারছিস না।তাহলে, সারা
জীবন ক্যামনে সহ্য করবি?
– মানে? সারা জীবন মানে??
– তোর ওতো না বুঝলেও চলবে। এখন যা ফ্রেশ
হয়ে নে… আমি খাবার রেডি করি।
.
মীমের কথাটার মাঝে কেমন জানি অন্য কিছুর
গন্ধ খুঁজে পাচ্ছি। তাহলে, মীমও কী আমার
মত…..?? না, ভাবতে পারছি না। কেমন জানি
অংক গুলো মিলতেছে না। আমরা দুইজন খুব ভাল
বন্ধু হলেও, দুইজনের হয়তো একটাই চাওয়া “যদি
আমি তাঁকে লাইফ পাটনার হিসেবে
সারাজীবন পেতাম, হয়তো নিজের কেয়ারের
আর অভাব হতো না”। আবার মাঝে মাঝে এইটা
মনে হলে চুপ হয়ে যায়, সব স্বপ্নকে তখন চাপা
দিয়ে রাখি যে,” আমি কোথায়, আর মীম
কোথায়!” কত্তো বড়লোকের মেয়ে সে!
আমার
সাথে ওর ব্যাপার গুলো হয়তো কখনই মিলবে
না। শুধু স্বপ্ন দেখেই শেষ!
– এইখানে চুপ করে বসে আছিস কেনো?
– আমার খুব ভয় করছে রে!
– ভয়ের কী আছে??
– তোর আব্বু-আম্মু আমাকে দেখলে কী
ভাববে,
বলতো?
– তোকে এতো চিন্তা করতে কে বলেছে? চল
খাবি…..
মীমের সাথে বসে খাওয়া দাওয়া শেষ
করলাম। এবার আর এখানে থাকা যাবে না।
বাড়িতে যেতে হবে। হঠাৎ করেই মীম বলে
উঠল…….
– আমার সাথে চল?
– কোথায়?
– আয় তো…..
_____
– এইটা আমার রুম।
– বাহহহ্…. খুব সুন্দর তো!
– আমাদের বাসায় আসার পর থেকেই দেখছি তুই
চুপ হয়ে আছিস,,,, কী হইছে বল তো?
– না রে, এমনি ভাল লাগছে না।
– বলবি… নাকি গালে আবার বসিয়ে দিবো?
– আসলে,ছোট বোনটার কথা মনে হয়ে খুব
খারাপ লাগতেছে রে….
– ওহ,, হ্যাঁ। তোর বোনটার অপারেশন করাস নি??
– না রে। টাকা-পয়সার একটু সমস্যা।
– কত টাকা লাগবে বল?
– ডাক্তার তো বলেছে,, ছোট্র একটা
অপারেশন। খুব বেশি লাগবে না। ১৫/১৬ হাজার
টাকা হলেই হবে।
– হাবামি তুই এতো দিন আমাকে এইকথা বলিস
নি কেনো?
– এমনি। থাক রে,,,বাসায় যাই…..
– দাঁড়া একটু।
– কেনো?
– রাখ এইটা…..
– কী করছিস???তোর গলার চেইন দিচ্ছিস
কেনো??
– চুপ করে থাক। ধর, আংটি টাও নে……
[ মীম তাঁর হাতে থাকা স্বর্ণের অাংটি আর
গলায় থাকা স্বর্ণের চেইনটা আমার হাতে
ধরিয়ে দিল ]
– এই দুইটা বিক্রি করে ১৫ হাজার টাকা হয়ে
যাবে। আর তা ছাড়া, আমার কাছে এখন এতো
টাকা নাই। তাই,এগুলোই দিলাম। তবুও, যদি
আমার ছোট্র বোনটা তার ভাইয়ার সাথে
হাসি খুশিতে চলতে পারে….
– মীম একটা কথা বলবি?
– হুম,, বল?
– তুই এত্তো ভাল কেন?
আমি চোখ গুলোকে তখন আটকে রাখতে
পাড়লাম না অশ্রু গড়িয়ে যেন, আমার গাল
ভিজিয়ে দিচ্ছে…..
– কুত্তা কী বলিস এইসব? আমি ভাল হতে যাব
কেনো!
– মীম আমি যাই রে…….
– এখনই যাবি?? আব্বু আম্মু আসুক, তারপর যাস?
– না রে ছোট বোনটার জন্য মনটা কেমন জানি
করছে। ওর পেট ব্যাথা কি আবার শুরু হয়েই গেল
নাকি!! সে সময় আমাকে কাছে না পেলে খুব
কষ্ট পাবে রে মেয়েটা।
____
মীমের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ওর
চোখ গুলোও জলে ভিজে গেছে। মনে
হচ্ছে,
“আমাকে সারাজীবনের জন্য বিদায় দিচ্ছে,
হয়তো আর কখনই আমাদের মাঝে কথা হবে না”।।
পাগলী মেয়ে একটা!
.
আমি পিছন ফিরে চলে আসতে
লাগলাম….আবারও হঠাৎ মীম বলে উঠল…….
– আর কিছু নিবি না??
– কী বলিস? আরও কী নিবো? তোর মূল্যবান দুইটা
জিনিস তো দিয়েই দিছিস!
– সত্ত্যি আর কিছু নিবি না?
– আবার কী নিবো, বল তো ভাল করে?
– আমাকে সারাজীবনের জন্য তোর করে নিবি
না???
আমি মীমের কথাটা শুনে থ হয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।
তারপর, আর কিছু না ভেবে, দৌড়ে গিয়ে
মীমকে জড়িয়ে ধরলাম।
হারামিটা, আজকে আমাকে জড়িয়ে ধরে
অনেক কাঁন্না করছে। এবার মীমকে ছাড়িয়ে
নিয়ে, আমার হাত দুইটা দিয়ে, ওর গাল গুলো
চেপে ধরে, ওর এতোটা কাছাকাছি চলে
এসেছি যে, আমি ওর গরম নিঃশ্বাস গুলো স্পষ্ট
অনুভব করতে পারছিলাম। তারপর বললাম “এই
পাগলী আমি তোকে ছাড়া একাই থাকতে
পারবো,এইটা তুই ভাবলি কি করে। চোখের
সামনে আমি কখনোই তোকে অন্যর হাতে তুলে
দিতে পারবো না রে ”
– এবার একটু হাসি দে……
– যা কুত্তা, আমি এখন হাসতে পারবো না।
[ তারপরেও, সে কাঁন্নার মাঝে ফিক করে
একটা হাসি দিল ]
– ভাল থাকিস রে, কাল আবার ক্যাম্পাসে
দেখা হবে।
_____এই বলে আমি বাসায় চলে আসলাম
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com