অশরীরী বউ | পর্ব -৫ম ও শেষ |লেখাঃ_হাছিব_রহমান
তন্নি জয়ের নাকে টিপ দিলো
তন্নিঃ - শয়তান,দুষ্টু .....জয় হাসল।এমন সময় জয়ার উপস্থিত। জয়া রুমে ডুকেই মুখ টিপে হাসল। মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো।
জয়াঃ - এহেম, এহেম। জয়ার কাশির শব্দ শুনে জয় আর তন্নি একটু লজ্জা পেলো। জয় আর তন্নি নিজেদের ঘুটিয়ে নিলো।
জয়ঃ - আমি কিছুই দেখি নি, কিন্তু। জয় গিয়ে জয়ার কান টেনে ধরল,
জয়ঃ - দুষ্টুমি হচ্ছে তাই না। জয়া আউউ বলে উঠল,
জয়াঃ - ভাই কান ছাড় ব্যাথা পাচ্ছি। আর আমি কি জানি তোমরা এই সময়ে ইয়ে করছিস। তন্নি এগিয়ে এলো,
তন্নিঃ - ইয়ে কি গো ননদিনী? ( দুষ্টুমি হেসে বলল)
জয়াঃ - কি মানে? তোমরা কি করছিলে তোমরা জানো না। রোমান্স করছিলে যে।
জয়ঃ - আচ্ছা, খুব দুষ্টু হয়ে গেছিস তাই না।
জয়াঃ - আয়ায়াহ, ভাইয়া ছাড় না প্লিজ। আর যেটার জন্য এসেছিলাম।আব্বু -আম্মু তোমাকে আর ভাবীকে নিচে ডাকতেছে। জয় জয়ার কান ছেড়ে দিলো। জয়া ভেঙচি কেটে ভোঁ দৌড় দিলো। জয় আর তন্নি নিচে গেলো। জয়ের আব্বু আর জয়ের আম্মু শোফায় বসা ছিলেন।
জয়ের আব্বুঃ - জয়, তোমরা হানিমুনে দেশের বাইরে যাবে নাকি দেশেই কোথাও যাবে?
জয়ঃ - আমতা আমতা করে উত্তত্র দিলো, না আব্বু দেশেই কোথাও যাবো।
জয়ের আব্বুঃ - ওও তাহলে তো ভালো। তা কোথায় যাবে?
জয়ঃ - কক্সবাজারই ব্যাটার।
জয়ের আব্বুঃ - ওকে তাহলে আমি আজই কক্সবাজারে যাওয়ার প্লেন টিকেট কেটে রাখব তোমরা কালই রওয়ানা দিবে।
জয়ঃ - আচ্ছা, আব্বু। জয় উপরে চলে গেলো। তন্নি নিচে জয়ের আব্বু আম্মুর সাথে গল্প করতে লাগল। জয় বসে বসে মোবাইল টিপছিল। কাধে কারো হাত অনুভব করল। উপরে তাকিয়ে দেখল তন্নি।
তন্নিঃ - তোমার শরীর এখন ঠিক আছে।
জয়ঃ - হুম। খুব ফুরফুরে লাগছে। কিছু একটা করতে ইচ্ছে করছে।
তন্নিঃ - কি?
জয়ঃ - আজ রাতে তুমি আর আমি লং ড্রাইভে যাবো রেডি থেকো।
তন্নিঃ - হুম। কোথায় যাবে?
জয়ঃ - যেখানে তোমার আর আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো। সেই,রাস্তা দিয়েই যাবো।
তন্নিঃ - হুম। তন্নি মনে মনে ভাবলো, তোমার আর আমার তো প্রথম দেখা হয়েছিলো অন্য কোথাও যেটা তোমার মনেই নেই ।
জয়ঃ - কি ভাবছো?
তন্নিঃ - নাহ, কিছু না।
জয়ঃ - আচ্ছা, তন্নি তুমি আমাদের বিয়ের রেজিস্টার ডকুমেন্ট কোথায় পেলে? আমাদের তো বিয়েই হয়েছিল না তখন। তন্নি জয়ের দিকে তাকাল অদ্ভুদ ভাবে। কিছুই বলল না।
জয়ঃ - আচ্ছা, মানলাম ওটা নকল। কিন্তু আমার সাইন কোথায় পেলে? ( ভ্রু কুচকে বলল জয়)। তন্নি জয়ের কলার টেনে ধরল। দাতে দাত কিড়িমিড়ি খেয়ে বলল,
তন্নিঃ - ওগুলো নকল না। আমাদের বিয়ে হয়েছিলো। বলে তন্নি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। জয় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তন্নিকে তার সম্পর্কে বা আমাদের বিয়ে এসবের সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করলেই রেগে যায় কেনো? জয় অবাক হয়ে ভাবল, তন্নি আর তারতো বিয়ে হয়নি তাহলে তন্নি বলে গেলো যে, আমার আর তার বিয়ে হয়েছে। জয় বুঝতে পারল না কিছুই। তার উপর মাথা ঝিম ধরে আছে। শুয়ে পড়ল খুব ক্লান্ত লাগছে। ঘুমিয়ে পড়ল জয়। সন্ধ্যের দিকে ঘুম ভাঙল জয়ের। চোখ মুছতে মুছতে তাকিয়ে দেখল তন্নি তার মাথার পাশে বসে আছে। তন্নি জয়ের মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বলল,
তন্নিঃ - সরি।
জয়ঃ - কেনো?
তন্নিঃ - আসলে তখন আমি তোমার সাথে রাগ করতে চাইনি। এমনিতেই আমার রাগ উঠে গেছে। আমি সরি। (অনুনয়ের স্বরে বলল তন্নি)
জয়ঃ - আচ্ছা ঠিক আছে। আর রাতের জন্য যে প্লান করে রেখেছিলাম মনে আছে তো।
তন্নিঃ - আছে আছে। এখন উঠে ফ্রেস হয়ে নাও। তুমি সেই দুপুরে ঘুমিয়েছিলে কিছু খাওনি এখনো। আমি খাবার নিয়ে আসছি। জয় ওয়াসরুমে গেলো। ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এসে দেখলো তন্নি খাবার হাতে দাঁড়িয়ে আছে। বিছানায় বসতে বসতে বলল,
জয়ঃ - তোমার হাতে খেলে না মনে হয় আমি অমৃত খাচ্ছি। দাও তাড়াতাড়ি খাইয়ে দাও।
তন্নিঃ - এতো প্রশংসা করো না। ফুলে শেষে ফেটে যাবো।
জয়ঃ - না, না সত্যি বলছি। তন্নি জয়কে খাইয়ে দিতে লাগল। তন্নি জয়ের খাওয়া দেখছে এক নজরে। মুখ কিছুটা মলিন হয়ে আছে। কিছু বলতে চাচ্ছে জয়কে।
তন্নিঃ - শুধু নিজেই খাবে। আমাকে খাইয়ে দিবে না।
জয়ঃ - সরি,সরি তোমার হাতে খেতে গিয়ে তোমাকে খাইয়ে দেওয়ার কথা ভুলে গেছি। এই নাও হা করো। তন্নি হা করলো। জয় খাবার তন্নির মুখে পুরে দিলো। তন্নির খুব ভালো লাগছে। খাওয়া শেষ করে জয় আর তন্নি কিছুক্ষণ দুষ্টুমি করল।
|
|
রাত হয়ে গেছে তন্নি রুমে ডুকতেই জয় বলে উঠল,
জয়ঃ - রেডি হয়ে নাও।
তন্নিঃ - হুম।
জয়ঃ - একটা নীল রঙের শাড়ি পড়ো। তোমাকে খুব মানাবে।
তন্নিঃ - আমিতো শাড়ি পড়তে পারি না।
জয়ঃ - সমস্যা নেই আমি তো পারি।
তন্নিঃ - তুমি পড়িয়ে দিবে?
জয়ঃ - সমস্যা নেই তো।
তন্নিঃ - নাহ। বলে একটা মুচকি হাসি দিলো তন্নি। জয় তন্নির হাত থেকে নীল রঙের শাড়িটা তার হাতে নিলো। তন্নিকে পড়িয়ে দিতে লাগল। মাঝে মাঝে তন্নির পেটে ও পিটের খালি অংশে টাচ করছে। তন্নি জয়ের এসব ভাব-ভঙিমায় রেসপন্স না করে চোখ বুজে আছে। নীল শাড়িতে তন্নিকে খুব সুন্দর লাগছে। জল জ্যান্ত পরীর মতো লাগছে। তন্নি চোখ খুলল, শাড়ি পড়ানো শেষ। জয় তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে বলল,
তন্নিঃ - কি দেখছো?
জয়ঃ - তোমাকে।
তন্নিঃ - আগে আর কখনো দেখনি বুজি।
জয়ঃ - দেখেছিতো তবুও।
তন্নিঃ - এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি বের হবে?
জয়ঃ - হুম, চলো। আব্বু আম্মুকে বলেছো।
তন্নিঃ -হুম। জয় আর তন্নি বের হলো বাসা থেকে জয় গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে আর তন্নি তার পাশে। আজ জয় নিজেই ড্রাইভ করবে। অবশ্য ড্রাইভ করতে পারে সে।
জয়ঃ - সিট বেল্ট টা বেধে নাও। ( নিজের সিট বেল্টটা বাধতে বাধতে বলল)।
তন্নিঃ - লাগবে না।
জয়ঃ - লাগবে বেধে নাও।
তন্নিঃ - তাহলে বেধে দাও। জয় ঝুকে গিয়ে তন্নির সিট বেল্ট বেধে দিলো। তন্নি তার উষ্ণ ঠোঁট জয়ের গালে ছোয়া লাগাল। জয় একটা হাসি দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো। খুব ভালো লাগছে জয়ের। সাথে তন্নিও ইনজয় করছে। জয় মাঝে মাঝে ঝুকে গিয়ে তন্নির ঠোঁটে তার ঠোঁটের ছোয়া লাগচ্ছে। মাঝে মাঝে তন্নি হাতে চুমু দিচ্ছে। যে রাস্তায় জয়ের সাথে তন্নির প্রথম দেখা হয়েছিলো সে রাস্তায়ই যাচ্ছে জয়। লোকালয় শেষে নিরব জায়গাটায় এসে পড়েছে তারা। এরকম একটা নিরব পরিবেশই রোমান্সের উপযোগী। জয় গাড়ি থেকে বের হলো। দরজা খুলে তন্নির হাত ধরে তন্নিকেও নামালো। তন্নির মুখে চাঁদের আলো পড়ছে। এতে আরোও ফ্যাকাসে আর সাদা লাগছে তন্নিকে। জয় আর তন্নি দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়। জয় তন্নির দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। আর তন্নিও জয়ের ভালোবাসার চাহনির নেশাতে ডুবতে ব্যাস্ত। তন্নি জয়কে জরিয়ে নিলে তার উষ্ণ বুকে। মুখ তুলে জয়ের নাকে নাক ঘসল তন্নি। হেসে দিলো। সাথে জয়ও।
জয়ঃ - চলো সামনে যাওয়া যাক নাকি?
তন্নিঃ - হুম, তবে তোমার ভয় করছে না আজকে।
জয়ঃ - নাহ।
তন্নিঃ - কেনো?
জয়ঃ - জানি না। চলো বলে তন্নিকে গাড়িতে উঠিয়ে সিল বেল্ট বেধে আবার গাড়ি স্টার্ট করলো। জয় তন্নি নেশায় ব্যাস্ত। তন্নির দিকে তাকিয়ে আছে। সামনে তাকাতেই দেখল একটা বড়সড় ট্রাক তাদের দিকে তেড়ে আসছে। একেবারে কাছ থেকে জয় ব্রেক কষেই চোখ বুঝে নিলো। জয় ব্রেক কষ্টেই স্টারিং্যের সাথে তার মাথাটার ধাক্কা লাগল।
|
বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেছে এখনো কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি জয় বুঝতে পারল। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল ট্রাকটা তাদের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে তাকিয়ে দেখল তন্নির জায়গায় বসে আছে সেই সাদা কাপড় পড়া, লম্বা চুল ওয়ালী। জয় দেখেই অজ্ঞান হয়ে গেলো।
জ্ঞান ফিরে দেখল হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। তার মাথার পাশেই তন্নি বসে আছে। জয়ের অবশ্য কিছুই হয়নি। জাষ্ট মাথায় একটু চট পেয়েছে। তাও একটু। অদ্ভুতভাবে জয়ের মাথার যে জায়গায় চট পেয়েছে। তন্নিও সেই একই জায়গায় চট পেয়েছে। জয় তন্নিকে দেখেই জরিয়ে ধরল অর্ধভাবে।পুরোপুরিভাবে উঠতে পারে নি। তন্নির পেটের অংশে জরিয়ে ধরল। কেঁদে দিলো,
জয়ঃ - তন্নি তুমি ঠিক আছো। তুমি কোথায় গিয়েছিলে?
তন্নিঃ - হ্যা, আমি ঠিকই আছি। আর তোমায় রেখে আমি কোথায় যাবো?
জয়ঃ - তাহলে ঐ সময় তোমাকে পাশে দেখলাম না যে। জয়ের জ্ঞান ফিরেছে দেখে জয়ের আম্মু, আব্বু জয়ের কাছে এলেন। জয় অবশ্য তন্নিকে ছেড়ে দিয়েছে।
জয়ের আম্মুঃ - তোমার কি হয়েছে আব্বু? ( কাঁদতে কাঁদতে বললেন)
জয়ঃ - আমার কিছু হয়নি আম্মু।
জয়ের আব্বুঃ - কি এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে? আমাকে খুলে বল। জয় বলতে শুরু করল। জয় আগে তার সাথে ঘটা ঘটনাগুলোও বলল। তন্নি মাথা নিচু করে বসে আছে।
জয়ের আব্বুঃ - হ্যা, আমিও সেরকম একটা ঘটনা ঘটতে দেখেছিলাম সেদিন। একটা লম্বা রকমের সাদা কাপড় পড়া মেয়ে আর লম্বা লম্বা চুল, আর লম্বা লম্বা নখ নিয়ে বিড়ালটাকে চিড়ে ফেলছিল।
জয়ের আম্মুঃ - কি বলছো এসব?
জয়ঃ - আব্বু, ঠিকই বলছে।
তন্নিঃ - আরে দূর, কি বলছো? এরকম আবার হয় নাকি।
জয়ের আম্মুঃ - হ্যা, আসলেই। আচ্ছা বাধ দাও এসব। আর তন্নি মামনি তোর ব্যাথা কমেছে।
তন্নিঃ - হুম, আম্মু।
|
জয়কে পরেরদিন বাড়ি নিয়ে আসা হলো। জয় এখন একটু ভয়ে ভয়ে থাকে। জয় আর তন্নি রুমে ছিলো। এমন সময় জয়া বলে গেলো যে, আব্বু তাদের নিচে ডাকছেন। জয় আর তন্নি নিচে গেলো। নিচে নামতেই দেখল জয়েকজন মাওলানা বসে আছেন।সালাম করলো জয়। তন্নি তাদের দেখে একটু ভরকে গেলো।
জয়ের আব্বুঃ - জয়, ইনি অনেক বড় একজন আলেম, মাওলানা। আমাদের দেখা অশরীরীকে তিনি নিঃশেষ করে দিবেন। জয়ের আব্বুর কথায় তন্নি ভরকালেও একটা রহস্যময়ী হাসি দিলো।
মাওলানাঃ - এই মেয়েটা কি তোমাদের পরিবারের কেউ? ( তন্নির দিকে ইঙিত করে)।
জয়ঃ - ওও, আমার স্ত্রী।
মাওলানাঃ - খুব বড় ভুল করে ফেলেছো তোমরা। এই মেয়েটাই অশরীরী। যাকে তোমরা দেখো। ঘিরে ফেলো একে। ( মাওলানা তার সাথী-সঙী দের বললেন) । সবাই তন্নিকে ঘিরে ধরল। সবাই অবাক হয়ে গেলো উনার কথায়।
জয়ঃ - কি বলছেন এসব?( বিস্ময়ের স্বরে বলল)
মাওলানাঃ - একটু পরেই দেখতে পাবে। বলে হাতের তসবি আর সূরা পড়তে শুরু করলেন। তন্নিকে ঘিরে ধরে সবাই সূরা আর তসবি পড়তে শুরু করল। তন্নি মাথার চুলগুলো টানতে লাগল।
তন্নিঃ - ছাড়ুন আমাকে, ছাড়ুন। কি হচ্ছে এসব? জয় আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। ( বলে চিৎকার করতে লাগল)। জয় তন্নিকে ছাড়াতে যেতে চাইল। তার আব্বু তাকে ধরে ফেললেন। মুখ দিয়ে ইঙিত করে আশ্বাস দিলেন। জয় স্টেচুর মতো দাঁড়িয়ে রইল। মাওলানা সাহেব পানিতে সূরা পড়ে ফুক দিয়ে পানি গুলো তন্নির উপর ছিটিয়ে দিতে শুরু করলেন। তন্নি কিড়িমিড়ি খেয়ে চিৎকার করতে লাগল,
তন্নিঃ - জয়,তুমি দেখতে পারছো না। ওরা তোমার তন্নিকে কিসব করছে বিনা কারনে। জয় কিছুই বলল না। অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জয়ে। অতঃপর তন্নি তার আসল অশরীরী রুপ ধারন করল। সাদা একটা কাপড় পড়া, লম্বা চুল, ফ্যাকাসে মুখ। জয় আর সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। জয়ের চোখ থেকে একফোটা পানি পড়ল। তন্নিকে এমন অবস্থায় দেখবে ভাবতে পারেনি। মাওলানা ও তার সঙী-সাথীরা তন্নিকে নানান ধরনের সূরা পড়ে ফুক দিতে লাগলেন। তন্নি হা হা,হা করে অদ্ভুত একটা হাসি দিয়ে উঠল।
তন্নিঃ - তোমরা আমার কিছুই করতে পারবে না। হা, হা হা। ( শব্দ প্রতিধ্বনি হত শুরু করল)। মাওলানা সাহেবরা ভরকে গেলেন। নানান ধরনের সূরে পড়ে ফুক দিতে লাগলেন। কিন্তু তন্নির কোনো ক্ষতিই হচ্ছে না। তন্নি হা হা করে হাসছে।
মাওলানাঃ - জয় ওর সাথে কি তোমার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। জয় হ্যা সুচক মাথা নাড়াল। মাওলানা সাহেব তাড়াতাড়ি করে একটা তাবিজ জয়ের গলায় ঝুলিয়ে দিলেন।
তন্নিঃ - নাআয়ায়া। বলে চিৎকার করে উঠল। প্লিজ এটা করো না। সবাই স্তম্বিত হয়ে আছে। আসলে শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে তন্নি মিশে গেছে জয়ের রক্তে। জয়ের অস্তিত্বে।
মাওলানাঃ - তুই কোথা থেকে আর কেনো এসেছিস বল? না হয় তোর প্রিয়কে ( জয়কে) আমরা মেরে ফেলবো।
তন্নিঃ - না,জয়ের কোনো ক্ষতি করবে না তোমরা। ওকে ছেড়ে দাও। আমি বলছি। তন্নি বলতে শুরু করল ঃ - আমি নিনেন। সেই ছোটবেলা থেকেই জয়কে ভালোবাসি। কারন জয় আমার স্বামী। শৈশবে আমি একটা গ্রামে ছিলাম। যেখানে আগে জয়রা থাকতো। একদিন আপনাদের মতোই কিছু হিন্দু তান্ত্রিক আমাকে ধরার জন্য তাড়া করে আমি এসে জয়ের দেখা পাই।
আমিঃ - আমাকে বাচাও প্লিজ। ওরা আমাকে ধরে নিবে।
জয়ঃ - কারা?
আমিঃ - জানি না ওরা কারা।
জয়ঃ - আচ্ছা,তুমি ভয় পেয়ো না। আমার সাথে আম গাছে উঠে পড়ো। ওরা তোমাকে পাবে না।
আমিঃ - আমি তো গাছে উঠতে পারি না।
জয়ঃ - আচ্ছা, তাহলে তুমি আমার পিঠে চড়ে বসো আমি তোমাকে নিয়ে গেছে উঠছি। জয় আমাকে পিঠে করে নিয়ে কষ্ট করে গাছে উঠল। দুষ্টু লোকরা গাছের নিচে এসে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে চলে গেলো। জয়ের জন্য আমার প্রান বেচেছিলো। জয় আমাকে তার খেলার সাথী করে নেয়। একদিন জয় তার কয়েকজন সঙী নিয়ে আসে খেলার জন্য। আমরা বর-বউ খেলি। আমি বউ ছিলাম আর জয় বর। খেলার ছলে জয় কবুল বলে আমাকে বউ করে নিয়েছিল। তারপর থেকে আমরা প্রায়ই খেলতাম পড়ে একদিন জয়রা এখানে চলে আসে। আমি যখন বড় হতে লাগলাম তখন জয়ের প্রতি ফিল হতো। জয়ের ঘামের গন্ধ আমার নাকে আসতো। আমি জয়কে আমার স্বামী হিসেবে ধরে নেই। পরে জয়ের খুজ করে আমি এখানে এসে জয়কে পেলাম। তন্নি কাঁদতে লাগল। জয়েরও মনে পড়ে গেলো সব। আর সবাই বিস্ময় নিয়ে দেখছে সব কাহিনী।
মাওলানাঃ - তুই এই বাড়ি ছেড়ে যাবি কিনা বল?
তন্নিঃ - না, আমি আমার স্বামীকে রেখে কোথাও যাবো না।
মাওলানাঃ - যাবি না। তাহলে দেখ। বলে মাওলানা সাহেব জোরে তসবি পড়ে আর সূরা পড়ে জয় আর তন্নি উপর ফুক দিতে লাগলেন। তন্নি যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগল। আর চিৎকার করতে লাগল।
তন্নিঃ - জয় আমাকে বাচাও জয়। জয়। ( আর্তনাদ করতে লাগল)। জয়ের খুব কষ্ট হচ্ছে তন্নি কষ্ট দেখে। তন্নি নিচের দিকে হাটু পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে যেতে লাগল। জয়ের ভিতরে তোলপাড় শুরু করল। জয়েরও যন্ত্রনা শুরু করল। জয় তার গলার তাবিজ ছুড়ে ফেলে দিয়ে দৌড়ে সবাইকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে তন্নিকে জরিয়ে ধরল। তন্নি আগের রুপে ফিরে এলো।
জয়ঃ - আমি আমার তন্নিকে ছাড়া বাচতে পারব না। আমি আমার তন্নিকে আমার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি। ( কাঁদতে কাঁদতে বলল)। তন্নিও জয়কে আঁকড়ে ধরল।
তন্নিঃ - শয়তান,দুষ্টু .....জয় হাসল।এমন সময় জয়ার উপস্থিত। জয়া রুমে ডুকেই মুখ টিপে হাসল। মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো।
জয়াঃ - এহেম, এহেম। জয়ার কাশির শব্দ শুনে জয় আর তন্নি একটু লজ্জা পেলো। জয় আর তন্নি নিজেদের ঘুটিয়ে নিলো।
জয়ঃ - আমি কিছুই দেখি নি, কিন্তু। জয় গিয়ে জয়ার কান টেনে ধরল,
জয়ঃ - দুষ্টুমি হচ্ছে তাই না। জয়া আউউ বলে উঠল,
জয়াঃ - ভাই কান ছাড় ব্যাথা পাচ্ছি। আর আমি কি জানি তোমরা এই সময়ে ইয়ে করছিস। তন্নি এগিয়ে এলো,
তন্নিঃ - ইয়ে কি গো ননদিনী? ( দুষ্টুমি হেসে বলল)
জয়াঃ - কি মানে? তোমরা কি করছিলে তোমরা জানো না। রোমান্স করছিলে যে।
জয়ঃ - আচ্ছা, খুব দুষ্টু হয়ে গেছিস তাই না।
জয়াঃ - আয়ায়াহ, ভাইয়া ছাড় না প্লিজ। আর যেটার জন্য এসেছিলাম।আব্বু -আম্মু তোমাকে আর ভাবীকে নিচে ডাকতেছে। জয় জয়ার কান ছেড়ে দিলো। জয়া ভেঙচি কেটে ভোঁ দৌড় দিলো। জয় আর তন্নি নিচে গেলো। জয়ের আব্বু আর জয়ের আম্মু শোফায় বসা ছিলেন।
জয়ের আব্বুঃ - জয়, তোমরা হানিমুনে দেশের বাইরে যাবে নাকি দেশেই কোথাও যাবে?
জয়ঃ - আমতা আমতা করে উত্তত্র দিলো, না আব্বু দেশেই কোথাও যাবো।
জয়ের আব্বুঃ - ওও তাহলে তো ভালো। তা কোথায় যাবে?
জয়ঃ - কক্সবাজারই ব্যাটার।
জয়ের আব্বুঃ - ওকে তাহলে আমি আজই কক্সবাজারে যাওয়ার প্লেন টিকেট কেটে রাখব তোমরা কালই রওয়ানা দিবে।
জয়ঃ - আচ্ছা, আব্বু। জয় উপরে চলে গেলো। তন্নি নিচে জয়ের আব্বু আম্মুর সাথে গল্প করতে লাগল। জয় বসে বসে মোবাইল টিপছিল। কাধে কারো হাত অনুভব করল। উপরে তাকিয়ে দেখল তন্নি।
তন্নিঃ - তোমার শরীর এখন ঠিক আছে।
জয়ঃ - হুম। খুব ফুরফুরে লাগছে। কিছু একটা করতে ইচ্ছে করছে।
তন্নিঃ - কি?
জয়ঃ - আজ রাতে তুমি আর আমি লং ড্রাইভে যাবো রেডি থেকো।
তন্নিঃ - হুম। কোথায় যাবে?
জয়ঃ - যেখানে তোমার আর আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো। সেই,রাস্তা দিয়েই যাবো।
তন্নিঃ - হুম। তন্নি মনে মনে ভাবলো, তোমার আর আমার তো প্রথম দেখা হয়েছিলো অন্য কোথাও যেটা তোমার মনেই নেই ।
জয়ঃ - কি ভাবছো?
তন্নিঃ - নাহ, কিছু না।
জয়ঃ - আচ্ছা, তন্নি তুমি আমাদের বিয়ের রেজিস্টার ডকুমেন্ট কোথায় পেলে? আমাদের তো বিয়েই হয়েছিল না তখন। তন্নি জয়ের দিকে তাকাল অদ্ভুদ ভাবে। কিছুই বলল না।
জয়ঃ - আচ্ছা, মানলাম ওটা নকল। কিন্তু আমার সাইন কোথায় পেলে? ( ভ্রু কুচকে বলল জয়)। তন্নি জয়ের কলার টেনে ধরল। দাতে দাত কিড়িমিড়ি খেয়ে বলল,
তন্নিঃ - ওগুলো নকল না। আমাদের বিয়ে হয়েছিলো। বলে তন্নি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। জয় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তন্নিকে তার সম্পর্কে বা আমাদের বিয়ে এসবের সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করলেই রেগে যায় কেনো? জয় অবাক হয়ে ভাবল, তন্নি আর তারতো বিয়ে হয়নি তাহলে তন্নি বলে গেলো যে, আমার আর তার বিয়ে হয়েছে। জয় বুঝতে পারল না কিছুই। তার উপর মাথা ঝিম ধরে আছে। শুয়ে পড়ল খুব ক্লান্ত লাগছে। ঘুমিয়ে পড়ল জয়। সন্ধ্যের দিকে ঘুম ভাঙল জয়ের। চোখ মুছতে মুছতে তাকিয়ে দেখল তন্নি তার মাথার পাশে বসে আছে। তন্নি জয়ের মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বলল,
তন্নিঃ - সরি।
জয়ঃ - কেনো?
তন্নিঃ - আসলে তখন আমি তোমার সাথে রাগ করতে চাইনি। এমনিতেই আমার রাগ উঠে গেছে। আমি সরি। (অনুনয়ের স্বরে বলল তন্নি)
জয়ঃ - আচ্ছা ঠিক আছে। আর রাতের জন্য যে প্লান করে রেখেছিলাম মনে আছে তো।
তন্নিঃ - আছে আছে। এখন উঠে ফ্রেস হয়ে নাও। তুমি সেই দুপুরে ঘুমিয়েছিলে কিছু খাওনি এখনো। আমি খাবার নিয়ে আসছি। জয় ওয়াসরুমে গেলো। ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এসে দেখলো তন্নি খাবার হাতে দাঁড়িয়ে আছে। বিছানায় বসতে বসতে বলল,
জয়ঃ - তোমার হাতে খেলে না মনে হয় আমি অমৃত খাচ্ছি। দাও তাড়াতাড়ি খাইয়ে দাও।
তন্নিঃ - এতো প্রশংসা করো না। ফুলে শেষে ফেটে যাবো।
জয়ঃ - না, না সত্যি বলছি। তন্নি জয়কে খাইয়ে দিতে লাগল। তন্নি জয়ের খাওয়া দেখছে এক নজরে। মুখ কিছুটা মলিন হয়ে আছে। কিছু বলতে চাচ্ছে জয়কে।
তন্নিঃ - শুধু নিজেই খাবে। আমাকে খাইয়ে দিবে না।
জয়ঃ - সরি,সরি তোমার হাতে খেতে গিয়ে তোমাকে খাইয়ে দেওয়ার কথা ভুলে গেছি। এই নাও হা করো। তন্নি হা করলো। জয় খাবার তন্নির মুখে পুরে দিলো। তন্নির খুব ভালো লাগছে। খাওয়া শেষ করে জয় আর তন্নি কিছুক্ষণ দুষ্টুমি করল।
|
|
রাত হয়ে গেছে তন্নি রুমে ডুকতেই জয় বলে উঠল,
জয়ঃ - রেডি হয়ে নাও।
তন্নিঃ - হুম।
জয়ঃ - একটা নীল রঙের শাড়ি পড়ো। তোমাকে খুব মানাবে।
তন্নিঃ - আমিতো শাড়ি পড়তে পারি না।
জয়ঃ - সমস্যা নেই আমি তো পারি।
তন্নিঃ - তুমি পড়িয়ে দিবে?
জয়ঃ - সমস্যা নেই তো।
তন্নিঃ - নাহ। বলে একটা মুচকি হাসি দিলো তন্নি। জয় তন্নির হাত থেকে নীল রঙের শাড়িটা তার হাতে নিলো। তন্নিকে পড়িয়ে দিতে লাগল। মাঝে মাঝে তন্নির পেটে ও পিটের খালি অংশে টাচ করছে। তন্নি জয়ের এসব ভাব-ভঙিমায় রেসপন্স না করে চোখ বুজে আছে। নীল শাড়িতে তন্নিকে খুব সুন্দর লাগছে। জল জ্যান্ত পরীর মতো লাগছে। তন্নি চোখ খুলল, শাড়ি পড়ানো শেষ। জয় তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে বলল,
তন্নিঃ - কি দেখছো?
জয়ঃ - তোমাকে।
তন্নিঃ - আগে আর কখনো দেখনি বুজি।
জয়ঃ - দেখেছিতো তবুও।
তন্নিঃ - এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি বের হবে?
জয়ঃ - হুম, চলো। আব্বু আম্মুকে বলেছো।
তন্নিঃ -হুম। জয় আর তন্নি বের হলো বাসা থেকে জয় গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে আর তন্নি তার পাশে। আজ জয় নিজেই ড্রাইভ করবে। অবশ্য ড্রাইভ করতে পারে সে।
জয়ঃ - সিট বেল্ট টা বেধে নাও। ( নিজের সিট বেল্টটা বাধতে বাধতে বলল)।
তন্নিঃ - লাগবে না।
জয়ঃ - লাগবে বেধে নাও।
তন্নিঃ - তাহলে বেধে দাও। জয় ঝুকে গিয়ে তন্নির সিট বেল্ট বেধে দিলো। তন্নি তার উষ্ণ ঠোঁট জয়ের গালে ছোয়া লাগাল। জয় একটা হাসি দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো। খুব ভালো লাগছে জয়ের। সাথে তন্নিও ইনজয় করছে। জয় মাঝে মাঝে ঝুকে গিয়ে তন্নির ঠোঁটে তার ঠোঁটের ছোয়া লাগচ্ছে। মাঝে মাঝে তন্নি হাতে চুমু দিচ্ছে। যে রাস্তায় জয়ের সাথে তন্নির প্রথম দেখা হয়েছিলো সে রাস্তায়ই যাচ্ছে জয়। লোকালয় শেষে নিরব জায়গাটায় এসে পড়েছে তারা। এরকম একটা নিরব পরিবেশই রোমান্সের উপযোগী। জয় গাড়ি থেকে বের হলো। দরজা খুলে তন্নির হাত ধরে তন্নিকেও নামালো। তন্নির মুখে চাঁদের আলো পড়ছে। এতে আরোও ফ্যাকাসে আর সাদা লাগছে তন্নিকে। জয় আর তন্নি দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়। জয় তন্নির দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। আর তন্নিও জয়ের ভালোবাসার চাহনির নেশাতে ডুবতে ব্যাস্ত। তন্নি জয়কে জরিয়ে নিলে তার উষ্ণ বুকে। মুখ তুলে জয়ের নাকে নাক ঘসল তন্নি। হেসে দিলো। সাথে জয়ও।
জয়ঃ - চলো সামনে যাওয়া যাক নাকি?
তন্নিঃ - হুম, তবে তোমার ভয় করছে না আজকে।
জয়ঃ - নাহ।
তন্নিঃ - কেনো?
জয়ঃ - জানি না। চলো বলে তন্নিকে গাড়িতে উঠিয়ে সিল বেল্ট বেধে আবার গাড়ি স্টার্ট করলো। জয় তন্নি নেশায় ব্যাস্ত। তন্নির দিকে তাকিয়ে আছে। সামনে তাকাতেই দেখল একটা বড়সড় ট্রাক তাদের দিকে তেড়ে আসছে। একেবারে কাছ থেকে জয় ব্রেক কষেই চোখ বুঝে নিলো। জয় ব্রেক কষ্টেই স্টারিং্যের সাথে তার মাথাটার ধাক্কা লাগল।
|
বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেছে এখনো কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি জয় বুঝতে পারল। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল ট্রাকটা তাদের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে তাকিয়ে দেখল তন্নির জায়গায় বসে আছে সেই সাদা কাপড় পড়া, লম্বা চুল ওয়ালী। জয় দেখেই অজ্ঞান হয়ে গেলো।
জ্ঞান ফিরে দেখল হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। তার মাথার পাশেই তন্নি বসে আছে। জয়ের অবশ্য কিছুই হয়নি। জাষ্ট মাথায় একটু চট পেয়েছে। তাও একটু। অদ্ভুতভাবে জয়ের মাথার যে জায়গায় চট পেয়েছে। তন্নিও সেই একই জায়গায় চট পেয়েছে। জয় তন্নিকে দেখেই জরিয়ে ধরল অর্ধভাবে।পুরোপুরিভাবে উঠতে পারে নি। তন্নির পেটের অংশে জরিয়ে ধরল। কেঁদে দিলো,
জয়ঃ - তন্নি তুমি ঠিক আছো। তুমি কোথায় গিয়েছিলে?
তন্নিঃ - হ্যা, আমি ঠিকই আছি। আর তোমায় রেখে আমি কোথায় যাবো?
জয়ঃ - তাহলে ঐ সময় তোমাকে পাশে দেখলাম না যে। জয়ের জ্ঞান ফিরেছে দেখে জয়ের আম্মু, আব্বু জয়ের কাছে এলেন। জয় অবশ্য তন্নিকে ছেড়ে দিয়েছে।
জয়ের আম্মুঃ - তোমার কি হয়েছে আব্বু? ( কাঁদতে কাঁদতে বললেন)
জয়ঃ - আমার কিছু হয়নি আম্মু।
জয়ের আব্বুঃ - কি এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে? আমাকে খুলে বল। জয় বলতে শুরু করল। জয় আগে তার সাথে ঘটা ঘটনাগুলোও বলল। তন্নি মাথা নিচু করে বসে আছে।
জয়ের আব্বুঃ - হ্যা, আমিও সেরকম একটা ঘটনা ঘটতে দেখেছিলাম সেদিন। একটা লম্বা রকমের সাদা কাপড় পড়া মেয়ে আর লম্বা লম্বা চুল, আর লম্বা লম্বা নখ নিয়ে বিড়ালটাকে চিড়ে ফেলছিল।
জয়ের আম্মুঃ - কি বলছো এসব?
জয়ঃ - আব্বু, ঠিকই বলছে।
তন্নিঃ - আরে দূর, কি বলছো? এরকম আবার হয় নাকি।
জয়ের আম্মুঃ - হ্যা, আসলেই। আচ্ছা বাধ দাও এসব। আর তন্নি মামনি তোর ব্যাথা কমেছে।
তন্নিঃ - হুম, আম্মু।
|
জয়কে পরেরদিন বাড়ি নিয়ে আসা হলো। জয় এখন একটু ভয়ে ভয়ে থাকে। জয় আর তন্নি রুমে ছিলো। এমন সময় জয়া বলে গেলো যে, আব্বু তাদের নিচে ডাকছেন। জয় আর তন্নি নিচে গেলো। নিচে নামতেই দেখল জয়েকজন মাওলানা বসে আছেন।সালাম করলো জয়। তন্নি তাদের দেখে একটু ভরকে গেলো।
জয়ের আব্বুঃ - জয়, ইনি অনেক বড় একজন আলেম, মাওলানা। আমাদের দেখা অশরীরীকে তিনি নিঃশেষ করে দিবেন। জয়ের আব্বুর কথায় তন্নি ভরকালেও একটা রহস্যময়ী হাসি দিলো।
মাওলানাঃ - এই মেয়েটা কি তোমাদের পরিবারের কেউ? ( তন্নির দিকে ইঙিত করে)।
জয়ঃ - ওও, আমার স্ত্রী।
মাওলানাঃ - খুব বড় ভুল করে ফেলেছো তোমরা। এই মেয়েটাই অশরীরী। যাকে তোমরা দেখো। ঘিরে ফেলো একে। ( মাওলানা তার সাথী-সঙী দের বললেন) । সবাই তন্নিকে ঘিরে ধরল। সবাই অবাক হয়ে গেলো উনার কথায়।
জয়ঃ - কি বলছেন এসব?( বিস্ময়ের স্বরে বলল)
মাওলানাঃ - একটু পরেই দেখতে পাবে। বলে হাতের তসবি আর সূরা পড়তে শুরু করলেন। তন্নিকে ঘিরে ধরে সবাই সূরা আর তসবি পড়তে শুরু করল। তন্নি মাথার চুলগুলো টানতে লাগল।
তন্নিঃ - ছাড়ুন আমাকে, ছাড়ুন। কি হচ্ছে এসব? জয় আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। ( বলে চিৎকার করতে লাগল)। জয় তন্নিকে ছাড়াতে যেতে চাইল। তার আব্বু তাকে ধরে ফেললেন। মুখ দিয়ে ইঙিত করে আশ্বাস দিলেন। জয় স্টেচুর মতো দাঁড়িয়ে রইল। মাওলানা সাহেব পানিতে সূরা পড়ে ফুক দিয়ে পানি গুলো তন্নির উপর ছিটিয়ে দিতে শুরু করলেন। তন্নি কিড়িমিড়ি খেয়ে চিৎকার করতে লাগল,
তন্নিঃ - জয়,তুমি দেখতে পারছো না। ওরা তোমার তন্নিকে কিসব করছে বিনা কারনে। জয় কিছুই বলল না। অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জয়ে। অতঃপর তন্নি তার আসল অশরীরী রুপ ধারন করল। সাদা একটা কাপড় পড়া, লম্বা চুল, ফ্যাকাসে মুখ। জয় আর সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। জয়ের চোখ থেকে একফোটা পানি পড়ল। তন্নিকে এমন অবস্থায় দেখবে ভাবতে পারেনি। মাওলানা ও তার সঙী-সাথীরা তন্নিকে নানান ধরনের সূরা পড়ে ফুক দিতে লাগলেন। তন্নি হা হা,হা করে অদ্ভুত একটা হাসি দিয়ে উঠল।
তন্নিঃ - তোমরা আমার কিছুই করতে পারবে না। হা, হা হা। ( শব্দ প্রতিধ্বনি হত শুরু করল)। মাওলানা সাহেবরা ভরকে গেলেন। নানান ধরনের সূরে পড়ে ফুক দিতে লাগলেন। কিন্তু তন্নির কোনো ক্ষতিই হচ্ছে না। তন্নি হা হা করে হাসছে।
মাওলানাঃ - জয় ওর সাথে কি তোমার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। জয় হ্যা সুচক মাথা নাড়াল। মাওলানা সাহেব তাড়াতাড়ি করে একটা তাবিজ জয়ের গলায় ঝুলিয়ে দিলেন।
তন্নিঃ - নাআয়ায়া। বলে চিৎকার করে উঠল। প্লিজ এটা করো না। সবাই স্তম্বিত হয়ে আছে। আসলে শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে তন্নি মিশে গেছে জয়ের রক্তে। জয়ের অস্তিত্বে।
মাওলানাঃ - তুই কোথা থেকে আর কেনো এসেছিস বল? না হয় তোর প্রিয়কে ( জয়কে) আমরা মেরে ফেলবো।
তন্নিঃ - না,জয়ের কোনো ক্ষতি করবে না তোমরা। ওকে ছেড়ে দাও। আমি বলছি। তন্নি বলতে শুরু করল ঃ - আমি নিনেন। সেই ছোটবেলা থেকেই জয়কে ভালোবাসি। কারন জয় আমার স্বামী। শৈশবে আমি একটা গ্রামে ছিলাম। যেখানে আগে জয়রা থাকতো। একদিন আপনাদের মতোই কিছু হিন্দু তান্ত্রিক আমাকে ধরার জন্য তাড়া করে আমি এসে জয়ের দেখা পাই।
আমিঃ - আমাকে বাচাও প্লিজ। ওরা আমাকে ধরে নিবে।
জয়ঃ - কারা?
আমিঃ - জানি না ওরা কারা।
জয়ঃ - আচ্ছা,তুমি ভয় পেয়ো না। আমার সাথে আম গাছে উঠে পড়ো। ওরা তোমাকে পাবে না।
আমিঃ - আমি তো গাছে উঠতে পারি না।
জয়ঃ - আচ্ছা, তাহলে তুমি আমার পিঠে চড়ে বসো আমি তোমাকে নিয়ে গেছে উঠছি। জয় আমাকে পিঠে করে নিয়ে কষ্ট করে গাছে উঠল। দুষ্টু লোকরা গাছের নিচে এসে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে চলে গেলো। জয়ের জন্য আমার প্রান বেচেছিলো। জয় আমাকে তার খেলার সাথী করে নেয়। একদিন জয় তার কয়েকজন সঙী নিয়ে আসে খেলার জন্য। আমরা বর-বউ খেলি। আমি বউ ছিলাম আর জয় বর। খেলার ছলে জয় কবুল বলে আমাকে বউ করে নিয়েছিল। তারপর থেকে আমরা প্রায়ই খেলতাম পড়ে একদিন জয়রা এখানে চলে আসে। আমি যখন বড় হতে লাগলাম তখন জয়ের প্রতি ফিল হতো। জয়ের ঘামের গন্ধ আমার নাকে আসতো। আমি জয়কে আমার স্বামী হিসেবে ধরে নেই। পরে জয়ের খুজ করে আমি এখানে এসে জয়কে পেলাম। তন্নি কাঁদতে লাগল। জয়েরও মনে পড়ে গেলো সব। আর সবাই বিস্ময় নিয়ে দেখছে সব কাহিনী।
মাওলানাঃ - তুই এই বাড়ি ছেড়ে যাবি কিনা বল?
তন্নিঃ - না, আমি আমার স্বামীকে রেখে কোথাও যাবো না।
মাওলানাঃ - যাবি না। তাহলে দেখ। বলে মাওলানা সাহেব জোরে তসবি পড়ে আর সূরা পড়ে জয় আর তন্নি উপর ফুক দিতে লাগলেন। তন্নি যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগল। আর চিৎকার করতে লাগল।
তন্নিঃ - জয় আমাকে বাচাও জয়। জয়। ( আর্তনাদ করতে লাগল)। জয়ের খুব কষ্ট হচ্ছে তন্নি কষ্ট দেখে। তন্নি নিচের দিকে হাটু পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে যেতে লাগল। জয়ের ভিতরে তোলপাড় শুরু করল। জয়েরও যন্ত্রনা শুরু করল। জয় তার গলার তাবিজ ছুড়ে ফেলে দিয়ে দৌড়ে সবাইকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে তন্নিকে জরিয়ে ধরল। তন্নি আগের রুপে ফিরে এলো।
জয়ঃ - আমি আমার তন্নিকে ছাড়া বাচতে পারব না। আমি আমার তন্নিকে আমার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি। ( কাঁদতে কাঁদতে বলল)। তন্নিও জয়কে আঁকড়ে ধরল।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com